এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকে ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস - বিশ শতকে ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন


বিশ শতকে ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন

Table of Contents

বিশ শতকে ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলনগুলি ছিল ভারতীয় ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই আন্দোলনগুলি ভারতীয় সমাজে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

নারী আন্দোলন

বিশ শতকে ভারতে নারী আন্দোলন ছিল অত্যন্ত জোরালো। এই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল নারীদের অধিকার ও স্বাধীনতা অর্জন করা। নারী আন্দোলনের ফলে ভারতীয় নারীরা শিক্ষা, চাকরি, রাজনীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রগতি করতে সক্ষম হয়েছিল।

ছাত্র আন্দোলন

বিশ শতকে ভারতে ছাত্র আন্দোলন ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি। এই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা অর্জন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন এবং ছাত্রদের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা করা। ছাত্র আন্দোলনের ফলে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন

বিশ শতকে ভারতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলনগুলি ছিল সমাজের নিম্নবর্গের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল বর্ণবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও বৈষম্য দূর করা। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলনের ফলে ভারতীয় সমাজে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন আসতে শুরু করে।

বঙ্কিমচন্দ্রের রচনা ও অবনীন্দ্রনাথের ভারতমাতার মাধ্যমে ভারতের নারী সমাজের কোনদিক ফুটে উঠেছিল?

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর রচিত আনন্দমঠ উপন্যাসে দেশকে দেশমাতারূপে উপস্থাপন করেন। তিনি তাঁর অন্যান্য কয়েকটি উপন্যাসে নারী মহিমাকেও তুলে ধরেন। অন্যদিকে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক অঙ্কিত ভারতমাতা ছবিতে ভারতমাতাকে দেবী ও মানবীরূপে চিহ্নিত করে নারী মহিমাকে তুলে ধরেন।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকালে নারী সমাজের অংশগ্রহণের ধরন কী ছিল?

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকালে নারীসমাজের অংশগ্রহণের ধরনগুলি হল –

  • ঘরের অভ্যন্তরে থেকেই নারীরা এই আন্দোলনে যোগ দেয়
  • বিদেশি বস্ত্র বর্জন ও পোড়ানো, দেশি কাপড়ের প্রচলন, অরন্ধন দিবস পালন প্রভৃতি কর্মসূচিতে নারীরা যোগ দেয়
  • বিপ্লবীদের আশ্রয়দান, গোপনে সংবাদ ও অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমেও নারীরা আন্দোলনে অংশ নেয়।

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে সরলাদেবী চৌধুরানির ভূমিকা কীরূপ ছিল?

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে সরলাদেবী চৌধুরানির ভূমিকা হল —

  • নিজে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি ভারতী পত্রিকায় বিভিন্ন প্রবন্ধ প্রকাশের মাধ্যমে নারী শক্তিকে উজ্জীবিত করতে সচেষ্ট হন।
  • বীরাষ্টমী ব্রত, প্রতাপাদিত্য ব্রত, উদয়াদিত্য ব্রত প্রচলনের মাধ্যমে বাঙালি যুবকদের লাঠিখেলা, কুস্তি, তরবারি খেলা, শরীরচর্চায় উৎসাহ দান করেন।

ননীবালা দেবী বিখ্যাত কেন?

ননীবালা দেবী ছিলেন বিপ্লবী অমরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মেজো পিসি। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকালে তিনি বিপ্লবীদের আশ্রয়দান ও গোপনে অস্ত্র সরবরাহ করেন। এই অপরাধে তাঁকে ব্রিটিশ সরকার আটক করে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য তাঁর উপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েও পুলিশ তাঁর কাছ থেকে বিপ্লবীদের কোনো গোপন তথ্য আদায় করতে পারেনি।

মাদাম কামা বিখ্যাত কেন?

বহির্ভারতে বিপ্লবী আন্দোলন সংগঠন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মাদাম কামা। তিনি ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির স্টুটগার্ট শহরে সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে যোগদান করেন। সেখানে তিনি ভারতে স্বাধীনতার প্রতীক রূপে বন্দে মাতরম লেখা তেরঙ্গা (লাল, হলুদ ও সবুজ) জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। তিনি ভারতের বিপ্লববাদের জননী নামে পরিচিত।

সরোজিনী নাইডু বিখ্যাত কেন?

বিশ শতকে ভারতে জাতীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অগ্রণী নারী ছিলেন সরোজিনী নাইডু (১৮৭৯-১৯৪৯ খ্রি.)। জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি মুথুলক্ষ্মী রেড্ডির সঙ্গে ভারতীয় মহিলা সমিতি স্থাপন করেন। তিনি মহাত্মা গান্ধি পরিচালিত জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন এবং আইন অমান্য আন্দোলনে, ভারতছাড়ো আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

অসহযোগ আন্দোলনকালে বি. আম্মার ভূমিকা কীরূপ ছিল?

অসহযোগ আন্দোলনকালে অংশগ্রহণকারী মুসলিম নারীদের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হলেন মহম্মদ আলি ও শওকত আলির মা আবাদি বানু বেগম। বি. আম্মা নামে পরিচিত এই নারী পাঞ্জাব, পাটনা, ভাগলপুর, আমেদাবাদ গুজরানওয়ালা-সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই আন্দোলনের সমর্থনে প্রচার করেন।।

কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় স্মরণীয় কেন?

জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বিশিষ্ট নেত্রী ছিলেন কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় (১৯০৩-১৯৮৮ খ্রি.)। তিনি ছিলেন নিখিল ভারত মহিলা সম্মেলনের প্রথম সাধারণ সম্পাদক। পরবর্তীকালে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সভানেত্রী হন।

মুথুলক্ষ্মী রেড্ডি কে?

মুথুলক্ষ্মী রেড্ডি ছিলেন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির একজন বিখ্যাত মহিলা চিকিৎসক। তিনি ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা আইন সভার সদস্য। তিনি সরোজিনী নাইডুর সঙ্গে যৌথভাবে ভারতীয় মহিলা সমিতি স্থাপন করেন। এ ছাড়া তিনি ভারতীয় নারীর ভোটাধিকার প্রবর্তনের দাবি করেন ও দেবদাসী প্রথার বিলোপসাধনের জন্য বিল আনেন।

বাসন্তী দেবী কীভাবে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন?

অসহযোগ আন্দোলনকালে অংশগ্রহণকারীদের অন্যতম ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের স্ত্রী বাসন্তী দেবী। তিনি ব্রিটিশ যুবরাজ বা প্রিন্স অফ ওয়েলস্ – এর কলকাতায় আগমনের বিরুদ্ধে প্রচার চালান ও রাজপথে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ দেখান। এই অপরাধে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

আইন অমান্য আন্দোলনে বাংলার নারীদের কর্মসূচি কি ছিল?

আইন অমান্য আন্দোলনকালে বাংলার নারীদের কর্মসূচির বিভিন্ন দিক হল –

  • মেদিনীপুরের ঘাটাল, কাঁথি, তমলুক প্রভৃতি স্থানের নারীরা সরকারি আইন অমান্য করে লবণ প্রস্তুত ও তা বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে।
  • জাতীয়তাবাদী ভাবধারার প্রসার ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার পাশাপাশি নারীশিক্ষার প্রসার, গ্রামীণ শিল্পের বিকাশ ও অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ কর্মসূচির উপরেও নারীরা গুরুত্ব আরোপ করে।

ভগিনী সেনা কী?

ভারতছাড়ো আন্দোলনকালে বাংলার মেদিনীপুরে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি গ্রামীণ মহিলারা ব্রিটিশ বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রাম চালানোর জন্য নারী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। এইরূপ সংগঠন ভগিনী সেনা নামে পরিচিত। ভগিনী সেনার অনেক নারী জেলবন্দি হন ও ৮৪ জনেরও বেশি নারী ধর্ষিতা হন।

মাতঙ্গিনী হাজরা ইতিহাসে স্মরণীয় কেন?

ভারতছাড়ো আন্দোলনের সময় তমলুক থানা ও কোর্ট চত্বর দখল অভিযানের উদ্দেশ্যে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চারটি মিছিল এসেছিল। এই মিছিলের একটির নেতৃত্বে ছিলেন ৭৩ বছরের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী হাজরা। অভিযানকালে তিনি কোর্ট চত্বরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ও পুলিশের গুলিতে জখম হন ও মারা যান। তাঁর এই সাহসিক অভিযানের কারণে তিনি গান্ধিবুড়ি নামে পরিচিত।

দীপালি সংঘ কী?

বিপ্লবী লীলা রায় ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেন দীপালি সংঘ। এর উদ্দেশ্য ছিল বিপ্লবী আন্দোলনের জন্য নারীদের প্রস্তুত করা। এখানে নারীদের লাঠিখেলা, শরীর চর্চা ও অস্ত্র চালানো, অস্ত্রশস্ত্র জোগাড় ও বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার শিক্ষা দেওয়া হত। এভাবে এই সংঘ নারী বিপ্লবীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার স্মরণীয় কেন?

দীপালি সংঘের অন্যতম সদস্যা ও বাংলার বিপ্লবী নারী ছিলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (১৯১১-৩২ খ্রি.)। তিনি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের নায়ক মাস্টারদা সূর্য সেনের সহকারিণী ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে এক দল বিপ্লবী চট্টগ্রামের পাহাড়তলি ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে সফল হলেও তিনি বিষ খেয়ে প্রাণত্যাগ করে শহিদ হন।

কল্পনা দত্ত বিখ্যাত কেন?

কল্পনা দত্ত (১৯১২-১৯৯৫ খ্রি.) ছিলেন চট্টগ্রামের বিখ্যাত বিপ্লবী নারী। বিপ্লবী নির্মল সেনের সঙ্গে পরিচয় সূত্রে তিনি বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দেন এবং বিপ্লবী দলের গোপন কাগজপত্র ও অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রাখার দায়িত্ব পান। তিনি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। তিনি বাংলার অগ্নিকন্যা নামে পরিচিত।

ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ রেজিমেন্ট কী?

সুভাষচন্দ্র বসু কর্তৃক গঠিত আজাদ হিন্দ ফৌজের নারী বাহিনীর নাম ছিল ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ বিগ্রেড। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এই বাহিনীতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রায় ১৫০০ নারী যোগ দেয়। যুদ্ধের কলাকৌশলে প্রশিক্ষিত এই বাহিনীর নেতৃত্ব দেন লক্ষ্মী স্বামীনাথন।

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকালে ছাত্ররা কীভাবে বয়কট আদর্শকে কাজে পরিণত করে?

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকালে ছাত্ররা বিভিন্ন প্রতিবাদী সভাসমিতিতে যোগ দান করে এবং বিদেশি পণ্য বয়কট ও স্বদেশি দ্রব্য প্রচারে তারা সক্রিয় ভূমিকা নেয়। বাংলার বিভিন্ন স্থানে তারা ৭৫ টি শাখার মাধ্যমে স্বদেশি দ্রব্য সামগ্রী বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে। পাশাপাশি তারা সরকারি স্কুলকলেজ বয়কট করে।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছাত্রদের বিরুদ্ধে ইংরেজ সরকার কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন?

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছাত্রসমাজের উপর সরকার দমন নীতি প্রয়োগ করে

  • ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ১০ অক্টোবর মুখ্য সচিব আব. ডব্লিউ. কার্লাইল এক গোপন নির্দেশে (কার্লাইল সার্কুলার) বলেন যে, আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছাত্রদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গৃহীত হবে।
  • শিক্ষা অধিকর্তা পেডলার কলেজের অধ্যক্ষদের নির্দেশ দেন যে, পিকেটিং – এর সঙ্গে যুক্ত ছাত্রদের বহিষ্কার করতে হবে (২১ অক্টোবর)। এই দুই নির্দেশ বা সার্কুলারের মাধ্যমে ছাত্রদের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হয়।

অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি কেন স্থাপিত হয়?

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকালে কালাইল সার্কুলার, পেডলার সার্কুলার-এর বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজে ও ভীষণ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এরই সূত্র ধরে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ৪ নভেম্বর সিটি কলেজের ছাত্র শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল — সরকারি আদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কৃত ও শাস্তিপ্রাপ্ত ছাত্রদের বিকল্প শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রদের কর্মসূচি কী ছিল?

অসহযোগ আন্দোলনকালে ছাত্ররা –

  • স্থানীয় নেতাদের উদ্যোগে বয়কট কর্মসূচিকে সফল করতে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, উড়িষ্যা ও আসামে ছাত্ররা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি দ্রব্য বয়কট করে।
  • ছাত্রদের অনেকে কংগ্রেস ও খিলাফৎ স্বেচ্ছাসেবকরূপে চাঁদা সংগ্রহ, গঠনমূলক কাজ ও চরকা ব্যবহারের কর্মসূচি প্রচার করে।
  • বিকল্প জাতীয় শিক্ষার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষায়তনগুলিতে ছাত্ররা যোগদানের কর্মসূচিও গ্রহণ করে।

আজাদ টেন কী?

ভারতছাড়ো আন্দোলনকালে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ট্রেনের দখল নেয় এবং এর নাম দেয় আজাদ ট্রেন। এই ট্রেনে চড়ে তারা উত্তরপ্রদেশের শেরপুর অঞ্চলে পৌঁছায় এবং সেখানের কৃষক আন্দোলনের শক্তিবৃদ্ধি করে। তাই ভারতছাড়ো আন্দোলনের সময় আজাদ ট্রেন এক বিশেষ স্থান অধিকার করেছিল।

মজফ্ফরপুর ঘটনা কী?

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকালে বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রধানতম উদাহরণ হল মজফ্ফরপুর ঘটনা। মজফ্ফরপুরের অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার জন্য ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী বোমা নিক্ষেপ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মিস কেনেডি ও তাঁর কন্যা নিহত হন। এই ঘটনা মজফ্ফরপুর ঘটনা নামে পরিচিত।

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স কী?

১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনকালে সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে গঠিত এক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর কিছু সদস্যকে নিয়ে বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষ ঢাকায় একটি ভলান্টিয়ার্স দল গঠন করেন। এই বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দল বি. ভি. গোষ্ঠী নামে পরিচিত। এই দলের দুঃসাহসিক কাজকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল। বিনয়-বাদল-দীনেশের অলিন্দ যুদ্ধ।

অলিন্দ যুদ্ধ বলতে কী বোঝায়?

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর বিনয় বসু তাঁর দুই বিপ্লবী বন্ধু বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্তের সঙ্গে কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং-এ প্রবেশ করেন। এরপর তাঁরা কারা বিভাগের ইনস্পেকটর জেনারেলকে হত্যা করেন ও এক ইংরেজ কর্মচারীকে আহত করেন। এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ পুলিশ তিনজনকে ঘিরে ফেললে রাইটার্স বিল্ডিং-এর বারান্দা বা অলিন্দে অসম যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধ অলিন্দ যুদ্ধ নামে পরিচিত।

সূর্য সেন বিখ্যাত কেন?

বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিখ্যাত ঘটনা হল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন। এই ঘটনার নায়ক ছিলেন মাস্টারদা নামে পরিচিত সূর্য সেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পর বিপ্লবীরা চট্টগ্রামে বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। এই ঘটনার কিছুদিন পর বিপ্লবীরা ধরা পড়ে এবং ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে সূর্য সেনও ধরা পড়েন। বিচারে তাঁর ফাঁসি হয় (১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৪ খ্রি.)।

রশিদ আলি দিবস কী?

১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ সরকার আজাদ হিন্দ ফৌজের এক সেনা অফিসার ক্যাপটেন আব্দুল রশিদের বিচারের ব্যবস্থা করে। এর প্রতিবাদে পরদিন কলকাতায় ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভ ও ধর্মঘট সংঘটিত হয় এবং প্রকাশ্য সংঘর্ষে ৪৮ জন নিহত ও ৩০০-র বেশি ছাত্র আহত হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে ১২ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় সর্বাত্মক বন্ধ পালিত হয়, যা রশিদ আলি দিবস
নামে পরিচিত।

নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশন কীভাবে গঠিত হয়?

১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে লখনউতে সারা ভারত ছাত্র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন মহম্মদ আলি জিন্নাহ ও উদবোধন করেন জওহরলাল নেহরু। এই সম্মেলন থেকেই জন্ম নেয় নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশন। এর উদ্দেশ্যগুলি হল –

  • বিভিন্ন প্রদেশ ও রাজ্যগুলির ছাত্রদের সমানাধিকারের ভিত্তিতে সংস্কৃতি ও চি ব্লগত সহযোগিতার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করা
  • ছাত্রদেরকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতা সংগঠিত করে পূর্ণ জাতীয় স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে অংশগ্রহণ করা।

বীণা দাস স্মরণীয় কেন?

কলেজ ছাত্রী বীণা দাস (১৯১১-৮৬ খ্রি.) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সময় সেনেট হলে গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে হত্যার জন্য গুলি করেন (১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ৬ ফেব্রুয়ারি)। জ্যাকসন অল্পের জন্য বেঁচে যান এবং জ্যাকসনকে হত্যা প্রচেষ্টার অভিযোগে বীণা দাসের নয় বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়। এভাবে বীণা দাস বিপ্লবীর মর্যাদা লাভ করেন ও একারণেই তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন।

জ্যোতিবা ফুলে কীভাবে অনুন্নত শ্রেণির উন্নতি বিধানে সচেষ্ট হন?

মহারাষ্ট্রের বিখ্যাত সমাজ সংস্কারক জ্যোতিবা ফুলে দলিত সম্প্রদায়ের উন্নতি বিধানে সচেষ্ট হন ও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যেমন –

  • তিনি দলিত সম্প্রদায়ের সার্বিক বিকাশের জন্য সত্যশোধক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন (১৮৭৩ খ্রি.)
  • সমাজে জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতার এবং ব্রাক্ষ্মণ আধিপত্যের বিরোধিতা করেন
  • প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তনে সচেষ্ট হন।

দলিত নামে কারা পরিচিত?

ভারতে বর্ণব্যবস্থাযুক্ত সমাজব্যবস্থায় উচ্চবর্ণের দ্বারা নিম্নবর্ণের হিন্দু বা অস্পৃশ্যরা যারা পঞ্চম জাতি নামেও পরিচিত ছিল; এরা শোষিত ও অত্যাচারিত হত এবং এদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার ছিল না। এরূপ অস্পৃশ্যরাই ঔপনিবেশিক শাসনকালে দলিত নামে পরিচিতি লাভ করে। দলিতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মধ্যভারতের মাহার সম্প্রদায়, দক্ষিণ ভারতের ইজাভা ও পুলায়া সম্প্রদায় এবং বাংলার নমঃশূদ্রগণ ।

সেলফ রেসপেক্ট আন্দোলন কী?

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস নেতা ই. ভি. রামস্বামী নাইকার হিন্দুধর্ম ও ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান এবং দলিত শ্রেণির সামাজিক সমতা ও সম-অধিকার দাবি করেন। তিনি মূলত তামিলনাড়ুতে গড়ে ওঠা এই আন্দোলনের নাম দেন আত্ম-মর্যাদা আন্দোলন বা সেলফ রেসপেক্ট আন্দোলন। এই আন্দোলন ক্রমশ উগ্ররূপ ধারণ করে।

সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা কী?

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র‍্যামসে ম্যাকডোনাল্ড সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘোষণা করেন (১৬ আগস্ট, ১৯৩২ খ্রি.)। এর দ্বারা হিন্দুসমাজকে বর্ণহিন্দু ও অনুন্নত শ্রেণির হিন্দু — এই দুইভাগে ভাগ করা হয়। কয়েকটি ক্ষেত্রে অনুন্নত শ্রেণির জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধি যারবেদা জেলে অনশন শুরু করেন।

পুনা চুক্তি কী?

সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধি যারবেদা জেলে অনশন শুরু করলে গান্ধিজির জীবন সংকট দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে দলিত সম্প্রদায়ের নেতা বি. আর. আম্বেদকর গান্ধিজির সঙ্গে এক চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যা পুনা চুক্তি নামে পরিচিত। এই চুক্তি অনুসারে বর্ণহিন্দু ও অনুন্নত হিন্দুত্যাগ দলিতদের একসঙ্গে ভোটদানের ব্যবস্থা করা হয় এবং আইনসভায় দলিতদের জন্য বেশ কয়েকটি আসন সংরক্ষণ করা হয়।

হরিচাঁদ ঠাকুর বিখ্যাত কেন?

পূর্ব বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের প্রধানতম সংগঠক ছিলেন হরিচাদ ঠাকুর। তিনি ব্রাক্ষ্মণ জমিদার ও পুরোহিত শ্রেণির অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন এবং নমঃশূদ্রদের মধ্যে আত্মমর্যাদা বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হন। মানবতাবাদী হরিচাঁদ তাঁর শিষ্যদের মতুয়া নামে ডাকতেন।

নমঃশূদ্র নামে কারা পরিচিত?

পূর্ব বাংলার খুলনা, যশোহর, ফরিদপুর ও বরিশালের প্রান্তিক কৃষিজীবি সম্প্রদায় নমঃশূদ্র নামে পরিচিত। সামাজিক দিক থেকে এঁরা ছিল হিন্দুসমাজে অস্পৃশ্য ও অন্ত্যজ। এরূপ সামাজিক বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে তারা যে আন্দোলন গড়ে তোলে তা নমঃশূদ্র আন্দোলন নামে পরিচিত।

বিশ শতকে ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলনগুলি ভারতীয় সমাজে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এই আন্দোলনগুলি ভারতীয় সমাজে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

Share via:

মন্তব্য করুন