আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় “বারিমণ্ডল” -এর “জোয়ারভাটা” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “দীর্ঘধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

জোয়ারভাটা সৃষ্টির কারণ চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।
অথবা, জোয়ারভাটা কীভাবে সংঘটিত হয়, তা চিত্রসহ আলোচনা করো।
জোয়ারভাটা সৃষ্টি –
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় অন্তর সমুদ্রের জলরাশি কোথাও ফুলে ওঠে এবং কোথাও নেমে যায়। জলরাশির এই ফুলে-ওঠা বা স্ফীতিকে জোয়ার এবং নেমে যাওয়াকে ভাটা বলা হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রধানত দুটি কারণে জোয়ারভাটার সৃষ্টি হয় –
- পৃথিবীর আবর্তন গতিজনিত কেন্দ্রাতিগ বল এবং
- পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ বল।
পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ বল –
নিউটন -এর মহাকর্ষ সূত্রঅনুসারে, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি বস্তুই একে অপরকে আকর্ষণ করে। সুতরাং গ্রহ, উপগ্রহ, সূর্য প্রভৃতি প্রতিটি জ্যোতিষ্কই পরস্পর পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এই হিসেবে চাঁদ ও সূর্য, পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। তবে সূর্যের তুলনায় পৃথিবীর ওপর চাঁদের আকর্ষণ বল বেশি হয়। কারণ যদিও চাঁদের তুলনায় সূর্য প্রায় 2 কোটি 70 লক্ষ গুণ বড়ো, কিন্তু পৃথিবী থেকে চাঁদ যত দূরে আছে, সূর্য রয়েছে তার থেকে প্রায় 389 গুণ বেশি দূরত্বে। এজন্য জোয়ারভাটা সৃষ্টির ক্ষেত্রে চাঁদের আকর্ষণ সূর্যের আকর্ষণের প্রায় দ্বিগুণ। তাই প্রধানত চাঁদের আকর্ষণে পৃথিবীর জলরাশি ফুলে ওঠে অর্থাৎ জোয়ার হয়। সূর্যের আকর্ষণে পৃথিবীতে জোয়ার হলেও তা অতটা প্রবল আকার ধারণ করে না। তবে পৃথিবী, চন্দ্র ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করলে জোয়ারের তীব্রতা বেশি হয়।

ভূপৃষ্ঠের যে স্থানে চাঁদের আকর্ষণে জোয়ার সৃষ্টি হয়, ঠিক তার বিপরীত দিকের স্থানটিতে অর্থাৎ প্রতিপাদ স্থানেও পৃথিবীর আবর্তনজনিত কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে জোয়ার হয়। আর, যে দুটি স্থানে জোয়ার হয়, ঠিক তার সমকোণে অবস্থিত স্থান দুটির জলরাশি সরে যায় বলে সেখানে তখন ভাটা হয়।
পৃথিবীর আবর্তন গতিজনিত কেন্দ্রাতিগ বল –
পৃথিবী নিজের মেরুরেখার চারদিকে অনবরত আবর্তন করে চলেছে। এর ফলে ভূপৃষ্ঠে একটি বিকর্ষণ শক্তি বা কেন্দ্রাতিগ বলের সৃষ্টি হয় এবং তার প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের জলরাশি বাইরের দিকে বিক্ষিপ্ত হওয়ার প্রবণতা লাভ করে। একেই কেন্দ্রাতিগ বল বলে। এই বল পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতে কাজ করে। এইভাবে পৃথিবীর আবর্তন গতি সমুদ্রে জোয়ার সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
তেজ কোটাল বা ভরা কোটাল এবং মরা কোটাল কীভাবে হয় বর্ণনা করো।
অথবা, পৃথিবীতে ভরা জোয়ার ও মরা জোয়ার সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা করো।
তেজ কোটাল বা ডরা কোটাল বা ভরা জোয়ার –
অমাবস্যা ও পূর্ণিমার দিনে প্রবল জোয়ার হয়। কারণ ওই দু-দিন পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্যের কেন্দ্রবিন্দু একই সরলরেখায় অবস্থান করে। চাঁদ ও সূর্যের কেন্দ্রবিন্দু একই সরলরেখায় অবস্থান করলে উভয়ের সম্মিলিত আকর্ষণে পৃথিবীতে জোয়ারের জল অনেক বেশি ফুলে ওঠে। তাই একে তেজ কোটাল বা ভরা কোটাল বা ভরা জোয়ার বলা হয়। এই ধরনের ঘটনা প্রতি 15 দিনে একবার হয়।
- অমাবস্যার দিন – পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে থাকে চাঁদ। ওইদিন চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণী শক্তি পৃথিবীর একই দিকে ক্রিয়া করে। ফলে অমাবস্যার দিন জোয়ারের জল অনেক বেশি ফুলে ওঠে। একে বলা হয় ভরা জোয়ার বা ভরা কোটাল। অমাবস্যা তিথিতে চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর একদিকে অবস্থান করায় উভয়ের সম্মিলিত আকর্ষণে পৃথিবীতে জোয়ার তীব্র আকার ধারণ করে। তাই পূর্ণিমার দিন অপেক্ষা অমাবস্যার দিনে জোয়ারের বেগ সর্বাধিক হয়।
- পূর্ণিমার দিন – চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে থাকে পৃথিবী। এদিন চাঁদ পৃথিবীর যে স্থানকে আকর্ষণ করে, সূর্যের আকর্ষণ পড়ে ঠিক তার বিপরীত দিকে অর্থাৎ প্রতিপাদ স্থানে। ফলে এদিনও জোয়ারের জল অনেক বেশি মাত্রায় ফুলে ওঠে। এই দিনটিতেও ভরা জোয়ার বা ভরা কোটাল হয়।
মরা কোটাল বা মরা জোয়ার –
সপ্তমী/অষ্টমী তিথিতে (শুরু ও কৃষ্ণপক্ষে) চাঁদ ও সূর্য সমকোণে (90°) থেকে পৃথিবীকে আকর্ষণ করে অর্থাৎ পরস্পর পরস্পরের আকর্ষণের বিরোধিতা করায় কার্যহীন বল উৎপন্ন হয়। এজন্য এই দু-দিন চাঁদের আকর্ষণে মুখ্য জোয়ার ও কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে গৌণ জোয়ার-দুটিরই প্রবলতা কম হয়। একে বলা হয় মরা জোয়ার বা মরা কোটাল।

আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় “বারিমণ্ডল” -এর “জোয়ারভাটা” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “দীর্ঘধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন