মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকে ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষন – বিশ্লেষনমূলক প্রশ্নোত্তর

Mrinmoy Rajmalla

বিশ শতক ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই শতকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় এবং ভারত ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। এই আন্দোলনে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Table of Contents

স্বদেশি আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করো।

ভূমিকা – বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকালে পুরুষদের পাশাপাশি বাংলার নারীসমাজও অংশগ্রহণ করে। তবে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল না, বরং তা ছিল সহযোগীর ভূমিকা।

স্বদেশি আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের বিভিন্ন দিক – বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারী সমাজের অংশগ্রহণের উল্লেখযোগ্য দিকগুলি হল —

কর্মসূচির বাস্তবায়ন – বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের একটি কর্মসূচি ছিল বিদেশি দ্রব্য বয়কট ও স্বদেশি দ্রব্য ব্যবহার। তাই শহরের নারীদের অনেকেই বিদেশি বস্ত্র, চুড়ি বর্জন করে এবং দেশি বস্ত্র ও দ্রব্য ব্যবহার শুরু করে।

অরন্ধন দিবস পালন – বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হওয়ার দিনে (১৬ অক্টোবর, ১৯০৫) কলকাতার নারী সমাজের এক বড়ো অংশ রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর আহ্বানে ‘অরন্ধন কর্মসূচি’ পালন করে। এভাবে বঙ্গভঙ্গকে নারীরা‘জাতীয় শোক’ – এর পর্যায়ে উন্নীত করে।

বিপ্লবী আন্দোলন – বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের একটি পর্যায়ে গুপ্ত পথে বিপ্লবী আন্দোলনের সূচনা হয়। বিপ্লবীদের আশ্রয়দান করে, গোপনে সংবাদ ও অস্ত্র সরবরাহ করে বেশ কিছু নারী এই আন্দোলনে অংশ নেয়। এ প্রসঙ্গে বিপ্লবী অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মেজোপিসি ননীবালা দেবীর নাম উল্লেখ্য।

মতাদর্শ সজ্ঞার – বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগনি সরলাদেবী চৌধুরানি ‘ভারতী’ পত্রিকায় প্রবন্ধ প্রকাশের মাধ্যমে নারী শক্তিকে উজ্জীবিত করে তোলেন। এ ছাড়া বীরাষ্টমী ব্রত’, ‘প্রতাপাদিত্য ব্রত’ চালু করেন।

উপসংহার – এভাবে দেখা যায়, বঙ্গভঙ্গকালে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল পরোক্ষ এবং তা ছিল ঘরোয়া অর্থাৎ ঘরে বসেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকালে সরলাদেবী চৌধুরানির ভূমিকা কী ছিল?

ভূমিকা – বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকালে যেসমস্ত নারী বিশেষ ভূমিকা পালন করেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগনি তথা স্বর্ণকুমারী দেবীর কন্যা সরলাদেবী চৌধুরানি।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকালে সরলাদেবী চৌধুরানির ভূমিকা কী ছিল?

সরলাদেবীর অবদান – সরলাদেবী যেভাবে জাতীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তা হল –

লক্ষ্মীর ভাণ্ডার – বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের পূর্বেই তিনি ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় স্বদেশি দ্রব্যের উৎপাদন ও ব্যবহার প্রচারকল্পে এই প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগানো হয়।

প্রতাপাদিত্য উৎসব – বঙ্গভঙ্গ বাস্তবায়নের পর তিনি ১ বৈশাখ তারিখে ‘প্রতাপাদিত্য উৎসব’ – এর প্রচলন করেন। এই উৎসবের অঙ্গ ছিল মোগল শাসন বিরোধী বাঙালি বীর প্রতাপাদিত্যের জীবনী পাঠ, কুস্তি ও তলোয়ার, বক্সিং ও লাঠি চালনা।

জাতীয়তার আদর্শ প্রচার – বঙ্গভঙ্গের পূর্বেই তিনি ‘ভারতী’ নামক পত্রিকায় তার লেখনীর মাধ্যমে জাতীয়তার আদর্শ প্রচার করেন। এর পাশাপাশি তিনি ইংরেজদের হাতে নিগৃহীত ভারতীয়দের তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ জানানোর ঘটনাও তুলে ধরেন।

নারী সংগঠন প্রতিষ্ঠা – ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের এলাহাবাদ অধিবেশনকালে (১৯১০ খ্রি.) তিনি একটি নিখিল ভারত মহিলা সম্মেলন আহ্বান করেন। এই সম্মেলনের উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত হয় ভারত-স্ত্রী-মহামণ্ডল নামক নারী সংগঠন।

উপসংহার – এভাবে দেখা যায় যে, সরলাদেবী চৌধুরানি বঙ্গভঙ্গের পূর্বে ও বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকালে নারী জাগরণ ও জাতি জাগরণের ক্ষেত্রে ছিলেন এক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব।

অসহযোগ আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহণের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো।

ভূমিকা – ভারতের জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাসে প্রথম সর্বভারতীয় জাতীয় আন্দোলন ছিল অসহযোগ-খিলাফৎ আন্দোলন (১৯২০-২২ খ্রি.)। এই আন্দোলনের পরিধি ছিল বড়ো এবং একারণেই এই আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণও বৃদ্ধি পায়।

অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ – অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের বিভিন্ন দিকগুলি হল —

বয়কট ও স্বদেশি – মহাত্মা গান্ধি প্রাথমিকভাবে নারীদের সীমিত কর্মসূচিতে অর্থাৎ বিদেশি দ্রব্য বয়কট ও স্বদেশি দ্রব্য গ্রহণের জন্য যোগ দিতে আহ্বান জানান। তাঁর এই আহ্বানে ভারতের হাজার হাজার নারী যোগদান করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নারীরা পিকেটিং – এ অংশগ্রহণ করেন। এ প্রসঙ্গে সরোজিনী নাইডু, কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ নারীর নাম উল্লেখ্য।

বিক্ষোভ কর্মসূচি – ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর – এ ‘প্রিন্স অব ওয়েলস’ বা ইংল্যান্ডের যুবরাজ ভারত সফরে এলে বোম্বাই ও কলকাতা শহরে নারী বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কংগ্রেস নেতা চিত্তরঞ্জন দাসের স্ত্রী বাসন্তী দেবী ও তাঁর বোন উর্মিলা দেবী প্রকাশ্য রাজপথে যুবরাজ বিরোধী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করলে তাঁদের জেলবন্দি করা হয়।

গঠনমূলক কর্মসূচি – শহরের বেশ কয়েকজন নেত্রী গ্রামে গিয়ে অসহযোগ আন্দোলনকে সফল করার জন্য প্রচার চালান। এ ছাড়া বিভিন্ন গঠনমূলক কর্মসূচি, যেমন — চরকায় সুতো কাটা ও কাপড় বোনার জন্য উৎসাহিত করা হয়।

