মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – অভিব্যক্তি ও অভিযোজন – আচরণ এবং অভিযোজন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

Rahul

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের চতুর্থ অধ্যায় “অভিব্যক্তি ও অভিযোজন” অধ্যায়ের ‘আচরণ এবং অভিযোজন‘ বিভাগের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

আচরণ এবং অভিযোজন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
আচরণ এবং অভিযোজন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
Contents Show

অভিব্যক্তির সঙ্গে অভিযোজনের সম্পর্ক কী? শুষ্ক পরিবেশের জন্য ক্যাকটাস-জাতীয় উদ্ভিদের পাতার মধ্যে কী ধরনের অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য দেখা যায়?

অভিব্যক্তির সঙ্গে অভিযোজনের সম্পর্ক –

অভিব্যক্তি ও অভিযোজন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। এ বিষয়ে নীচে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল।

অভিযোজন-অভিব্যক্তি সংঘটনের একটি পদ্ধতি বিশেষ –

জীব পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনমতো দৈহিক ও শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটিয়ে নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখে। যেসব জীব একাজে সাফল্য অর্জন করতে পারে তারাই বাঁচার অধিকার পায়। বাকিরা অবলুপ্ত হয়। অভিযোজিত বৈশিষ্ট্য বংশপরম্পরায় সঞ্চারিত হওয়ায় নতুন প্রজাতির আবির্ভাব ঘটে অর্থাৎ জৈব অভিব্যক্তি ঘটে। অর্থাৎ, অভিব্যক্তির একটি অন্যতম কারণ হল অভিযোজন।

অভিব্যক্তি-একটি বৃহত্তর ধারণা –

অভিব্যক্তি বা বিবর্তন একটি জটিল, দীর্ঘ পদ্ধতি। বহু লক্ষ বছর ধরে বিবর্তন ঘটে চলেছে, তার বিভিন্ন সময়কালে পরিবেশ ও প্রয়োজন অনুযায়ী জীবের দেহে নানা অভিযোজন দেখা যায়। অর্থাৎ, অভিব্যক্তি হল অভিযোজনের তুলনায় একটি বৃহত্তর ধারণা।

ক্যাকটাসের পাতার অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য –

শুষ্ক বা জলহীন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য বা অভিযোজিত হওয়ার কারণে ক্যাকটাসের পাতার মধ্যে বেশকিছু পরিবর্তন লক্ষিত হয়। এই পরিবর্তনগুলি হল –

  1. এক্ষেত্রে পাতার আকৃতি ছোটো হয় ও পাতার সংখ্যা হ্রাস পায়।
  2. এইজাতীয় উদ্ভিদে বাষ্পমোচনের হার হ্রাস করার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাতা কাঁটায় রূপান্তরিত হয়। এই অভিযোজন ক্যাকটাসের আত্মরক্ষাতেও সাহায্য করে।
  3. কোনো ক্ষেত্রে পাতা ঘন রোমে আবৃত থাকে যা বাষ্পমোচন রোধে সাহায্য করে।
ক্যাকটাসের পাতার অভিযোজন
ক্যাকটাসের পাতার অভিযোজন

জলে ভারসাম্য রক্ষার জন্য রুই মাছের পটকার ভূমিকা ব্যাখ্যা করো। পায়রার দেহে বায়ুথলির গুরুত্ব কী?

অংশ প্রশ্ন, পায়রার বায়ুথলির অভিযোজনগত দুটি গুরুত্ব কী কী?

অথবা, মাছের পটকা এবং পায়রার বায়ুথলি কীভাবে অভিযোজনে সাহায্য করে তা ব্যাখ্যা করো।

জলে ভারসাম্য রক্ষায় রুই মাছের পটকার ভূমিকা –

রুই মাছ একটি মুখ্য জলজ প্রাণী। রুই মাছের পটকা ভেসে থাকার অঙ্গ অর্থাৎ উদ্‌স্থৈতিক অঙ্গ হিসেবে কাজ করে থাকে। রুই মাছের উদরগহ্বরের শীর্ষভাগে পৌষ্টিকনালী ও বৃক্কের মধ্যবর্তী অঞ্চলে পটকা অবস্থান করে। পটকার বায়ুর পরিমাণ প্রয়োজনমতো পরিবর্তনের মাধ্যমে মাছের দেহের আপেক্ষিক গুরুত্বও পরিবর্তিত হতে পারে। জলের ওপরে ভাসতে হলে এই দুই প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট পটকার অগ্রপ্রকোষ্ঠে অবস্থিত রেডগ্রন্থি গ্যাস উৎপাদন করে। ফলে দেহ হালকা হয়, আপেক্ষিক গুরুত্ব হ্রাস পায় ও মাছ জলে ভেসে ওঠে। পক্ষান্তরে, জলের গভীরে ডোবার সময়ে পটকার পশ্চাদ্‌ প্রকোষ্ঠে অবস্থিত রেটি মিরাবিলি নামক রক্তজালকগুচ্ছ রেড গ্রন্থিতে উৎপাদিত গ্যাস শোষণ করে। ফলে দেহ ভারী হয় এবং আপেক্ষিক গুরুত্ব বাড়ে ও মাছটি জলের গভীরে যেতে পারে।

পায়রার দেহে বায়ুথলির গুরুত্ব –

পায়রার বায়ুথলি হল ক্লোমশাখা থেকে উৎপন্ন পাতলা পর্দাবৃত 9টি বায়ুপূর্ণ প্রকোষ্ঠ বিশেষ, যা পেশি ও রক্তজালক বিহীন হয়। ওড়ার জন্য পায়রার অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হয়। এই অতিরিক্ত শক্তি তথা প্রশ্বাসকার্যের জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অক্সিজেন বায়ুথলি সরবরাহ করে। বায়ুর নীচের স্তরে ঊর্ধ্বস্তর অপেক্ষা বেশি অক্সিজেন উপস্থিত থাকে। ওড়ার আগে পায়রা বায়ুথলিতে বাতাস পূর্ণ করে নেয় ফলে এই বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ বায়ুর উচ্চস্তর অপেক্ষা বেশি থাকে। এ ছাড়া থলিগুলি বায়ুপূর্ণ হলে পায়রার দেহের আপেক্ষিক গুরুত্ব হ্রাস পায় ফলে তারা তখন সহজে বায়ুতে ভেসে থাকতে পারে।

পায়রার ফুসফুস ও বায়ুথলি
পায়রার ফুসফুস ও বায়ুথলি

সুন্দরী গাছের লবণ সহনের তিনটি শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন উল্লেখ করো।

অনুরূপ প্রশ্ন, লবণ সহনের জন্য সুন্দরী গাছের যে-কোনো দুটি অভিযোজন বর্ণনা করো।

সুন্দরী গাছের লবণ সহনের জন্য শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন –

সমুদ্রের উপকূলবর্তী মাটিতে লবণ বেশি থাকায় এই অঞ্চলের উদ্ভিদগুলি (হ্যালোফাইট উদ্ভিদ) মাটি থেকে সহজে জল শোষণ করতে পারে না। তাই একে শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মৃত্তিকা বলে। এই মাটিতে জল শোষণ অসুবিধাজনক বলে সুন্দরী (হেরিটিয়েরা ফোম্স) গাছে জল নির্গমনের শারীরবৃত্তীয় পদ্ধতিগুলির অভিযোজন দেখা যায়। যথা –

মূলের অভিযোজন –

এই অঞ্চলের মাটি লবণাক্ত হওয়ায় সুন্দরীর মূল মাটির স্বল্প নীচেই বিস্তৃত থাকে। মাটি কর্দমাক্ত ও বাতাবকাশবিহীন হওয়ায় মাটিতে অক্সিজেন সরবরাহও কম থাকে। তাই বায়ু থেকে অক্সিজেন (O2) গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে প্রশাখা মূলগুলি অভিকর্ষের বিপরীতে মাটির ওপরে উঠে আসে। এই ধরনের মূলকে শ্বাসমূল বা নিউম্যাটোফোর বলে। শ্বাসমূলের মাথায় O2 গ্রহণের জন্য শ্বাসছিদ্র বা নিউম্যাথোড থাকে। এ ছাড়াও এদের মূলের ত্বক (এপিব্লেমা) এবং অধস্তক (হাইপোডারমিস্) পুরু হওয়ায় অন্তঃঅভিস্রবণের মাধ্যমে জল শোষিত হওয়ার সময় অতিরিক্ত লবণ শোষণ বাধাপ্রাপ্ত হয়।

সুন্দরীর শ্বাসমূল
সুন্দরীর শ্বাসমূল

কান্ডের অভিযোজন –

এরা কান্ডের শাখা-প্রশাখার বিভিন্ন অঙ্গের কোশে অবস্থিত ভ্যাকুওলের মধ্যে অতিরিক্ত লবণ সঞ্চিত করে রাখে। দেহে লবণ সঞ্চয়ের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত হলে এরা বাকল মোচনের মাধ্যমেও অতিরিক্ত লবণ নির্গত করে থাকে।

পাতার অভিযোজন –

জলের মাধ্যমে গৃহীত অতিরিক্ত লবণ পাতায় অবস্থিত লবণ গ্রন্থির মাধ্যমে নির্গত হয়ে থাকে। অনেক সময়ে উদ্ভিদ পাতায় সঞ্চিত অতিরিক্ত লবণকে পত্রমোচনের সাহায্যে রেচিত করে থাকে।

মরুভূমিতে উটের শারীরবৃত্তীয় অভিযোজনগুলি উল্লেখ করো।

মরুভূমিতে উটের শারীরবৃত্তীয় অভিযোজনসমূহ –

মরু অভিযোজনের একটি আদর্শ উদাহরণ হল উট। এর দেহের অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি এখানে আলোচিত হল।

উটের অতিরিক্ত জলক্ষয় সহনের অভিযোজন –

জলক্ষয় সহনের জন্য উটের অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

  1. উটের দেহে যে ফ্যাট সমৃদ্ধ কুঁজ থাকে তাতে সঞ্চিত ফ্যাটের জারণে জল (একে বিপাকীয় জল বলে) ও শক্তি উৎপাদিত হয় বলে, যা তারা ব্যবহার করে।
  2. গাঢ় মূত্র ত্যাগের মাধ্যমে উট দেহ থেকে জলের নির্গমন কমায়।
  3. উট প্রায় 135L অবধি জল পান করতে পারে এবং তা পাকস্থলীতে জলধারণকারী কোশে সঞ্চয় করতে পারে।
  4. নিশ্বাসের মাধ্যমে উট যে জলীয় বাষ্প ত্যাগ করে তা নাসাপথে বিন্যস্ত মিউকাস স্তর দ্বারা পুনঃশোষিত হয়ে দেহে ফিরে আসে। উটের দেহের তাপমাত্রা বাহ্যিক তাপমাত্রার সাথে পরিবর্তিত হয় ও তা ঘামক্ষরণ রোধ করে। 49°C উষ্ণতাতেও উটের ঘাম নিঃসরণ হয় না।
উট
উট

উটের লোহিত রক্তকণিকার (RBC) আকৃতিতে অভিযোজন –

  1. উটের RBC -এর আকৃতি ক্ষুদ্র ও ডিম্বাকার হয় এবং এর জন্য এগুলি জলহীন অবস্থায়ও খুব সরু রক্তবাহের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে।
  2. অনেকদিন জল না খেয়ে হঠাৎ অনেক জল পান করলেও উটের RBC বিদীর্ণ হয় না। কারণ এদের RBC প্রাথমিক আকারের তুলনায় প্রায় 240% বৃদ্ধি পেতে সক্ষম। অর্থাৎ, এদের RBC আকস্মিক অভিস্রবণীয় চাপ সহ্য করতে পারে।

আচরণ বিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কেন? শিম্পাঞ্জিদের আচরণগত যে-কোনো তিনটি বৈশিষ্ট্য লেখো যা অভিযোজনে সহায়তা করে।

অথবা, খাদ্য সংগ্রহ ও রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে শিম্পাঞ্জিরা যেভাবে বুদ্ধিমত্তার সাথে সমস্যা সমাধান করে তার উদাহরণ দাও।

বিবর্তনের ক্ষেত্রে আচরণের গুরুত্ব –

পরিবেশের কোনো ইঙ্গিতের প্রভাবে যেমন – গন্ধ, শব্দ বা দৃষ্টি নির্ভর কোনো সংকেত দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে অথবা অন্য কোনো জীবের কার্যাবলির দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে জীব স্নায়ুতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণাধীনে বিভিন্ন ধরনের আচরণ সম্পন্ন করে। ওই আচরণ জীবকে পৃথিবীতে টিকে থাকতে এবং প্রজননে তথা নিজ প্রজাতি সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এই আচরণের ফল সুদুরপ্রসারী এবং কালক্রমে তা অভিব্যক্তি ঘটাতে সাহায্য করে। এই কারণে বিবর্তনের ক্ষেত্রে আচরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শিম্পাঞ্জির অভিযোজনে সহায়ক আচরণগত বৈশিষ্ট্য –

অভিযোজনে সহায়ক শিম্পাঞ্জির আচরণগত বৈশিষ্ট্য হল –

ভেষজ ঔষধির ব্যবহার –

শিম্পাঞ্জিরা কোনো পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হলে, বিভিন্ন ধরনের ভেষজ উদ্ভিদের পাতা খেতে থাকে। এর ফলে তারা পরজীবীর আক্রমণ থেকে অব্যহতি পায়। অর্থাৎ পরজীবীঘটিত রোগ থেকে মুক্ত হতে পারে। দেখা গেছে, অ্যাসপিলিয়া রুডিস সহ আরও 19টি ভেষজ গাছের পাতা শিম্পাঞ্জিরা ঔষধি হিসেবে গ্রহণ করে।

উইপোকা শিকার –

শিম্পাঞ্জিরা প্রথমে কোনো একটি গাছের ডাল ভেঙে নেয়। তারপর ওই ডালের পাতাগুলি ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে, ডালটিকে উইঢিপির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে গর্তের সৃষ্টি করে। এরপর তারা আর একটি সরু ডাল ভেঙে পাতা ছাড়িয়ে নেয় এবং ওই ডালটিকে প্রথমে সৃষ্ট গর্তে প্রবেশ করায়। উইপোকা ওই ডালের প্রবেশ স্থান থেকে বাইরে বের হতে থাকলে শিম্পাঞ্জিরা ওই উইপোকাকে ভক্ষণ করে নিজেদের ক্ষুধা নিবারণ করে।

বাদামের খোলা ভাঙা –

শিম্পাঞ্জিরা অনেক সময় মানুষের মতো কাঠের কোনো একটি টুকরোকে হাতুড়ি এবং পাথরের পাটাতনকে নেহাই -এর মতো ব্যবহার করে বাদামের খোলা ভাঙে। খোলা অপসারিত হলে বাদাম বাইরে বেরিয়ে আসে এবং শিম্পাঞ্জিরা ওই বাদাম সংগ্রহ করে সহজে খেতে পারে।

শিম্পাঞ্জির অভিযোজন
শিম্পাঞ্জির অভিযোজন

মৌনৃত্যের মাধ্যমে মৌমাছির বার্তা আদানপ্রদান কীভাবে ঘটে, তা চিত্রসহ বর্ণনা করো।

অথবা, খাদ্য সন্ধানের উদ্দেশ্যে মৌমাছির আচরণগত অভিযোজন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।

অথবা, একটি মৌচাকে কোনো শ্রমিক মৌমাছি অন্য শ্রমিক মৌমাছিদের কীভাবে খাদ্য-উৎসের সন্ধান ও অবস্থান জানায়?

মৌমাছিদের বার্তা আদানপ্রদান –

মৌচাকে দুইপ্রকার কর্মী মৌমাছি থাকে, যথা স্কাউট বা খাদ্য সন্ধানী কর্মী মৌমাছি এবং ফোরেজার বা খাদ্য সংগ্রাহক কর্মী মৌমাছি। স্কাউটরা খাদ্যের সন্ধান করে এবং খাদ্যের সন্ধান পেলে এরা মৌচাকে ফিরে এসে চাকের সামনে বিশেষ নাচের ভঙ্গিতে দেহ সঞ্চালন দ্বারা অপর মৌমাছিদের খাদ্যের উৎস সম্পর্কে বার্তা বা সংকেত প্রদান করে। একে মৌনৃত্য বলে। প্রধানত দুইপ্রকার মৌনৃত্য দেখা যায়, রাউন্ড ডান্স বা বৃত্তাকার নৃত্য এবং ওয়াগল ডান্স বা ওয়াগল নৃত্য। এই নৃত্যের মাধ্যমে তিনপ্রকার বার্তা দেওয়া হয় – মৌচাক থেকে খাদ্যের দূরত্ব, খাদ্যের উৎসের দিক ও খাদ্যের ঘ্রাণ। নীচে দুইপ্রকার মৌনৃত্য সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।

বৃত্তাকার নৃত্য/চক্রাকার নৃত্য –

খাদ্যের উৎস 50-75 মিটার এর মধ্যে হলে শ্রমিক সন্ধানী মৌমাছিরা বৃত্তাকার নৃত্য করে থাকে। সন্ধানী মৌমাছিদের পিছনে সংগ্রাহকরাও খাদ্য উৎসের দিকে ধাবিত হয় এবং যাত্রাপথে তারাও একই নৃত্য শুরু করে।

গুরুত্ব – চক্রাকার নৃত্য দ্বারা নিকটবর্তী স্থানে খাদ্য উৎস থেকে মৌমাছিরা খাদ্য সংগ্রহ করে থাকে।

বৃত্তাকার নৃত্যচক্রাকার নৃত্য
বৃত্তাকার নৃত্যচক্রাকার নৃত্য

ওয়াগল নৃত্য –

খাদ্যের উৎস 50-75 মিটার -এর থেকে অধিক দূরবর্তী হলে সন্ধানী কর্মী বা স্কাউট মৌমাছিরা ওয়াগল নৃত্যে অংশ নেয়। এরা চাকের নিকটবর্তী অংশে উল্লম্ব তলে নাচে, যার বার্তা বা সংকেত থেকে অন্যান্য মৌমাছিরা অনুভূমিক তলে খাবারের উৎসের অবস্থান নির্ণয় করতে পারে। এই নৃত্য ইংরাজি ‘8’ সংখ্যার আকৃতিবিশিষ্ট হয়। অর্থাৎ, একবার ডানদিকে ও একবার বাঁদিকে লুপ তৈরি করে, এবং নৃত্যের সময় লুপের মধ্যের সরলরৈখিক অংশে সন্ধানী মৌমাছির উদর অংশ ওপর নীচে আন্দোলিত (waggle) হয়। ইংরাজি ওয়াগল শব্দের অর্থ আন্দোলন বা কম্পন। তাই এই নৃত্যকে ওয়াগল নৃত্য বলে।

গুরুত্ব – এই ওয়াগল বা কম্পনের মাত্রা থেকে খাদ্যের অবস্থানের দূরত্ব সম্পর্কে জানা যায় এবং সূর্যের সাপেক্ষে নাচের কৌণিক অভিমুখ থেকে খাদ্যের উৎসের দিক নির্ধারণ করা যায়।

ওয়াগল নৃত্য
ওয়াগল নৃত্য

ঊর্ধ্বমুখী নাচ থেকে বোঝা যায় যে খাবারের উৎসের অবস্থান সূর্যের অভিমুখে। নিম্নমুখী নাচের অর্থ হল যে খাবারের অবস্থান সূর্যের বিপরীত দিকে। যেমন – ডানদিকে 30° কোণে মৌমাছির নাচের অর্থ হল যে চাকের ডানদিকে 30° কোণে খাবারের উৎস অবস্থিত।


আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের চতুর্থ অধ্যায় “অভিব্যক্তি ও অভিযোজন” অধ্যায়ের ‘আচরণ এবং অভিযোজন‘ বিভাগের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

নাইট্রোজেন চক্র – বিষয়সংক্ষেপ

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ – নাইট্রোজেন চক্র – বিষয়সংক্ষেপ

আচরণ এবং অভিযোজন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – অভিব্যক্তি ও অভিযোজন – আচরণ এবং অভিযোজন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

আচরণ এবং অভিযোজন – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – অভিব্যক্তি ও অভিযোজন – আচরণ এবং অভিযোজন – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ – নাইট্রোজেন চক্র – বিষয়সংক্ষেপ

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – অভিব্যক্তি ও অভিযোজন – আচরণ এবং অভিযোজন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – অভিব্যক্তি ও অভিযোজন – আচরণ এবং অভিযোজন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – অভিব্যক্তি ও অভিযোজন – আচরণ এবং অভিযোজন – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – অভিব্যক্তি ও অভিযোজন – আচরণ এবং অভিযোজন – বিষয়সংক্ষেপ