নবম শ্রেণি – বাংলা – কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি – (কবিতা) মুকুন্দরাম চক্রবর্তী

Gopi

ধীবর বৃত্তান্ত নাট্যাংশটি মহাকবি কালিদাস রচিত অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটকের একটি সংক্ষিপ্ত ও বাংলায় অনূদিত অংশ। এই নাট্যাংশে একজন সাধারণ ধীবরের চরিত্রের মধ্য দিয়ে সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।

নাট্যাংশের শুরুতে দেখা যায়, নগর রক্ষায় নিযুক্ত রাজশ্যালক ও দুই রক্ষী এক অতিসাধারণ ধীবরের কাছে রাজ-নামাঙ্কিত, মণিখচিত, বহুমূল্য একটি আংটি উদ্ধার করে। ধীবরকে রাজার আদেশ অনুযায়ী রাজদরবারে নিয়ে আসা হয়। সেখানে ধীবর তার নির্দোষতার দাবি জানায় এবং রাজশ্যালকের সাথে তার সংলাপের মধ্য দিয়ে সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।

ধীবরের চরিত্রটি অত্যন্ত দৃঢ়চেতা ও সত্যবাদী। সে রাজশ্যালকের ভয়কে উপেক্ষা করে তার নির্দোষতার দাবি জানায়। সে বিশ্বাস করে যে, সত্যের জয় হবেই। ধীবরের এই দৃঢ়চেতা মনোভাব সমাজের সকলের জন্য অনুপ্রেরণা।

রাজশ্যালকের চরিত্রটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সে ধীবরকে প্রথমে সন্দেহ করে, কিন্তু পরে ধীবরের সততা ও দৃঢ়তার কাছে সে হার মানতে বাধ্য হয়। রাজশ্যালকের এই পরিবর্তন সমাজের মানুষের মধ্যে সত্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগানোর ইঙ্গিত দেয়।

নবম শ্রেণি – বাংলা – কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি

কবি পরিচিতি

ভূমিকা – চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের কবিদের অন্যতম মুকুন্দ চক্রবর্তী তাঁর কাব্যে নিজের সম্পূর্ণ পরিচয় দিয়েছেন। কবির নিজের দেওয়া তথ্য অনুসারে — কবিকঙ্কণ হল কবির উপাধি, মুকুন্দ নাম এবং চক্রবর্তী বংশগত পদবি।

জন্ম-পরিচয় – চণ্ডীমঙ্গলের পুথিতে গ্রন্থোৎপত্তির কারণ এবং আত্মপরিচয় অংশ দুটি থেকে জানা যায়, কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তীর জন্মস্থান বর্ধমান জেলার দামুন্যা বা দামিন্যা গ্রামে (বর্তমানে বর্ধমান জেলার রায়না থানার অন্তর্গত)। রত্না নদীর তীরে অবস্থিত এই গ্রামে কবির পূর্বপুরুষের বাস ছিল। কবির বাবার নাম হৃদয় মিশ্র, মা দৈবকী।

পরবর্তী জীবন ও কাব্যরচনা – কবির লেখা আত্মপরিচয় অংশ থেকেই জানা যায়, মানসিংহ যখন বাংলা ও উড়িষ্যার সুবেদার, তখন বাংলার ডিহিদার ছিলেন মামুদ শরিফ। তাঁর অত্যাচারে অন্যান্য দামুন্যাবাসীর মতো কবিও তাঁর স্ত্রী, পুত্র এবং ভাইকে নিয়ে গ্রাম ছাড়েন। পথেই দেবী চণ্ডী কবিকে স্বপ্নে তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা করে কাব্যরচনার আদেশ দেন। শিলাবতী নদী পার হয়ে কবি পৌঁছোন আরড়ায় (বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল থানার অন্তর্ভুক্ত)। আরড়ার রাজা বাঁকুড়া রায় কবি মুকুন্দের পাণ্ডিত্যে খুশি হন। তিনি নিজের পুত্র রঘুনাথকে পড়ানোর কাজে কবিকে নিযুক্ত করেন। এরপরেই কবির ছাত্র রঘুনাথ রাজা হন এবং তাঁর অনুরোধেই কবি চণ্ডীমঙ্গল কাব্যরচনায় নিজেকে যুক্ত করেন। কবি মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত চণ্ডীমঙ্গল কাব্যটির অভয়ামঙ্গল, অম্বিকামঙ্গল, কবিকঙ্কণ চণ্ডী ইত্যাদি একাধিক নামও পাওয়া যায়।

উৎস

আলোচ্য কাব্যাংশটির উৎস কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তীর চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের আখেটিক খণ্ড। এই খণ্ডের কালকেতুর উপাখ্যানের অন্তর্গত কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি আরম্ভ অংশ থেকে পাঠ্যাংশটি নেওয়া হয়েছে।

