মাধ্যমিক ভূগোল – বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ – হিমবাহের বিভিন্ন কাজ দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

Souvick

আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের প্রথম অধ্যায় “বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ” -এর “হিমবাহের বিভিন্ন কাজ দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

মাধ্যমিক ভূগোল - বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ - হিমবাহের বিভিন্ন কাজ দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
Contents Show

হিমরেখা কাকে বলে?

যে কাল্পনিক সীমারেখার ঊর্ধ্বে সারাবছর তুষার বা বরফ জমে থাকে এবং যে সীমারেখার নীচে তুষার গলে জলে পরিণত হয়, সেই সীমারেখাকে বলা হয় হিমরেখা। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে হিমরেখার গড় উচ্চতা স্থানবিশেষে প্রায় 4000 থেকে 5000 মিটার। তবে তীব্র ঠান্ডার কারণে মেরু অঞ্চলে হিমরেখা প্রায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতায় পাওয়া যায়।

হিমবাহকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় এবং কী কী?

হিমবাহকে 3টি ভাগে ভাগ করা যায় –

  1. পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহ,
  2. মহাদেশীয় হিমবাহ এবং
  3. পর্বতের পাদদেশীয় হিমবাহ।

পার্বত্য হিমবাহ বা উপত্যকা হিমবাহ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যেসব হিমবাহ সুউচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে উপত্যকার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়, সেইসব হিমবাহকে বলা হয় পার্বত্য হিমবাহ বা উপত্যকা হিমবাহ। উদাহরণ – হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের অধিকাংশ হিমবাহ এই শ্রেণির, যেমন – কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ, সিকিম-দার্জিলিং হিমালয়ের জেমু হিমবাহ প্রভৃতি।

পার্বত্য হিমবাহ

মহাদেশীয় হিমবাহ বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।

উচ্চভূমি-নিম্নভূমি নির্বিশেষে মহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল যখন বরফ ক্ষেত্র দ্বারা অথবা বরফের চাদর দ্বারা ঢাকা থাকে, তখন তাকে বলা হয় মহাদেশীয় হিমবাহ। উদাহরণ – বর্তমানে গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকায় বরফে ঢাকা যে বিস্তীর্ণ অঞ্চল দেখা যায়, তা মহাদেশীয় হিমবাহের উদাহরণ।

পর্বতের পাদদেশীয় হিমবাহ

পর্বতের পাদদেশীয় হিমবাহ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

হিমবাহ যখন উঁচু পর্বতের ওপর থেকে নীচে, অর্থাৎ পর্বতের পাদদেশ অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে, তখন তাকে বলা হয় পর্বত পাদদেশের হিমবাহ বা পাদদেশীয় হিমবাহ। উদাহরণ – আলাস্কার মালাসপিনা হিমবাহ।

হিমশৈল কাকে বলে?

সমুদ্রে ভাসমান বিশালাকৃতি বরফের স্তূপকে হিমশৈল (iceberg) বলা হয়। সাধারণত মহাদেশীয় হিমবাহ থেকে বিশাল বরফের স্তূপ আলাদা হয়ে সংলগ্ন সমুদ্রে হিমশৈলরূপে ভেসে বেড়ায়। হিমশৈলের কেবল \( \frac1{10} \) ভাগ জলের ওপর দেখা যায়। বিশ্ববিখ্যাত জাহাজ টাইটানিক তার প্রথম সমুদ্র যাত্রাতেই এরকম একটি হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গভীর সমুদ্রে ডুবে যায়।

হিমশৈল কাকে বলে?

এসকার কী?

পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহ এবং জলধারা পর্বতের পাদদেশে বা নিম্নভূমিতে সঞ্চয়কার্যের ফলে যেসব ভূমিরূপ গড়ে তোলে সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল এসকার (esker)। হিমবাহের তলা দিয়ে অথবা হিমবাহের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী দ্বারা সঞ্চিত, স্তরে স্তরে বিন্যস্ত বালি ও নুড়ি যে শাখা-প্রশাখাযুক্ত আঁকাবাঁকা শৈলশিরা গঠন করে, তাকে এসকার বলা হয়। এসকার স্বল্প উঁচু (প্রায় 15 মিটার) হয় এবং প্রায়শই জলাভূমির মধ্যে অবস্থান করে।

পিরামিড শৃঙ্গ কাকে বলে?

পার্বত্য হিমবাহের উৎসমুখে ক্ষয়কার্যের ফলে পর্বতগাত্রে যেসব সার্কের সৃষ্টি হয় সেগুলি দেখতে হাতল-লাগানো ডেক চেয়ারের মতো হয়। একটি পর্বতের বিভিন্ন দিকে পাশাপাশি তিন-চারটি ‘সার্ক’ তৈরি হলে মাঝখানের তীক্ষ্ম শিরাযুক্ত শৃঙ্গটি খাড়া এবং পিরামিডের মতো দেখতে হয়। তাই এই ধরনের শৃঙ্গকে পিরামিড শৃঙ্গ বা হর্ন বলা হয়। আল্পস পর্বতের ম্যাটারহর্ন একটি বিখ্যাত পিরামিড শৃঙ্গ।

পিরামিড শৃঙ্গ কাকে বলে?

বোল্ডার ক্লে কী?

পার্বত্য হিমবাহ বা উপত্যকা হিমবাহ পর্বতের পাদদেশে বা নিম্নভূমিতে সঞ্চয়কার্যের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ গড়ে তোলে এবং সেইসব ভূমিরূপকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। যেমন – হিমবাহ গলে যাওয়ার পর হিমবাহবাহিত বালি, কাদা ও পাথর একসঙ্গে সঞ্চিত হলে, তাকে বোল্ডার ক্লে বা হিমকর্দ বলা হয়।

ড্রামলিন কী?

পার্বত্য পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহ এবং জলধারা সম্মিলিতভাবে পর্বতের পাদদেশে বা নিম্নভূমিতে সঞ্চয়কার্যের মাধ্যমে ড্রামলিন (drumlin) ভূমিরূপ তৈরি করে। হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে যখন বালি, কাদা ও পাথর একসাথে সঞ্চিত হয়ে টিলার মতো উঁচু হয়ে থাকে, যা দূর থেকে ওলটানো নৌকার মতো দেখতে লাগে, তাকে ড্রামলিন বলা হয়।)

ড্রামলিন কী?

ইরাটিক বা আগামুক কী?

হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের মাধ্যমে সৃষ্ট বিভিন্ন ভূমিরূপের মধ্যে অন্যতম হল আগামুক বা ইরাটিক। হিমবাহের সঙ্গে বহুদূর থেকে বিভিন্ন আকৃতির শিলাখণ্ড এসে কোনো স্থানে সঞ্চিত হয়ে যে ভূমিরূপ গঠন করে, তাকে আগামুক বা ইরাটিক বলা হয়। এই ভূমিরূপ গঠনকারী শিলার সঙ্গে স্থানীয় শিলার বৈশিষ্ট্যগত কোনো মিল থাকে না। কাশ্মীরের পহেলগাম -এর উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে আগামুক দেখতে পাওয়া যায়।

হিমবাহ কী? কোন্ কোন্ হিমবাহ থেকে গঙ্গা ও যমুনার উৎপত্তি হয়েছে?

বছরের পর বছর হিমরেখার উর্ধ্বে ভূপৃষ্ঠে জমা হতে থাকা তুষার এক সময় বিশাল বরফের চাঁইতে পরিণত হয় এবং মাধ্যাকর্ষণের টানে নীচের দিকে নামতে থাকে। একেই বলা হয় হিমবাহ (glacier) বা বরফের নদী।

গঙ্গার উৎপত্তি গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে এবং যমুনার উৎপত্তি যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে।

আইস শেলফ কাকে বলে?

ভূমিভাগের সাথে সংযুক্ত পুরু ও সমুদ্রে ভাসমান বরফের সোপানকে আইস শেলফ (ice shelf) বলে। উদাহরণ – অ্যান্টার্কটিকার রস ও রনি আইস শেলফ।

‘ডিমের ঝুড়ি’ ভূমিরূপ কাকে বলে?

উপত্যকায় হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে অনেক সময় কাদা ও পাথর অর্থাৎ বোল্ডার ক্লে বা হিমকর্দ সারিবদ্ধভাবে টিলার আকারে এমনভাবে অবস্থান করে যে দূর থেকে ওগুলি দেখতে ঠিক ওলটানো নৌকা বা ওলটানো চামচের মতো মনে হয়, এগুলিকে ড্রামলিন বলে। যেসব জায়গায় একসঙ্গে অনেক ড্রামলিন অবস্থান করে সেই জায়গাকে দূর থেকে ডিম ভরতি ঝুড়ির মতো দেখতে লাগে। এজন্য ড্রামলিন অধ্যুষিত অঞ্চলকে ‘ডিমের ঝুড়ি’ ভূমিরূপ বলা হয়। আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে এই ধরনের ভূমিরূপ দেখা যায়।

বরফ-আস্তরণ কী?

অবস্থান অনুসারে পৃথিবীর সব হিমবাহকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় –

  1. উপত্যকা হিমবাহ,
  2. মহাদেশীয় হিমবাহ এবং
  3. পর্বতের পাদদেশীয় হিমবাহ।

এই তিন ধরনের হিমবাহের মধ্যে মহাদেশীয় হিমবাহের আর-এক নাম বরফ-আস্তরণ (ice sheet)। উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরুর বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বরফের স্তূপ বা বরফ-ক্ষেত্র আছে। যেহেতু বরফের এই স্তূপ পাত বা চাদরের (sheet) মতো দুই মেরু অঞ্চল, বিশেষত উত্তর মেরুপ্রদেশের অন্তর্গত গ্রিনল্যান্ড এবং দক্ষিণ মেরুপ্রদেশের অন্তর্গত অ্যান্টার্কটিকাকে আবৃত করে রেখেছে, তাই তাকে বরফ-আস্তরণ বলা হয়ে থাকে।

U-আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণি কাকে বলে?

সুউচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে দুই পার্শ্বদেশ খাড়া ও তলদেশ সমতল হয়ে যে উপত্যকা গঠিত হয় তার আকৃতি ‘U’ -এর মতো হয়। তাই একে U-আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণি বলা হয়। এই জাতীয় উপত্যকায় বৈষম্যমূলক ক্ষয়কার্যের ফলে ছোটো ছোটো হ্রদ ও হিমসিঁড়ি বা ধাপের সৃষ্টি হয়।

ফিয়র্ড কী?

ফিয়র্ড (fiord) হল সমুদ্রোপকূলে অবস্থিত হিমবাহ উপত্যকা।

ফিয়র্ড কী?

সমুদ্রোপকূলে হিমবাহ তার উপত্যকাকে এমন গভীরভাবে ক্ষয় করে যে, উপত্যকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকেও নীচু হয়ে যায়। এরপর হিমবাহ অপসারিত হলে সেই গভীর উপত্যকাগুলি সমুদ্রের জলে ভরে যায়। হিমবাহের ক্ষয়কার্যের দ্বারা সৃষ্ট, কিন্তু বর্তমানে সমুদ্রের জলে পূর্ণ এই ধরনের উপত্যকাকে বলা হয় ফিয়র্ড। উদাহরণ – নরওয়ে, সুইডেন এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আলাঙ্কা উপকূলে অনেক ফিয়র্ড দেখা যায়।

করি বা সার্ক কাকে বলে?

সংজ্ঞা – হিমবাহের উৎসমুখী ক্ষয়কার্যের কারণে উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে সার্ক (cirque) বা করি (Corrie) সৃষ্টি হয়।

প্রক্রিয়া – হিমবাহ যখন উঁচু পার্বত্য অঞ্চল থেকে নীচের দিকে নামে, তখন একইসঙ্গে হিমবাহের অবঘর্ষ ও উৎপাটন প্রক্রিয়ার দরুন পর্বতের ঢালের পিছনদিকে খাড়া দেয়াল, মধ্যভাগে অর্ধবৃত্তাকার গহ্বর এবং সামনে ধাপসমন্বিত হাতল লাগানো ডেক চেয়ারের মতো ভূভাগের সৃষ্টি হয়। অন্য নাম: স্কটল্যান্ডের স্থানীয় ভাষাতে একে করি, ওয়েলসে ক্যুম এবং ফ্রান্সে সার্ক বলা হয়।

করি বা সার্ক কাকে বলে?

এরিটি কীভাবে সৃষ্টি হয়?

পার্বত্য উপত্যকা দিয়ে হিমবাহ নীচের দিকে নামার সময় অবঘর্ষ ও উৎপাটন প্রক্রিয়ায় পর্বতগাত্রে হাতল-দেওয়া ডেক চেয়ারের মতো অর্ধবৃত্তাকার গর্ত সৃষ্টি করে। একে বলা হয় সার্ক বা করি। এইভাবে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে যখন একটি পর্বতের দুই পাশে দুটি করি গঠিত হয়, তখন তার মাঝখানের উঁচু খাড়া ছুরির ফলার মতো পর্বতশিরাকে বলা হয় এরিটি (arete) বা সেরেটেড (serrated) শৈলশিরা।

কেম কাকে বলে?

হিমবাহের শেষ প্রান্তে বা প্রান্ত গ্রাবরেখায় যখন বরফ গলে যায়, তখন হিমবাহের মধ্যে থাকা পাথর, নুড়ি, কাঁকর, কাদা প্রভৃতি স্তূপাকারে সঞ্চিত হয়ে ত্রিকোণাকার বদ্বীপের মতো ভূমিরূপ সৃষ্টি করে। এই ভূমিরূপকে বলা হয় কেম।

প্যাটারনস্টার হ্রদ কাকে বলে?

উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে হিমদ্রোণির নিম্ন অংশে অসংখ্য সিঁড়ি বা ধাপের সৃষ্টি হয়। যখন এই ধাপগুলির ভূমিতলের ঢাল উপত্যকার দিকে না হয়ে বিপরীত দিকে অর্থাৎ পর্বতগাত্রের দিকে হয়, তখন হিমবাহ-গলা জল ধাপ বেয়ে উপত্যকার মধ্যে না এসে সেই ধাপ বা সিঁড়িতেই জমে গিয়ে হ্রদের সৃষ্টি করে। এই ধরনের পুতির মালার মতো গ্রথিত ছোটো ছোটো হ্রদগুলিকে প্যাটারনস্টার হ্রদ বলা হয়।

প্যাটারনস্টার হ্রদ কাকে বলে?

নব ও কেটল কী?

নব – হিমবাহবাহিত নুড়ি, শিলাখণ্ড প্রভৃতি জলপ্রবাহের সঙ্গে বাহিত হয়ে বহিঃধৌত সমভূমির ওপর টিলার আকারে অবস্থান করলে সেই টিলাগুলিকে নব বলে।

কেটল – বহিঃধৌত সমভূমির মধ্যস্থিত বিশালাকৃতির বরফখণ্ড গলে গিয়ে যেসব গহ্বরের সৃষ্টি হয়, সেগুলিকে বলা হয় কেটল। পরবর্তীকালে ওইসব গহ্বরে হিমবাহ-গলা জল জমে যে হ্রদের সৃষ্টি হয়, সেই হ্রদকে বলা হয় কেটল হ্রদ।

উত্তর ইউরোপের অনেক স্থানে নব ও কেলের অবস্থান লক্ষ করা যায় এবং ওইসব অঞ্চলের ভূমিরূপকে ‘নব ও কেটল সমন্বিত ভূমিরূপ’ বলা হয়।

হিমবাহের গতিবেগ কীরূপ?

হিমবাহের গতি অত্যন্ত ধীর। ভূমির ঢাল, বরফের পরিমাণ, ঋতুগত পার্থক্য, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, বরফের নমনীয় অবস্থা, এসবের ওপর নির্ভর করে হিমবাহ এগোতে থাকে। হিমবাহকে বরফের নদী বলা হলেও সে অতি ধীর গতিতে এগোতে থাকে। আল্পসের হিমবাহ প্রতিদিন গড়ে 5.5 সেমি এগিয়ে যায়। হিমালয়ের হিমবাহ প্রতিদিন 2.5-7.5 সেমি করে অগ্রসর হয়। তবে বিশ্বের দ্রুততম হিমবাহ জ্যাকবশাভন -এর গতিবেগ দিনে প্রায় 45 মিটার।

হিমবাহ জিভের মতো এগিয়ে যায় কেন?

হিমবাহ যখন প্রবাহিত হয় তখন তার দুই পাশ অপেক্ষা মাঝখানের অংশ এগিয়ে যায়। কারণ, হিমবাহের মাঝখানের অংশ কেবল তলদেশ ঘর্ষণের জন্য বাধা পায়। অন্যদিকে, হিমবাহের দুই পাশ উপত্যকার পার্শ্ববর্তী অংশ এবং তলদেশ উভয়ের দ্বারাই বাধাপ্রাপ্ত হয়। এজন্য হিমবাহের মাঝখানের অংশ একটু এগিয়ে যায়। একে দেখতে অনেকটা জিভের মতো মনে হয়। একে স্নাউট (snout) বলে।

ফার্ন কী?

উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে হিমরেখার উর্ধ্বে দানাকার তুষার আংশিকভাবে গলে গিয়ে, পুনর্জমাটবদ্ধ ও শক্ত হয়ে নেভে (névé) গঠন করে। এই নেভে শক্ত ও পুনর্কেলাসিত হয়ে আরও বেশি ঘনত্বযুক্ত যে পদার্থের সৃষ্টি করে, তাকে ফার্ন (fern) বলে। ফার্ন -এর দানাগুলির আকার 0.5-5 মিলিমিটার এবং ঘনত্ব প্রতি ঘনসেমিতে 0.4-0.84 গ্রাম হয়।

করি অঞ্চলে অসংখ্য ফাটল তৈরি হয় কেন?

অথবা, ক্রেভাস ও বার্গস্রুন্ড বলতে কী বোঝ?

করির মস্তক দেশের দেওয়ালটি খুব খাড়া থাকে। অত্যন্ত খাড়া এই ঢালের মধ্যে দিয়ে নামার সময় হিমবাহ ও পর্বতগাত্রের মধ্যে ফাঁকের সৃষ্টি হয়। একে বার্গস্রুন্ড বলে। এই ফাঁক হিমবাহের পৃষ্ঠদেশ থেকে একেবারে তলদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে অর্থাৎ, অত্যন্ত গভীর হয়। আবার করির ঢাল খুব বেশি বলে উপত্যকার দিকে নামার সময় হিমবাহের মধ্যে ফাঁকের সৃষ্টি হয়। হিমবাহের মধ্যে এই ফাটলকে ক্রেভাস বলে। এই ফাটল অসংখ্য হয়, কিন্তু এর গভীরতা কম।

ভার্ব কী?

বহিঃবিধৌত সমভূমি অংশের সূক্ষ্ম বালি হ্রদের নীচে জমা হয়। ওই সব সূক্ষ্ম বালিরাশিকে ভার্ব (Varve) বলে। ভার্বের মধ্যে গোলাকার দাগ থাকে। ওই দাগগুলি এক-একটা বছরকে চিহ্নিত করে।

হোয়েলব্যাক বা কুঁজ কী?

পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে কোনো কোনো স্থানে চারিদিকে মসৃণ ও খাড়া ঢালবিশিষ্ট টিবি দেখা যায়। একে হোয়েলব্যাক বা কুঁজ বলে। স্কটল্যান্ডের হুয়া সাউন্ড অঞ্চলে এ ধরনের নর ভূমিরূপ দেখা যায়।

বার্গস্রুন্ড কী?

উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে সার্ক বা করির ওপর অবস্থানরত হিমবাহের পৃষ্ঠদেশ থেকে একেবারে তলদেশ পর্যন্ত প্রসারিত গভীর ফাটলকে বার্গস্রুন্ড বলে। এই প্রকার ফাটল 80° বা তার বেশি খাড়া হয়।


আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের প্রথম অধ্যায় “বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ” -এর “হিমবাহের বিভিন্ন কাজ দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Categories -
Please Share This Article

Related Posts

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Geography Suggestion 2026 – শূন্যস্থান পূরণ

Madhyamik Geography Suggestion 2026 Wbbse – শুদ্ধ ও অশুদ্ধ

Madhyamik Geography MCQ Suggestion 2026 Wbbse

Madhyamik History Suggestion 2026 Wbbse (Marks 4)

Madhyamik History Suggestion 2026 – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (2 Marks)