নারী সংগঠন – অসহযোগ আন্দোলনের পূর্বেই সরোজিনী নাইডুর নেতৃত্বে ‘ভারতীয় মহিলা সমিতি’ গড়ে উঠেছিল। অনুরূপভাবে অসহযোগ আন্দোলনকালে কলকাতায় ‘কর্মমন্দির’, ‘নারী-সত্যাগ্রহ সমিতির’ মাধ্যমে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের নারীরা সভাসমিতি, পিকেটিং-এ অংশগ্রহণ করেন।

উপসংহার – অসহযোগ আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহণ ছিল সীমিত। এই আন্দোলনে মুসলমান নারীদের যোগদান ছিল অত্যন্ত অল্প। তবে অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের মধ্যে গঠনমূলক কাজের প্রসার ঘটে।

আইন অমান্য আন্দোলনে নারী সমাজের অংশগ্রহণ কেমন ছিল তা বিশ্লেষণ করো।

ভূমিকা – অসহযোগ আন্দোলন অপেক্ষা আইন অমান্য আন্দোলনকালে (১৯৩০-৩৪ খ্রি.) তুলনামূলকভাবে নারীর যোগদান ছিল অধিক। গান্ধিজি লবণকে আইন অমান্যের বিষয়ে পরিণত করে নারীদের কাছে এই আন্দোলন আকর্ষণীয় করে তুলতে চেয়েছিলেন।

আইন অমান্য আন্দোলনে নারী সমাজের যোগদান – আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের যোগদানের উল্লেখযোগ্য দিক হল –

লবণ আইন ভঙ্গ – ডান্ডিতে মহাত্মা গান্ধির লবণ আইন অমান্যকালে অনেক নারী যোগদান করেন ও লবণ আইন ভঙ্গ করেন। এরপর ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার নারী লবণ আইন ভঙ্গ শুরু করে দেয়। সরোজিনী নাইডুর নেতৃত্বে “ধরসানা লবণ গোলা অভিযান’ সম্পন্ন হয়।

বিক্ষোভ কর্মসূচি – লবণ আইন ভঙ্গের পাশাপাশি বিদেশি বস্ত্র ও মদের দোকানের সামনে পিকেটিং-এ নারীরা অংশ নেয়। এর পাশাপাশি বোম্বাই, এলাহাবাদ, লাহোর, দিল্লি প্রভৃতি শহরে নারীরা প্রকাশ্যে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। এমনকি সম্ভ্রান্ত পরিবারের নারীরাও এই বিক্ষোভে অংশ নেয়।

কৃষক-নারীদের অংশগ্রহণ – আইন অমান্য আন্দোলনে কৃষক পরিবারের নারীদের অংশগ্রহণ আন্দোলনকে ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছে দেয়। মেদিনীপুরের ঘাটাল, কাঁথি, তমলুক প্রভৃতি স্থানের কৃষক নারীরা পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে লবণ প্রস্তুত ও বিক্রয় করে।

নারী সংগঠনের যোগদান – এই আন্দোলনে বিভিন্ন নারী সংগঠন যোগ দিয়েছিল। এদের মধ্যেই বোম্বাইয়ের ‘দেশ সেবিকা সংঘ’, বাংলার ‘মহিলা রাষ্ট্রীয় সংঘ’, কলকাতার ‘ছাত্রী সংঘ’ ছিল উল্লেখযোগ্য।

উপসংহার – আইন অমান্য আন্দোলনকালে ভারতের নারী সমাজের যোগদানের প্রকৃতি ভারতজুড়ে একইরকম ছিল না। ঐতিহাসিক শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়েছেন যে, অংশগ্রহণের দিক থেকে বোম্বাইয়ের আন্দোলন ছিল সবচাইতে সংগঠিত, বাংলার আন্দোলন ছিল উগ্র এবং মাদ্রাজের নারীদের অংশগ্রহণ ছিল সীমিত।

ভারতছাড়ো আন্দোলন পর্বে নারীদের অংশগ্রহণ আলোচনা করো।

ভূমিকা – ভারতছাড়ো আন্দোলন ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষ বৃহৎ গণ আন্দোলন। এই আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহণ ও জাতীয় আন্দোলনে তাদের ভূমিকা অধিকতর স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।

ভারতছাড়ো আন্দোলন পর্বে নারীর যোগদান – ভারতছাড়ো আন্দোলনে নারীদের যোগদান আইন অমান্য আন্দোলনের ন্যায় পরিকল্পিত ও কর্মসূচিভিত্তিক ছিল না। তথাপি নারীরা যেভাবে যোগদান করে তা হল —

মধ্যবিত্ত নারীর যোগদান – এই আন্দোলনে স্কুলকলেজের ছাত্রীরা যোগদান করেছিল। আবার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত নারীরা প্রকাশ্য ও গোপন দু’ধরনের আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল। যেমন — ঊষা মেহতা বোম্বাইয়ে গোপন রেডিয়ো কেন্দ্র গড়ে তুলে গান্ধির ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’ আদর্শ সহ জাতীয় আদর্শ প্রচার করতেন।

নারীদের সংগঠন – নারীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে অরুণা আসফ আলি ও সুচেতা কৃপালিনীর ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অরুণা আসফ আলি গোপনে জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ৯ আগস্ট তিনি বোম্বাই – এর আগস্ট ক্রান্তি ময়দানে তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করেন।

মাতঙ্গিনী হাজরা – ভারতছাড়ো আন্দোলনে অসীম বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য মেদিনীপুরের মাতঙ্গিনী হাজরা ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন। তিনি মেদিনীপুরের তমলুক থানা দখল অভিযানের জন্য গড়ে ওঠা একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন। তিনি পুলিশের গুলিতে জখন হন ও শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

ভগিনী সেনা : ভারতছাড়ো আন্দোলনকালে বাংলার মেদিনীপুরে ‘তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার’ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি গ্রামীণ মহিলারা ব্রিটিশ বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রাম চালানোর জন্য নারী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। এইরূপ সংগঠন ‘ভগিনী সেনা’ নামে পরিচিত। ভগিনী সেনার অনেক নারী জেলবন্দি হন ও ৮৪ জনেরও বেশি নারী ধর্ষিতা হন।

উপসংহার – এভাবে দেখা যায় যে, ভারতছাড়ো আন্দোলনকালে বাংলা, বোম্বাই, আসাম, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, কর্ণাটকের হাজার হাজার নারী অংশগ্রহণ করেছিল। এই সমস্ত নারীদের অধিকাংশই কংগ্রেস দলের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত ছিল। তুলনামূলকভাবে কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টি এই সময় আন্দোলনের নেতৃত্বে এগিয়ে এসেছিল। তবে এই আন্দোলনে বামপন্থী মনোভাবাপন্ন ও কমিউনিস্ট দলের নারী সদস্যদের যোগদান ছিল সীমিত।

দীপালি সংঘ – টীকা লেখো।

ভূমিকা – বিশ শতকে ভারতে জাতীয় আন্দোলনে নারী জাতির জাগরণ ও অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে যে সমস্ত বিপ্লবী নারী ও সংগঠন বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দীপালি সংঘ।

দীপালি সংঘ - টীকা লেখো।

প্রতিষ্ঠা – বাংলার বিপ্লবী লীলা রায় ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংঘ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল —

  • নারী শিক্ষার প্রসার ও নারীদের আধুনিক করে তোলা এবং
  • বিপ্লবী আন্দোলনের জন্য নারীদের প্রশিক্ষিত করা।

দীপালি সংঘের কর্মসূচি – দীপালি সংঘের কার্যকলাপের উল্লেখযোগ্য দিকগুলি হল —

নারীশিক্ষা – এই সংঘের প্রচেষ্টায় ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নারীশিক্ষা মন্দির নামক বালিকা বিদ্যালয়সহ ১২টি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বয়স্কা শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে ওঠে।

দীপালি সংঘের কর্মসূচি – ভারতের মুক্তিযুদ্ধের উপযুক্ত যোদ্ধা তৈরির করার উদ্দেশ্যে মেয়েদের জন্য নানা কর্মসূচি গৃহীত হয়। লাঠিখেলা, শরীরচর্চা ও অস্ত্র চালানোর শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়। এই ধরনের কর্মসূচি মহিলাদের সাহস ও শক্তিবৃদ্ধির সহায়ক হয়ে ওঠে।

বৈপ্লবিক আদর্শ সঞ্চার – নারী প্রগতি আন্দোলনের পুরোধা লীলা রায় তরুণীদের বৈপ্লবিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে তোলেন। সংগঠন নির্মাণ, অস্ত্রশস্ত্র জোগাড়, বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে তিনি মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেন। দীপালি সংঘ হয়ে ওঠে মহিলা বিপ্লবীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।

উপসংহার – দীপালি সংঘ বাংলার নারী সমাজের ইতিহাসে দ্বিবিধ প্রভাব বিস্তার করেছিল, যথা- প্রথমত, শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে নারী জাতির আধুনিকীকরণ এবং দ্বিতীয়ত, দীপালি সংঘ হয়ে ওঠে বাংলার নারী বিপ্লবী আন্দোলনের প্রধান প্রতিষ্ঠান।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার – টীকা লেখো।

ভূমিকা – বিশ শতকে ভারতের বিপ্লববাদের ইতিহাসে নারী বিপ্লবীদেরও অবদান ছিল এবং এক্ষেত্রে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ছিল প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (১৯১১-১৯৩২)।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার - টীকা লেখো।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার পরিচয় – প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (১৯১১-১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন বাংলার অন্যতম নারী বিপ্লবী ও শহিদ। প্রীতিলতা দীপালি সংঘের একজন সভ্যা ছিলেন। সেখান থেকেই তিনি বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিপ্লবী নেতা সূর্য সেনের প্রভাবে আসেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের নেতা সূর্য সেনের সহকারিণী ছিলেন প্রীতিলতা। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে তিনি চট্টগ্রামে নন্দন-কানন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হন।

ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ – ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রীতিলতার নেতৃত্বে এক বিদ্রোহী দল পাহাড়তলি ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে। তাদের বোমা ও গুলিতে অনেক ইউরোপীয় আহত হন। প্রীতিলতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন ও শহিদ হন। জীবনের শেষক্ষণ পর্যন্ত প্রীতিলতা নিজের কর্তব্যবোধ সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি নিজের সহযোদ্ধাদের নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

উপসংহার – প্রীতিলতা তাঁর মৃত্যুকালে একটি ইচ্ছাপত্র রেখে যান এবং এখানে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরকে বিপ্লবী আন্দোলনে আরও বেশি সুযোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, দেশের যুবক-যুবতীদের বিপ্লবী আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহ দান করাই ছিল তার আত্মত্যাগের মহান উদ্দেশ্য। বাস্তবেও দেখা যায় যে, তাঁর আত্মত্যাগ আরও হাজার হাজার তরুণ-তরুণীকে বিপ্লববাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত করে তোলে।

আজাদ হিন্দ ফৌজের নারী বাহিনী – টীকা লেখো।

ভূমিকা – বিশ শতকে ভারতীয় নারী জাতীয় আন্দোলনের মূল ধারার সঙ্গে সঙ্গে বিপ্লবী আন্দোলনেও যুক্ত হয়। এমনকি দেশের মুক্তির জন্য আজাদ হিন্দ ফৌজের নারী বাহিনীর সেনারূপেও যোগ দেয়।

গঠন – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে সুভাষচন্দ্র বসু ভারতের বাইরে থেকে সশস্ত্র অভিযানের মাধ্যমে ভারতের মুক্তির পরিকল্পনা করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’ ও ‘আজাদ হিন্দ সরকার’ গঠন করেন। আজাদ হিন্দ ফৌজের সঙ্গে তিনি একটি নারী বাহিনী যুক্ত করেন (১৯৪৩ খ্রি.), যা ‘ঝাঁসির রানি ব্রিগেড’ নামে পরিচিত।

আজাদ হিন্দ ফৌজের নারী বাহিনী - টীকা লেখো।

বাহিনীর বৈশিষ্ট্য – ঝাঁসির রানি বিগ্রেডের বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য বা দিককে চিহ্নিত করা যায়, যথা —

নেতৃত্ব – ঝাঁসির রানির বিগেডের প্রধান ছিলেন বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সমাজসেবী আম্মু স্বামীনাথনের কন্যা লক্ষ্মী স্বামীনাথন। তিনি ছিলেন মহিলা ডাক্তার।

সেনা সদস্য – এই বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ছিল ১৫০০ এবং এঁরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে এসেছিলেন। এই বাহিনীর সমন্বয়েই গঠিত হয় আজাদ হিন্দ বাহিনীর ‘আত্মাহুতি শাখা’ বা ‘সুইসাইড স্কোয়াড’।

প্রশিক্ষিত বাহিনী – নারী বাহিনীকে যুদ্ধের কলাকৌশলে প্রশিক্ষিত করা হয়। ফলে এই বাহিনী ছিল পূর্ণ প্রশিক্ষিত বাহিনী।

কার্যকলাপ – ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে আজাদ হিন্দ বাহিনীর ইম্ফল অভিযানে এই বাহিনীকে যুদ্ধে পাঠানো হয়। এভাবে ঝাঁসির রানি ব্রিগেডের নারী সেনারা যুদ্ধক্ষেত্রে পুরুষদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে এক অনন্য নজির স্থাপন করে।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা কী ছিল তা বিশ্লেষণ করো।

ভূমিকা – উনিশ শতকের শেষে ছাত্রসমাজ বিবেকানন্দের ‘জাতীয়তাবাদী আদর্শ ও বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বন্দে মাতরম’ মন্ত্র দ্বারা দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়েছিল এবং বিশ শতকের প্রথমে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা – বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণের বিভিন্ন দিক হল —

বয়কট আদর্শ প্রচার – বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম আদর্শ ছিল ‘বয়কট’ বা বিদেশি দ্রব্য ও আদর্শ বর্জন। বাংলার ছাত্ররা এই আদর্শ প্রচার ও প্রসারে বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল।

সভাসমিতি – বঙ্গভঙ্গকালে ছাত্ররা বিভিন্ন সভা-সমিতিতে যোগদান করে। এ প্রসঙ্গে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ও ১৮ জুলাই রিপন কলেজের ছাত্র সমাবেশ এবং ৩১ জুলাই কলকাতার সব কলেজগুলির ছাত্র সমাবেশের কথা বলা যায়।

স্বদেশি দ্রব্য বিক্রয় – স্বদেশি আদর্শ ও স্বদেশি দ্রব্যের প্রচারের ক্ষেত্রেও ছাত্রদের অবদান ছিল। ছাত্ররা বাংলার বিভিন্ন স্থানে ৭৫টি শাখার মাধ্যমে দেশীয় পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করত।

অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি – বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন থেকে স্কুলকলেজের ছাত্রদের দূরে রাখতে কার্লাইল সার্কুলার, পেডলার সার্কুলার, লিয়ন সার্কুলার জারি করা হয়। এর প্রতিবাদে শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন (৪ নভেম্বর, ১৯০৫ খ্রি.)। শাস্তিপ্রাপ্ত ও বহিষ্কৃত ছাত্রদের শিক্ষার ব্যবস্থা করাই ছিল এর প্রধান লক্ষ্য।

উপসংহার – বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের যোগদান ছিল বাংলাকেন্দ্রিক। বাংলার বাইরের ছাত্ররা এই আন্দোলনে যোগ দেয়নি। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, এই আন্দোলনকালে ছাত্ররা ‘স্বনিয়োজিত প্রচারক’ – এর ভূমিকা পালন করেছিল।

বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনে অনুশীলন সমিতির অবদান লেখো।

ভূমিকা : অনুশীলন সমিতি ছিল বাংলার প্রথম বিপ্লবী সমিতি। সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করাই ছিল এই সমিতির প্রধান উদ্দেশ্য।

প্রতিষ্ঠা : ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় সতীশচন্দ্র বসু একটি শারীরশিক্ষা সংস্থারূপে অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে ব্যারিস্টার প্রমথনাথ মিত্র এর সর্বাধিনায়ক ও সভাপতি হন। ক্রমশ কলকাতা ও বাংলার বিভিন্ন স্থানে এই সমিতির ৫০০টি শাখা স্থাপিত হয়।

বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনে অনুশীলন সমিতির অবদান –

শরীরচর্চা – এই সংগঠনে নিয়মিতভাবে ‘গীতা’ ও ‘আনন্দমঠ’ পাঠ, শরীরচর্চা, লাঠি খেলা ও সামরিক কুচকাওয়াজ করা হত।

বিপ্লবী কার্যকলাপ – প্রতিষ্ঠাকালে অনুশীলন সমিতি সরাসরি রাজনৈতিক কার্যকলাপে যুক্ত ছিল না। তবে স্বদেশি আন্দোলন শুরু হলে বাংলায় উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনুশীলন সমিতি বিপ্লবী কার্যকলাপে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে।

পুলিনবিহারী দাসের উদ্যোগ – সরকারি দমন নীতির চাপে পরবর্তীকালে গুপ্ত সমিতিগুলির সঙ্গে অনুশীলন সমিতির বৈপ্লবিক তৎপরতা স্তিমিত হয়ে আসে। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার অনুশীলন সমিতিকে নিষিদ্ধ করা হয়। তবে ঢাকায় পুলিনবিহারী দাসের নেতৃত্বে অনুশীলন সমিতির বিপ্লবী কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকে।

উপসংহার – অনুশীলন সমিতির দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের আদর্শ জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। পরবর্তীকালে অনুশীলন সমিতির কাজকর্ম বাংলার কংগ্রেসি রাজনীতি ও বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়ে পড়ে।

প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম বসু স্মরণীয় কেন?

অথবা, মজফ্ফরপুর ঘটনা কী?

ভূমিকা – বিংশ শতকের প্রথম ভাগে যে সমস্ত বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে মাতৃভূমির মুক্তিসাধনের লক্ষ্যে আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম বসুর অবদান চিরস্মরণীয়। অল্প বয়সেই তাঁরা গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর দলের সংস্পর্শে আসেন।

প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম বসু স্মরণীয় কেন?

প্রেক্ষাপট – ইতিমধ্যে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে, বাংলায় বিপ্লবী কার্যকলাপ জোরদার হয়ে উঠলে যুগান্তর দল সরকারি কর্মচারীদের বোমা মেরে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। এই সময় কলকাতার চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দমনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করায় তাঁকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মজফ্ফরপুর ঘটনা – কিংসফোর্ডকে হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয় যুগান্তর দলের তরুণ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকীর ওপর, কিন্তু এই সময়ে নিরাপত্তার কারণে কিংসফোর্ডকে কলকাতা থেকে মজফফরপুরে বদলি করা হয়। বিপ্লবীরাও মজফফরপুরে এসে কিংসফোর্ডের গাড়ির ওপর বোমা মারতে গিয়ে ভুলবশত জনৈক ইংরেজ ব্যারিস্টার মিস্টার কেনেডির স্ত্রী ও তাঁর কন্যাকে বোমা মেরে হত্যা করেন। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগে প্রফুল্ল চাকী নিজের পিস্তলের গুলিতে আত্মহত্যা করেন এবং ক্ষুদিরাম পুলিশের হাতে ধরা পড়েন, বিচারে তাঁর ফাঁসি হয় (১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট)।

উপসংহার – মাতৃভূমির মুক্তিসাধনের উদ্দেশ্যে নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের জন্যই প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম স্মরণীয়। তাঁদের দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের আদর্শ জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

ভগৎ সিং – টাকা লেখো।

অথবা, ভগৎ সিংকে মনে রাখা হয় কেন?

ভূমিকা – বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকের যেসব তরুণ তাঁদের বিপ্লবী কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে মরণপণ সংগ্রাম করেছিলেন, ভগৎ সিং ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

ভগৎ সিং – এর কার্যকলাপ – ভগৎ সিং – এর কার্যকলাপের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে –

বিপ্লবী সমিতি গঠন – প্রথমে তিনি হিন্দুস্থান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হন। এরপর তিনি ও চন্দ্রশেখর আজাদ হিন্দুস্থান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সমিতি গঠন করেন। শ্রমিক শ্রেণির একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠাই ছিল এই দলের প্রধান লক্ষ্য। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘নবজীবন’ ও ‘ভারতসভা’ নামে দুটি সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠা
করেন।

স্যান্ডার্স হত্যা – সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলন পর্বে পাঞ্জাবের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা লালা লাজপত রায় পুলিশের লাঠিচার্জের ফলে আহত হন এবং কিছুদিন পর তাঁর মৃত্যু হয়। এই নিষ্ঠুর ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ভগৎ সিং লাহোরের সহকারী পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট স্যান্ডার্সকে হত্যা করেন।

লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা – ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ৮ এপ্রিল ভগৎ সিং ও তাঁর সহকর্মী বটুকেশ্বর দত্ত দিল্লির কেন্দ্রীয় আইনসভায় বোমা নিক্ষেপ করেন। দুর্ভাগ্যবশত তাঁরা ধরা পড়ে যান। এই ঘটনার সূত্র ধরে কয়েকদিনের মধ্যেই (১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে) লাহোর ও সাহারানপুরে বোমা তৈরির দুটি বিশাল কারখানা আবিষ্কৃত হলে ভগৎ সিং এবং অন্যান্য বিপ্লবীকে লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত করা হয়।

ভগৎ সিংএর ফাঁসি – লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে ভগৎ সিং প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হন। ভগৎ সিং-এর ফাঁসি হলে (মার্চ, ১৯৩১) সমগ্র ভারতে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

উপসংহার – ভগৎ সিং – এর দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের আদর্শ ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনকে নতুনভাবে অনুপ্রাণিত করে, এই জন্য তিনি স্মরণীয়।

বিনয়, বাদল, দীনেশ স্মরণীয় কেন?

ভূমিকা – বিংশ শতাব্দীর প্রথমে গান্ধিজির অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি বাংলার বিপ্লবীরা বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে তোলের যার মধ্যে বিনয়-বাদল-দীনেশের রাইটার্স বিল্ডিং অভিযান ছিল অন্যতম।

বিনয়, বাদল, দীনেশ স্মরণের কারণ – বিনয়, বাদল, দীনেশ যে কারণে স্মরণীয় তা হল —

অলিন্দ যুদ্ধ – ১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের সক্রিয় সদস্য বিপ্লবী বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং-এ প্রবেশ করে কারা বিভাগের ইনস্পেকটর জেনারেল সিম্পসনকে গুলি করে হত্যা করেন। তাঁদের আক্রমণে একাধিক উচ্চপদস্থ ইংরেজ কর্মচারী আহত হন। অতঃপর রাইটার্স বিল্ডিং-এর অলিন্দে লালবাজার থেকে আসা সশস্ত্র পুলিশের বিশাল বাহিনীর সঙ্গে বিপ্লবী বিনয়-বাদল-দীনেশের যুদ্ধ শুরু হয়। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এই যুদ্ধ ‘অলিন্দ যুদ্ধ’ নামে খ্যাত।

বিনয়, বাদল, দীনেশ স্মরণীয় কেন?

বিনয় ও বাদলের মৃত্যু – অলিন্দ যুদ্ধকালে পুলিশ এই তিনজন বিপ্লবীকে ঘিরে ফেলে। পালানো অসম্ভব বিবেচনা করে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার চেয়ে তিনজনই আত্মহত্যাকে শ্রেয় বলে মনে করেন। বাদল ‘পটাশিয়াম সাইনাইড’ নামে সাংঘাতিক বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। বিনয় ও দীনেশ পিস্তল দিয়ে নিজেদের মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কয়েকদিন পর হাসপাতালে বিনয় মারা যান।

দীনেশের ফাঁসি – চিকিৎসকদের চেষ্টায় দীনেশ বেঁচে যান এবং আলিপুর জর্জ কোর্টের ইংরেজ বিচারক গার্লিক-এর আদেশে তাঁর ফাঁসি হয় (৭ জুলাই, ১৯৩১ খ্রি.)। দীনেশের ফাঁসির এক বছরের মধ্যে বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্যের গুলিতে আলিপুর কোর্টের মধ্যে বিচারপতি গার্লিক নিহত হন।

গুরুত্ব – বিনয়-বাদল-দীনেশের এই কর্মকাণ্ডের বেশ কয়েকটি গুরুত্ব ছিল ; যেমন –

  • বিনয়, বাদল ও দীনেশের দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ড ব্রিটিশ শাসকদের উদ্বিগ্ন ও ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে
  • তাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ বাংলার মানুষকে নতুন প্রেরণা জোগায়
  • পরবর্তীকালে এই তিনজন দুঃসাহসিক বিপ্লবীর নামানুসারে কলকাতার ডালহৌসি স্কোয়ারের নাম রাখা হয় বিনয়-বাদল-দীনেশ (বি-বা-দী) বাগ।

সূর্য সেন স্মরণীয় কেন?

অথবা, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনটীকা লেখো।

ভূমিকা – বাংলা তথা ভারতের বিপ্লববাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক ছিলেন চট্টগ্রাম বিদ্রোহের মুখ্য নায়ক ‘মাস্টারদা’ সূর্য সেন। আইন অমান্য আন্দোলনের সময় সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনা সমগ্র ভারতবর্ষে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

সূর্য সেন স্মরণীয় কেন?

স্মরণের কারণ – মাস্টারদা সূর্য সেন যেসমস্ত কারণে বিখ্যাত ছিলেন সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –

বিপ্লবী সংগঠন স্থাপন – চট্টগ্রামের শিক্ষক সূর্য সেন তাঁর ছাত্র ও সহযোগীদের নিয়ে ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি” নামে একটি বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তোলেন।

চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন – ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ এপ্রিল মধ্যরাত্রে অম্বিকা চক্রবর্তী, লোকনাথ বল, গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ প্রমুখ সঙ্গীকে নিয়ে সূর্য সেন চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণ ও লুঠ করেন।

স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা – তাঁরা টেলিফোন, টেলিগ্রাফের তার বিচ্ছিন্ন করে চট্টগ্রামে একটি ‘স্বাধীন বিপ্লবী সরকার – এর প্রতিষ্ঠা করেন।

মাস্টারদা সূর্য সেন – এর বিচার ও ফাসি – নব প্রতিষ্ঠিত এই সরকার সাময়িকভাবে চট্টগ্রামের ওপর নিজেদের আধিপত্য রাখলেও অবশেষে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর পালটা আক্রমণে বিপ্লবীদের পরাজয় ঘটে এবং সূর্য সেন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান। বিচারে সূর্য সেনের ফাঁসি হয় (১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৪ খ্রি.)। মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের এই ঘটনা সমগ্র ভারতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে এবং অন্যান্য বিপ্লবীদের উদ্বুদ্ধ করে।

উপসংহার – সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনা ছিল চমকপ্রদ ও প্রশংসনীয়। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে যুক্ত জালালাবাদ চট্টগ্রামের যুদ্ধকে ইংরেজদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংগ্রামের প্রথম দৃষ্টান্ত বলে অভিহিত করেছেন।

রশিদ আলি দিবস – টীকা লেখো।

ভূমিকা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পর্বের ঘটনাগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ধৃত আজাদ হিন্দ ফৌজের অফিসারদের বিচার। এই বিচার সংক্রান্ত প্রতিক্রিয়ার একটি দিক হল ‘রশিদ আলি দিবস’।

রশিদ আলি দিবস - টীকা লেখো।

রশিদ আলি দিবস – ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ ফেব্রুয়ারি দিল্লির লালকেল্লাতে আজাদ হিন্দ ফৌজের অফিসার ক্যাপটেন রশিদ আলির বিচার হয় ও তাঁকে সাত বছরের কারাদণ্ড দান করা হয়। এই ঘটনায় কলকাতা পুনরায় উত্তাল হয়ে ওঠে এবং ছাত্র বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এই বিক্ষোভের উল্লেখযোগ্য দিকগুলি হল—

সাধারণ ধর্মঘট – বাংলার মুসলিম ছাত্র লিগ ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে সাধারণ ধর্মঘট ডাকে এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও ছাত্রনেতাসহ ছাত্ররা এতে অংশগ্রহণ করে।

ছাত্রসমাবেশ – কলকাতার ওয়েলিংটন স্কোয়ারে এক বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয় এবং অন্তত পাঁচ হাজার ছাত্র ও যুবক এতে অংশ নেওয়ার জন্য মিছিল শুরু করে। মুসলিম ছাত্র লিগ এবং কমিউনিস্ট ও কংগ্রেস ছাত্রনেতা ও দলনেতারা এই মিছিলের নেতৃত্ব দেন। পরের দিনের (১২.২.১৯৪৬) অমৃতবাজার পত্রিকায় এই মিছিলের চিত্র প্রকাশিত হয়েছিল।

সরকারি প্রতিক্রিয়া – রশিদ আলির বিচারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ছাত্র বিক্ষোভ ও গণবিক্ষোভ দমন করতে ব্রিটিশ সরকার পুলিশ ও সামরিক বাহিনী নিয়োগ করে। পুলিশের সঙ্গে প্রকাশ্য সংঘর্ষে ৪৮ জন নিহত ও প্রায় ৩০০ জন মানুষ আহত হয়। এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ১২ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় অঘোষিত হরতাল পালিত হয়, যা রশিদ আলি দিবস নামে পরিচিত।

তাৎপর্য – বিভিন্ন কারণে রশিদ আলি দিবস তাৎপর্যপূর্ণ যেমন —

  • এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অহিংস গণ আন্দোলন হিংসাত্মক আন্দোলনে পরিণত হয়
  • এটি স্থানীয় বা প্রাদেশিক ঘটনার পরিধি ছাড়িয়ে জাতীয় চরিত্র নেয়
  • এই আন্দোলনের মাধ্যমে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য জোরদার হয়ে ওঠে
  • রশিদ আলি দিবসের প্রভাবে ১৩-১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিচ্ছিন্নভাবে ঢাকাসহ বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, মেদিনীপুর প্রভৃতি শহরেও ধর্মঘট পালিত হয়।

দলিত রাজনীতির উদ্ভবের কারণসমূহ বিশ্লেষণ করো।

ভূমিকা – বিশ শতকে ভারতীয় রাজনীতিতে সম্প্রদায়গত ও জাতিগত বিষয়টি প্রাধান্য লাভ করে। হিন্দু সমাজে বর্ণপ্রথা ও বহুজাতি প্রথাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আর্থসামাজিক অধিকারহীন দলিত সম্প্রদায়ও রাজনীতির বিষয় হয়ে ওঠে।

দলিত রাজনীতির উদ্ভবের কারণ – দলিত রাজনীতির উদ্ভবের কারণগুলিহল –

ব্রাক্ষ্মণ আধিপত্য – মহারাষ্ট্রের মালি জাতির বিখ্যাত নেতা জ্যোতিবা ফুলে ১৮৭০-এর দশকে প্রচার করেন যে, ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধার অধিকারী ব্রাহ্মণদের আধিপত্যই হল শূদ্রবর্ণ তথা দলিতদের দুর্দশার মূল কারণ।

ঔপনিবেশিক শাসন – ঔপনিবেশিক শাসনপর্বে হিন্দুসমাজের বর্ণব্যবস্থাকে মান্যতা দেওয়া হয়। ১৮৮০-র দশকে জনগণনায় হিন্দুসমাজের প্রচলিত জাতিবিন্যাসকে নথিভুক্ত করে জাতিগত ক্রমোচ্চতাকে স্থায়ী করার চেষ্টা করা হয়। ফলে সেই সময়ের অস্পৃশ্য বা দলিতরা সংঘবদ্ধ হয়ে জাতিগত উন্নয়নের কথা ভাবতে শুরু করে।

শিক্ষার প্রসার – উনিশ শতকের শেষদিকে খ্রিস্টান মিশনারি ও সরকারি উদ্যোগে শিক্ষার বিস্তার ঘটলে দলিতদের কেউ কেউ শিক্ষিত হয় এবং নিজ শ্রেণির সংঘবদ্ধতার বিষয় সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে।

দেশীয় রাজ্যগুলির উদ্যোগ – উনিশ শতকের শেষ ও বিশ শতকের শুরুতে মহীশূর ও কোলহাপুর-এর মতো দেশীয়। রাজ্যগুলি অব্রাত্মণ অস্পৃশ্য মানুষের উন্নতির জন্য সরকারি চাকরিক্ষেত্রে জাতিভিত্তিক সংরক্ষণ প্রথা চালু করে। এভাবে দলিত সম্প্রদায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠে।

উপসংহার – উপরোক্ত বিভিন্ন কারণে দলিতরা সংঘবদ্ধ হয়ে উঠতে থাকে এবং বিশ শতকের প্রথমে নিজেদের জন্য আর্থসামাজিক অধিকারসহ রাজনৈতিক অধিকার দাবি করে। প্রথমে মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার (১৯১৯ খ্রি.) এবং পরে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা ও পুনা চুক্তির (১৯৩২ খ্রি.) মাধ্যমে দলিত সম্প্রদায় রাজনৈতিক অধিকার লাভ করে।

আম্বেদকর প্রাথমিক পর্বের দলিত আন্দোলনের মধ্যে সম্পর্ক চিহ্নিত করো।

ভূমিকা – ভারতে দলিত আন্দোলনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন ড. বাবাসাহেব ভীমরাও রামজী আম্বেদকর (১৮২৯-১৯৫৬ খ্রি.) বা সংক্ষেপে বি. আর. আম্বেদকর। তিনি উনিশ শতকের শেষার্ধে দলিতদের মধ্যে গড়ে ওঠা সংহতিকে বিশ শতকে রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত করেন।

আম্বেদকর ও দলিত আন্দোলন – আম্বেদকর নিজে একজন দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত হয়ে দলিতদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুক্ত হন –

হিতকারিণী সভা প্রতিষ্ঠা – আম্বেদকর তাঁর অনুগামীদের নিয়ে গঠন করেন ‘বহিষ্কৃত হিতকারিণী সভা’ (১৯২৪ খ্রি.)। হিন্দুসমাজের মূলস্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন বা বহিষ্কৃত অস্পৃশ্যদের উচ্চবর্ণের হিন্দুদের হাত থেকে রক্ষা করাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য।

নিপীড়িত শ্রেণির সম্মেলন – ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে নাগপুরে সর্বভারতীয় নিপীড়িত শ্রেণির নেতাদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন দলিতদের আন্দোলনে গতি সঞ্চার করে। ড. আম্বেদকর এই সমিতির সহ-সভাপতি নিযুক্ত হন। অচিরেই তিনি সমিতি থেকে ইস্তফা দেন।

মনুস্মৃতি দাহ – ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে আম্বেদকর সর্বসাধারণের ব্যবহার্য পুকুর থেকে দলিতদের জল তোলার অধিকার নিয়ে বিরাট সত্যাগ্রহ আন্দোলন পরিচালনা করেছিলেন। তিনি প্রকাশ্যে মনুস্মৃতি গ্রন্থ পুড়িয়ে দিয়ে ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রে আঘাত হানেন।

সংগঠন প্রতিষ্ঠা – ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে তিনি সর্বভারতীয় নিপীড়িত শ্রেণির কংগ্রেস গঠন করেন। প্রতিষ্ঠানের উদবোধনী ভাষণে আম্বেদকর সরাসরি কংগ্রেস বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে দলিত আন্দোলন আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে।

পুনা চুক্তি – সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতিতে দলিতদের পৃথক নির্বাচন বিধি স্বীকৃতি পেলেও গান্ধিজির অনশনের কারণে তা বাধা পায়। শেষপর্যন্ত আম্বেদকর গান্ধির সঙ্গে পুনা চুক্তি (১৯৩২ খ্রি.) সম্পাদনের মাধ্যমে দলিতদের রাজনৈতিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করেও স্বার্থরক্ষায় সচেষ্ট হন।

উপসংহার – এভাবে পুনা চুক্তির সময়কাল পর্যন্ত দলিত আন্দোলনের সংগঠনে আম্বেদকরের ভূমিকা ছিল খুব উল্লেখযোগ্য। পুনা চুক্তির পরবর্তীকালে তাঁর উদ্যোগে দলিত অধিকার আন্দোলন আরও এগিয়ে যায়।

সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা – টীকা লেখো।

ভূমিকা – ভারতে ব্রিটিশ শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকার সংখ্যালঘু ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মদতদানের নীতি নেয়। এই প্রচেষ্টার পরিণতি ছিল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রমসে ম্যাকডোনাল্ড-এর ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা”
নীতি ঘোষণা।

প্রেক্ষাপট – ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা’ নীতি ঘোষণার প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলি হল –

  • ভারতের জাতীয় আন্দোলনকে দুর্বল করে তোলা
  • হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐক্যে ফাটল ধরানো
  • দলিতদের পৃথক স্বীকৃতিদানের মাধ্যমে তাদের ব্রিটিশ সরকারের অনুগত শ্রেণিতে পরিণত করা
  • দলিত নেতা বি. আর. আম্বেদকরের দাবি মতো দলিতদের পৃথক নির্বাচনের অধিকার দান করা।

বাঁটোয়ারার মূল বক্তব্য – সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারায় ঘোষণা করা হয় যে –

  • মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান প্রভৃতি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হবে
  • হিন্দুসমাজকে বর্ণহিন্দু ও অনুন্নত শ্রেণি (Depressed Classes) তে বিভক্ত করে অনুন্নত শ্রেণির পৃথক নির্বাচন বিধি মেনে চলা হবে।

উপসংহার – সাংবিধানিক দিক দিয়ে ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা’ নীতি ছিল গণতান্ত্রিক অধিকারের স্বীকৃতি। কিন্তু ভারতের জাতীয় নেতাদের কাছে এই নীতি ছিল ব্রিটিশের “বিভাজন ও শাসন নীতির প্রতিফলন। এই বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধি সরব হন ও যারবেদা জেলে অনশন শুরু করেন।

পুনা চুক্তি সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

ভূমিকা – বিশ শতকের শুরু থেকেই ভারতীয় রাজনীতিতে দলিত সমস্যা গুরুত্ব লাভ করে এবং ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতিতে তা স্বীকৃতি লাভ করে। দলিতদের রাজনৈতিক অধিকার অর্জনের ক্ষেত্রে পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল পুনা চুক্তি (১৯৩২ খ্রি.)।

পুনা চুক্তি – ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে অনুন্নত সম্প্রদায়ের নেতা ডঃ বি. আর. আম্বেদকর ও গান্ধিজির মধ্যে ‘পুনা চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির শর্তগুলি হল —

  • উন্নত ও অনুন্নত হিন্দু সম্প্রদায় যৌথভাবে ভোট দেবে অর্থাৎ অনুন্নত ‘হরিজন’ শ্রেণি – সহ সব হিন্দুদের যৌথ নির্বাচক মণ্ডলীর নীতি স্বীকৃত হবে
  • হরিজন সম্প্রদায় হিন্দুসমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ এ কথা স্বীকার করা হবে
  • হরিজনদের জন্য আইনসভার আসন সংখ্যার বরাদ্দ দ্বিগুণ করার সঙ্গে সঙ্গে তা সংরক্ষিত করা
  • (সরকারি চাকরিতে অনুন্নত শ্রেণির যথেষ্ট প্রতিনিধিত্ব দান করা
  • দশ বছর পর সংরক্ষিত আসন ব্যবস্থার অবসান করা হবে।

গুরুত্ব – পুনা চুক্তি অনুসারে –

  • অনুন্নত সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা বাতিল করা হয়
  • হিন্দুদের যৌথ নির্বাচনের সূত্র মেনে নেওয়া হয়
  • অনুন্নত শ্রেণির আসন বরাদ্দ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায় এবং
  • এই আসনগুলি তাদের জন্য সংরক্ষিত হয়। বস্তুত পুনা চুক্তি গান্ধিজির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করে এবং তাঁর প্রচেষ্টায় হিন্দুসমাজে বিভেদনীতি অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

দলিত অধিকার বিষয়ে গান্ধি ও আম্বেদকরের মধ্যে কী ধরনের মতপার্থক্য ছিল তা বিশ্লেষণ করো।

ভূমিকা – দলিত নেতাদের উদ্যোগে দলিতদের জন্য আর্থসামাজিক অধিকার অর্জন প্রচেষ্টা এবং ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার দ্বারা দলিতদের অল্পমাত্রায় রাজনৈতিক অধিকারের স্বীকৃতিদান ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কিন্তু ১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে দলিত অধিকার বিষয়ে গান্ধি ও আম্বেদকরের মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

দলিত অধিকার বিষয়ে গান্ধি ও আম্বেদকরের মধ্যে মতপার্থক্য – দলিত অধিকার বিষয়ে গান্ধি ও আম্বেদকরের মধ্যে মতপার্থক্যের দিকগুলি হল –

দৃষ্টিভঙ্গিগত – মহাত্মা গান্ধি মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে দলিত সমস্যাকে বিবেচনা করেন এবং সমাজ থেকে অস্পৃশ্যতা দূরীকরণের উপর গুরুত্ব দেন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলনকালে অস্পৃশ্যতা দূরীকরণের কর্মসূচি গ্রহণ করেন। কিন্তু কয়েকবছর পর আম্বেদকর অস্পৃশ্যতা দূরীকরণের পাশাপাশি দলিতদের অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতী ছিলেন।