কাব্যাংশের পূর্বসূত্র

কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত চণ্ডীমঙ্গলের আখেটিক খণ্ডের কাহিনিতে ধর্মকেতু ও নিদয়ার পুত্র জন্মায়, নাম হয় কালকেতু। আসলে কালকেতু ছিল শিবভক্ত নীলাম্বর। দেবী চণ্ডীর অনুরোধে শিব তাকে অভিশাপ দিয়ে মর্ত্যে পাঠান। পশুশিকারে কালকেতু খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ব্যাধ কালকেতুর সঙ্গে ফুল্লরার বিয়ে হয়। প্রবল দারিদ্র্যের মধ্যেও কালকেতু ও ফুল্লরার দাম্পত্যজীবন সুখের হয়। কালকেতু পশুশিকার করত, ফুল্লরা সেই মৃত পশুর মাংস, চামড়া, শিং ইত্যাদি হাটে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করত এবং ঘরের কাজ করত। কালকেতু শিকারে দক্ষ এবং অপরাজেয় হয়ে উঠলে পশুরা বিপদে পড়ে দেবী চণ্ডীর আশ্রয় নেয়। দেবী চণ্ডী নিজের পুজোপ্রচারের উদ্দেশ্যে একদিন বনের সমস্ত পশুকে লুকিয়ে রেখে অমঙ্গলসূচক স্বর্ণগোধিকার রূপ ধারণ করে কালকেতুর শিকারে যাবার পথে তাকে দেখা দেন। শিকারে কিছু না পেয়ে ব্যাধ কালকেতু দুঃখিত মনে বাড়ি ফেরার পথে রেগে গিয়ে ওই স্বর্ণগোধিকাকে বাড়ি নিয়ে আসে। বাড়িতে গোধিকার রূপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা দেবী চণ্ডী ষোলো বছরের মেয়ের মূর্তি ধারণ করেন।

ফুল্লরা তাঁকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। তখন মেয়েটি তাকে আশ্বস্ত করেন যে তিনি কালকেতুর দারিদ্র্য দূর করবেন। তবুও ফুল্লরা ভাবে, ওই মেয়েটি তার ঘরে সতীনরূপে আশ্রয় নিতে চাইছে। সে কালকেতুর কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ জানায়। কালকেতু তির দিয়ে মেয়েটিকে মারতে গেলে দেবী নিজের প্রকৃত পরিচয় দেন। কালকেতু ও ফুল্লরার সংশয় দূর করতে দেবী চণ্ডী নিজের নানান রূপে তাদের সামনে আবির্ভূতা হন এবং কালকেতুকে সাত ঘড়া ধন দান করেন। দেবী চণ্ডীর বরেই কালকেতু বন কেটে গুজরাট নগর তৈরি করে। কালকেতু রাজা হলেও তার রাজ্যে প্রজার অভাব ছিল। দেবী চণ্ডীকে আহ্বান করে কালকেতু প্রজা বসতি প্রতিষ্ঠার প্রার্থনা জানায়। কালকেতুর প্রার্থনা পূরণ করতে দেবী কলিঙ্গনগরে ঝড়বৃষ্টি সৃষ্টি করে দুর্দশাগ্রস্ত প্রজাদের গুজরাটে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর সতীন গঙ্গার সাহায্য চান। গঙ্গা রাজি না হওয়ায় দেবী চণ্ডী তখন সমুদ্র ও ইন্দ্রের সাহায্যে মেঘ ও বজ্রের দ্বারা কলিঙ্গদেশে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি আর বন্যার সৃষ্টি করেন। ফলে বন্যাবিধ্বস্ত দুর্গত প্রজারা কলিঙ্গদেশ ছেড়ে পাশের গুজরাট রাজ্যে আশ্রয় নেয়।

সারসংক্ষেপ

কলিঙ্গের আকাশ ঘন মেঘে আচ্ছন্ন। অন্ধকার এতটাই গাঢ় যে কলিঙ্গবাসীরা নিজেদের চেহারা পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছে না। ঈশান অর্থাৎ উত্তর-পূর্ব কোণে ঘনঘন বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যায়। উত্তরের প্রবল বাতাসে দূরদিগন্ত থেকে মেঘের গুরুগম্ভীর গর্জন শোনা যায়। মুহুর্তের মধ্যেই কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে যায়। শুরু হয় মুশলধারায় বৃষ্টি। সমগ্র কলিঙ্গদেশ মেঘের গম্ভীর শব্দে কেঁপে ওঠে। ধ্বংস ও বিপদের আশঙ্কা করতে থাকে প্রজারা। প্রবল বৃষ্টিপাত এবং ঘনঘন মেঘের গর্জনের সঙ্গে ঝড়ের তাণ্ডব চলতে থাকে। প্রজারা বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালাতে শুরু করে। সমগ্র সবুজ প্রকৃতির ধুলোয় ঢেকে যায় ৷ ঝড়ের প্রবল তাণ্ডবে খেতের ফসল নষ্ট হতে দেখে প্রজারা ভয় পায়। মনে হয় যেন আটটি বিশাল হাতি বৃষ্টিধারায় ভাসিয়ে দিতে চায় সমগ্র কলিঙ্গদেশকে। ঘনঘন বিদ্যুতের চমকানির সঙ্গে তীব্রভাবে বাজ পড়তে থাকে। বৃষ্টির বেগ দেখলে মনে হয় কোনো বিশাল হাতি যেন ক্রমাগত তার শুঁড় দিয়ে জলবর্ষণ করে চলেছে। সমগ্র পৃথিবী জলমগ্ন হয়ে পড়ায় জল ও স্থলের সীমারেখা মিশে গেছে। মেঘের তীব্র গর্জনে কেউ কারও কথা শুনতে পাচ্ছে না। দিন, রাত্রি ও সন্ধ্যার পার্থক্য দূর হয়ে শুধুই অন্ধকারে ছেয়ে থাকে কলিঙ্গদেশ। সমস্ত প্রজা বিপদ থেকে রক্ষা পেতে ঋষি জৈমিনিকে স্মরণ করতে থাকে। প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে সূর্যের আলো কলিঙ্গে প্রবেশ করতে পারে না। আশ্রয় হারিয়ে গর্ত ছেড়ে সাপ জলে ভেসে বেড়ায়। জল-স্থলের পার্থক্য মুছে দিয়ে প্লাবন ভাসিয়ে নিয়ে যায় সমগ্র কলিঙ্গদেশ। সাত দিনের টানা বৃষ্টিতে শস্যের প্রবল ক্ষয়ক্ষতি হয়, ধ্বংস হয় ঘরবাড়ি। ভাদ্র মাসের পাকা তালের মতো শিল ঘরের চাল ভেদ করে মেঝেতে পড়তে থাকে। দেবী চণ্ডীর আদেশে বীর হনুমান সবকিছু ভেঙে তছনছ করে দেন। পর্বতের মতো বিশাল উঁচু জলের ঢেউয়ের আঘাতে ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ে। প্রচণ্ড বেগে নদনদী নগরে প্রবেশ করে সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। শ্রীকবিকঙ্কণ তাঁর অম্বিকামঙ্গল – এ এই ধ্বংসের কাহিনি গানের আকারে শুনিয়েছেন।

নামকরণ

কোনো সাহিত্যকর্মের নামকরণ রচনাটির মূল বিষয়বস্তুর তাৎপর্য এবং রচয়িতার মনের ভাবকে অনেকটাই ফুটিয়ে তোলে। কবি মুকুন্দ চক্রবর্তীর লেখা চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের আখেটিক খণ্ডের অন্তর্গত কাব্যাংশটির নাম কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি আরম্ভ। পাঠ্যে নামটির আংশিক পরিবর্তন ঘটিয়ে নামকরণ করা হয়েছে কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি।

কলিঙ্গদেশে হঠাৎই ঈশান কোণে জমা মেঘ সারা আকাশে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে অন্ধকার নেমে আসে। কালো মেঘের বুক চিরে ঘনঘন বিদ্যুতের ঝলকানিতে কেঁপে ওঠে কলিঙ্গদেশ। ভয়াবহ বিপদের আশঙ্কায় ঘরবাড়ি ছাড়ে প্রজারা। সবুজ প্রকৃতি ধুলোয় ঢেকে যায়। সাত দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টিপাতের সঙ্গে মেঘের গম্ভীর গর্জন, বজ্রপাত ও ঝড়ের তাণ্ডব চলতে থাকে। রাস্তাঘাট জলে ডুবে যায়। শস্য চাষের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিলাবৃষ্টির তাণ্ডবে বাড়িঘর নষ্ট হয়ে যায়। দেবী চণ্ডীর আদেশে নদনদী কলিঙ্গ নগরের দিকে পর্বতসমান ঢেউ নিয়ে এগিয়ে আসে। কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টির এই তুমুল তাণ্ডবের মাধ্যমেই গুজরাট নগরে কালকেতুর বসতি প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা পূরণ করতে চেয়েছেন দেবী চণ্ডী। যেহেতু কাব্যাংশের পুরোটা জুড়ে এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়েরই বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তাই বিষয়গতভাবে কাব্যাংশটির নামকরণ যথার্থ ও সার্থক বলা যায় ৷

ধীবর বৃত্তান্ত নাট্যাংশটি একটি হাস্যরসাত্মক নাট্যাংশ। নাট্যাংশের বিভিন্ন সংলাপ ও ঘটনার মধ্য দিয়ে পাঠকদের হাসির খোরাক জোগান দেওয়া হয়েছে। তবে, এই হাস্যরসাত্মক নাট্যাংশের মধ্যে দিয়ে সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। এই নাট্যাংশটি আমাদের সত্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, দৃঢ়চেতা মনোভাব ও সমাজের প্রতি সচেতন হওয়ার শিক্ষা দেয়।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Tom Loses a Tooth

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

The North Ship

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer