মাধ্যমিক ভূগোল – ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ – ভারতের শিল্প – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

Souvick

আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের ষষ্ঠ অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের শিল্প” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

মাধ্যমিক ভূগোল - ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ - ভারতের শিল্প - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
Contents Show

শিল্পের সংজ্ঞা দাও।

অথবা, শিল্প কাকে বলে?

শিল্প হল সম্পদ রূপান্তরের প্রক্রিয়া। বনজ, খনিজ এবং কৃষিজ সম্পদকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে শিল্পকেন্দ্র বা কারখানায় যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যে পরিণত করা হয়, তাকে বলা হয় শিল্প। যেমন – কৃষিজ সম্পদ, কার্পাস থেকে বস্ত্রশিল্প এবং খনিজ সম্পদ, আকরিক লোহা থেকে লোহা ও ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠে।

মৌলিক শিল্প কাকে বলে?

যে সকল শিল্পের ওপর অন্যান্য শিল্পের বিকাশ নির্ভর করে বা যে সকল শিল্পের উৎপাদিত দ্রব্য অন্যান্য শিল্পের কাঁচামালরূপে ব্যবহৃত হয়, তাকে মৌলিক শিল্প (basic industry) বলে। যেমন – লোহা ও ইস্পাত শিল্পে উৎপাদিত যন্ত্রপাতি ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য শিল্পে ব্যবহৃত হয়।

অনুসারী শিল্প কাকে বলে?

যখন কোনো শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্যসমূহকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে পরস্পর নির্ভরশীল অনেক শিল্প গড়ে তোলা হয়, তখন প্রথমটিকে কেন্দ্রীয় শিল্প এবং বাকি শিল্পগুলিকে অনুসারী শিল্প বলে। উদাহরণ – হলদিয়ার পেট্রোরসায়ন শিল্প হল কেন্দ্রীয় শিল্প আর এই শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্যাদিকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে যেসব শিল্প গড়ে উঠছে তাকে অনুসারী শিল্প বলে।

অবিশুদ্ধ কাঁচামাল কী?

যেসব কাঁচামাল শিল্পজাত দ্রব্যে পরিণত করলে তার ওজন কমে যায়, সেইসব কাঁচামালকে অশুদ্ধ বা অবিশুদ্ধ কাঁচামাল বলে। আকরিক লোহা, আকরিক তামা, আখ প্রভৃতি হল অবিশুদ্ধ কাঁচামাল। যেমন – এক টন কাঁচা লোহা প্রস্তুত করতে 1.7 টন আকরিক লোহা, 1.30 টন কয়লা, 0.50 টন চুনাপাথর ও ডলোমাইট ও অন্যান্য দ্রব্য মিলিয়ে মোট 5 টন কাঁচামালের প্রয়োজন হয়।

বিশুদ্ধ কাঁচামাল কী?

যেসব কাঁচামাল শিল্পজাত দ্রব্যে পরিণত করলেও তার ওজন কমে না, সেইসব কাঁচামালকে বিশুদ্ধ কাঁচামাল বলে। পাট, তুলো, রেয়ন প্রভৃতি এই জাতীয় কাঁচামাল। যেমন – এক মেট্রিক টন তুলো থেকে এক মেট্রিক টন সুতো এবং ওই একই পরিমাণ সুতো থেকে 1 মেট্রিক টন ওজনের বস্ত্র উৎপাদন করা যায়।

লোহা ও ইস্পাত শিল্পে কী কী কাঁচামাল লাগে?

লোহা ও ইস্পাত শিল্পের প্রধান কাঁচামালগুলি হল – আকরিক লোহা, স্ক্র্যাপ লোহা, স্পঞ্জ লোহা, কয়লা, অক্সিজেন এবং চুনাপাথর। এ ছাড়া ডলোমাইট, ম্যাঙ্গানিজ, ক্রোমিয়াম, নিকেল, টাংস্টেন, ভ্যানাডিয়াম প্রভৃতিও কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই শিল্পটিতে প্রচুর পরিমাণে জলেরও প্রয়োজন হয়।

ভারতের দুটি বৃহদায়তন লোহা ও ইস্পাত কারখানার নাম লেখো।

ভারতের দুটি বৃহদায়তন লোহা ও ইস্পাত কারখানা হল –

  1. ছত্তিশগড়ের ভিলাই স্টিল প্লান্ট এবং
  2. ঝাড়খণ্ডের বোকারো স্টিল প্লান্ট।

লোহা ও ইস্পাত শিল্পে ম্যাঙ্গানিজ প্রয়োজন হয় কেন?

উন্নতমানের ইস্পাত বা ফেরো-ম্যাঙ্গানিজ উৎপাদনের জন্য লোহা ও ইস্পাত শিল্পে ব্যাপকভাবে ম্যাঙ্গানিজ ব্যবহার করা হয়। বিশুদ্ধ লোহা ও ম্যাঙ্গানিজের মিশ্রণে উৎপন্ন ইস্পাত অত্যন্ত দৃঢ় এবং ক্ষয়রোধী ও মরিচা প্রতিরোধী। ফলে এই ইস্পাত উত্তাপ ও আঘাত সহ্য করতে পারে এবং এতে মরিচা ধরে না।

ভারতের দুটি রেলইঞ্জিন ও একটি মোটরগাড়ি নির্মাণকেন্দ্রের নাম করো।

ভারতের দুটি রেলইঞ্জিন নির্মাণকেন্দ্র হল –

  1. পশ্চিমবঙ্গের চিত্তরঞ্জন এবং
  2. উত্তরপ্রদেশের বারাণসী এবং একটি মোটরগাড়ি নির্মাণকেন্দ্র হল – হরিয়ানার গুরগাঁও।

পেট্রোরসায়ন শিল্পের প্রধান উৎপাদিত দ্রব্যগুলি কী কী?

পেট্রোরসায়ন শিল্পে কৃত্রিম তন্তু (পলিয়েস্টার/নাইলন প্রভৃতি), প্লাস্টিক, কৃত্রিম রবার, আঠা, রং, কীটনাশক, সুগন্ধি দ্রব্য প্রভৃতি উৎপন্ন হয়।

পূর্ব ও পশ্চিম ভারতের একটি করে পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রের নাম লেখো।

পূর্ব ভারতের একটি পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র হল পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া (হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড) এবং পশ্চিম ভারতের একটি পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র হল গুজরাতের ভাদোদরা (ইন্ডিয়ান পেট্রোকেমিক্যালস কর্পোরেশন লিমিটেড)।

হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প কী?

যেসব ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে অন্যান্য শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয় এবং বিভিন্ন বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক্স ভোগ্যপণ্য প্রস্তুত করা হয়, তাকে হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলে। ক্যামেরা, রেডিয়ো, টেলিভিশন, টাইপরাইটার, ঘড়ি, বৈদ্যুতিক পাখা প্রভৃতি এই শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্য।

উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের একটি করে পেট্রোরাসায়নিক শিল্পকেন্দ্রের নাম লেখো।

উত্তর ভারতের একটি পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র হল হরিয়ানার পানিপথ (পানিপথ পেট্রোকেমিক্যাল প্লান্ট) এবং দক্ষিণ ভারতের একটি পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র হল কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোর (ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারি অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড)।

উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের একটি করে মোটরগাড়ি নির্মাণকেন্দ্রের নাম লেখো।

উত্তর ভারতের একটি মোটরগাড়ি নির্মাণকেন্দ্র হল হরিয়ানার গুরগাঁও (মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়া লিমিটেড) এবং দক্ষিণ ভারতের একটি মোটরগাড়ি নির্মাণকেন্দ্র হল তামিলনাড়ুর চেন্নাই (ফোর্ড ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড)।

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে ভারতের কোন্ কোন্ স্থানে লোহা ও ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠেছে?

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর, ওডিশার রৌরকেলা, ছত্তিশগড়ের ভিলাই, ঝাড়খণ্ডের বোকারো, অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম, কর্ণাটকের বিজয়নগর এবং তামিলনাডুর সালেমে লোহা ও ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠেছে।

ভারতের চারটি প্রধান লোহা ও ইস্পাত উৎপাদন কেন্দ্রের নাম লেখো।

ভারতের চারটি প্রধান লোহা ও ইস্পাত উৎপাদন কেন্দ্রের নাম –

  1. ছত্তিশগড়ের ভিলাই,
  2. ঝাড়খণ্ডের বোকারো,
  3. পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর এবং
  4. ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর।

লোহা ও ইস্পাত শিল্প গঠনের জন্য কী কী খনিজের প্রয়োজন?

লোহা ও ইস্পাত শিল্প গঠনের জন্য যেসব খনিজের প্রয়োজন হয় সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –

  • আকরিক লোহা,
  • কয়লা,
  • চুনাপাথর,
  • ডলোমাইট,
  • ম্যাঙ্গানিজ,
  • নিকেল,
  • টাংস্টেন,
  • ক্রোমিয়াম প্রভৃতি।

পেট্রোরসায়ন শিল্পগুচ্ছ সম্পর্কে টীকা লেখো।

পেট্রোলিয়াম বা অশোধিত খনিজ তেল, শোধন করার সময় প্রাপ্ত বিভিন্ন উপজাত দ্রব্য যেমন – প্রোপেন, বুটেন, ইথেন, মিথেন, বেনজল, বিউটাডিন, ইথানল, প্রোপিলিন প্রভৃতিকে কাজে লাগিয়ে যখন বিভিন্ন ধরনের শিল্প একসঙ্গে গড়ে ওঠে, তখন তাকে বলে পেট্রোরসায়ন শিল্পগুচ্ছ। এই শিল্পগুলি পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল।

পেট্রোরসায়ন শিল্পকে আধুনিক শিল্পদানব বলা হয় কেন?

পেট্রোরসায়ন শিল্পের শিল্পজাত দ্রব্যকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অনুসারী ও সাহায্যকারী শিল্প বিকাশলাভ করে। এছাড়াও আধুনিক শিল্পব্যবস্থায় এই শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম বলে একে আধুনিক শিল্পদানব বলা হয়।

TISCO সম্পর্কে টীকা লেখো।

TISCO -এর পুরো কথাটি হল ‘Tata Iron and Steel Company’। জামশেদজি টাটার পরিকল্পনায় ঝাড়খণ্ডের সিংভূম জেলায় সুবর্ণরেখা ও খরকাই নদীর মিলনস্থলে 1907 সালে এই কারাখানাটি স্থাপিত হয়। এটি বেসরকারি উদ্যোগে গঠিত বৃহত্তম লোহা ও ইস্পাত কারখানা।

কার্পাসবয়ন শিল্পকে শিকড় আলগা শিল্প বলে কেন?

কার্পাসবয়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হল কার্পাস বা তুলো। এটি একটি বিশুদ্ধ কাঁচামাল অর্থাৎ সমপরিমাণ (1 টন) তুলো থেকে সমপরিমাণ (1 টন) সুতো বা বস্ত্র উৎপাদিত হয়। ফলে এই শিল্প কাঁচামাল উৎসের কাছে বা বাজারের কাছে বা এদের মধ্যবর্তী যে-কোনো স্থানেই গড়ে উঠতে পারে। অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট স্থানে গড়ে ওঠার প্রবণতা লক্ষ করা যায় না। তাই কার্পাসবয়ন শিল্পকে শিকড় আলগা শিল্প বলে।

তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প বলতে কী বোঝ?

যখন কম্পিউটার ও টেলিযোগাযোগ বা দূরসঞ্চার ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার তথ্যের অন্বেষণ, পুনরুদ্ধার, পরিবর্তন, পরিমার্জন, বিশ্লেষণ, সংরক্ষণ বা মজুত প্রভৃতি কাজ ব্যবসায়িক প্রয়োজনে করা হয়, তখন তার নাম তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। বিভিন্ন ধরনের পরিকাঠামো ও উৎপাদন ব্যবস্থা এই তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য প্রয়োজন হয়, যেমন – কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, সফটওয়ার, ইলেকট্রনিকস বা বৈদ্যুতিন সেমিকন্ডাক্টর, ইন্টারনেট, ই-কমার্স, দূরসঞ্চার, সাজসরঞ্জাম, কম্পিউটার পরিসেবা ইত্যাদি।

ভারতে কার্পাসবয়ন শিল্পের সম্ভাবনা কীরূপ?

ভারতের কার্পাসবয়ন শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল, কারণ –

  • ভারত একটি জনবহুল দেশ বলে এখানে বস্ত্রের অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রচুর।
  • ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলি এখনও পর্যন্ত বস্ত্র শিল্পে খুব বেশি উন্নতি লাভ করতে পারেনি। এজন্য প্রতিবেশী দেশগুলিতেও ভারতীয় বস্ত্রের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
  • উন্নত প্রযুক্তি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ভারতীয় বস্ত্রের বিক্রয়মূল্য হ্রাস এবং উৎপাদনগত বৈচিত্র্য আনা সম্ভব হলে বিশ্বের বাজারেও ভারতীয় বস্ত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।

লোহা ও ইস্পাত শিল্পকে সব শিল্পের মেরুদণ্ড বলে কেন?

লোহা ও ইস্পাত শিল্পের ওপর অন্যান্য শিল্পের বিকাশ নির্ভর করে। লোহা ও ইস্পাত শিল্পের উৎপাদিত দ্রব্য দিয়ে কৃষিভিত্তিক, ধাতব শিল্প, যন্ত্রপাতি, রাস্তাঘাট, সেতু নির্মাণ সব ধরনের শিল্পকাজই করা যায়। তাই এই শিল্পকে সব শিল্পের মেরুদণ্ড বলে।

একটি কয়লাকেন্দ্রিক এবং একটি বন্দরভিত্তিক লোহা ও ইস্পাত কারখানার নাম করো।

একটি কয়লাকেন্দ্রিক লোহা ও ইস্পাত কারখানা হল ইন্ডিয়ান আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানির বার্নপুর-কুলটি স্টিল প্লান্ট এবং একটি বন্দরভিত্তিক লোহা ও ইস্পাত কারখানা হল রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগম লিমিটেডের বিশাখাপত্তনম স্টিল প্লান্ট।

ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলতে কী বোঝ?

যে শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে বিভিন্ন প্রকার ধাতু বিশেষত লোহা ও ইস্পাত ব্যবহৃত হয় এবং নানা ধরনের যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয়, তাকে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলে। যেমন – যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ নির্মাণ শিল্প, মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্প প্রভৃতি। ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প দুই প্রকার। যথা –

  1. ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প ও
  2. হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প।

সংকর ইস্পাত শিল্প সম্পর্কে টীকা লেখো।

যে ইস্পাত শিল্পে এক বা একাধিক লৌহ-সংকর ধাতু ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ধরনের ধাতব ও বৈদ্যুতিক গুণাবলিসম্পন্ন ইস্পাত উৎপাদন করা হয়, তাকে সংকর ইস্পাত শিল্প (alloy steel industry) বলে। ভারতে মোট 3টি বৃহদায়তন সংকর ইস্পাত কারখানা আছে। এগুলি হল –

  1. কর্ণাটকের বিশ্বেশ্বরায়া আয়রন অ্যান্ড স্টিল প্লান্ট, 
  2. দুর্গাপুরের অ্যালয় স্টিল প্লান্ট ও
  3. তামিলনাড়ুর সালেম স্টিল প্লান্ট।

ভারতের একটি সরকারি এবং একটি বেসরকারি লোহা ও ইস্পাত শিল্পকেন্দ্রের নাম লেখো।

ভারতের একটি সরকারি লোহা ও ইস্পাত শিল্পকেন্দ্রের নাম হল – SAIL -এর অধীনস্থ ভিলাই স্টিল প্লান্ট (ভদ্রাবতী) এবং বেসরকারি লোহা ও ইস্পাত শিল্পকেন্দ্রের নাম হল – টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কর্পোরেশন (জামশেদপুর)।

পশ্চিমবঙ্গের দুটি কার্পাসবয়ন শিল্পকেন্দ্রের নাম লেখো।

পশ্চিমবঙ্গের দুটি কার্পাসবয়ন শিল্পকেন্দ্রের নাম হল –

  1. শ্রীরামপুর ও
  2. হাওড়া।

ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প সম্পর্কে টীকা লেখো।

যে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে বৃহদায়তন শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বড়ো ও ভারী যন্ত্রপাতি, ভারী বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, কৃষি ও খনিতে প্রয়োজনীয় বড়ো যন্ত্রপাতি, বিভিন্ন প্রকার যানবাহন ইত্যাদি প্রস্তুত করা হয়, তাকে ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলে। উদাহরণ – পশ্চিমবঙ্গের চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস।

ভারতে পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রগুলির বেশিরভাগ বন্দরের কাছে গড়ে উঠেছে কেন?

ভারত পেট্রোলিয়াম বা খনিজ তেল উত্তোলনে স্বয়ম্ভর নয়। প্রতি বছর দেশের মোট চাহিদার প্রায় 83% বিভিন্ন দেশ থেকে জলপথে বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা হয়। যেহেতু দেশের অভ্যন্তরে শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠলে আমদানিকৃত দ্রব্য বন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরে পাঠানোর জন্য পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। তাই দেশের বেশিরভাগ খনিজ তেল শোধনাগার ও পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রগুলি বন্দরের কাছে গড়ে উঠেছে।

তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কয়েকটি সমস্যা উল্লেখ করো।

তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কয়েকটি সমস্যা হল –

  • আন্তর্জাতিক স্তরে চাহিদার হ্রাসবৃদ্ধি এই শিল্পে সমস্যার সৃষ্টি করে।
  • ভারতের সর্বত্র এই শিল্পের বিকাশ সঠিকভাবে হয়নি।
  • অনেকক্ষেত্রে বিদেশি মেধার তুলনায় দেশীয় মেধার গুণগত মান কম হয়।

মিনি স্টিল প্লান্ট সম্বন্ধে ধারণা দাও।

যে সকল লোহা ও ইস্পাত কারখানার বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা 10 লক্ষ টনের কম এবং বৈদ্যুতিক চুল্লি (electric arc furnace) -র সাহায্যে স্পঞ্জ আয়রন ও স্ক্র্যাপ আয়রন থেকে ইস্পাত উৎপাদন করা হয়, তাদের মিনি স্টিল প্লান্ট বলা হয়। বর্তমানে ভারতে প্রায় 650টি মিনি স্টিল প্লান্ট রয়েছে। ভারতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মিনি স্টিল প্লান্ট হল –

  • পশ্চিমবঙ্গের ন্যাশনাল আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি,
  • অন্ধ্রপ্রদেশের অন্ধ্র স্টিল কর্পোরেশন লিমিটেড,
  • মহারাষ্ট্রের মুকুন্দ লিমিটেড প্রভৃতি।

ভারতের দুটি কৃষিভিত্তিক এবং দুটি খনিভিত্তিক শিল্পের নাম করো।

ভারতের দুটি কৃষিভিত্তিক শিল্প হল –

  1. চিনি শিল্প,
  2. কার্পাসবয়ন শিল্প এবং

দুটি খনিভিত্তিক শিল্প হল –

  1. লোহা ও ইস্পাত শিল্প,
  2. সিমেন্ট শিল্প।

SAIL কী?

SAIL (Steel Authority of India Limited) হল একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, যা ভারতে সরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা লোহা ও ইস্পাত কারখানাগুলি পরিচালনা করে। SAIL -এর অন্তর্ভুক্ত 8টি বৃহদায়তন কারখানা আছে যার মধ্যে 1টি সংকর ইস্পাত কারখানা, 4টি লোহা ও ইস্পাত কারখানা এবং 1টি লৌহ-সংকর কারখানা।

ভারতের তিনটি রাজ্যে অবস্থিত একটি করে মোটরগাড়ি নির্মাণকেন্দ্রের নাম লেখো।

ভারতের তিনটি রাজ্যে অবস্থিত একটি করে মোটরগাড়ি নির্মাণকেন্দ্রের নাম হল –

  • হরিয়ানার গুরগাঁও (মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়া লিমিটেড),
  • উত্তরপ্রদেশের বারাণসী ও
  • মধ্যপ্রদেশের ভোপাল।

শিল্পাঞ্চল কাকে বলে?

যে ভৌগোলিক এলাকায় শিল্পের একদেশিকতার কারণে বিভিন্ন সহযোগী ও অনুসারী শিল্পের বিকাশ ঘটে, তাকে শিল্পাঞ্চল বলে। উদাহরণ – পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চল।

পেট্রোরসায়ন শিল্পকে কেন ‘সূর্যোদয়ের শিল্প’ বলে?

বৈচিত্র্য, পরিমাণ ও ব্যাবহারিক দিক থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পেট্রোরসায়ন শিল্পের গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে ও এর ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের শিল্প বিকাশ লাভ করেছে। তাই পেট্রোরসায়ন শিল্পকে ‘সূর্যোদয়ের শিল্প’ বলা হয়।

পূর্ত শিল্প কী?

যে শিল্পে লোহা ও ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, তামা প্রভৃতি ধাতব দ্রব্য এবং রবার, প্লাস্টিক প্রভৃতি অধাতব দ্রব্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে উন্নত প্রযুক্তি ও দক্ষ কলাকৌশলের মাধ্যমে নানা ধরনের হালকা, ভারী ও সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি, কলকবজা, যন্ত্রাংশ এবং সংযোজিত ইস্পাত দ্রব্য তৈরি করা হয়, তাকে পূর্ত শিল্প বলে। এর আরেক নাম ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প।


আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের ষষ্ঠ অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের শিল্প” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Categories -
Please Share This Article

Related Posts

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Geography Suggestion 2026 – শূন্যস্থান পূরণ

Madhyamik Geography Suggestion 2026 Wbbse – শুদ্ধ ও অশুদ্ধ

Madhyamik Geography MCQ Suggestion 2026 Wbbse

Madhyamik History Suggestion 2026 Wbbse (Marks 4)

Madhyamik History Suggestion 2026 – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (2 Marks)