পদ্ধতিগত – অস্পৃশ্যতা দূরীকরণে গান্ধিজি মূলত ধৰ্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন। দলিতদের মন্দিরে প্রবেশাধিকার বা উচ্চবর্ণের সঙ্গে একত্রে বসে খাওয়ার অধিকারদানের উপর গুরুত্ব দেন। পক্ষান্তরে আম্বেদকর গান্ধিজিকে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর-এ লিখেছিলেন—“দলিতদের জন্য মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া, উচ্চবর্ণের সঙ্গে বসে খাওয়া ও এই ধরনের অন্যান্য বিষয়ের প্রতি আমার কোনো উৎসাহ নেই। কারণ এসব সত্ত্বেও আমরা দুর্দশা ভোগ করি। আমি শুধু চাই তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক দুরবস্থার অবসান ঘটুক।”

বর্ণাশ্রম সম্পর্কিত – গান্ধিজি হিন্দুসমাজের বর্ণাশ্রম, (ব্রাক্ষ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র) ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখে বর্ণগুলির মধ্যে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের উপর গুরুত্ব দেন। কিন্তু আম্বেদকর ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে গান্ধির বর্ণাশ্রম ব্যবস্থা ও বর্ণহিন্দুদের অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করেন।

রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত – ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে আম্বেদকর দলিতদের জন্য পৃথক নির্বাচকমণ্ডলী দাবি করেন। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করে দলিত শ্রেণির জন্য আইনসভায় আসন সংরক্ষণের দাবি জানান। এরই ভিত্তিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ম্যাকডোনাল্ড ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা’ ঘোষণা করেন। এর দ্বারা হিন্দুসমাজকে বর্ণহিন্দু ও অনুন্নত শ্রেণি — এই দুই ভাগে ভাগ করে রাজনৈতিক জটিলতার সৃষ্টি করা হয়। এই বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে গান্ধিজি সরব হন। তিনি যারবেদা জেলে অনশন শুরু করেন।

উপসংহার – সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার মাধ্যমে আম্বেদকর দলিতদের জন্য রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হলেও গান্ধিজির সঙ্গে ‘পুনা চুক্তির’ মাধ্যমে সেই অধিকার অনেকটাই হারিয়ে ফেলেন।

বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের উদ্ভবের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করো।

ভূমিকা – পূর্ব বাংলার খুলনা, যশোহর, ফরিদপুর ও বরিশালের প্রান্তিক কৃষিজীবি সম্প্রদায় নমঃশূদ্র’ নামে পরিচিত। সামাজিক দিক থেকে এঁরা ছিল হিন্দুসমাজে অস্পৃশ্য ও অন্ত্যজ। এরূপ সামাজিক বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে তারা যে আন্দোলন গড়ে তোলে তা নমঃশূদ্র আন্দোলন নামে পরিচিত।

বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের উদ্ভব – নমঃশূদ্র আন্দোলনের উদ্ভবের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে দেখা যায় —

সামাজিক বৈষম্য – নমঃশূদ্র সম্প্রদায়কে সামাজিক দিক থেকে পতিত ও অদ্ভুত বলে মনে করা হত। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ফরিদপুর-বাখরগঞ্জ অঞ্চলে একজন বিশিষ্ট নমঃশূদ্র গ্রামীণ নেতার মায়ের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে উচ্চবর্ণের হিন্দুরা যোগ দিতে অস্বীকার করলে নমঃশূদ্রদের আন্দোলনের সূচনা হয়।

প্রতিনিধি দল প্রেরণ – ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে নমঃশূদ্রদের একটি প্রতিনিধি দল গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে এবং ব্রিটিশ শাসনের প্রতি আস্থা প্রদর্শন করে তার স্থায়িত্ব কামনা করে। তাদের যুক্তি ছিল যে, ব্রিটিশ জনগণ কোনোরকম বর্ণভিত্তিক সামাজিক কাঠামোয় বিশ্বাসী নয়। তাই ব্রিটিশরাই তাদের সামাজিক বৈষম্যের হাত থেকে মুক্ত করতে পারবে।

পৃথক সংগঠন প্রতিষ্ঠা – নমঃশূদ্ররা ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিজেদের জন্য পৃথক সংগঠন গড়ে তোলে। সংগঠনের মুখপত্র ছিল ‘পতাকা’ এবং এই পত্রিকায় নমঃশূদ্র নেতা রায়চরণ বিশ্বাস জাতি ব্যবস্থায় নিজেদের ব্রাহ্মণ গোষ্ঠীভুক্ত বলে দাবি করেন।

ধর্মপ্রচারকদের ভূমিকা – ধর্মপ্রচারক প্রভু জগবন্ধু ও হরিচাঁদ ঠাকুর নমঃশূদ্র সম্প্রদায়কে উদার মানবতাবাদী ধর্মীয় ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করেন। হরিচাঁদ ঠাকুর তাঁর শিষ্যদের ‘মতুয়া’ নামে ডাকতেন। তিনি ব্রাত্মণ জমিদার ও পুরোহিত শ্রেণির অবিচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। নমঃশূদ্রদের মধ্যে আত্মমর্যাদা সৃষ্টি করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। তাই তিনি তাদের মধ্যে শিক্ষা প্রসারে বিশেষ উদ্যোগী হন।

ধর্মপ্রচারকদের ভূমিকা – ধর্মপ্রচারক প্রভু জগবন্ধু ও হরিচাঁদ ঠাকুর নমঃশূদ্র সম্প্রদায়কে উদার মানবতাবাদী ধর্মীয় ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করেন। হরিচাঁদ ঠাকুর তাঁর শিষ্যদের ‘মতুয়া’ নামে ডাকতেন। তিনি ব্রাত্মণ জমিদার ও পুরোহিত শ্রেণির অবিচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। নমঃশূদ্রদের মধ্যে আত্মমর্যাদা সৃষ্টি করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। তাই তিনি তাদের মধ্যে শিক্ষা প্রসারে বিশেষ উদ্যোগী হন।

উপসংহার – এভাবে নমঃশূদ্রদের মধ্যে সামাজিক সংহতি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক দিক দিয়েও নমঃশূদ্ররা ঐক্যবদ্ধ হতে সচেষ্ট হয়। হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি উপলক্ষ্যে প্রতি বছর ঠাকুর নগরে বারুণী মেলা আয়োজিত হয়। গুরুচাঁদ ঠাকুর চণ্ডালদের নাম পরিবর্তন করে নমঃশূদ্র রাখার দাবি জানান। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনায় এই দাবি স্বীকৃত হয়। পরবর্তীকালে বাংলার নমঃশূদ্রদের নিয়ে ভিন্ন মাত্রার রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলেন যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল।

বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলনগুলি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ও সমাজ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই আন্দোলনগুলি ভারতের ইতিহাসে একটি অমূল্য সম্পদ।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer