মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Rahul

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের তৃতীয় অধ্যায় “বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ” অধ্যায়ের ‘কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ-কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ-মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান
বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ-কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ-মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান
Contents Show

মানুষের সেক্স ক্রোমোজোম বাহিত এবং অটোজোম বাহিত দুটি করে রোগের নাম লেখো।

মানুষের সেক্স ক্রোমোজোম বাহিত দুটি বংশগত রোগ হল –

  1. হিমোফিলিয়া।
  2. বর্ণান্ধতা।

মানুষের অটোজোম বাহিত দুটি বংশগত রোগ হল –

  1. থ্যালাসেমিয়া।
  2. অ্যালবিনিজম।

মানুষের জনগোষ্ঠীতে প্রকাশিত হয় এমন দুটি জিনগত রোগের নাম লেখো।

মানুষের জনগোষ্ঠীতে প্রকাশিত হয় এমন দুটি জিনগত রোগ হল –

  1. থ্যালাসেমিয়া।
  2. হিমোফিলিয়া।
থ্যালাসেমিয়া রোগী
থ্যালাসেমিয়া রোগী

থ্যালাসেমিয়া বলতে কী বোঝ?

থ্যালাসেমিয়া হল অটোজোম বাহিত এক ধরনের বংশগত রোগ, যা হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিন-পেপটাইড শৃঙ্খলের অস্বাভাবিক গঠনের ফলে সৃষ্টি হয়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হিমোগ্লোবিন গঠিত হয় না বা হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ হ্রাস পায়, লোহিত রক্তকণিকা ক্ষুদ্র হয় এবং এর আয়ু কম (RBC -র গড় আয়ু 120 দিন) ফলে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা দেখা দেয়।

থ্যালাসেমিয়া মেজর বলতে কী বোঝ?

হিমোগ্লোবিনোপ্যাথির কারণে হিমোগ্লোবিনের α এবং β শৃঙ্খল দুটির প্রত্যেকটিই মিউটেশনের জন্য সম্পূর্ণরূপে গঠিত না হলে যে রোগ সৃষ্টি হয়, তাকে থ্যালাসেমিয়া মেজর বলে।

থ্যালাসেমিয়া রোগে মানবদেহে কোন্ তিনটি অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়?

থ্যালাসেমিয়া রোগে যকৃৎ, প্লিহা ও হৃৎপিণ্ড মূলত লোহার অতিরিক্ত সঞ্চয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

থ্যালাসেমিয়া রোগীকে বারবার রক্ত দিতে হয় কেন?

নানা কারণে থ্যালাসেমিয়া রোগীকে রক্ত দিতে হয় –

  • হিমোগ্লোবিন কম থাকায় তাদের অ্যানিমিয়া ঘটে, রক্তদানের ফলে দেহে অক্সিজেন পরিবহণ সহজে সম্ভব হয়।
  • দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য রক্ত জরুরি। রক্ত সঞ্চারণ সেই কাজে সাহায্য করতে থাকে।

থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণগুলি লেখো।

থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণগুলি হল –

  • কালো বর্ণের মূত্র ত্যাগ।
  • অস্থি গঠনে সমস্যা (বিশেষত মুখমণ্ডলের অস্থি)।
  • হলুদাভ বিবর্ণ ত্বক।
  • তীব্র ক্লান্তি ও দুর্বলতা।
  • বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া।

থ্যালাসেমিয়া রোগে হেপাটোমেগালি ও স্পিনোমেগালি ঘটে কেন?

বারবার রক্ত সঞ্চারনের ফলে থ্যালাসেমিয়া রোগে যকৃতে ও প্লিহাতে আয়রন অতিরিক্ত মাত্রায় সঞ্চিত হয় ও তাদের আকার বৃদ্ধি পায় ও যথাক্রমে হেপাটোমেগালি ও স্পিনোমেগালি অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়াও রক্তসঞ্চারণের সময় হেপাটাইটিস সংক্রমণ এবং ওই অঙ্গ দুটিতে RBC উৎপাদনের কারণে তাদের আকারের বৃদ্ধি ঘটে থাকে।

একদিন শিক্ষার্থীরা খবরের কাগজে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে একটি প্রবন্ধ পড়ল এবং একজন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির পরিণতি জেনে ভীত হল। জনগোষ্ঠী থেকে এই রোগ দূর করার জন্য তারা কী কী উদ্যোগ নিতে পারে তা লেখো।

থ্যালাসেমিয়া দূরীকরণে যে উদ্যোগগুলি শিক্ষার্থীরা নিতে পারে, তা হল –

  • সাধারণ মানুষকে থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা তা নির্ণয়ে রক্ত পরীক্ষায় উদ্বুদ্ধ করা।
  • বিয়ের আগে জেনেটিক কাউন্সিলারের কাছে যেতে উদ্বুদ্ধ করা ও জেনেটিক কাউন্সিলারের পরামর্শ নেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবগত করা।
  • রোগটি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তোলা।

থ্যালাসেমিয়াকে ভূমধ্যসাগারীয় রক্তাল্পতা বলে কেন?

থ্যালাসেমিয়া, বিশেষত মৃদু থ্যালাসেমিয়া রোগটি ইতালি ও অন্যান্য ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলিতে বেশি দেখা যায়। এজন্য থ্যালাসেমিয়া রোগটিকে ভূমধ্যসাগরীয় রক্তাল্পতা (Mediterranean anaemia) বলা হয়।

হিমোফিলিয়া রোগ বলতে কী বোঝ?

অথবা, হিমোফিলিয়া কী?

মানুষের X ক্রোমোজোম বাহিত প্রচ্ছন্ন জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যে বংশগত রোগের ফলে ক্ষতস্থানে রক্ত তঞ্চিত হয় না, তাকে হিমোফিলিয়া বলা হয়। সাধারণত রক্তে তঞ্চন ফ্যাক্টর VIII বা IX -এর অভাবে এই ধরনের রোগ সৃষ্টি হয়।

হিমোফিলিয়ার ফলে রক্ততঞ্চন ব্যাহত হওয়া
হিমোফিলিয়ার ফলে রক্ততঞ্চন ব্যাহত হওয়া

হিমোফিলিয়া রোগ কত প্রকারের হয় ও কী কী? এর মধ্যে রাজকীয় হিমোফিলিয়া বা ক্লাসিক্যাল হিমোফিলিয়া কোনটি?

হিমোফিলিয়া রোগ প্রধানত দু-প্রকারের হয়। যথা – হিমোফিলিয়া A এবং হিমোফিলিয়া B। এ ছাড়াও হিমোফিলিয়া C নামক অপর একপ্রকার হিমোফিলিয়া দেখা যায়।

হিমোফিলিয়া A -কে ক্লাসিক্যাল হিমোফিলিয়া বলে। এই রোগে ফ্যাক্টর VIII বা AHF তৈরি হয় না।

হিমোফিলিয়া A রোগীদের দেহের কোন্ কোন্ স্থানে অত্যধিক রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে?

হিমোফিলিয়া A রোগীদের দেহের অস্থিসন্ধি, পেশি, মিউকাস পর্দা, পরিপাকনালী, মূত্রনালী, মস্তিষ্ক প্রভৃতি অংশে অত্যধিক রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

হিমোফিলিয়া A রোগের কারণ কী?

X ক্রোমোজোমের একটি জিনের প্রচ্ছন্ন পরিব্যক্তি ঘটলে থ্রম্বোপ্লাস্টিন বা তঞ্চন ফ্যাক্টর VIII বা অ্যান্টিহিমোফিলিক ফ্যাক্টর (AHF) সৃষ্টি হয় না। এর ফলে রক্ততঞ্চন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং হিমোফিলিয়া A রোগ হয়।

হিমোফিলিয়া B বা ক্রিস্টমাস হিমোফিলিয়া রোগের কারণ কী?

 X ক্রোমোজোমের একটি জিনের প্রচ্ছন্ন পরিব্যক্তি ঘটলে ফ্যাক্টর IX বা ক্রিস্টমাস ফ্যাক্টর স্বাভাবিকের তুলনায় কম তৈরি হয় বা একদমই তৈরি হয় না। এর ফলে রক্ত তঞ্চিত হতে পারে না এবং হিমোফিলিয়া B রোগ হয়।

হিমোফিলিয়া রোগটি মহিলাদের থেকে পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি প্রকাশিত হয় কেন?

হিমোফিলিয়া রোগের জন্য দায়ী প্রচ্ছন্ন জিনটি X ক্রোমোজোমে অবস্থিত হওয়ায় এবং পুরুষদের একটিমাত্র X ক্রোমোজোম থাকায়, পুরুষদের ক্ষেত্রে এই রোগটি বেশি প্রকাশিত হয়। পক্ষান্তরে মহিলাদের দুটি X ক্রোমোজোম থাকায় অনেকসময়ই স্বাভাবিক X ক্রোমোজোম দ্বারা স্বাভাবিক X ক্রোমোজোমের পরিপূরণ ঘটে যায়। ফলে রোগটির বাহক হলেও মহিলাদের ক্ষেত্রে তা প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

হিমোফিলিয়া B -কে ক্রিস্টমাস হিমোফিলিয়া বলে কেন?

স্টিফেন ক্রিস্টমাস নামে একজন রোগীর দেহে হিমোফিলিয়া B রোগ প্রথম ধরা পড়ে। তাই একে ক্রিস্টমাস হিমোফিলিয়া বলা হয়।

বাবা ও মায়ের জিনের প্রকৃতি কীরূপ হলে 50% পুত্র স্বাভাবিক 50% পুত্র হিমোফিলিয়া ও 100% কন্যা স্বাভাবিক হবে? উপযুক্ত উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।

আমরা জানি, হিমোফিলিক জিন Xh ও স্বাভাবিক জিন Xh+

  1. যেহেতু পুত্রেরা Y ক্রোমোজোম পিতার থেকে পাবে, তাই X ক্রোমোজোম তারা পাবে মাতার থেকে, এক্ষেত্রে পুত্রেরা স্বাভাবিক হলে, তাদের জিনোটাইপ হবে Xh+Y অর্থাৎ পুত্রেরা একটি স্বাভাবিক X ক্রোমোজোম মাতার থেকে পাবে। আবার পুত্রেরা হিমোফিলিক হলে, তাদের জিনোটাইপ হবে XhY অর্থাৎ তারা হিমোফিলিক জিনবাহী X ক্রোমোজোম মাতার থেকে গ্রহণ করবে। যেহেতু প্রশ্নে বলা রয়েছে 50% পুত্র সন্তান স্বাভাবিক (Xh+Y) ও 50% অসুস্থ (XhY) হবে। তাই এখান থেকে অনুধাবন করা যায় যে, এক্ষেত্রে মাতা বাহক (Xh+Xh) হবে।
  2. আবার প্রশ্নে বলা হয়েছে কন্যারা সকলে স্বাভাবিক হবে, অর্থাৎ যেহেতু কন্যারা একটি X ক্রোমোজোম মাতার থেকে ও অপরটি পিতার থেকে পায় তাই কন্যাকে স্বাভাবিক রাখতে হলে পিতা সর্বদা স্বাভাবিক (Xh+Y) হবে। নতুবা কন্যা যদি মাতার থেকে হিমোফিলিয়ার জিনবাহী X ক্রোমোজোমের পাশাপাশি পিতারও হিমোফিলিয়ার জিনবাহী X ক্রোমোজোম পায় তাহলে কন্যা হিমোফিলিক হয়ে পড়বে। তাই একমাত্র মাতা বাহক (Xh+Xh) ও পিতা স্বাভাবিক (Xh+Y) হলেই 50% পুত্র স্বাভাবিক, 50% পুত্র হিমোফিলিক ও 100% কন্যা স্বাভাবিক হবে।
50% পুত্র স্বাভাবিক 50% পুত্র হিমোফিলিয়া ও 100% কন্যা স্বাভাবিক
50% পুত্র স্বাভাবিক 50% পুত্র হিমোফিলিয়া ও 100% কন্যা স্বাভাবিক

যদি মাতা হিমোফিলিয়ার বাহক ও পিতা হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত হয়, তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের সন্তান-সন্ততিরা আক্রান্ত হবে, না স্বাভাবিক হবে তা উপযুক্ত ক্রসের মাধ্যমে দেখাও।

মাতা হিমোফিলিয়ার বাহক ও পিতা হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত
মাতা হিমোফিলিয়ার বাহক ও পিতা হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত

অর্থাৎ সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে 50% -এর হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর বাকি 50% সন্তান-সন্ততিরা স্বাভাবিক হলেও কন্যা বাহক হবে।

যদি Xh+, Xh যথাক্রমে স্বাভাবিক ও হিমোফিলিয়ার অ্যালিল হয়; তাহলে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে জিনোটাইপ নির্ধারণ করো। (1) স্বাভাবিক পুরুষ, (2) আক্রান্ত পুরুষ, (3) বাহক মহিলা, (4) আক্রান্ত মহিলা।

Xh+ স্বাভাবিক ও Xh হিমোফিলিয়ার অ্যালিল হলে –

  1. স্বাভাবিক পুরুষ হবে Xh+Y।
  2. আক্রান্ত পুরুষ হবে XhY।
  3. বাহক মহিলা হবে Xh+Xh।
  4. আক্রান্ত মহিলা হবে XhXh

বর্ণান্ধতা কাকে বলে?

X ক্রোমোজোম সংযোজিত প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত যে বংশগত রোগে মানুষ প্রধানত লাল, সবুজ অথবা নীল বর্ণ শনাক্ত করতে পারে না, সেই রোগকে বর্ণান্ধতা বলে।

স্বাভাবিক দৃষ্টি ও বর্ণান্ধ দৃষ্টি
স্বাভাবিক দৃষ্টি ও বর্ণান্ধ দৃষ্টি

একজন জেনেটিক কাউন্সিলার হিসেবে তুমি কোনো বর্ণান্ধ পুরুষ ও ওই রোগের বাহক মহিলাকে পরবর্তী প্রজন্মের দৃষ্টিশক্তি সম্পর্কে কী পরামর্শ দান করবে?

বর্ণান্ধ পুরুষের জিনোটাইপ হবে XcY এবং বাহক মহিলার জিনোটাইপ হবে Xc+Xc অর্থাৎ বাহক মহিলার 50% X ক্রোমোজোমই বর্ণান্ধতার জন্য দায়ী জিন বহন করে। তাই এরূপ পরিস্থিতিতে উভয়ের বিয়ের ফলে উৎপন্ন অপত্যদের বর্ণান্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নিম্নরূপ –

বর্ণান্ধ পুরুষ ও ওই রোগের বাহক মহিলা
বর্ণান্ধ পুরুষ ও ওই রোগের বাহক মহিলা

অর্থাৎ সমস্ত দিক বিবেচনা করে, আমি তাদের বুঝিয়ে বলব যে অপত্যদের 50% -র মধ্যে বর্ণান্ধ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

একজন বর্ণান্ধ কন্যার পিতার ফিনোটাইপ কী হবে?

অনুরূপ প্রশ্ন, একজন হিমোফিলিক কন্যার পিতার ফিনোটাইপ কী হবে?

বর্ণান্ধ কন্যার দুটি X ক্রোমোজোমেই বর্ণান্ধতার অ্যালিল থাকবে। যেহেতু সে একটি X ক্রোমোজোম বাবার থেকে পায় তাই বাবার জিনোটাইপ হবে XcY বা বর্ণান্ধ পুরুষের জিনোটাইপ হবে, অর্থাৎ বাবা বর্ণান্ধ ফিনোটাইপবিশিষ্ট হবে।

‘মা বর্ণান্ধ হলে পুত্র বর্ণান্ধ হয়’ – কারণ ব্যাখ্যা করো।

মা বর্ণান্ধ হলে, তার জিনোটাইপ হয় XcXc এবং এক্ষেত্রে ধরে নেওয়াই যায়, পিতা স্বাভাবিক। যেহেতু পুত্রেরা Y ক্রোমোজোম পিতার থেকে ও X ক্রোমোজোম মাতার থেকে পেয়ে থাকে তাই এক্ষেত্রে তারা সর্বদা বর্ণান্ধতার জিনবহনকারী X ক্রোমোজোমটি পায় ফলে সব পুত্র বর্ণান্ধ (XcY) হয়। তাই বলা হয়, মা বর্ণান্ধ হলে পুত্র বর্ণান্ধ হয়। এক্ষেত্রে যদিও কন্যারা সর্বদাই বাহক (Xc+Xc) হয় কারণ তারা একটি X ক্রোমোজোম মাতার থেকে ও অপরটি পিতার থেকে পাওয়ায়, মাতা বর্ণান্ধ হলেও যদি পিতা স্বাভাবিক হয়, তাহলে কন্যারা বর্ণান্ধ না হয়ে বাহক হয়। একমাত্র পুত্ররাই বর্ণান্ধ হয়।

বর্ণান্ধতার কীভাবে বংশগত সঞ্চরণ ঘটে তা একটি ক্রসের সাহায্যে দেখাও।

ধরা যাক, একজন বর্ণান্ধ পুরুষের (XcY) সাথে একজন স্বাভাবিক মহিলার (Xc+Xc+) বিবাহ হল, এরপর তাদের সন্তান সন্ততিদের মধ্যে কীভাবে পিতার বর্ণান্ধতার জন্য দায়ী জিনটি সঞ্চারিত হবে, তা ক্রসের মাধ্যমে দেখানো হল –

বর্ণান্ধতার কীভাবে বংশগত সঞ্চরণ ঘটে তা একটি ক্রসের সাহায্যে দেখাও।
বর্ণান্ধতার কীভাবে বংশগত সঞ্চরণ ঘটে তা একটি ক্রসের সাহায্যে দেখাও।

কন্যা একটি X ক্রোমোজোম পিতার থেকে ও অপরটি মাতার থেকে পায়, তাই পিতা যদি বর্ণান্ধ (XcY) হয় তাহলে কন্যা বাহক হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে মাতা স্বাভাবিক (Xc+Xc+) হওয়ায় কোনো পুত্রই বর্ণান্ধ হয় না, কারণ পুত্ররা Y ক্রোমোজোমটি পিতার থেকে পেলেও X ক্রোমোজোমটি মাতার থেকে পায়, তাই মাতা স্বাভাবিক হলে পুত্ররাও স্বাভাবিক হয়। আবার যদি মাতা বাহক বা বর্ণান্ধ হয় তবে পুত্ররাও বর্ণান্ধ হয়।

একজন বর্ণান্ধ রোগের বাহক মহিলা, একজন বর্ণান্ধ পুরুষকে বিবাহ করল। তাদের একটি কন্যাসন্তান হল। এই কন্যাসন্তানটি বর্ণান্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কতটা তা বিশ্লেষণ করে লেখো।

একজন বর্ণান্ধ রোগের বাহক মহিলার দুটি X ক্রোমোজোমের একটিতে বর্ণান্ধতার জন্য দায়ী জিনটি উপস্থিত থাকে (Xc+Xc) আবার বর্ণান্ধ পুরুষের একটি X ক্রোমোজোমেই বর্ণান্ধতার জন্য দায়ী জিনটি উপস্থিত থাকে (XcY)। উভয়ের বিবাহে কন্যা সন্তান হলে স্বভাবতই সে একটি X ক্রোমোজোম মাতার থেকে ও অপর X ক্রোমোজোম পিতার থেকে পায়। যদি কন্যা মাতার থেকে বর্ণান্ধতার জিনবাহী X ক্রোমোজোম পায় তবে পিতার থেকেও বর্ণান্ধতার জিনবাহী X ক্রোমোজোম পাওয়ায়, কন্যা বর্ণান্ধ হয় (XcXc)। কিন্তু যদি কন্যা মাতার থেকে স্বাভাবিক X ক্রোমোজোম পায়, তখন পিতার থেকে বর্ণান্ধতার জিনবাহী X ক্রোমোজোম পেলেও সে বর্ণান্ধ না হয়ে বর্ণান্ধতার বাহক হয় (Xc+Xc) কারণ বর্ণান্ধতা একটি X ক্রোমোজোম সংযোজিত প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত রোগ। এটি তখনই প্রকাশিত হয়, যখন উভয় X ক্রোমোজোমেই বর্ণান্ধতার জন্য দায়ী জিন উপস্থিত থাকে। তাই কন্যা হয় বাহক হবে না হয় বর্ণান্ধ হবে।

একজন বর্ণান্ধ রোগের বাহক মহিলা ও একজন বর্ণান্ধ পুরুষ
একজন বর্ণান্ধ রোগের বাহক মহিলা ও একজন বর্ণান্ধ পুরুষ

অর্থাৎ কন্যারা হয়, বাহক হবে (Xc+Xc) না হয় বর্ণান্ধ (XcXc) হবে।

বংশপঞ্জিকা থেকে কীভাবে X ক্রোমোজোম বাহিত বংশগত রোগটি শনাক্ত করা যায়?

  • প্রথমত রোগটির ক্রিসক্রস বংশানুসরণ দেখা যাবে। অর্থাৎ মায়ের থেকে ছেলেতে এবং ছেলের থেকে নাতনিতে সঞ্চারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে রোগটির প্রকাশ বেশি হয়। কারণ তাদের একটি মাত্র X ক্রোমোজোম থাকে।
  • পিতা স্বাভাবিক হবে পুত্র স্বাভাবিক হবে। কিন্তু কন্যা সন্তান বাহিকা বা আক্রান্ত হবে।

ক্রিসক্রস উত্তরাধিকারী কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

অনুরুপ প্রশ্ন, X ক্রোমাজোম বাহিত রোগগুলি ক্রিসক্রস উত্তরাধিকার দেখায় – ব্যাখ্যা করো।

যখন কোনো জেনেটিক বৈশিষ্ট্য মায়ের থেকে পুত্র সন্তানে এবং পুত্রসন্তান থেকে তার কন্যা সন্তানে (নাতনি) সঞ্চারিত হয়, অর্থাৎ ক্রিসক্রস অভিমুখে বংশগত বৈশিষ্ট্য সঞ্চারিত হলে তাকে ক্রিসক্রস উত্তরাধিকার বলে।

X ক্রোমোজোম বাহিত রোগগুলি যেমন – হিমোফিলিয়া, বর্ণান্ধতা প্রভৃতির অ্যালিলগুলি মা থেকে পুত্র এবং পুত্র থেকে তার কন্যা অর্থাৎ নাতনিতে সঞ্চারিত হয়।

মোনোক্রোমাসি ও ডাইক্রোমাসি কাকে বলে?

মানুষের চোখে লাল, সবুজ ও নীল-তিন প্রকার বর্ণ সংবেদী কোন কোশ থাকে। এরমধ্যে দুই প্রকার কোশ নষ্ট হয়ে গিয়ে কেবলমাত্র একপ্রকার বর্ণ-সংবেদন বজায় থাকলে, তাকে মোনোক্রোমাসি বলে। তিন প্রকার বর্ণ সংবেদী কোশের মধ্যে কোনো একপ্রকার কোশ নষ্ট হয়ে গেলে এবং অন্য দুটি কার্যকর থাকলে, সেই বর্ণান্ধতাকে ডাইক্রোমাসি বলে। সাধারণত বর্ণান্ধতা বলতে ডাইক্রোমাসিকেই বোঝানো হয়। মোনোক্রোমাসি বা সম্পূর্ণ বর্ণান্ধতা (সাদা-কালো দৃশ্যমানতা) প্রায় দেখাই যায় না।

জেনেটিক কাউন্সেলিং বলতে কী বোঝ?

অথবা, সুপ্রজনন মন্ত্রণা বা জিনগত পরামর্শ কাকে বলে?

কোনো ব্যক্তির পরিবারের জিনগত রোগের ইতিহাস বিশ্লেষণ ও জেনেটিক পরীক্ষানিরীক্ষার দ্বারা ভবিষ্যৎ সন্তানের জিনগত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা নির্ধারণ করা বা জিনগত রোগবিহীন সুস্থ সন্তানলাভে সাহায্য করার প্রক্রিয়াকে জেনেটিক কাউন্সেলিং বলা হয়।

জেনেটিক কাউন্সেলিং প্রয়োজনীয় কেন?

অথবা, বংশগত রোগ প্রতিরোধে জেনেটিক কাউন্সেলিং -এর ভূমিকা কী?

জেনেটিক কাউন্সেলিং -এর প্রয়োজনীয়তা বা ভূমিকা হল –

  1. জিনগত পরামর্শ বিবাহের পরে জিনগত রোগাক্রান্ত শিশুর জন্ম প্রতিরোধ করে।
  2. জেনেটিক কাউন্সেলিং শিশুর জিনগত রোগের সম্ভাবনা নির্ণয় ও তার মোকাবিলায় সঠিক পন্থা অবলম্বনে সাহায্য করে।
  3. ভ্রুণ বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাব্য কারণ নির্ণয় ও সুস্থ শিশুর জন্মগ্রহণে জিনগত পরামর্শ সাহায্য করে।
  4. দম্পতির পারস্পরিক দোষারোপ, ভুল বোঝাবুঝি, অসহিষ্ণুতা হ্রাস করতে জেনেটিক কাউন্সেলিং সাহায্য করে।

বংশে থ্যালাসেমিয়া রোগের ইতিহাস থাকলে জিনগত পরামর্শের প্রয়োজন কেন?

বংশে থ্যালাসেমিয়া রোগের ইতিহাস থাকলে কোনো বাহক ব্যক্তির সঙ্গে ওই বংশের কোনো বাহক ব্যক্তির বিবাহে অপত্যে রোগটি প্রকাশের সম্ভাবনা থাকে। অপত্য যাতে রোগাক্রান্ত না হয় সেইজন্য জেনেটিক কাউন্সিলারের পরামর্শ গ্রহণ জরুরি।


আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের তৃতীয় অধ্যায় “বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ” অধ্যায়ের ‘কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

দেশীর রাজ্য দফতর কেন গঠিত হয়েছিল? দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির দলিল বলতে কী বোঝায়?

দেশীর রাজ্য দফতর কেন গঠিত হয়েছিল?

ভারতের জনজীবনে নদনদীর প্রভাব আলোচনা করো।

ভারতের জনজীবনে নদনদীর প্রভাব আলোচনা করো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

দেশীর রাজ্য দফতর কেন গঠিত হয়েছিল?

ভারতের জনজীবনে নদনদীর প্রভাব আলোচনা করো।

উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের নদনদীর পার্থক্য লেখো।