মাধ্যমিক ইতিহাস – প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট ও বিশ্লেষণ

Mrinmoy Rajmalla

উনিশ শতকের প্রথমার্ধ থেকে উনিশ শতকের শেষভাগ পর্যন্ত ভারতে ব্রিটিশ শাসন তীব্রতর হয়ে ওঠে। ব্রিটিশ শাসন ও ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে ভারতের বিভিন্ন শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতিরোধ ও বিদ্রোহের পথ অবলম্বন করে। এই অধ্যায়ে আমরা সেই সমস্ত প্রতিরোধ ও বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ করব।

Table of Contents

প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট ও বিশ্লেষণ

বিশ্লেষণমূলক প্রশ্নোত্তর

ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রথম শতকের কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহের কারণগুলি আলোচনা করো।

ভূমিকা – ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রবর্তনের শুরু থেকেই তাই কৃষক, উপজাতিরা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরু করে।

বিদ্রোহের কারণ – ব্রিটিশ শাসনের প্রথম শতকে কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহ বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট কারণে হয়েছিল সেগুলি হল —

কোম্পানি প্রবর্তিত চড়া ভূমিরাজস্ব নীতি – ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে – দেওয়ানি লাভের পর থেকেই ইংরেজরা অত্যধিকহারে রাজস্ব আদায় শুরু করে। নতুন ভূমিরাজস্ব নীতি ও ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থায় আমলাদার ও ইজারাদারদের অত্যাচারে কৃষকদের চরম দুরাবস্থা দেখা দেয়। ফলে তাঁরা বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়।

বহুমুখী শোষণ – কোম্পানির আমলে ভূমিরাজস্বের চাপ বৃদ্ধি সঙ্গে সঙ্গে সরকার, জমিদার, মধ্যস্বত্বভোগী ও মহাজনদের মাধ্যমে বহুমুখী শোষণ কৃষক ও উপজাতিদের জীবন বিপর্যস্ত করে তোলে।

রায়ত উচ্ছেদ – চিরস্থায়ী, রায়তওয়ারী, মহলওয়ারী বন্দোবস্তের মাধ্যমে রায়তরা জমির অধিকার হারান উলটে জমিদার ইজারাদারদের দ্বারা শোষিত হন ফলে ভারতের গ্রামীণ জীবনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। কৃষকরা পরিণত হয় ভাড়াটে প্রজায়।

বাণিজ্যিক ফসল চাষ – চাষিদের ওপর জোরজুলুম করে ধান, গম প্রভৃতি খাদ্যশস্যের বদলে নীল, আফিম, তুলো, পাট প্রভৃতি অর্থকরী ও বাণিজ্যিক ফসল চাষ করাতে বাধ্য করা হত যার ফলে মাঝে মাঝে দেশেই দুর্ভিক্ষ দেখা দিত।

শেষকথা – মুদ্রা অর্থনীতির কুফল, কুটির শিল্পের অবক্ষয়ে চাষির বিকল্প জীবিকার অভাব, মিশনারিদের ধর্মান্তর নীতি, ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের ফলে ভারতীয়দের সমস্যা, উপজাতিদের অরণ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, জঙ্গল কেটে বাদ দেওয়া প্রভৃতি নানা কারণেও কৃষক ও উপজাতির মানুষেরা বিদ্রোহের পথ বেছে নেয়।

চুয়াড় বিদ্রোহের কারণগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

ভূমিকা – মেদিনীপুর, ঘাটশিলা ও বাঁকুড়ার চুয়াড় উপজাতির কৃষকরা ১৭৬৮ থেকে ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় সাতবার যে বিদ্রোহ করে তা চুয়াড় বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

বিদ্রোহের কারণ – চুয়াড় বিদ্রোহের কারণগুলি হলো –

জমি দখল – কৃষিকাজ ও পশুপালন চূয়াড়দের প্রধান কি হলেও দের বেশির ভাগ লোক স্থানীয় জমিদারের স্পাইক বা আধা সামরিক বাহিনীর কাজ করত। এরা জমিদারদের কাছ থেকে পাইকান জমি পেত। বাংলায় কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠার পর কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এই অঞ্চলের জমিদারদের ওপর অত্যন্ত চড়া হারে ভূমিরাজস্ব ধার্য করে। এর বিরুদ্ধে জমিদাররা বিদ্রোহ ঘোষণা করলে তাদের পাইক চুয়াড়রাও সমগ্র জালমহল জুড়ে বিদ্রোহ করে।

জীবিকা সমস্যা – সরকার কর্তৃক নিষ্কর জমি দখল চুয়াড় বিদ্রোহের অন্যতম কারণ। কেননা চুয়াড়দের অধিকাংশ জমি ছিল ভোগদখল করা জমি। কোম্পানি জমি দখল করে নিলে তারা জীবিকাহীন হয়ে পড়ে।

রাজস্ব বৃদ্ধি – চুয়াড়দের অধীনে থাকা জমিতে সরকার রাজস্ব বৃদ্ধি করলে চুয়াড়রা ক্ষিপ্ত হয়। কোম্পানি নিযুক্ত রাজস্ব আদায়কারী কর্মচারীদের সীমাহীন অত্যাচার এই বিদ্রোহের অন্যতম কারণ।

উপসংহার – উপরোক্ত প্রেক্ষাপটে ১৭৬৮ খ্রিস্টাব্দে ধলভূমের রাজা জগন্নাথ বল-এর নেতৃত্বে প্রথম চুয়াড় বিদ্রোহ সংগঠিত হয়। পরবর্তীকালে ১৭৭১ খ্রিস্টাব্দে খাদকার শ্যামগঞ্চনের নেতৃত্বে এবং ১৭৯৮-৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুর্জন সিংহ ও অচল সিংহের নেতৃত্বে এই বিদ্রোহ বড় এবং চরম আকার ধারণ করে।

কোল বিদ্রোহের কারণগুলি আলোচনা করো।

ভূমিকা – ছোটোনাগপুর, সিংভূম, মানভূম প্রভৃতি অঞ্চলে বসবাসকারী উপজাতি জনগোষ্ঠী কোল নামে পরিচিত। কোলরা আবার হো, মুণ্ডা, ওঁরাও প্রভৃতি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল। ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে রাঁচি জেলায় ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে কোলরা যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল তা কোলবিদ্রোহ নামে পরিচিত।

বিদ্রোহের কারণ – কোল বিদ্রোহের কারণগুলি হল –

রাজস্ব বৃদ্ধি – কৃষি ও বনজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল কোল উপজাতির মানুষেরা ছিলেন অত্যন্ত সহজ সরল অরণ্যচারী মানুষ। ইংরেজ কোম্পানির ছোটোনাগপুর অঞ্চল দখলের পর সেখানে নতুন নতুন ভূমিরাজস্ব চড়া ভূমিরাজস্ব নীতির ফলে কোলরা ক্ষুব্ধ হয় এবং বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

অরণ্যের অধিকার – আধুনিক সভ্যতা থেকে বহু দূরে অরণ্যভূমি অঞ্চলে কোলরা স্বাধীনভাবে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তাঁরা তাদের চিরাচরিত অরণ্যের অধিকার হারায় ফলে তাদের জীবিকা সমস্যা দেখা দেয়।

বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ও শোষণ – ইংরেজ সরকার বহিরাগতদের কোল সম্প্রদায়ের জমিদার হিসেবে নিয়োগ করেন। তাঁরা চড়া রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে বিচার ও আইন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে কোল সমাজের ওপর আঘাত হানেন। রাজস্ব আদায়ের নামে জমিদার ও তার কর্মচারিরা শোষণ ও অত্যাচারের পাশাপাশি কোলদের জমি থেকে উৎখাত করে যা কোল বিদ্রোহের অন্যতম কারণ।

মহাজন ও ব্যবসায়ীদের শোষণ – জমিদারদের পাশাপাশি মহাজন ও ব্যবসায়ীদের প্রতারণা ও শোষণ কোলদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। ব্রিটিশ সরকার নগদ অর্থে খাজনা প্রদানের নিয়ম চালু করায় কোলরা তাদের ফসল বিক্রি করতে গিয়ে মহাজন ও ব্যবসায়ীদের দ্বারা শোষিত হত।

অন্যান্য কারণ – এ ছাড়াও বিভিন্ন কর, উপকার, কোলদের ইচ্ছা ও ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে আফিম চাষ করাতে বাধ্য করা, দেশি সুদের ওপর উচ্চ হারে কর চাপানো, কোনো রমণী ও পুরুষদের ওপর অত্যাচার প্রভৃতি কারণে কোলরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।

কোল বিদ্রোহের সূচনা, ব্যাপ্তি ও গুরুত্বকে তুমি কীভাবে বিশ্লেষণ করবে?

ভূমিকা – ছোটোনাগপুর, সিংভূম, মানভূম প্রভৃতি অঞ্চলে বসবাসকারী উপজাতি জনগোষ্ঠী কোল নামে পরিচিত। কোলরা আবার হো, মুণ্ডা, ওঁরাও প্রভৃতি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল। ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে রাঁচি জেলায় ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে কোলরা যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল তা কোলবিদ্রোহ নামে পরিচিত। কোল বিদ্রোহের প্রধান নেতা ছিলেন বুন্ধু ভগৎ, জোয়া ভগৎ, সুই মুন্ডা, ঝিন্দরাই মানদি প্রমুখ।

বিদ্রোহীদের লক্ষ্য – কোলদের আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল মহাজন, শস্য ব্যবসায়ী, লবণের কারবারি মধ্যসত্ত্বভোগী, ব্রিটিশ এবং উচ্চবর্ণের হিন্দু ও মুসলিমরা।

বিদ্রোহের ব্যাপ্তি ও দমন – রাঁচি, হাজারিবাগ, সিংভূম, পালামৌ প্রভৃতি অঞ্চলে কোল বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করে। বিদ্রোহী কোলদের সঙ্গে যোগ দেয়। চাষি, কামার, কুমোর, গোয়ালা প্রভৃতি নিম্নবর্গের মানুষ। ঘটনা এই বিদ্রোহকে অন্যমাত্রা প্রদান করে। এই ব্রিটিশ সরকার আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনীর সাহায্যে এই বিদ্রোহ দমন করে।

কোলবিদ্রোহের গুরুত্ব – মাতৃভূমি রক্ষায় কোলদের অসম লড়াই ব্যর্থ হলেও এই বিদ্রোহের গুরুত্ব অপরিসীম। এই বিদ্রোহের ফলেই সরকার

  • কোলদের জন্য। দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি নামক পৃথক এক ভূ-খণ্ড নির্দিষ্ট করে দেয়।
  • কোলদের জন্য স্বতন্ত্র কিছু নিয়মকানুন চালু হয়, কোল প্রধানদের কেড়ে নেওয়া জমি ফিরিয়ে দেওয়া হয়, হস্তান্তরে বিধিনিষেধ আরোপিত হয়।

সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণগুলি আলোচনা করো।

ভূমিকা – ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ভারতে ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে যে সমস্ত উপজাতি বিদ্রোহ ঘটে তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ও রক্তাক্ত বিদ্রোহ ছিল। | ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহ। সিধু ও কানহু নামক দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ৩০ জুন ভাগনাডিহির মাঠে প্রথম সাঁওতাল বিদ্রোহের সূচনা হয়।

কারণ – নানা কারণে এই নিরীহ সাঁওতালরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলি হল —

খাজনা বৃদ্ধি – বাংলা, বিহার, উড়িষ্যায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হলে বিনা খাজনায় অভ্যস্থ সাঁওতালদের (দামিন-ই-কোহ) জমির ওপর খাজনা ধার্য করা হয়। অল্পসময়ের মধ্যে সেই খাজনা প্রায় দশগুণ বৃদ্ধি পায় (১৮৩৭-৫৫ খ্রিঃ) যা সাঁওতালরা মেনে নিতে পারেননি।

মহাজন ও ব্যবসায়ীদের কারচুপি – অসাধু মহাজনরা ঋণপ্রদান ও সুদ গ্রহণকালে শোষণ করত। আবার ব্যবসায়ীরা ভুয়ো বাটখারায় (কেনারাম/বেচারাম) মালপত্র কেনাবেচা করে সাঁওতালদের ঠকাত। দীনদরিদ্র সরল সাঁওতালরা এই | কারচুপি জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

অরণ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া – সাঁওতালরা তাদের চিরাচরিত অরণ্যের অধিকার হারিয়েছিল নতুন ভূমিরাজস্ব নীতির ফলে। অরণ্যের অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ এই বিদ্রোহের অন্যতম কারণ।

প্রশাসনের অসহযোগিতা – সাঁওতালদের প্রতি রেলকর্মচারী ও ঠিকাদারদের অত্যাচার, নীলকরদের জুলুম সংক্রান্ত সাঁওতালদের অভিযোগ, অন্যায়ের কোনো প্রতিকার | হত না। কারণ আইন আদালত পুলিশ প্রশাসন কেউই তাদের সহযোগিতা করত না।

মূল্যায়ণ – এ সমস্ত কারণে সাঁওতালরা মহাজন ব্যবসায়ী, কোম্পানির কর্মচারী, নীলকরদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী। হয়ে উঠে অস্ত্রধারণ করে।

সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রকৃতি কেমন ছিল?

ভূমিকা – সাঁওতাল বিদ্রোহের চরিত্র সম্পর্কে ঐতিহাসিকেরা ভিন্ন মত ব্যক্ত করেন। অনেকে এই বা প্রকৃতি বিদ্রোহকে নিছকই উপজাতি বিদ্রোহ বলে মনে করেন। আবার কেউ কেউ এটাকে কৃষক বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেন। আবার কারো কারো মতে, এটি ছিল ব্রিটিশ বিরোধী গণবিদ্রোহ।

প্রকৃতি – বিভিন্ন ঐতিহাসিক লেখকদের দৃষ্টিকোণ থেকে সাঁওতাল বিদ্রোহের চরিত্র বা প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি পরিলক্ষিত হয় —

গণমুখী আন্দোলন – সাঁওতাল বিদ্রোহ কেবলমাত্র সাঁওতালদের বিদ্রোহ ছিল না। এই বিদ্রোহে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিল সকল সম্প্রদায়ের নিপীড়িত মেহনতী মানুষজন। সাঁওতালরা ছাড়াও কুমোর, কামার, গোয়ালা, ডোম, তেলি চামার প্রভৃতি নিম্নবর্গের মানুষ অংশগ্রহণ করে এই আন্দোলনকে গণমুখী করে তুলেছিল।

শোষিত মানুষের বিদ্রোহ – সাঁওতাল বিদ্রোহের চরিত্র ব্রিটিশ বিরোধী হলেও বিদ্রোহীরা জমিদার, মহাজনদের ওপর আঘাত হেনেছিল।

সকলের বিদ্রোহ – সাঁওতাল বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেছিল আবালবৃদ্ধবনিতা। নারী-পুরুষ কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতি বয়স্ক পুরুষ মহিলা অর্থাৎ বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষেরা অংশগ্রহণ করেছিল। সুতরাং এই বিদ্রোহ ছিল সকলের বিদ্রোহ।

ব্রিটিশ বিরোধিতা – এই বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ বিরোধী। বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর হ্যালিডে বলেন সাঁওতাল বিদ্রোহের মূল লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ শাসনের অবসান। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন যে, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে যদি স্বাধীনতা সংগ্রামের মর্যাদা দেওয়া হয় তাহলে সাঁওতাল বিদ্রোহের একই মর্যাদা পাওয়া উচিত।

উপসংহার – অধ্যাপক নরহরি কবিরাজ সাঁওতাল বিদ্রোহকে গণসংগ্রাম বলে আখ্যা দিয়েছেন। ঐতিহাসিক কালীকিঙ্কর দত্তের মতে, সাঁওতাল বিদ্রোহ ক্রমশ নিম্নশ্রেণির গণবিদ্রোহের রূপ ধারণ করেছিল। সুপ্রকাশ রায় সাঁওতাল বিদ্রোহকে ‘মহাবিদ্রোহের অগ্রদূত স্বরূপ’ বলেছেন।

সাঁওতাল বিদ্রোহের গুরুত্ব আলোচনা করো।

ভূমিকা – ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহ আপাতদৃষ্টিতে ব্যর্থ হলেও এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল বা গুরুত্বকে কখনোই ছোটো করে দেখা হয় না। এই বিদ্রোহের গুরুত্ব হল —

সাঁওতাল পরগনা গঠন – সাঁওতাল বিদ্রোহের অবসান হলে ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পারে সাঁওতালদের জন্য একটি নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ড গঠন করা প্রয়োজন। ফলে সরকার একপ্রকার বাধ্য হয়েই সাঁওতাল অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে পৃথক ‘সাঁওতাল পরগনা’ নামক পৃথক একটি এলাকা গঠন করে।

পৃথক উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি – সরকার সাঁওতালদের একটি পৃথক উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। সাঁওতাল পরগনায় সরকারি কোনো আইন কার্যকরী হবে না বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

জমিদারি ও মহাজনি শোষণ হ্রাস – সাঁওতাল পরগণায় তিন বছরের জন্য মহাজনদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয় জমিদারদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলে জমিদার ও মহাজনদের শোষণ সাময়িককালের জন্য হ্রাস পায়।

ভবিষ্যৎ আন্দোলনের পথ প্রদর্শক – সাঁওতাল বিদ্রোহীরা। তীর ধনুক, টাঙ্গি, তরবারি সম্বল করে সুশিক্ষিত সরকারি বাহিনীর বন্দুকের সামনে যে বীরবিক্রমে যুদ্ধ চালিয়ে গেছে তা পরবর্তী কৃষক বিদ্রোহ তথা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পথনির্দেশ প্রদান করেছিল। ঐতিহাসিক সুপ্রকাশ রায় তাই সাঁওতাল বিদ্রোহকে মহাবিদ্রোহের অগ্রদূত রূপে চিহ্নিত করেছেন।

কর হ্রাস – সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলেই সাঁওতালদের জমির ওপর কর হ্রাস করা হয়। সাঁওতাল পরগণাকে যতদূর সম্ভব ভারতীয় জনস্রোতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়।

উপসংহার – সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলে শুধুমাত্র সাঁওতালদের মধ্যেই নয়, সামগ্রিকভাবে নিম্নশ্রেণির কৃষকদের মধ্যে স্বাধীনতার যে স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি করে তা মহাবিদ্রোহের মাধ্যমে দাবানলে পরিণত হয়।

মুন্ডা বিদ্রোহের (১৮৯৯-১৯০০ খ্রিস্টাব্দ) কারণগুলি আলোচনা করো।

ভূমিকা – বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে মুন্ডা উপজাতির মানুষদের পুঞ্জীভূত বিক্ষোভ ও অসন্তোষের স্বাভাবিক অভিব্যক্তি হল মুন্ডা বিদ্রোহ (১৮৯৯-১৯০০ খ্রিস্টাব্দ)।

মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ – সহজ, সরল কৃষিজীবি মুন্ডাদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বিদ্রোহের কারণগুলি হল –

জমির ওপর অধিকার হারানো – মুন্ডা উপজাতির মানুষেরা প্রায় সকলেই ছিলেন কৃষিজীবী ও নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। ইংরেজ শাসন প্রবর্তিত হলে বাইরের থেকে লোভী মানুষেরা মুন্ডাদের জমি জায়গা কুক্ষিগত করে নিতে থাকে এবং মুন্ডাদের বিতাড়িত করে সেই জমিগুলি দখল করে নিলে মুন্ডারা বিক্ষুব্ধ হয়।

খুঁৎকাঠি প্রথার অবসান – ভারতের আদিমতম মুন্ডাদের ঐতিহ্যবাহি একটি প্রথা ছিল খুঁৎকাঠি প্রথা; যার অর্থ হল জমির ওপর যৌথ মালিকানা। কিন্তু ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তিত হলে মুন্ডাদের খুঁৎকাঠি প্রথার অবসান ঘটিয়ে জমিতে ব্যক্তিগত মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করলে মুন্ডারা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।

নতুন আইনবিধি – অতি প্রাচীনকাল থেকেই মুন্ডারা ছিলেন তাদের ঐতিহ্যবাহী মুক্তারি, আইন, বিচার ও সামাজিক ব্যবস্থার ধারক ও বাহক। কিন্তু ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তিত হলে মুন্ডাদের সেই চিরাচরিত ব্যবস্থা ভেঙ্গে দিয়ে নতুন ধরনের আইন প্রবর্তন করলে মুন্ডারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

বেগার শ্রম – নিরীহ মুন্ডাদের দিয়ে সরকারি কর্মচারী, জমিদার, মহাজন বিনা মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য করত। দিনের পর দিন তারা মুখ বুঝে বেট বেগারি অর্থাৎ বেগার খেটে অবশেষে বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়।

বিরসামুণ্ডার ভূমিকা – ধর্মপ্রচারক হিসেবে জীবন শুরু করলেও বিরসা মুণ্ডার সংস্কারমূলক বিবিধ ব্যবস্থা হীনমন্যতাকে দূর করে মুন্ডাদের মাথা উঁচু করে বাঁচার শিক্ষা মুন্ডা বিদ্রোহের অন্যতম কারণ।

উপসংহার – উপরোক্ত কারণগুলি ছাড়াও মহাজন, জমিদার, জায়গিরদার, ঠিকাদার, চা ব্যবসায়ীদের মিথ্যা প্রলোভন ও শোষণ এবং খ্রিস্টান মিশনারীদের ধর্মপ্রচার ছিল। এই বিদ্রোহের অন্যতম কারণ।

সন্ন্যাসী – ফকির বিদ্রোহের কারণগুলি আলোচনা করো।

ভূমিকা – কোম্পানি শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম সংগঠিত প্রতিরোধ আন্দোলন হল সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ। কৃষিজীবি হিন্দু, সন্ন্যাসী ও মুসলমান ফকিরদের নেতৃত্বে দীর্ঘ চল্লিশ বছর (১৭৬৩-১৮০০ খ্রিস্টাব্দ) ধরে এই বিদ্রোহ চলে।

বিদ্রোহের কারণ – সমকালীন বিভিন্ন তথ্য ও সূত্র থেকে জানা যায় যে, এই বিদ্রোহের কারণ ছিল —

কোম্পানির উচ্চহারে রাজস্ব বৃদ্ধি – ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ধার্য করা অত্যধিক রাজস্ব বৃদ্ধি কৃষিজীবি সন্ন্যাসী ও ফকিরদের ক্ষুব্ধ করে তোলে।

তীর্থকর – সন্ন্যাসী ও ফকিররা মাঝে মাঝে ইচ্ছেমতো দলবদ্ধভাবে বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্রে গেলে সরকার থেকে তাদের ওপর তীর্থকর আদায় করা হয়। এতে সন্ন্যাসী ও ফকিররা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।

কোম্পানির কর্মচারীদের জুলুম – ফকির ও সন্ন্যাসীদের মধ্যে অনেকেই রেশম ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিল। কোম্পানির কর্মচারিরা তাদের এই ব্যবসাতে নানাভাবে জুলুম ও বাধা প্রদান করত।

মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণ ও অত্যাচার – কোম্পানির কর্মচারী ছাড়াও ইজারাদার, পত্তনিদার প্রভৃতি মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের শোষণ-অত্যাচার সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের অন্যতম কারণ।

নিষেধাজ্ঞা – ফকিরদের নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কোম্পানি তাদের দরগায় যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে ফকিররা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।

মন্বন্তর – ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময়ে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে কৃষকদের ওপর রাজস্বের চাপ সৃষ্টি করলে সন্ন্যাসী ও ফকির ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

মূল্যায়ণ – সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ ছিল কোম্পানির শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের প্রথম বিদ্রোহ। যদিও ওয়ারেন হেস্টিংস এই বিদ্রোহকে পেশাদারি ডাকাতদের উপদ্রব বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু উইলিয়ম হান্টার সর্বপ্রথম সন্ন্যাসী বিদ্রোহকে কৃষক বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন।

সন্ন্যাসী – ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণগুলি কী কী?

ভূমিকা – ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ চলে। গেরিলাযুদ্ধের মাধ্যমে ইংরেজ সেনাদের বারংবার বিপর্যস্ত। করে তুললেও শেষ পর্যন্ত তারা লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়।

ব্যর্থতার কারণ – সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের কারণগুলি হল –

নেতৃত্বের দুর্বলতা – সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের উল্লেখযোগ্য কিছু নেতৃত্ব থাকলেও ভবানী পাঠক ও মজনু শাহের মৃত্যুর পর এই বিদ্রোহ দুর্বল হয়ে পড়ে। যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়ে যায়।

সঠিক পরিকল্পনার অভাব – সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের সঠিক পরিকল্পনা গৃহীত হয়নি। এই কারণেই উত্তরবঙ্গ ও অন্যান্য জায়গায় একই রকম পরিকল্পনা গৃহীত হয়নি।

সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের অভাব – বিদ্রোহীদের কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকা অর্থাৎ বিদ্রোহের উদ্দেশ্য কী ছিল সে বিষয়ে | বিদ্রোহীদেরই অনেকের কোনো ধারণা না থাকা এই বিদ্রোহের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ।

উপযুক্ত সংগঠনের অভাব – সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ ছিল উপযুক্ত সংগঠনের অভাব। এ উন্নততর অস্ত্র ও রণকৌশলের অভাব – উপযুক্ত ও উন্নততর অস্ত্রশস্ত্রের অভাব, ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে পড়ার মতো উন্নত রণকৌশলের অভাবে এই বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে যায়।

অন্যান্য কারণ – এছাড়াও আদর্শহীনতা, আত্মকলহ, | ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বারংবার আক্রমণ এই বিদ্রোহের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ।

উপসংহার – সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলেও বিদ্রোহীরা হিন্দু ও মুসলমানদের এক ছাতার তলায় এনে যে নতুন সশস্ত্র বিপ্লবের পথ নির্দেশ করেছিল তা ছিল পরবর্তী বিদ্রোহ বিপ্লবের কাছে আলোর প্রতীক স্বরূপ।

ওয়াহাবি আন্দোলনের উদ্দেশ্যগুলি আলোচনা করো।

ভূমিকা – অষ্টাদশ শতকে আরবে আবদুল ওয়াহাব ও ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতে শাহ ওয়ালিউল্লাহ ও আজিজ কুসংস্কার দূর করে মহম্মদ প্রদর্শিত পথে ইসলামকে নতুন রূপে গড়ে তুলতে চান। এরপর রায়বেরিলীর সৈয়দ আহম্মদ প্রকৃত অর্থে ওয়াহাবি আদর্শে শুদ্ধি আন্দোলন শুরু করেন। শীঘ্রই তা ব্রিটিশ বিরোধী হয়ে ওঠে। বাংলার তিতুমীরের নেতৃত্বে ওই আন্দোলন ধর্মীয় আর্থ-সামাজিক ও শেষে ব্রিটিশ বিরোধী চেহারা পায়।

উদ্দেশ্য – ওয়াহাবি আন্দোলনের উদ্দেশ্যগুলি হল –

ইসলামের শুদ্ধিকরণ – ওয়াহাবি শব্দের অর্থ হল নবজাগরণ অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের সমস্ত জটিলতা দূর করে ইসলাম ধর্মের শুদ্ধিকরণ ও সংস্কার ছিল ওয়াহাবি আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য। প্রথমদিকে ভারতে এই আন্দোলন ছিল ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন এবং ইসলামের শুদ্ধিকরণ।

সামন্ততন্ত্র ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন – ওয়াহাবি আন্দোলন মূলত ধর্মসংস্কার আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও অচিরেই তা সামন্ততন্ত্র ও ব্রিটিশ বিরোধী রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করে। সৈয়দ আহমেদ বলেন, ইংরেজ শাসনের ফলে ভারতবর্ষ ‘দার-উল-হার্ব বা বিধর্মীর দেশে পরিণত হয়েছে। একে ‘দার-উল-ইসলাম অর্থাৎ ইসলামের দেশে পরিণত করতে হবে। সুতরাং এই আন্দোলনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল বিধর্মী ইংরেজশাসন উচ্ছেদ করে মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠা করা।

ইংরেজদের তাড়ানো – ইংরেজ বণিকরা ভারতবর্ষ থেকে সম্পদ শোষণ করে এই দেশকে দরিদ্র করে দিচ্ছিলো। তাই ইংরেজদের বিতাড়িত করে ভারতবাসীকে বাঁচানো ওয়াহাবি আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।

মহম্মদ নির্দেশিত পথ অনুসরণ – মহম্মদ নির্দেশিত পথ অনুসরণ করা, পয়গম্বরের পবিত্র বাণী ও আদর্শের আলোকে ভারতীয় মুসলমানদের পুনরুজ্জীবিত করা ছিল ওয়াহাবি আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

উপসংহার – প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রমেশ চন্দ্র মজুমদারের মতে ওয়াহাবি আন্দোলন কখনেই জাতীয় আন্দোলন ছিল না। এবং এই আন্দোলনের চরিত্রও সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত ছিল না। ইংরেজ শাসনের বদলে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করাই ছিল এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য।

বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো।

অথবা, তিতুমির ও ওয়াহাবি আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো।

অথবা, বারাসত বিদ্রোহের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।

সূচনা – বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন মীর নিশার আলি বা তিতুমির। তাঁর নেতৃত্বে বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলন তাঁর রূপ ধারণ করে। সৈয়দ আমাদের শিক্ষার প্রহন করে তিনি ইসলাম ধর্মের কুসংস্কার ও বিকৃতির বিরুদ্ধে এই আন্দোলন শুরু করেন।

বারাসত বিদ্রোহ – তিতুমিরের দেশীয় জমিদার অত্যাচারী নীলকর, সুদখোর মহাজনদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দরিদ্র মুসলমানদের নিয়ে ইংরেজ শোষণ অত্যাচারের বিরুদ্ধে নদিয়া, যশোহর, ২৪ পরগণা, মালদহ, রাজশাহি, ঢাকা, পাবনায় যে আন্দোলন গড়ে তোলেন তা বারাসত বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

তিতুমীরের ঘোষণা – তিতুমির ঘোষণা করে

  • মূর্তিপূজা ফয়তা (শ্রাদ্ধশান্তি), পির-পয়গম্বরের পূজার দরকার নেই
  • ওয়াহাবি অনুগামীরা সুদে টাকা খাটাতে পারবে না
  • ওয়াহাবিদের দাড়ি রাখতে হবে।

কৃষ্ণদেব রায়ের সঙ্গে বিরোধ – বারাসত অঞ্চলে ওয়াহাবিদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে জমিদার কৃষ্ণদেব রায় তাদের কর্তৃত্ব খর্ব করার জন্য ওয়াহাবি মতাবলম্বীদের দাড়ির ওপর আড়াই টাকা কর ধার্য করেন। কৃয়দেব রায় তিতুমিরের গ্রাম আক্রমণ করে মসজিদ আগুন লাগিয়ে দিলে তাঁর সঙ্গে তিতুমিরের সংঘর্ষ বাধে।

বাঁশের কেল্লা – জমিদারদের বিরুদ্ধে সাফল্য লাভ করার পর তিতুমীর নিজেকে বাদশা বলে ঘোষণা করেন। এই সময় তিনি বাদুরিয়া থানার নিকটস্থ নারকেলবেড়িয়া গ্রামে একটি বাঁশের কেল্লা তৈরি করে সেখানে সদর দপ্তর স্থাপন করেন। তার অনুগামী মৈনুদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রী, গোলাম মাসুমকে প্রধান সেনাপতি, মসিন শাহকে প্রধান উপদেষ্টার পদ দেওয়া হয়। তিতুমীর নিয়ন্ত্রিত এলাকায় খাজনা আদায় শুরু করেন।

বিদ্রোহের অবসান – ১৮৩১ সালের ১৪ নভেম্বর উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক এক বিশাল সেনাবাহিনী পাঠিয়ে কামানের আঘাতে বাঁশের কেল্লা উড়িয়ে দেয়। তিতুমির যুদ্ধক্ষেত্রে বীরের মতো মৃত্যুবরণ করেন। তিতুমিরের ৮০০ জন অনুগামী বন্দি হয়। গোলাম মাসুমের ফাঁসি হয়। চরম নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়ে র ইংরেজ বাহিনী এই বিদ্রোহ দমন করে। তিতুমিরের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই বারাসত বিদ্রোহের অবসান হয়।

তিতুমিরের বারাসত বিদ্রোহের প্রকৃতি আলোচনা করো।

ভূমিকা – বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রবর্তক তিতুমিরের বিদ্রোহ বারাসত বিদ্রোহ নামে পরিচিত। তিতুমিরের বারাসত বিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মধ্য মত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। সেগুলি তুলে ধরা হল –

সাম্প্রদায়িক আন্দোলন – কোনো কোনো ঐতিহাসিকদের মতে ‘বারাসত বিদ্রোহ ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় ভাবধারার সমান্তরাল আন্দোলন। বারাসত বিদ্রোহকে এইসব ঐতিহাসিক হিন্দু বিরোধী ও সাম্প্রদায়িক আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

মুসলিম শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা – অনেকের মতে এই বিদ্রোহ ছিল কোম্পানির শাসনের পরিবর্তে মুসলিম শাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টামাত্র।

ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, এই আন্দোলন ছিল মুসলিমদের জন্য, মুসলিমদের দ্বারা এবং মুসলিম কর্তৃত্ব সপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন (It was a movement of the Muslims, by the Muslims and for the Muslims)

জাতীয় সংগ্রাম – কোয়ামুদ্দিন আহমদের মতানুসারে, ওয়াহাবিরা বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় আন্দোলনে লিপ্ত হয়েছিল। কারণ তিতুমিরের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধ দেখা দেয়, যেহেতু সে নিজেকে বাদশাহ বলে ঘোষণা করেছেন।

শ্রেণিসংগ্রাম – প্রথমদিকে তিতুমির নীলকরদের বিরোধী ছিলেন না, কিন্তু নীলকররা জমিদারদের সমর্থন করলে তারা তিতুর শত্রুতে পরিণত হন। অর্থাৎ এটি ছিল কৃষকদের শ্রেণিসংগ্রাম। নরহরি কবিরাজ তাই তিতুমীরের সংগ্রামকে শ্রেণি সংগ্রাম বলে বর্ণনা করেছেন।

অসাম্প্রদায়িক আন্দোলন – ঐতিহাসিক হান্টার, থনটন প্রমুখের মতে, বিদ্রোহীরা যেমন মুসলমান জমিদারদের আক্রমণ করেছিল তেমনি নিম্নবর্ণের হিন্দুদের উপর তারা কোনো অত্যাচার করেননি; তাই এই আন্দোলন ছিল অসাম্প্রদায়িক।

অবহেলিত মানুষের অংশগ্রহণ – বারাসত বিদ্রোহে শহরের বিত্তবান অপেক্ষা নিম্নবিত্ত মুসলমানরা বেশি অংশ গ্রহণ করেছিল; সেজন্য একে অবহেলিত মানুষের সংগ্রাম বলা যেতে পারে।

উপসংহার – তিতুমিরের বারাসত বিদ্রোহ কি নিছক ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক আন্দোলন কৃষক বিদ্রোহ, ইংরেজ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম, কৃষকদের শোষণ মুক্তির আন্দোলন। ঐতিহাসিকদের উত্তর যাই হোক না কেন জমিদার, নীলকর সাহেবদের নিত্যনতুন শোষণ, সামাজিক অত্যাচার নির্যাতন, অর্থনৈতিক শোষণ, ধর্মীয় কলুষতা থেকে কৃষকদের মুক্ত করতে এই আন্দোলনের গুরুত্বকে কখনই অস্বীকার করা যাবে না।

বারাসত বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ কী?

ভূমিকা – এই আন্দোলন ধর্মীয় আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও পরে তা রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়। ফলে বাংলার তিতুমিরের পরিচালনায় ওয়াহাবি আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে যায় এর পেছনে একাধিক কারণ ছিল সেগুলি হল –

সুনির্দিষ্ট কর্মসূচীর অভাব – তিতুমিরের বারাসত বিদ্রোহের সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মসূচী ছিল না। অপ্রস্তুত অবস্থায় জমিদার, নীলকর ও ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই দীর্ঘদিন চালিয়ে যাওয়া তাই বিদ্রোহীদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। ফলে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচীর অভাবে বারাসত বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়।

জন সমর্থনের অভাব – তিতুমিরের বারাসত বিদ্রোহে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ অংশ গ্রহণ করেনি। আন্দোলনকারীরা বেশির ভাগই ছিল নিম্নবর্ণের মুসলমান সমাজের মানুষ। উচ্চবিত্ত মুসলমান সমাজের পূর্ণ সমর্থন ছিল না বারাসত বিদ্রোহে।

অসহযোগিতা – হিন্দু সমাজের শিক্ষিত অংশ এই আন্দোলনে যোগদান করেননি। এই আন্দোলনকে সমর্থনও করেননি বরং অসহযোগিতা করেন। অন্যদিকে অভিজাত ও জমিদার গোষ্ঠী ব্রিটিশদের পক্ষে চলে যাওয়ায় এই আন্দোলন ব্যর্থ হয়।

সুসজ্জিত ব্রিটিশ বাহিনী – আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত ব্রিটিশ বাহিনী বিদ্রোহীদের থেকে অনেক বেশি বলীয়ান ছিল। তাই বিদ্রোহীদের পক্ষে সাফল্য লাভ কখনই সম্ভব ছিল না। তাছাড়া ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য অর্থ, সৈন্য, দক্ষসেনাপতির অভাবও বারাসত বিদ্রোহের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ।

ব্রিটিশ দমননীতি – ব্রিটিশ বাহিনীর তীব্র দমন নীতি, কামানের ব্যবহার এই বিদ্রোহের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ।

শেষকথা – যে জায়গায় এই আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছিল, সেখান থেকে সঠিকভাবে সর্বত্র আন্দোলন পরিচালনা করা সম্ভব ছিল না। এছাড়াও তিতুমিরের মৃত্যু এবং তাঁর মৃত্যুর পর উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাব, বিদ্রোহীদের গ্রেপ্তার এই বিদ্রোহের ব্যর্থতার অন্যতম করেন।

ফরাজি আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী ছিল?

ভূমিকা – ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধের কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাসে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফরাজি আন্দোলন ছিল এই রকমই একটি কৃষক বিদ্রোহ। আরবি ‘ফরাইজ’ শব্দ থেকে ফরাজি আন্দোলনের নামকরণতারিখ-ই-মহম্মদীয়া প্রতিষ্ঠা করাই ছিল এর প্রধান লক্ষ্য।

উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য – ফরাজি আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল —

আদর্শ অনুসরণ – কোরানের পবিত্র আদর্শ অনুসরণ করে চলা, ইসলাম নির্দিষ্ট কর্তব্য ও পবিত্র বিশ্বাস মেনে চলা এবং ইসলামিয় ভাবধারাকে পুনরুজ্জীবিত করা।

কৃষক মুক্তি – অত্যাচারী হিন্দু জমিদারের শোষণ থেকে দরিদ্র কৃষকদের মুক্ত করা। নীলকর ও রক্ষণশীল মুসলমানদের বিরোধীতা করা ও ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ করে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করা।

বৈষম্য দূরীকরণ – এই আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা। জমির ওপর সকলের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করে সামাজিক বৈষম্য দূর করা।

জুম্মা প্রার্থনায় নিষেধ – নামাজ জুম্মা বা ঈদের প্রার্থনায় আপত্তি করা কেননা ফরাজিরা মনে করত ইংরেজ অধিকৃত ভারতবর্ষ ছিল ‘দার-উল হারব’ বা ‘বিধর্মীদের দেশ’। এই অবস্থায় ভারতে নামাজ বা ঈদের সময় জুম্মা প্রার্থনা উচিত নয়।

মূল্যায়ণ – ফরাজি আন্দোলন ধর্মীয় আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও ক্রমেই তা রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করে। হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করাই এই আন্দোলনের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়, কেননা ফরাজি আন্দোলন কখনই একটি হিন্দু বিরোধী সাম্প্রদায়িক আন্দোলন ছিল না।

দুদু মিঞা স্মরণীয় কেন?

ভূমিকা – মুসলিম সমাজের পুনরুজ্জীবন ও সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে হাজি শরিয়ৎ উল্লাহ ভারতে উনিশ

শতকে যে আন্দোলন গড়ে তোলেন তা ফরাজি আন্দোলন নামে পরিচিত। ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে শরিয়ৎ উল্লাহের মৃত্যুর পর এই আন্দোলনের নেতৃত্ব ভার গ্রহণ করেন তার পুত্র দুদু মিঞা (১৮৩৭-১৮৬০ খ্রি:)

দুদু মিঞা ও ফরাজি আন্দোলন – দুদু মিঞার প্রকৃত নাম মহম্মদ মহসীন। তিনি স্মরণীয় কারণ –

আন্দোলনের প্রাণপুরুষ – দুদু মিঞার নেতৃত্বেই পূর্ববঙ্গের অত্যাচারী জমিদার, নীলকর ও তাদের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ফরাজি আন্দোলন আরও সুসংহতভাবে পরিচালিত হয়। তার নেতৃত্বে ফরাজি আন্দোলন ধর্মসংস্কার আন্দোলন থেকে ধর্মীয়-সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ নেয়।

দুদু মিঞার আহ্বান – দুদু মিঞা ঘোষণা করেন, ‘জমির মালিক আল্লাহ, তাই জমিদারদের খাজনা আদায় করার কোনো অধিকার নেই।’ তিনি তার সমর্থকদের কাছে জমিদারদের খাজনা দেওয়ার, নীলচাষ না করার এবং বিদেশি শাসক ইংরেজদের অগ্রাহ্য করার আহ্বান জানান। তার এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে পূর্ববঙ্গের লক্ষ লক্ষ দরিদ্র কৃষক তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে।

ফরাজি খিলাফৎ – দুদু মিঞা ফরাজি খিলাফৎ নামে একটি প্রশাসন গড়ে তোলেন। এই প্রশাসনের শীর্ষে ছিলেন তিনি স্বয়ং। তাকে বলা হত ওস্তাদ। তাঁর সাহায্যকারীদের বলা হত খলিফা। প্রশাসনিক কার্যকে সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য তিনি সমগ্র পূর্ববঙ্গকে কয়েকটি অঞ্চল বা হল্কায় ভাগ করেন এবং প্রত্যেক হল্কায় একজন করে খলিফা নিযুক্ত করেন।

দুদু মিঞার নির্দেশমত নিজের এলাকার কৃষকদের সংগঠিত করা, জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং আসন্ন সংগ্রামের প্রস্তুতি হিসেবে অর্থ সংগ্রহ করা ছিল খলিফাদের প্রধান কাজ।

জমিদার ও নীলকরদের আক্রমণ – লাঠিয়াল ও গুপ্তচর বাহিনী গঠন করে দুদু মিঞা নিজ প্রভাবাধীন এলাকায় কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে জমিদার ও নীলকরদের আক্রমণ করে। ফরাজিদের আন্দোলনের জমিদার ও নীলকরদের প্রচেষ্টায় ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে দুদু মিঞাকে ব্রিটিশ সরকার গ্রেপ্তার করে তাঁকে জেলে বন্দি করে। উচ্চতর আদালতের নির্দেশে তিনি ছাড়া পান।

মূল্যায়ণ – দুদু মিঞা ফরাজি আন্দোলনকে ধর্মীয় বৃত্তের বাইরে বের করে যেভাবে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করেন সেজন্য তিনি অম্লান ও ভাস্কর হয়ে থাকবেন। ভারতবাসীর মনে।

ফরাজি আন্দোলনের প্রকৃতি আলোচনা করো।

ভূমিকা – ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে বাংলায় ফরাজি আন্দোলন নামে এক মুসলিম সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। প্রথমদিকে ধর্মসংস্কার আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও ক্রমেই তা কৃষক আন্দালনে পরিণত হয়।

প্রকৃতি – এই আন্দোলনের প্রকৃতি সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। এগুলি হল –

ধর্মীয় আন্দোলন – এটি ছিল ইসলামের শুদ্ধিকরণ ও ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন। ফরাজি কথাটি ফরাজ থেকে এসেছে যার অর্থ আল্লাহের আদেশ অর্থাৎ আল্লাহ তথা হজরত মহম্মদের নির্দেশিত পথ ধরে মুসলিম ধর্মের সংস্কারই ছিল এর লক্ষ্য। ফরাজিরা ইসলামের শুদ্ধিকরণ ও পবিত্রতায় বিশ্বাসী ছিলেন।

সাম্প্রদায়িক আন্দোলন – ঐতিহাসিক বিনয়ভূষণ চৌধুরী দেখিয়েছেন জমিদার বিরোধীতা থেকে উদ্ভূত হলেও হিন্দুধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি ফরাজিদের অসহিঞ্চুতা প্রকাশ পেতে থাকে। এই আন্দোলন মূলত মুসলমান সম্প্রদায়ের দ্বারাই পরিচালিত ছিল।

স্বাধীনতার আন্দোলন – আধুনিক ঐতিহাসিক অভিজিৎ দত্ত দেখিয়েছেন দুদু মিঞা বিদেশি শাসনের উচ্ছেদ ঘটিয়ে স্বাধীন রাজ্য স্থাপনের পরিকল্পনা করে গ্রামাঞ্চলে স্বাধীন সরকার স্থাপন, সেনাবাহিনী গঠন, স্বাধীন কর ও বিচারব্যবস্থা ফরাজি আন্দোলন স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপ প্রদান করে।

শ্রেণিসংগ্রাম – কোনো কোনো ঐতিহাসিক এই আন্দোলনকে শ্রেণি সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন। ঐতিহাসিক অমলেন্দু দে-র মতে ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও স্বল্পকালের মধ্যেই তা জমিদার নীলকর বিরোধী সংগ্রামে পরিণত হয়।

কৃষক আন্দোলন – ঐতিহাসিক নরহরি কবিরাজ দেখিয়েছেন এই আন্দোলন ছিল মূলত কৃষক আন্দোলন। নির্যাতিত নিপীড়িত মুসলিম-হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের কৃষকেরাই এতে অংশগ্রহণ করেছিল। দুদু মিঞার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মূলত কৃষকরাই এতে অংশগ্রহণ করেছিল। এটি ছিল একদল কৃষকদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন।

উপসংহার – উইলিয়াম হান্টার বলেন, ফরাজি আন্দোলন ছিল একটি শ্রেণিসংগ্রাম, ঐতিহাসিক হান্টার এই আন্দোলনকে Red Republican বা সাম্যবাদী প্রজাতান্ত্রিক আন্দোলন বলে অভিহিত করেছেন। Dr. R. C. Majumdar বলেন, সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব থাকলেও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের পূর্বমহড়া হিসেবে ফরাজি আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম।

ফরাজি আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণগুলি আলোচনা করো।

সূচনা – হাজি শরিয়ৎ উল্লাহ ও তার পুত্র দুপু মিঞা ছিলেন ফরাজি আন্দোলনের প্রবর্তক। পরবর্তীকালে নোয়ামিস্তার নেতৃত্বে এই আন্দোলন পরিচালিত হয়। তার আমলে ফরাজি আন্দোলনের জনপ্রিয়তা নষ্ট হয়ে ফরাজি আন্দোলন নিছক একটি ধর্মীয় আন্দোলনে পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে এই আন্দোলন ব্যর্থতায় বসিত হয়।

ব্যর্থতার কারণ – ফরাজি আন্দোলনের ব্যর্থতার গুলি হল –

যোগ্য নেতৃত্বের অভাব – শরিয়ত উল্লাহ ও দুদু মিঞার পর (১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে) ফরাজি আন্দোলনের নেতৃত্ব। এখন করার মতো যোগ্য নেতৃত্বের অভাব ফরাজি আন্দোলনের বর্ণবার প্রধান কারণ। তাছাড়া দুদু মিঞার দীর্ঘ কারাবাসের হলেও এই আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়ে।

ধর্মীয় সংকীর্ণতা – ফরাজি আন্দোলনের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হল ধর্মীয় সংকীর্ণতা। দুদু মিঞার মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র নোয়া মিঞা জমিদার ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ রাগ্রাম অপেক্ষা ধর্মীয় সংশয়ে মনোনিবেশ করলে এই আন্দোলনের জনপ্রিয়তা নষ্ট হয় এবং এটি ধর্মীয় গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ে।

রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া – দুদু মিঞার মৃত্যুর পর এই আন্দোলন রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে এই আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে।

সাম্প্রদায়িকতার মনোভাব – ফরাজি আন্দোলন হিন্দুধর্ম বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়। ফলে হিন্দুরা এই আন্দোলন থেকে দূরে সরে যেতে থাকে।

সংহতির অভাব – সংকীর্ণ ধর্মবোধ দ্বারা এই আন্দোলন পরিচালিত হওয়ায় উদারপন্থী মুসলমান সমাজ এই আন্দোলন থেকে দূরে সরে থাকে ফলে; সংহতির অভাব পরিলক্ষিত হয়। ঐ ব্রিটিশ বিরোধীতার প্রবণতা হ্রাস – ফরাজিদের মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধীতার প্রবণতা হ্রাস পায় বরং তাদের মধ্যে ব্রিটিশদের প্রতি আনুগত্য বৃদ্ধি পেলে এই আন্দোলনের জনপ্রিয়তা কমে যায়।

শেষকথা – ব্যর্থতার উপরোক্ত কারণগুলি ছাড়াও এই আন্দোলনের লক্ষ্যহীনতা, অর্থলোকবল, সময়, উপকরণ ও মানষিকতার অভাব, ধর্মবোধ ও চেতনার ওপর এই আন্দোলন গড়ে ওঠায় কৃষক সমাজের আংশিক সমর্থন, দু বিজ্ঞার স্বাধীন সরকার গড়ে তোলার অলীক স্বপ্ন, সর্বোপরি এই আন্দোলনের চরিত্র সর্বভারতীয় না থাকা ছিল ফরাজি আন্দোলনের ব্যর্থতার অন্যান্য কারণ।

ফরাজি ও ওয়াহাবি আলোচনা করো।

ভূমিকা – ভারতে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসন প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে উনিশ শতকে ইসলামিয় পুনরুজ্জীবনের জন্য যে সমস্ত আন্দোলন হয়েছিল তার মধ্যে ফরাজি ও ওয়াহাবি আন্দোলন ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পার্থক্য – দুটি আন্দোলনের মধ্যে যথেষ্ট মিল থাকলেও উভয় আন্দোলনের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়, যেমন –

প্রথমত, ওয়াহাবি আন্দোলন তথা তিতুমিরের আন্দোলন যতটা ইংরেজ বিরোধী ছিল ফরাজি আন্দোলন ততটা ছিল না।

দ্বিতীয়ত, তিতুমির ব্রিটিশ শাসনকে গুরুত্ব না দিয়ে স্বাধীন ওয়াহাবি রাজ্য ঘোষণা করেন অন্যদিকে দুদু মিঞা খিলাফৎ প্রশাসন নামক একটি স্বশাসিত প্রশাসন গড়ে তোলেন।

তৃতীয়ত, তিতুমির ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদের পক্ষে ছিলেন। অন্যদিকে দুদু মিঞা সরকারের কাছে এক আর্জিতে জানান যে, জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রাম, ব্রিটিশ রাজ সম্পর্কে তাদের কোন বিদ্বেষ নেই।

চতুর্থত, ফরাজি আন্দোলন মূলত বাংলাদেশ বিস্তার লাভ করেছিল কিন্তু ওয়াহাবি আন্দোলনের পরিধি ছিল অনেক বিস্তৃত।

পঞ্চমত, ওয়াহাবিদের বলা হত জুম্মাওয়া, কেননা তারা নামাজ ও জুম্মা পাঠ করতেন। অন্যদিকে ফরাজিদের বলা হত বে-জুম্মাওয়ালা কারণ তারা নামাজ ও জুম্মা প্রার্থনা করতেন না, কারণ তাঁদের মতে ইংরেজ অধিকৃত ভারতবর্ষ ছিল ‘দার-উল-হারব’ সুতরাং এই অবস্থায় ভারতে জুম্মা প্রার্থনা উচিত নয় বলে তাঁরা মনে করতেন।

ষষ্ঠত, ওয়াহাবিরা প্রত্যেক ওয়াহাবিকে সমান মনে না করলেও ফরাজি মতে সকল ফরাজি ছিল সমান। – সপ্তমত, তিতুমির ও তাঁর অনুগামীরা সৈয়দ আহমদকে গুরু বলে মনে করতেন, কিন্তু ফরাজিরা সৈয়দ আহমদের গুরু শাহ ওয়ালী উল্লাহের মতাবলম্বী ছিল।

মূল্যায়ণ – দুটি আন্দোলনের মধ্যে কিছু কিছু পার্থক্য থাকলেও এই আন্দোলন দুটির হাত ধরেই মুসলমান সমাজের সংস্কার শুরু হয় যা পরবর্তীকালের আন্দোলনগুলির পথপদর্শক রূপে চিহ্নিত হয়ে আছে।

ফরাজি ও ওয়াহাবি আন্দোলনের মধ্যে সাদৃশ্যগুলি আলোচনা করো।

ভূমিকা – ভারতে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া জি কোম্পানীর শাসন প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে উনিশ শতকে ইসলামিয় পুনরুজ্জীবনের জন্য যে সমস্ত আন্দোলন হয়েছিল তার মধ্যে ফরাজি ও ওয়াহাবি আন্দোলন ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফরাজি ও ওয়াহাবি আন্দোলনের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য থাকলেও উভয় আন্দোলনের মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।

প্রথমত, দুটি আন্দোলনেরই প্রেরণা আসে ভারতের বাইরে থেকে ফরাজি আন্দোলনের প্রবর্তক হাজি শরিয়ৎ উল্লাহ মক্কা থেকে ফিরে এসে ইসলাম ধর্মের আদিম ও অকৃত্রিম আদর্শে মনোনিবেশ করেন; অন্যদিকে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রবর্তক ইবন আব্দুল ওয়াহাব যিনি ছিলেন আরব দেশের ধর্ম সংস্কারক অর্থাৎ এই আন্দোলনের সূত্রপাতও আরবদেশে।

দ্বিতীয়ত, দুটি আন্দোলনই ছিল ইসলাম ধর্মের পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন। ইসলাম ধর্মের কু-প্রথা দূর করে শুদ্ধিকরণের মাধ্যমে এই ধর্মের পুনরুজ্জীবন ছিল দুটি আন্দোলনেরই লক্ষ্য।

তৃতীয়ত, আর্থ-সামাজিক দিক থেকে দুটি আন্দোলনই ছিল সামন্ততন্ত্র বিরোধী। দুটি আন্দোলনেই ধর্মীয় জাগরণের মধ্যে আর্থ-সামাজিক শোষণ থেকে মুক্তির পথ খোঁজা হয়েছিল।

চতুর্থত, দুটি আন্দোলনেই পরবর্তীকালে সাম্প্রদায়িক প্রভাব ভীষণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। একদিকে তিতুমিরের আন্দোলনে যেমন সাম্প্রদায়িক মনোভাব ছিল তেমনি ফরাজি আন্দোলনের নেতা নোয়া মিঞার আন্দোলনের একই রকম সাম্প্রদায়িক ভাবধারা পরিলক্ষিত হয়।

পঞ্চমত, ফরাজি ও ওয়াহাবি দুটি আন্দোলনেই অবতারত্ববাদী ভাব লক্ষ্য করা যায়। দুদু মিঞা ও তিতুমির উভয়ই নিজেদের অলৌকিক শক্তির অধিকারী বলে মনে করতেন।

ষষ্ঠত, দুটি আন্দোলনেই ব্রিটিশ বিরোধীতা লক্ষ্য করা যায়। তবে ফরাজি আন্দোলনে ওয়াহাবিদের মত তীব্র ব্রিটিশ বিরোধীতা ছিল না।

সপ্তমত, উভয় আন্দোলনের মধ্যেই নিজেদের মতবাদ মতাদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার জন্য স্ব-ধর্মাবলম্বী মুসলমানদের ওপর জোর জুলুম করা হয়। বিরোধী মুসলমানদের দমন করার জন্য উভয় আন্দোলনের আন্দোলনকারীরাই সন্ত্রাসের আশ্রয় নেয়।

অষ্টমত, দুটি আন্দোলনেই দরিদ্র কৃষক, জোলা সম্প্রদায়ের অভূতপূর্ব অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়; যাদের উদ্দেশ্য ছিল। শোষণের হাত থেকে মুক্তি।

মূল্যায়ণ – ফরাজি ও ওয়াহাবি আন্দোলনের মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হলেও ব্রিটিশ শাসিত ভারতে দুটি আন্দোলনই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিক রমেশ্চন্দ্র মজুমদারের মতে, সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব থাকলেও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের পূর্বমহড়া হিসেবে ফরাজি আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। অন্যদিকে কেয়ামুদ্দিন আহমেদ বলেন, ওয়াহাবি আন্দোলন ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অঙ্গ।

নীল বিদ্রোহের কারণগুলি আলোচনা করো।

সূচনা – ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে নীলচাষিদের উপর নীলকর সাহেবদের অমানুষিক অত্যাচার ও নির্মম শোষণের বিরুদ্ধে নীলচাষিদের সংঘবদ্ধ আন্দোলনকে নীলবিদ্রোহ বলা হয়। ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্রের মতে, নীলবিদ্রোহ ছিল, বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড়ো বিক্ষোভ, বাংলাদেশকে ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে আছে করে রেখেছিল।

নীলবিদ্রোহের কারণ –

নীলচাষের পদ্ধতি – নীলকররা জমিদারদের টাকা দিয়ে দীর্ঘদিনের জন্য জমি ভাড়া নিয়ে ভাড়াটির শ্রমিকদের দিয়ে নীলচাষ করতে তাকে বলা হয় এ এই চাষে সমস্যা ছিল গরীব চাষিদের নিরক্ষতার সুযোগ নিয়ে কম টাকা দাদন দিয়ে বেশি টাকার চুক্তি করে তাদের দিয়ে নীলচাষ করতে বাধ্য করত। এই চাষে চাষিরা সর্বস্বান্ত হত।

নীলবিদ্রোহের কারণ

নীল তৈরির বিভিন্ন ধাপ

নীলকর সাহেবদের অত্যাচার – নীলকররাই ছিল কৃষকদের প্রতিপক্ষ। নীলকরদের অত্যাচার, লুণ্ঠন, শোষণ, দৌরাত্ম, ব্যভিচার লাম্পাটা ছিল এই বিদ্রোহের অন্যতম কারণ।

নীলকরদের সরকারি সমর্থন – ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের সময় আইনে শ্বেতাঙ্গদের জমিকেনার অধিকার দেওয়া হয়। তারও আগে সরকারী দাদনি প্রথাকে সমর্থন জানালে তীব্র জনরোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। একাদশ আইনে দাদন গ্রহণকারী কৃষকদের নীলচাষ করতে বাধ্য করা হয়।

দস্তুরি প্রথা ও নীলের কম দাম প্রদান – নীলের দাম দেওয়ার সময় দাদনের কিস্তি ও সুদের টাকা নীলকররা কেটে রাখত। একে বলা হত দস্তুরি প্রথা। রায়তদের উৎপাদিত নীলের দাম দেওয়া হত ২ টাকা ৮ আনা অথচ সেই নীলের বাজার দর ছিল ১০ টাকা অর্থাৎ প্রতি কেজি নীলে কৃষকদের ৭ টাকা ৮ আনা ঠকানো হত।

পঞ্চম আইন – লর্ড বেন্টিঙ্ক ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে পথম আইন পাস করেন। এই আইনে বলা হয় দাদন নিয়ে নীলচাষ না করলে তা বে-আইনি বলে গণ্য হবে এবং অপরাধির জেল হবে।

পক্ষপাত দুষ্ট বিচারব্যবস্থা – নীলকরদের বিরুদ্ধে সরকারি আদালতে নালিশ করার উপায় ছিল না। নালিশ করলেও শ্বেতাঙ্গ ম্যাজিস্ট্রেটরা স্ব-জাতীয় শ্বেতাঙ্গ নীলকরদের প্রতি পক্ষপাত দেখাতেন। মফঃসলে ভারতীয় বিচারকরা শ্বেতাঙ্গ নীলকরদের বিচার করতে পারত না।

অন্যান্য বিদ্রোহের প্রভাব – ফরাজি, ওয়াহাবি, সাঁওতাল, কোল বিদ্রোহীদের আদর্শ দ্বারা বহুলাংশে অনুপ্রাণিত হয়ে নীলবিদ্রোহীরা নীলবিদ্রোহ ঘটায়।

উপসংহার – উপরিউক্ত নানা কারণে দিগম্বর বিশ্বাস বিচরণ বিশ্বাস, বৈদ্যনাথ সর্দার, বিশ্বনাথ সর্দার, রহিম উল্লা, রফিক মণ্ডল, মহেশ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ নেতৃবৃন্দের নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে এক বিস্ফোরক প্রতিবাদই ছিল নীলবিদ্রোহ।

উনিশ শতকে ভারতে ব্রিটিশ শাসন ও ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও বিদ্রোহের পথ অবলম্বন করে ভারতের বিভিন্ন শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের মানুষ। এই প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer