মাধ্যমিক ইতিহাস – উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964) – বিষয়সংক্ষেপ

Gopi

আজকের আর্টিকেলে আমরা দশম শ্রেণীর ইতিহাস বইয়ের অষ্টম অধ্যায়, “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)” -এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করব। এই অধ্যায়ের বিষয়বস্তু পড়ার সময় অধ্যায়টির কাঠামো ও প্রধান বিষয়াবলি বুঝতে সাহায্য করবে, যা আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, এই সংক্ষিপ্ত বিবেচনা আপনাদের প্রস্তুতি আরও ভালো করতে সাহায্য করবে।

মাধ্যমিক ইতিহাস - উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964) - বিষয়সংক্ষেপ
Contents Show

‘পাকিস্তান’ (Pakistan) শব্দের উৎপত্তি –

1933 খ্রিস্টাব্দে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত ছাত্র চৌধুরী রহমত আলি ‘Now or Never’ নামক পুস্তিকাতে প্রথম পাকিস্তান নামটি উল্লেখ করেন। প্রকৃতপক্ষে ভারতের উত্তর-পশ্চিমের পাঁচটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের নামের অংশ নিয়ে পাকিস্তান নামটি তৈরি হয়। যেমন – পাঞ্জাব -এর ‘P’, আফগানিস্তান -এর ‘A’, কাশ্মীর -এর ‘K’, সিন্ধু বা ইন্দাস -এর ‘I’ ও বালুচিস্তান -এর ‘STAN’ = Pakistan।

1947 খ্রিস্টাব্দের 4 জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারতীয় স্বাধীনতা আইন (Indian Independence Act) পাস হয়। 18 জুলাই এটি রাজকীয় সম্মতি লাভ করে আইনে পরিণত হয়। এই আইন অনুসারে 1947 খ্রিস্টাব্দের 14 আগস্ট পাকিস্তান ও 15 আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে।

  • পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল হন মহম্মদ আলি জিন্না।
  • পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন লিয়াকৎ আলি খান।
  • ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল হন লর্ড মাউন্টব্যাটেন।
  • ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন জওহরলাল নেহরু।

কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় রাজ্যসমূহ –

1947 খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতভুক্ত করা। অনেক দেশীয় রাজ্য ভারতভুক্ত হলেও মহীশূর, হায়দরাবাদ, কাশ্মীর ও জুনাগড় রাজ্যগুলিকে ভারতভুক্ত করা ছিল ভারতের মহাকাজ।

এর মধ্যে মহীশূর ভারতভুক্ত হলেও কাশ্মীর, জুনাগড় ও হায়দরাবাদ ভারতভুক্ত না হয়ে তাদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে চায়। ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই প্যাটেল এই রাজ্যগুলিকে ভারতভুক্ত করার জন্য কঠোর মনোভাব গ্রহণ করেন। পর্যায়ক্রমে কাশ্মীর, জুনাগড় ও হায়দরাবাদ ভারতভুক্ত হয়।

মহাকাজবড় দেশীয় রাজ্য
মহীশুর
হাহায়দরাবাদ
কাকাশ্মীর
জুনাগড়

1947 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ-শাসিত ভারত স্বাধীন হলেও ভারতের অনেক জায়গা তখনও ফ্রান্স ও পোর্তুগালের দখলে ছিল।

ফ্রান্সের দখলে ছিল চন্দননগর, পন্ডিচেরি, মাহে, কারিকল, ইয়ানাম। পোর্তুগালের দখলে ছিল গোয়া, দমন, দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলি।

মনে রাখার সহজ উপায়

ভারতে যোগ দিতে প্রথমে অস্বীকার করে – কাশ্মীর, জুনাগড়, হায়দরাবাদকাজু হায়
ফ্রান্সের দখলেচন্দননগর, পন্ডিচেরি, মাহে, কারিকল, ইয়ানামচপ মাকাই
পোর্তুগালের দখলেগোয়া, দমন, দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলিকাজু হায়

অথবা,

কাজু হায়
বল্লভভাই।
কাজু হায়
কোথা পাই।
চপ মাকাই
নেপোয় খায়
(মাখাই -এর মতো উচ্চারণ, মাখাই = মাখানো)চপ মাকাই
মুড়ি খাই।
গদদি দান
ভাস্কো খান।
(গদ্দী = রাজার আসন। হিন্দিতে গদ্দী, বাংলায় গদি)গদদি দান
বসে খান।

1947 খ্রিস্টাব্দের পর বিদেশি রাষ্ট্রের অধীন অঞ্চল

1947 খ্রিস্টাব্দের পর বিদেশি রাষ্ট্রের অধীন অঞ্চলভারতভুক্তি
ফ্রান্সচন্দননগর
পন্ডিচেরি, মাহে, কারিকল, ইয়ানাম
1950 খ্রিস্টাব্দে
1954 খ্রিস্টাব্দে
পোর্তুগালদাদরা ও নগর হাভেলি
গোয়া, দমন, দিউ
1961 খ্রিস্টাব্দে
1975 খ্রিস্টাব্দে

কাশ্মীর –

পাঞ্জাবের অধিপতি রণজিৎ সিংহ (1870-1839 খ্রিস্টাব্দ) 1819-1820 খ্রিস্টাব্দে জম্মু ও কাশ্মীর জয় করেন। তিনি বিশাল শিখ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। রণজিৎ সিংহের মৃত্যুর পর তাঁর বংশধররা রাজত্ব করত। 1845-1846 খ্রিস্টাব্দে শিখদের সঙ্গে ইংরেজদের যুদ্ধ হয়। এতে শিখরা পরাজিত হয় এবং অপমানজনক লাহোরের সন্ধি (1846 খ্রিস্টাব্দ, মার্চ) স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। এই সন্ধির শর্ত অনুসারে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ দেড় কোটি টাকা শিখরা ইংরেজদের দিতে রাজি হয়। কিন্তু তখন তাদের এত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা না থাকায় তারা কাশ্মীর রাজ্যটি ইংরেজদের ছেড়ে দেয়। পরে ব্রিটিশ কোম্পানি কাশ্মীর রাজ্যটি 10 লক্ষ টাকার বিনিময়ে জম্মুর ডোগরা সর্দার গোলাব সিং-কে বিক্রি করে। 1947 খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীরের শাসক ছিলেন গোলাব সিং -এর বংশধর হরি সিং।

বর্তমানে কাশ্মীর রাজ্য

কাশ্মীরের ভারতভুক্তি প্রসঙ্গ ও উদ্ভূত সমস্যা –

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হলে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই রাজ্যের রাজা হরি সিং হিন্দু হলেও এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজা ছিল মুসলমান। সেই কারণে পাকিস্তান এই রাজ্যটিকে নিজেদের অধিকারে নিতে চায়, যদিও রাজা হরি সিং কাশ্মীর রাজ্যের স্বতন্ত্র স্বাধীন অস্তিত্বের প্রতি আস্থাশীল ছিলেন। 1947 খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে মহম্মদ আলি জিন্না কাশ্মীর দখলের পরিকল্পনা করলে পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ সহায়তায় উপজাতীয় হানাদাররা কাশ্মীর সীমান্তে লুঠতরাজ শুরু করে। আত্মরক্ষার জন্য হরি সিং 26 অক্টোবর ভারতের কাছে সামরিক সাহায্য চান এবং সরাসরি ভারত ইউনিয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এমনকি নিখিল জম্মু-কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্সের সভাপতি শেখ আবদুল্লা কাশ্মীরের ভারতভুক্তিকেও সমর্থন করেন। পাক উপজাতির অধিকৃত এলাকায় হানাদাররা আজাদ কাশ্মীর সরকার। প্রতিষ্ঠা করে। ওই বছরই 27 অক্টোবর ভারতীয় সেনানায়ক জয়ন্তনাথ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রায় 100টি যুদ্ধবিমানে ভারতীয় সেনা কাশ্মীরে প্রবেশ করে। 31 অক্টোবর শেখ আবদুল্লার নেতৃত্বে কাশ্মীরে জরুরি অবস্থা জারি হয়। এই নতুন সরকার ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাহায্যে পাক হানাদারদের আক্রমণ প্রতিহত করে।

প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু রাষ্ট্রসংঘে কাশ্মীর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। রাষ্ট্রসংঘের মধ্যস্থতায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘটে। ফলে পাক। হানাদাররা যে অংশ দখল করেছিল, তা পাক-অধিকৃত কাশ্মীর বা আজাদ কাশ্মীর বলে বিশ্বের বহু দেশের কাছে পরিচিত হয়। কিন্তু ভারত সমগ্র কাশ্মীরকেই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে, তাই আজ পর্যন্ত কাশ্মীর সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হয়নি।

হায়দরাবাদ –

মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের আমলে একজন শক্তিশালী অভিজাত ছিলেন মির কামার উদ-দিন খান সিদ্দিকি। ঔরঙ্গজেব। তাঁকে চিন কুলিচ খান উপাধি দেন।

  • মুঘল সম্রাট ফাররুখশিয়র তাঁকে দাক্ষিণাত্যের শাসনকর্তা নিয়োগ করেন এবং ‘নিজাম-উল-মুলক’ উপাধি দেন।
  • 1724 খ্রিস্টাব্দে চিন কুলিচ খান হায়দরাবাদ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। মুঘল সম্রাট মহম্মদ শাহ তাঁকে ‘আসফ ঝা’ উপাধি দেন। প্রথমে তিনি হায়দরাবাদের মুঘল সুবাদার ছিলেন। পরে 1740 খ্রিস্টাব্দ থেকে নিজামের শাসনে স্বাধীন হায়দরাবাদ রাজ্য আত্মপ্রকাশ করে।

হায়দরাবাদের ভারতভুক্তি –

স্বাধীনতার সময় হায়দরাবাদের অধিকাংশ প্রজা ছিল হিন্দু। কিন্তু শাসনকর্তা নিজাম ছিলেন মুসলমান। তিনি ভারতবিভাগের পূর্ববর্তী অবস্থা অপরিবর্তিত রাখতে চেয়েছিলেন। ফলে 1947 খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে ভারত ইউনিয়নের সঙ্গে হায়দরাবাদ এক চুক্তি সম্পাদন করে ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখে। কিন্তু নিজাম উগ্র সাম্প্রদায়িক ও ভারতবিরোধী সংস্থার নেতা কাশিম রিজভির প্রভাবে হায়দরাবাদের পুরাতন প্রতিনিধিসভা ভেঙে দেন। রিজভি ঘোষণা করেন যে, হায়দরাবাদ নিজের স্বাধীনতা রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। এর ফলে তাঁর নেতৃত্বে গঠিত। রাজাকার বাহিনী ভারত-হায়দরাবাদ সীমান্তে হিন্দুদের উপর অত্যাচার চালায়।

এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকার হায়দরাবাদের ভারতভুক্তির জন্য চাপ সৃষ্টি করে। নিজাম রাষ্ট্রসংঘে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। ইতিমধ্যে কাশিম রিজভি পাকিস্তান থেকে অস্ত্র আমদানি করেন। ভারত সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হায়দরাবাদে সামরিক। হস্তক্ষেপ করে। ভারতীয় বাহিনীর তৎপরতায় হায়দরাবাদের সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। রিজভিকে বন্দি করা হয়। ভারতবিরোধী রাজাকার বাহিনী ভেঙে দেওয়া হয়। নিজামও ভারত সরকারকে সাহায্য করতে রাজি হন। অতএব 1949 খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে এম কে ভেলোডির নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। এই মন্ত্রীসভা 1950 খ্রিস্টাব্দের 26 জানুয়ারি হায়দরাবাদকে ভারতের মধ্যে যুক্ত করে।

নানা সীমান্তরেখা ও তাদের নাম এবং তাৎপর্য –

  • র‍্যাডক্লিফ লাইন – ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তরেখা। এটি 1947 খ্রিস্টাব্দের 17 আগস্ট নির্ধারিত হয়, যা স্যার সিরিল র‍্যাডক্লিফের নামের সঙ্গে যুক্ত। তবে র‍্যাডক্লিফের ভারতীয় উপমহাদেশ সম্পর্কে কোনো প্রত্যক্ষ ধারণা ছিল না। ফলে নানা সমস্যা দেখা দেয়।
  • ডুরান্ড লাইন – আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তরেখা। 1893 খ্রিস্টাব্দে আফগানিস্তানের আমির আবদুর রহমান খান ও ব্রিটিশ শাসকদের মধ্যে ‘মউ’ (Memorandum Of Understanding = MOU) চুক্তি স্বাক্ষরের ভিত্তিতে এই সীমান্তরেখা নির্ধারিত হয়। 1949 খ্রিস্টাব্দে এই চুক্তিটি বাতিল হয়।
  • ম্যাকমোহন লাইন – 1914 খ্রিস্টাব্দের সিমলা চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত হয় ভারত ও চিন সীমান্তরেখা। স্যার হেনরি ম্যাকমোহনের নামে এই সীমারেখা চিহ্নিত।
  • মেডিসিন লাইন – কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী সীমারেখা। এই সীমা ইউরোপ, এশিয়া, পারস্য উপসাগর, উত্তর আমেরিকা ও আটল্যান্টিক মহাসাগরের উপর দিয়ে প্রসারিত।
  • 38th Parallel – উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার সীমারেখা। এই সীমারেখা ইউরোপ, ভূমধ্যসাগর, এশিয়া, পারস্য উপসাগর, উত্তর আমেরিকা এবং আটল্যান্টিক মহাসাগরের উপর দিয়ে বিস্তৃত।

দেশভাগ সম্পর্কিত আত্মজীবনী, স্মৃতিকথা ও সাহিত্য সহজে মনে রাখার উপায় –

গ্রন্থ ও রচয়িতাছন্দে গ্রন্থ ও রচয়িতা
‘উদবাস্তু’ – হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়
‘এই সময়’ – অন্নদাশঙ্কর রায়
‘ছেড়ে আসা গ্রাম’ – দক্ষিণারঞ্জন বসু
‘বিপাশা’ – তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
‘কেয়াপাতার নৌকো’ – প্রফুল্ল রায়
‘অর্ধেক জীবন’ – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
‘স্বাধীনতার স্বাদ’ – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
‘শিকড়ের সন্ধানে’ – কালীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
‘সুপুরি বনের সারি’ – শঙ্খ ঘোষ
‘বনপলাশীর পদাবলী’ – রমাপদ চৌধুরী
‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’ – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
‘আগুন পাখি’ – আজিজুল হক
‘এপার গঙ্গা ওপার গঙ্গা’ – জ্যোতির্ময়ী দেবী
‘আঁধার মানিক’ – মহাশ্বেতা দেবী
‘মার্জিনাল ম্যান’ – প্রফুল্ল চক্রবর্তী
‘মিডনাইট চিলড্রেন’ – সলমন রুশদি
‘পাথ ওয়ে টু পাকিস্তান’ – চৌধুরী খালিকুজ্জামান
‘ট্রেন টু পাকিস্তান’, – খুসবন্ত সিং
‘টোবা টেক সিং’ – সাদাত হাসান মান্টো
‘তমস’ – ভীষ্ম সাহানি
‘গোদান’ – মুন্সি প্রেমচাঁদ
‘উদবাস্তু’/হিরণ্ময়
অন্নদা/’এই সময়’
দক্ষিণা/’ছেড়ে আসা…’
তারাশংকর/’বিপাশা’
‘কেয়াপাতার/নৌকো’/প্রফুল্ল রায়
‘অর্ধেক জীবন’/সুনীল/গঙ্গোপাধ্যায়
মানিক/বন্দ্যোপাধ্যায়/’স্বাধীনতার স্বাদ’
‘শিকড়ের/সন্ধানে’/কালীপ্রসাদ
শঙ্খ ঘোষের/’সুপুরি বনের/সারি’
‘বন পলাশীর/পদাবলী’/রমাপদ চৌধুরী
‘নীলকণ্ঠ/পাখির খোঁজে’/অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
‘আগুন পাখি’/দেখেছিলাম/আজিজুলের লেখায়
‘এপার গঙ্গা/ওপার গঙ্গা’/জ্যোতির্ময়ী দেবী
মহাশ্বেতার/’আঁধার মানিক’/দেশভাগের ছবি।
প্রফুল্ল চক্রবর্তী/’মার্জিনাল ম্যান’
সলমন রুশদি/’মিডনাইট চিলড্রেন’
‘পাথ ওয়ে টু/পাকিস্তান’
চৌধুরী/খালিকুজ্জামান
‘ট্রেন টু পাকিস্তান’/খুসবন্ত সিং
হাসান মান্টোর/’টোবা টেক সিং’
‘তমস’/ভীষ্ম সাহানি
মুন্সি প্রেমচাঁদ/’গোদান’ জানি।

দেশভাগ বিষয়ক কয়েকটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র ও তার নির্দেশক –

চলচ্চিত্রনির্দেশক
মেঘে ঢাকা তারাঋত্বিক ঘটক।
সুবর্ণরেখাঋত্বিক ঘটক।
অশনি সংকেতসত্যজিৎ রায়।
আকালের সন্ধানেমৃণাল সেন।
তমসগোবিন্দ নিহালনি।
1747 – Earthদীপা মেহতা।
Train to Pakistanপামেলা বুকস।
Gandhiরিচার্ড অ্যাটেনবরো।
পিঞ্জরচন্দ্রপ্রকাশ দ্বিবেদী।
গরম হাওয়াএম এস সাথু।

1964 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতীয় সংবিধানে স্বীকৃত ভাষাসমূহ –

1949 খ্রিস্টাব্দের 26 নভেম্বর ভারতীয় গণপরিষদে ভারতের সংবিধান গৃহীত হয়। আর 1950 খ্রিস্টাব্দের 26 জানুয়ারি স্বাধীন ভারতে সংবিধান কার্যকর হয়।

অন্যান্য বিষয়ের মতো এই সংবিধানে ভাষার কথাও বলা হয়েছে, সংবিধানের অষ্টম তপশিলে (Schedule-VIII) এর 344(1) ও 351 ধারায় ভারতীয় ভাষাগুলির কথা আছে। এক্ষেত্রে জাতীয় ভাষা ও স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষার কথাও বলা হয়েছে। একসময় হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারে অ-হিন্দি ভাষাভাষী প্রদেশগুলিতে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। শেষপর্যন্ত হিন্দি ও ইংরেজি দুটি ভাষাই জাতীয় ভাষার মর্যাদা। লাভ করেছে।

অন্যদিকে নানা ভারতীয় ভাষা সংবিধানে স্বীকৃতি পেয়েছে। এগুলির সংখ্যাও কম নয়। ভাষাবিতর্ক চরম পর্যায়ে পৌঁছোয় 1960 খ্রিস্টাব্দে। 1961 খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী যে তিন দফা পরিকল্পনা পেশ করেন, তার ভিত্তিতেই ইংরেজি ও হিন্দির। পাশাপাশি নানা প্রাদেশিক ভাষাও মান্যতা পায়।

1964 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতীয় সংবিধানে 15টি ভাষাকে জাতীয় ভাষারূপে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, যার মধ্যে হিন্দিকে কেন্দ্রীয় সরকারের ও আন্তঃরাজ্য সংযোগের ভাষারূপে মর্যাদা দেওয়া হয়।

ভারতীয় সংবিধানস্বীকৃত 14টি ভাষা হল – অসমিয়া, বাংলা, গুজরাটি, হিন্দি, কন্নড়, কাশ্মীরি, মালয়ালম্, মারাঠি, ওড়িয়া, পাঞ্জাবি, সংস্কৃত, তামিল, তেলুগু এবং উর্দু।

2014 খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে নবগঠিত তেলেঙ্গানা রাজ্যে সরকারি ভাষা হিসেবে উর্দু ও তেলুগু-কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

1947 খ্রিস্টাব্দের পরবর্তীকালে ভারতে প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কমিশনের নাম, প্রতিষ্ঠাতা, প্রতিষ্ঠাকাল ও সদস্যবৃন্দের নামের তালিকা –

কমিশনের নামপ্রতিষ্ঠাকালপ্রতিষ্ঠাতাসদস্যবৃন্দ
দর কমিশন বা ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন (Linguistic Provinces Commission)1948 খ্রিস্টাব্দের 17 জুনডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ1. এস কে দর,
2. জে এন লাল,
3. পান্নালাল।
জে ভিপি কমিটি (JVP Committee)1949 খ্রিস্টাব্দের 1 এপ্রিল (প্রথম রিপোর্ট প্রকাশ করে)ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (জয়পুর অধিবেশন)1. জওহরলাল নেহরু,
2. বল্লভভাই প্যাটেল,
3. পট্টভি সীতারামাইয়া।
রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন বা ফজল আলি কমিশন (State Reorganisation Commission)1953 খ্রিস্টাব্দভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকার1. ফজল আলি,
2. কে এম পানিকর,
4. হৃদয়নাথ কুঞ্জর।
সরকারি ভাষা কমিশন (Official Language Commission)1955 খ্রিস্টাব্দের 7 জুনপণ্ডিত জওহরলাল নেহরু1. বি জি খের,
2. সুনীতিকুমার চ্যাটার্জি,
3. পি সুব্বারায়ান।

রাজ্য পুনর্গঠন –

স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের রাজ্যগুলি কীভাবে পুনর্গঠিত হবে তা নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়। সরকার ভাষাভিত্তিক। প্রদেশ গঠনে আপত্তি জানায়। দর কমিশন ও JVP কমিটিও ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের বিরোধিতা করে। 1953 খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার। রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠন করে। এই কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে 1956 খ্রিস্টাব্দে রাজ্য পুনর্গঠন আইন পাস হয়। এতে ভারতকে। 14টি রাজ্য ও 6টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয়।

1956 খ্রিস্টাব্দের 1 নভেম্বর ভাষার ভিত্তিতে গঠিত 14টি রাজ্য

14টি রাজ্য14টি রাজ্যের নাম সহজে মনে রাখার উপায়
অন্ধ্রপ্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, কেরালা, আসাম, মহীশূর, বোম্বাই, উড়িষ্যা, উত্তরপ্রদেশ, মাদ্রাজ, পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ।অজ রাম,
বিকে আম,
বোউ উমা,
পাপ ক্ষমা।

1956 খ্রিস্টাব্দের 1 নভেম্বর ভাষার ভিত্তিতে গঠিত 6টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল –

6টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল6টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নাম সহজে মনে রাখার উপায়
আন্দামান ও নিকোবর, দিল্লি, ত্রিপুরা, মণিপুর, হিমাচল প্রদেশ, লাক্ষাদ্বীপ।আদি ত্রি মহিলা

ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠন –

মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্যের সৃষ্টি: ফজল আলির নেতৃত্বে গঠিত রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের সুপারিশে বোম্বাই রাজ্যকে ভাগ করে মারাঠিভাষী ও গুজরাটিভাষীদের জন্য দুটি পৃথক রাজ্য গঠনের কথা বলা হয়। কিন্তু 1956 খ্রিস্টাব্দের রাজ্য পুনর্গঠন আইনে এই প্রস্তাব। গ্রহণ করা হয়নি। ফলে এই দুই ভাষাভাষী জনগণের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।

মারাঠা অঞ্চলে সংযুক্ত মহারাষ্ট্র সমিতি এবং গুজরাট অঞ্চলে মহাগুজরাট জনতা পরিষদ পৃথক রাজ্যের দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। শেষপর্যন্ত 1960 খ্রিস্টাব্দের মে মাসে বোম্বাই রাজ্যকে দ্বিখণ্ডিত করে মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্য সৃষ্টি করা হয়। বোম্বাই শহর মহারাষ্ট্রের অন্তর্গত থাকে, আর আহমেদাবাদ হয় গুজরাট রাজ্যের রাজধানী।

পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের সৃষ্টি –

পাঞ্জাব ছিল একটি ত্রিভাষিক রাজ্য- পাঞ্জাবি, হিন্দি আর পাহাড়ি। পাঞ্জাবে বিশেষত পাঞ্জাবিভাষীরা পৃথক রাজ্যের দাবিতে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলে। অবশেষে 1966 খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবিভাষীদের নিয়ে পাঞ্জাব ও হিন্দিভাষীদের নিয়ে হরিয়ানা রাজ্য গঠন করা হয়।

চণ্ডীগড়-পাঞ্জাব ও হরিয়ানার রাজধানী –

পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের রাজধানী হল চণ্ডীগড়। নবগঠিত চণ্ডীগড় শহরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হয়। আর এই চণ্ডীগড় দুই রাজ্য পাঞ্জাব ও হরিয়ানার রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

PEPSU –

Patiala and Eastern Punjab States Union. (পেপসু: পাতিয়ালা ও পূর্ব পাঞ্জাব রাজ্য ইউনিয়ন)।

LOC –

পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যবর্তী সীমান্তরেখা Line of Control বা LOC নামে পরিচিত।

1948 খ্রিস্টাব্দের 31 ডিসেম্বর সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে।

NEFA –

North-East Frontier Agency বা ‘NEFA’ 1972 খ্রিস্টাব্দে অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যে পরিণত হয়।

ভারতবর্ষের মানচিত্রে মহারাষ্ট্র গুজরাট পাঞ্জাব ও হরিয়ানার অবস্থান

আজকের আর্টিকেলে আমরা দশম শ্রেণীর ইতিহাস বইয়ের অষ্টম অধ্যায়, “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)” -এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছে। এই অধ্যায়ের বিষয়বস্তু পড়ার সময় অধ্যায়টির কাঠামো ও প্রধান বিষয়াবলি বুঝতে সাহায্য করবে, যা আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। যদি কোনো প্রশ্ন, মতামত বা সাহায্যের প্রয়োজন হয়, নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন কিংবা টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত।

Please Share This Article

Related Posts

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে কৃষক সমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল?

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে কৃষক সমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল?

কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল সম্পর্কে টীকা লেখো।

কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল সম্পর্কে টীকা লেখো।

সারা ভারত কিষান সভা কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

সারা ভারত কিষান সভা কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

About The Author

Gopi

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে কৃষক সমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল?

কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল সম্পর্কে টীকা লেখো।

সারা ভারত কিষান সভা কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের কীরূপ মনোভাব ছিল?

‘একা’ আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।