নবম শ্রেণি বাংলা – কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি – বিষয়সংক্ষেপ

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের প্রথম পাঠের প্রথম অধ্যায়, ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ -এর বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করবো। এখানে কবির পরিচিতি, কবিতার উৎস, কবিতার পাঠপ্রসঙ্গ, কবিতার সারসংক্ষেপ, কবিতার নামকরণ এবং এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এই আর্টিকেলটি আপনাদের ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেবে এবং কবিতাটি ভালোভাবে বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এছাড়া, নবম শ্রেণীর পরীক্ষায় এই অধ্যায় থেকে কবি ও কবিতার সারসংক্ষেপ সম্পর্কিত প্রশ্ন আসতে পারে, তাই এই তথ্যগুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নবম শ্রেণি - বাংলা - কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি - বিষয়সংক্ষেপ

‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কবিতার কবি পরিচিতি

ভূমিকা

মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্যধারায় কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তীকে নিঃসংশয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ কবির সম্মানে ভূষিত করা যায়। তিনি তাঁর স্বকীয়তা, সৃজনশীলতা, মৌলিকতা ও অভিনবত্বে মঙ্গলকাব্যের প্রচলিত কাহিনি – গণ্ডির বাইরে এসে তা পরিবেশনার নৈপুণ্যে অসাধারণত্ব দান করেছেন। ভাষা-ছন্দ-অলংকার প্রয়োগ, চরিত্র রূপায়ণ, রসসৃষ্টি – বস্তুত সার্বিক পরিবেশনায় তাঁর রচনাশৈলী নিঃসন্দেহে অভিনবত্বের দাবি রাখে। বাংলা সাহিত্যে সম্ভবত তিনিই প্রথম অলৌকিকতা অপেক্ষা মানবতার মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কবি মোগল-পাঠানের সংঘর্ষে উদ্ভুত রাজনৈতিক বিপর্যয় ও ডিহিদার মামুদ শরিফের অত্যাচারে সাতপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে সপরিবারে দেশান্তরী হতে বাধ্য হন। পথশ্রমে ক্লান্ত কবি তার শিশুদের অন্নের জন্য কান্না শুনতে শুনতেই নিদ্রা যান। আর সেই সময়ে দেবী চণ্ডী নিজের মাহাত্ম্য প্রচারের উদ্দেশ্যে স্বপ্নাদেশ দেন। এরপর কবি রচনা করেছিলেন তাঁর ‘অভয়ামঙ্গল কাব্য’। যেটি প্রধানত ‘চণ্ডীমঙ্গল’ বা ‘কবিকঙ্কন চণ্ডী’ নামেই প্রসিদ্ধ।

মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর পরিচয়

‘অভয়ামঙ্গল’ কাব্যের গ্রন্থোৎপত্তির কারণ অংশে তাঁর পরিচয় পাওয়া যায়। আত্মপরিচয়ে কবি বলেছেন—তাঁর পূর্বপুরুষরা বর্ধমানের রত্না নদীর তীরবর্তী দামিন্যা গ্রামে বাস করতেন। কবির পিতা হৃদয়মিশ্র, মাতা দৈবকী এবং জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হলেন কবিচন্দ্র। কাব্যে তিনি তাঁর সন্তানদের নামোল্লেখও করেছেন। জানা যায় তাঁর একমাত্র পুত্র শিবরাম, কন্যা যশোদা, পুত্রবধূ চিত্রলেখা ও জামাতা মহেশ। বৈষ্ণব আদর্শে বিশ্বাসী হলেও তারা শিবের উপাসকও ছিলেন। তৎকালীন সময় পাঠান রাজত্বের অবসান হয়ে মোগলদের উত্থান হয়েছে। ফলে শাসনকার্যে ও ভূমিব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটলে গ্রামজীবনে সংকট দেখা যায় এবং কৃষিজীবী কবি ডিহিদার মামুদ শরীফের অত্যাচারে সপরিবারে দামিন্যা ত্যাগ করেন। শ্রীমন্ত, যাঁর সহায়তায় তিনি পালিয়ে যান। নানা বিপর্যয়ের পর মেদিনীপুরের আরড়া গ্রামে এসে রাজা বাঁকুড়া রায়ের আশ্রয় গ্রহণ করেন। রাজার পুত্র রঘুনাথের গৃহশিক্ষক পদে নিযুক্ত হন কবি। বাঁকুড়া রায়ের মৃত্যুর পর রঘুনাথ রাজা হন এবং তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় মুকুন্দ চক্রবর্তী চণ্ডীমঙ্গলকাব্য রচনা করেন।

উপসংহার

মুকুন্দ বাস্তব রসের কবি। তাঁর ছিল ‘নিবিড় শ্রদ্ধাসচেতন ও সমদৃষ্টিসম্পন্ন উপলব্ধি’। তাঁর প্রতিটি চরিত্র যেন শিল্পীর নিখুঁত তুলির টানে জীবন্ত ও মূর্ত হয়ে উঠেছে। তাঁর অনাবিল হাস্যরস সৃষ্টি মুকুন্দের কবিস্বভাবের আর-এক উল্লেখ্য বৈশিষ্ট্য। দেবী চণ্ডীর কাছে পশু ভালুক -এর কাতর কান্না – “উইচারা খাই আমি নামেতে ভালুক।/নেউগী চৌধুরী নই না করি তালুক।।” – তার জীবন সত্যকে তুলে ধরেছে। তাঁর দুঃখবেদনার অভিজ্ঞতা অতি তীব্র হলেও এই দুঃখবেদনার তিক্ততায় কবিচিত্ত কখনোই ভারাক্রান্ত হয়নি। কবির এই বিচিত্র শিল্পসত্তাই কবিকে যুগোত্তীর্ণ করে তুলেছে। এ যুগেও তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণযোগ্য। আজও তিনি রসজ্ঞ পাঠকের কাছে বন্দিত।

‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কবিতার উৎস

‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ পদ্যাংশটি কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যের অংশবিশেষ। এই কাব্যের ‘আখেটিক খণ্ড’ -এর অন্তর্গত ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি আরম্ভ’ অংশটি বিচ্ছিন্নভাবে পাঠ্যাংশের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে পর্ষদ কর্তৃক ‘আরম্ভ’ শব্দটি সংকলনে বর্জিত হয়েছে। যদিও কবি তাঁর কাব্যে ‘অভয়ামঙ্গল’ নামটিই বেশিবার ব্যবহার করেছেন; তবুও তাঁর ভণিতায় ‘চণ্ডীকামঙ্গল’, ‘অম্বিকামঙ্গল’, ‘গৌরীমঙ্গল’, এমনকি ‘শ্রীকবিকঙ্কণ রসগান’ বলেও উল্লেখ পাওয়া যায়। বস্তুত কাব্যটি ‘অভয়ামঙ্গল’ বা ‘কবিকঙ্কণ চণ্ডী’ নামেই সমধিক প্রচলিত। কালকেতুর গুজরাট নগর পত্তনের পর দেবী চণ্ডী প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাহায্য নিয়ে কলিঙ্গদেশের প্রজাগণকে দেশ ত্যাগ করিয়ে গুজরাটে বসবাস করাতে বাধ্য করিয়েছেন। কলিঙ্গদেশে অতিবর্ষণের ফলে জলপ্লাবনের বিষয়টিই উৎকলিত অংশটির উপজীব্য।

‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কবিতার পাঠপ্রসঙ্গ

বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগীয় পর্বের কবিদের মধ্যে কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তী ও তাঁর সৃষ্টি ‘চণ্ডীমঙ্গল’ উল্লেখযোগ্য। বাংলা সাহিত্যের মঙ্গলকাব্যগুলির সামাজিক বা ধর্মীয় গুরুত্ব ছিল। কোনো এক মঙ্গলবারে শুরু হয়ে পরের মঙ্গলবার পালাটি শেষ হত বলেই এই কাব্যরূপটির সঙ্গে ‘মঙ্গল’ কথাটি সংযুক্ত হয়ে যায়। ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কাব্যাংশটি কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তীর ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যের ‘আখেটিক খণ্ড’ থেকে নেওয়া হয়েছে। এই উপাখ্যানটি কালকেতু-ফুল্লরার কাহিনিসমৃদ্ধ। এর আর-একটি খণ্ড বর্তমান, যা ‘বণিক খণ্ড’ তথা ধনপতি-খুল্লনা-লহনার উপাখ্যান হিসেবে পরিচিত। অবশ্য গঠনগত দিক থেকে বাংলা মঙ্গলকাব্যে দুটি ভাগ দেখা যায়, যথা – ‘দেবখণ্ড’ ও ‘নরখণ্ড’। উক্ত কাব্যাংশটি সেদিক থেকে ধরলে ‘নরখণ্ড’ থেকে গৃহীত। যেখানে স্থিত ‘মেঘগণের প্রতি ইন্দ্রের আদেশ’ ও ‘নদনদীগণের কলিঙ্গদেশে যাত্রা’ চিহ্নিত অংশদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থান থেকে ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি আরম্ভ’ কাব্যাংশটি নির্বাচিত এবং নামকরণে ঈষৎ পরিবর্তিত।

কালকেতু ধর্মকেতু ও নিদয়ার পুত্র, স্বর্গে যার পরিচয় শিবভক্ত নীলাম্বর নামে। স্বয়ং শিব চণ্ডীদেবীর অভিপ্রায়ে তাঁকে অভিশাপগ্রস্ত করে মর্ত্যে পাঠালে দেখা যায়, কালকেতু এক উন্নতদেহী পুরুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তার বিয়ে হয় ফুল্লরার সঙ্গে। সুখী এই দম্পতি পশুশিকারের মাধ্যমে জীবিকানির্বাহ করত। কালকেতুর দক্ষ শিকারে বিপন্ন বোধ করে পশুরা চণ্ডীদেবীর শরণাপন্ন হলে, তিনি মর্ত্যে নিজ পূজা প্রচলনের জন্য সমস্ত বন্য পশুকে প্রচ্ছন্ন করে, অমাঙ্গলিক গোধিকারূপ ধারণ করে কালকেতুর শিকারপথে অবস্থান করেন। পশুশিকারে ব্যর্থ কালকেতু তাই ওই গোধিকাকেই সংগ্রহ করে ঘরে ফেরে। বিশেষ মুহূর্তে চণ্ডীদেবী স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করেন। উদ্দেশ্য কালকেতুর দ্বারা আপন পূজা প্রচলন। চণ্ডীদেবী কালকেতু-ফুল্লরাকে সাত ঘড়া সম্পদ দান করলে, দেবীর বরে সে বন কেটে বসতিস্বরূপ গুজরাট নগরের পত্তন করে। নগরে রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় কালকেতুই, কিন্তু প্রজা নিতান্ত অপ্রতুল। দেবী চণ্ডী পুনরায় কালকেতুর সহায় হন। তাঁর কৃপায় সন্নিহিত প্রকৃতিতে যেন শুরু হয় তাণ্ডব। পার্শ্বস্থ কলিঙ্গনগরে শুরু হয় তীব্র ঝড়-বৃষ্টির প্রকোপ। সেখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতি হয়ে যায় লণ্ডভণ্ড, প্রজাসমূহের দুর্দশার অন্ত থাকে না। চণ্ডীদেবীর নির্দেশে ইন্দ্রের সাহায্যে সমুদ্রে ও নদীতে আসে তুফান। মেঘ-বজ্র-পবন কলিঙ্গদেশে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃজন করে, যাতে দুর্যোগ ও বন্যাবিধ্বস্ত প্রজারা কলিঙ্গদেশ ত্যাগ করে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় সন্নিকটস্থ অনুকূল গুজরাট নগরে।

কবি মুকুন্দ চক্রবর্তীর আশ্চর্য ভাষাশৈলী ও বর্ণনাগুণে উক্ত কাব্যাংশটি যেন বাস্তবিক প্রতিবেদনের অত্যাশ্চর্য সাহিত্যরূপ পেয়ে চরম সার্থকতা লাভ করে।

‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কবিতার বিষয়সংক্ষেপ

কলিঙ্গদেশের আকাশে ভয়াবহ মেঘের ছায়া। মেঘের ঘনঘটায় চতুর্দিক অন্ধকারাচ্ছন্ন। অন্ধকারের গাঢ়তা বুঝি কলিঙ্গবাসীদের চোখের আলো কেড়ে নিয়েছে। তারা নিজেদের চেহারা, অর্থাৎ অঙ্গ পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছে না। আকাশের উত্তর-পূর্ব কোণ তথা ঈশানে মেঘাড়ম্বর সূচিত হলে দেখা গেল তীব্র বিদ্যুতের ঘন ঝলকানি। উত্তুরে বাতাস বয়ে আনছে মেঘগর্জনের গুরু গম্ভীর নিনাদ। মুহূর্ত মধ্যে যেন কালো-কালো মেঘ সমগ্র আকাশের দখল নিয়ে নিল। শুরু হল মুষলধারে অকালবর্ষণ। সারা কলিঙ্গদেশ সুতীব্র মেঘগর্জনে প্রকম্পিত হয়ে চলেছে। এ যে প্রলয়োন্মুখ ধ্বংসলীলারই সূচনাপর্ব তা বুঝে কলিঙ্গপ্রজারা বিষাদক্লিষ্ট হয়ে পড়ল। সশব্দে ঘন ঝড় বয়ে চলেছে। বিপাকে পড়ে প্রজারা গৃহত্যাগ করে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিল। ঝড়বৃষ্টির তাণ্ডব দেখে মনে হল, চতুর্মেঘে যেন অষ্ট গজরাজ বারিবর্ষণ করে চলেছে। ঘন বিদ্যুৎরেখায় যেন ব্যাঙের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বাজ পড়ছে। মনে হল বিশালাকৃতি কোনো হস্তী তার শুঁড় দিয়ে অবিরত জলবর্ষণ করে যাচ্ছে। জলমগ্ন হয়ে পৃথিবীর পথসমূহ যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। শোনা যাচ্ছে চতুর্মেঘের ঘনঘোর গর্জন, যাতে কোনো মানুষ কেউ কারও কথা শুনতে পাচ্ছে না। দিনরাতের সীমারেখা মুছে গেছে, বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে কলিঙ্গ প্রজারা ঋষি জৈমিনিকে একাগ্র মনে স্মরণ করে চলেছে। কর্ণপাত করে কেবল হুড়হুড় দুড়দুড় ঝনঝন শব্দ শোনা যাচ্ছে। কেউ কোনোভাবে এতটুকু রবিকিরণ দেখতে পাচ্ছে না। বিবরবাসী সর্পকুল গর্ত ত্যাগ করে জলে ভেসে বেড়াচ্ছে। সমগ্র কলিঙ্গে যেন জলস্থল একাকার হয়ে গেছে। ক্রমান্বয়ে সাত দিন ধরে নিরন্তর বৃষ্টি হয়ে চলে। শস্যের দফারফা হওয়ার সঙ্গে মানুষের ঘরবাড়িও ভেসে যায়, গৃহের চাল ভেদ করে শিল পড়তে থাকে মেঝেতে; মনে হয় যেন ভাদ্রের পাকা তাল এসে আছড়ে পড়ছে। দেবী চণ্ডীর আদেশে বীর হনুমান বুঝি সবকিছু তছনছ করে দেয়। সেজন্যই মঠ অট্টালিকা সব ভেঙে খানখান হয়ে যেতে থাকে। চতুর্দিকে বয়ে যাওয়া ঢেউগুলি পর্বতের মতো বিশাল, যার তাড়নায় ঘরগুলি উঠে পড়ে টলমল করতে থাকে। দেবী চণ্ডীর আদেশেই নদনদী যেন উত্তাল হয়ে ধেয়ে যায়। শ্রী কবিকঙ্কণ তাঁর ‘অম্বিকামঙ্গল কাব্য’-এ এমন ধ্বংসকাহিনিই গীত আকারে শুনিয়ে যান।

‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কবিতার নামকরণ

ভূমিকা

কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তীর ‘চণ্ডীমঙ্গল’ তথা ‘অভয়ামঙ্গল’ কাব্যের ‘আখেটিক’ খণ্ড থেকে নেওয়া হয়েছে পাঠ্য কাব্যাংশটি। কবিকৃত নামকরণে উক্ত অংশটি ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি আরম্ভ’ থাকলেও সংকলন ক্ষেত্রে সেই নামে ঈষৎ পরিবর্তন করা হয়েছে। এই বিশেষ নামকরণ কতটা যথোপযুক্ত, তা আলোচনা করে দেখা যেতে পারে।

প্রাকৃতিক বর্ণনা

উক্ত কাব্যাংশটির উপজীব্য বিষয় দৈবাদেশে কলিঙ্গরাজ্যে ঘনিয়ে ওঠা তীব্র ঝড়বৃষ্টি এবং সেকারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে প্রজাসাধারণের জীবনে হঠাৎ নেমে আসা প্রতিকূলতা। প্রলয়কারী ঝড়বাদল, তীব্র মেঘগর্জন, বজ্রপতন ও বন্যার তাণ্ডবে আতঙ্কিত কলিঙ্গবাসী বাড়িঘর ছেড়ে দিভ্রান্তের মতো ছুটে বেড়ায়। তারা দিনকে মনে করে রাত, পথ হারিয়ে যায় জলমগ্নতায়। প্রকৃতির পরিচিত রূপ হয়ে ওঠে ভয়াবহ। ধূলার আস্তরণে হারিয়ে যায় সবুজ, খেতের শস্য লুটিয়ে পড়ে খেতে। গর্তবাসী সর্পকুল ত্রস্ত হয়ে ভেসে বেড়ায় জলের উপর। মা চণ্ডীকার আদেশ শিরোধার্য করে বীর হনুমান যেন মঠ-অট্টালিকা ভেঙে খানখান করে দেন। চারিদিকে পর্বতসমান বিশাল ঢেউ বয়ে যায়, যার কারণে মানুষের ঘরবাড়ি সব টলমল করতে থাকে।

‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কবিতার নামকরণের সার্থকতা

সমগ্র কাব্যাংশটিতে কলিঙ্গ দেশ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে। বিধ্বংসী ঝড়বৃষ্টিতে পরিবেশ ও প্রজাদের বিপর্যস্ত অবস্থাটি আলোচ্য কবিতায় লক্ষ করা যায়। অতএব কোনো অন্তর্নিহিত ভাববস্তু নয়, ঘটনাক্রমকেই এই নামকরণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। আর বিষয়গতভাবে নামকরণ করা হয়েছে বলেই মূল গ্রন্থের অংশনাম ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি আরম্ভ’ থেকে ‘আরম্ভ’ শব্দটি বাদ দিয়ে কেবল ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কথাটিকে এত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেন-না নির্বাচিত অংশটিতে ঘটনার আরম্ভের আর গুরুত্ব ছিল না। এক্ষেত্রে প্রদেয় নামটি কবিতানামের মতো গুরুত্ব পেয়েছে এবং তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সুতরাং বিষয়গত দিক থেকে উক্ত নামটি ও যথার্থ ও সার্থকনামা এ বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।


এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের প্রথম পাঠের প্রথম অধ্যায়, ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ -এর বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করবো। এখানে কবির পরিচিতি, কবিতার উৎস, কবিতার পাঠপ্রসঙ্গ, কবিতার সারসংক্ষেপ, কবিতার নামকরণ এবং এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই আর্টিকেলটি আপনাদের ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দিয়েছে এবং কবিতাটি ভালোভাবে বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এছাড়া, নবম শ্রেণীর পরীক্ষায় এই অধ্যায় থেকে কবি পরিচিতি, কবিতার নামকরণ ও কবিতার সারসংক্ষেপ সম্পর্কিত প্রশ্ন আসতে পারে, তাই এই তথ্যগুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Please Share This Article

Related Posts

নবম শ্রেণি - বাংলা - নিরুদ্দেশ - ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – নিরুদ্দেশ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি - বাংলা - নিরুদ্দেশ - অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণি – বাংলা – নিরুদ্দেশ – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণি - বাংলা - নিরুদ্দেশ - বিষয়সংক্ষেপ

নবম শ্রেণি বাংলা – নিরুদ্দেশ – বিষয়সংক্ষেপ

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মৃত্তিকা সংরক্ষণ কী? মৃত্তিকা সংরক্ষণের উপায়

বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় উপাদানগুলি কী কী? বায়ুমণ্ডলের উপস্থিতির সুবিধা

পরিচলন স্রোত কী? বায়ুতে পরিচলন স্রোত কীভাবে সৃষ্টি হয়?

কীভাবে ঝড়ের সৃষ্টি হয় ও ঝড় থামে? ঝড় আসার আগে পরিবেশ শান্ত থাকে কেন?

নবম শ্রেণি বাংলা – নিরুদ্দেশ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর