এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – বংশগতি – মেন্ডেলের একসংকর জনন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

জীববিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হল বংশগতি। বংশগতি হল জীবের শারীরিক ও আচরণগত বৈশিষ্ট্যগুলির পিতামাতা থেকে সন্তানদের মধ্যে সংক্রমণ। বংশগতির মাধ্যমেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জীবের বৈশিষ্ট্যগুলি সংরক্ষিত হয়।

Table of Contents

বংশগতির মাধ্যমে সংক্রমিত বৈশিষ্ট্যগুলি জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। জিন হল DNA-এর একটি ক্ষুদ্র অংশ যা একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী। জিনগুলি ক্রোমোসোমে অবস্থিত।

মেন্ডেল ছিলেন একজন অস্ট্রিয়ান বিজ্ঞানী যিনি বংশগতির মৌলিক নীতিগুলি আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি একসংকর জনন পরীক্ষা করেছিলেন, যাতে একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য দুটি ভিন্ন জিন থাকে।

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – বংশগতি – মেন্ডেলের একসংকর জনন

বিশুদ্ধ বেগুনি ফুল (প্রকট) ও বিশুদ্ধ সাদা ফুল (প্রচ্ছন্ন) ধারণকারী দুটি মটর গাছের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটালে F2 জনুতে বিশুদ্ধ বেগুনি ও বিশুদ্ধ সাদা ফুল ধারণকারী উদ্ভিদের অনুপাত কী হবে ব্যাখ্যা করো।

ব্যাখ্যা

ধরা যাক, বিশুদ্ধ বেগুনি ফুলযুক্ত (প্রকট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন) গাছ = VV এবং বিশুদ্ধ সাদা ফুলযুক্ত (প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন) গাছ = vv।

এদের মধ্যে ইতর পরাগযোগের মাধ্যমে সংকরায়ণ ঘটালে প্রথম অপত্য জনুতে (F1) যে গাছ জন্মাবে তার সবকটিই বেগুনি ফুল উৎপাদন করবে। কারণ, বেগুনি ফুল প্রকট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এবার এই F1 জনুতে উৎপন্ন গাছের মধ্যে স্বপরাগযোগ ঘটালে F2 জনুতে ফিনোটাইপ হিসেবে তিনভাগ বেগুনি ফুলযুক্ত গাছ এবং একভাগ সাদা ফুলযুক্ত গাছ জন্মাবে। উপরোক্ত তিনভাগ বেগুনি ফুলগাছের ভিতর জিনোটাইপ হিসেবে একভাগ বিশুদ্ধ বেগুনি এবং দু-ভাগ সংকর বেগুনি ফুল ধারণকারী উদ্ভিদ জন্মাবে।

সুতরাং, এই পরীক্ষায় দেখা যায়, F2 জনুতে একভাগ (25%) বিশুদ্ধ বেগুনি দু-ভাগ (50%) সংকর বেগুনি এবং একভাগ (25%) বিশুদ্ধ সাদা ফুল ধারণকারী উদ্ভিদ জন্মাবে। ক্রস ও চেকার বোর্ডের সাহায্যে উক্ত পরীক্ষাটি নীচে দেখানো হল।

সুতরাং, বিশুদ্ধ বেগুনি, সংকর বেগুনি ও বিশুদ্ধ সাদা ফুলযুক্ত উদ্ভিদের অনুপাত = 1 : 2 : 1 (জিনোটাইপিক)। এবং বেগুনি ও সাদা ফুলযুক্ত উদ্ভিদের অনুপাত = 3:1 (ফিনোটাইপিক)। অর্থাৎ, বিশুদ্ধ বেগুনি ও বিশুদ্ধ সাদা ফুল ধারণকারী উদ্ভিদের অনুপাত = 1 : 1।

মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত দুটি সিদ্ধান্ত বিবৃত করো। গিনিপিগে খর্ব লোম প্রকট গুণ (S) এবং লম্বা লোম প্রচ্ছন্ন গুণ (s)। দুটি হেটেরোজাইগাস গিনিপিগের মধ্যে জনন হলে তাদের সন্তানসন্ততি কী রকম হবে?

একসংকর জনন পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত দুটি সিদ্ধান্ত

মটর গাছের একসংকর জনন পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে মেন্ডেল যে দুটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন তা হল — 1. পৃথকীভবনের সিদ্ধান্ত এবং 2. প্রকটতা ও প্রচ্ছন্নতার সিদ্ধান্ত।

পৃথকীভবনের (সূত্র) সিদ্ধান্ত কোনো জীবের একটি চরিত্রের অন্তর্গত একজোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য একটি জনু (জনিতৃ জনু) থেকে অপর একটি জনুতে (অপত্য জনু) সঞ্চারিত হওয়ার সময়ে একত্রিত হলেও বৈশিষ্ট্যগুলি কখনোই মিশ্রিত হয় না বরং গ্যামেট উৎপাদনের সময়ে বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যগুলি পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে যায়।

প্রকটতা ও প্রচ্ছন্নতার (সূত্র) সিদ্ধান্ত কোনো জীবে দুটি বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য নির্ধারণকারী জিন উপস্থিত থাকলে, যে জিনটি হেটেরোজাইগাস অবস্থায় অপর জিনের বৈশিষ্ট্যকে অবদমিত করে নিজের বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটায়, তাকে প্রকট জিন এবং এর দ্বারা নির্ধারিত বৈশিষ্ট্যকে প্রকট বৈশিষ্ট্য বলে। আবার, হেটেরোজাইগাস অবস্থায় যে জিনটি নিজ বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটাতে পারে না তাকে প্রচ্ছন্ন জিন এবং এর দ্বারা নির্ধারিত বৈশিষ্ট্যকে প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য বলে। মটর গাছের উচ্চতার ক্ষেত্রে লম্বা বৈশিষ্ট্যটি হল প্রকট এবং খর্বতার বৈশিষ্ট্যটি হল প্রচ্ছন্ন।

হেটেরোজাইগাস গিনিপিগের মধ্যে একসংকর জনন

ধরা যাক, গিনিপিগের খর্ব লোম প্রকট বৈশিষ্ট্য, অর্থাৎS এবং লম্বা লোম প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য, অর্থাৎ। এখানে হেটেরোজাইগাস গিনিপিগ বলতে বোঝানো হয়েছে খর্ব লোম ও লম্বা লোমের জিনযুক্ত সংকর গিনিপিগ (Ss)। দুটি হেটেরোজাইগাস গিনিপিগের (Ss) মধ্যে জনন সম্পন্ন হলে প্রথম অপত্য জনুতে (F1 জনু) কী প্রকার ফলাফল হবে তা চেকার বোর্ডের মাধ্যমে দেখানো হল।

অর্থাৎ, হেটেরোজাইগাস গিনিপিগের সন্তানসন্ততিদের ক্ষেত্রে, ফিনোটাইপিক অনুপাত হবে — খর্ব লোম : লম্বা লোম = 3 : 1 এবং জিনোটাইপিক অনুপাত হবে — বিশুদ্ধ খর্ব লোম : সংকর খর্ব লোম : বিশুদ্ধ লম্বা লোম = 1 : 2 : 1

মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষা ও তা থেকে প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত বুঝিয়ে দাও।

মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষা

মেন্ডেল মটর গাছের সাত জোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যের বংশানুক্রমিক প্রকাশ দেখার জন্য পৃথকভাবে এক-একটি চরিত্র নিয়ে তার অন্তর্গত একজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যের সাপেক্ষে একসংকর জননের পরীক্ষা করেন। মেন্ডেল তাঁর একসংকর জনন পরীক্ষার জন্য বিশুদ্ধ লম্বা (TT) ও বিশুদ্ধ বেঁটে (tt) বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মটর গাছ নির্বাচন করেন।

প্রথম অগত্য জনু – তিনি তাঁর নির্বাচিত লম্বা গাছের ফুলের পরাগধানী থেকে পরিণত রেণু সংগ্রহ করে বেঁটে গাছের ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থাপন করে সংকরায়ণ ঘটান। এর ফলে যে বীজ উৎপন্ন হয় তা থেকে সৃষ্ট সব মটর গাছকেই মেন্ডেল প্রথম অপত্য জনু (F1 জনু) বলে অভিহিত করেন।

দ্বিতীয় অপত্য জন এই পরীক্ষার পরে মেন্ডেল দেখেন F1 জনু বা প্রথম অপত্য জনুর সবকটি মটর গাছই লম্বা (সংকর লম্বা – Tt এরপর তিনি প্রথম অপত্য জনুর গাছগুলির মধ্যে স্বপরাগযোগ ঘটান। F1 জনুর উদ্ভিদের স্বপরাগযোগের ফলে সৃষ্ট মটর গাছগুলিকে মেলে দ্বিতীয় অপত্য জনু (F2) নামে অভিহিত করেন। দ্বিতীয় অপত্য জনুতে দেখা যায়, সমস্ত উদ্ভিদের তিনভাগ লম্বা (TT ও Tt) এবং একভাগ বেঁটে (tt)। এদের ফিনোটাইপিক অনুপাত হল, লম্বা বেঁটে = 3 :1 এদের জিনোটাইপ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, জিনোটাইপিক অনুপাত = 1 : 2 : 1। অর্থাৎ একভাগ খাঁটি লম্বা (TT), দু-ভাগ সংকর লম্বা (Tt), একভাগ বিশুদ্ধ বেঁটে (tt) মটর গাছ।

সিদ্ধান্ত

এই পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণিত হয়, পিতামাতার গুণাবলি F1 জনুতে সঞ্চারিত হলেও তারা তাদের নিজস্ব অস্তিত্ব হারায় না বরং পরে গ্যামেট উৎপাদনের সময়ে তারা পৃথক হয়ে যায়। মটর গাছের একসংকর জনন পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে মেন্ডেল তাঁর প্রথম সূত্রটি (পৃথকীভবন সূত্র) প্রণয়ন করেন।

মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষাটি ক্রস ও চেকার বোর্ডের সাহায্যে এখানে দেখানো হল।

একসংকর জনন কাকে বলে? মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষায় প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যের এবং ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপ ব্যাখ্যা করো।

একসংকর জনন

কোনো প্রজাতির একটি চরিত্রের অন্তর্গত একজোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দুটি জীবের মধ্যে জনন সম্পাদিত হলে, তাকে মনোহাইব্রিড ক্রস বা একসংকর জনন বলে। যেমন — মটর গাছের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ লম্বা ও বিশুদ্ধ বেঁটে এই দুই বিপরীতধর্মী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে যে সংকরায়ণ হয়, তা হল একটি মনোহাইব্রিড ব্রুস বা একসংকর জনন।

প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা

মেন্ডেলের পরীক্ষায় প্রথম অপত্য জনুতে (F1) সমস্ত গাছ লম্বা (সংকর লম্বা-Tt) হয়। মেন্ডেল, মটর গাছে প্রকাশিত লম্বা বৈশিষ্ট্যের নাম দেন প্রকট বৈশিষ্ট্য। পক্ষান্তরে, মটর গাছে প্রথম অপত্য জনুতে অপ্রকাশিত বেঁটে বৈশিষ্টের নাম দেন প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য।

ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপ ব্যাখ্যা

মেন্ডেল তাঁর পরীক্ষায় দ্বিতীয় অপত্য জনুতে (F2) দু-ধরনের গাছ দেখতে পান। এদের ক্ষেত্রে লম্বা ও বেঁটে মটর গাছের অনুপাত = 3 : 1। আবার, এই লম্বাগুলির জিনোটাইপ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় একভাগ বিশুদ্ধ লম্বা এবং দু-ভাগ সংকর লম্বা মটর গাছ। সেক্ষেত্রে ফিনোটাইপিক, অর্থাৎ মটর গাছের বাহ্যিক প্রকাশিত বৈশিষ্ট্যের অনুপাত = 3 : 1 [অর্থাৎ 3 ভাগ লম্বা (IT ও Tt) এবং 1 ভাগ বেঁটে (tt)] এবং জিনোটাইপিক, অর্থাৎ জিনঘটিত বৈশিষ্ট্যের অনুপাত = 1 : 2 : 1 [অর্থাৎ 1 ভাগ বিশুদ্ধ লম্বা (TT), দু-ভাগ সংকর লম্বা (Tt) এবং 1 ভাগ বিশুদ্ধ বেঁটে (tt)]।

উদাহরণসহ প্রাণীর একসংকর জনন ও তা থেকে প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত বুঝিয়ে দাও।

প্রাণীর একসংকর জনন পরীক্ষা

বিভিন্ন প্রাণীর ক্ষেত্রে একসংকর জনন ঘটালে মেন্ডেলের সূত্রের সপক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়। এখানে গিনিপিগের ওপর একসংকর জননের পরীক্ষাটি আলোচনা করা হল। এক্ষেত্রে গিনিপিগের গায়ের লোমের বর্ণ চরিত্রটির সাপেক্ষে একসংকর জনন ঘটানো হয়। এক্ষেত্রে বিবেচ্য চরিত্রটি হল গায়ের লোমের বর্ণ এবং সংশ্লিষ্ট বৈশিষ্ট্য দুটি হল কালো বর্ণ এবং সাদা বর্ণ-এর লোম। একটি বিশুদ্ধ কালো লোমযুক্ত গিনিপিগের (BB) সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ সাদা লোমযুক্ত গিনিপিগের (bb) সংকরায়ণ ঘটালে প্রথম অপত্য জনুতে (F1) সকল গিনিপিগ কালো (সংকর কালো –Bb) লোমযুক্ত হয়। এক্ষেত্রে গিনিপিগের কালো লোমযুক্ত রং (B)-টি সাদা লোমযুক্ত রং (b)-এর ওপর প্রকট হয়। প্রথম অপত্য জনুতে (F1) উৎপন্ন সংকর কালো (Bb) লোমযুক্ত গিনিপিগগুলির মধ্যে যৌন জনন ঘটালে (Bb x Bb) দ্বিতীয় অপত্য জনুতে (F2) তিনভাগ কালো এবং একভাগ সাদা লোমযুক্ত গিনিপিগের (3 : 1) সৃষ্টি হয়। এই তিনভাগ কালো লোমযুক্ত গিনিপিগের মধ্যে একভাগ বিশুদ্ধ কালো (BB) এবং বাকি দু-ভাগ সংকর কালো (Bb) হবে। সাদা গিনিপিগ বিশুদ্ধ সাদা (bb) হবে।

এক্ষেত্রে ফিনোটাইপিক অনুপাত হবে কালো : সাদা = 3 : 1 এবং জিনোটাইপিক অনুপাত হবে — বিশুদ্ধ কালো (BB) : সংকর কালো (Bb): বিশুদ্ধ সাদা (bb) = 1 : 2 : 1 |

সিদ্ধান্ত

পরীক্ষার ফলাফল থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় যে, এই পরীক্ষার ফলাফল মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষার ফলাফলের অনুরূপ। এক্ষেত্রে মেন্ডেলের প্রথম সূত্রটি অনুসৃত হয়েছে।

ক্রস ও চেকার বোর্ডের সাহায্যে উল্লিখিত পরীক্ষাটি এখানে দেখানো হল।

মেন্ডেলের দ্বিসংকর জননের পরীক্ষা ও তা থেকে প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত বুঝিয়ে দাও।

দ্বিসংকর জনন পরীক্ষা

মেন্ডেল মটর গাছের ক্ষেত্রে পরস্পর বিপরীতধর্মী দুই জোড়া চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে দ্বিসংকর জননের পরীক্ষাটি সম্পন্ন করেন। এখানে উদাহরণ হিসেবে যে দুটি চরিত্র নেওয়া হল তার প্রথমটি হল বীজের বা বীজপত্রের রং এবং এই চরিত্রের অন্তর্গত বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য দুটি হল বীজের হলদে রং ও সবুজ রং। দ্বিতীয় চরিত্রটি হল বীজের আকৃতি, যার অন্তর্গত বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য দুটি হল বীজের গোলাকার ও কুঞ্চিত আকৃতি।

প্রথম অপত্য জনু মেন্ডেল হলদে-গোল বা মসৃণ বীজযুক্ত একটি বিশুদ্ধ মটর গাছ (YYRR) এবং সবুজ-কুঞ্চিত বীজযুক্ত একটি বিশুদ্ধ মটর গাছ (yyrr)-এর মধ্যে ইতর পরাগযোগ ঘটান। এর ফলে F1 জনুতে যে মটর গাছগুলি উৎপন্ন হয়, সেগুলি হলদে গোলাকৃতি বীজযুক্ত (সংকর – YyRr) হয়।

দ্বিতীয় অপত্য জনু এরপর মেন্ডেল F1 প্রজন্মে প্রাপ্ত উদ্ভিদগুলির মধ্যে স্বপরাগযোগ ঘটান। এর ফলে F2 জনুতে জনুতে চার প্রকার ফিনোটাইপযুক্ত উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়। এগুলি হল – হলদে-গোল, হলদে-কুঞ্চিত, সবুজ-গোল ও সবুজ-কুঞ্চিত। কিন্তু উৎপন্ন উদ্ভিদগুলির জিনোটাইপ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, জিনোটাইপগুলি বিভিন্ন প্রকারের। অর্থাৎ, দ্বিসংকর জননের F2 জনুতে ফিনোটাইপিক অনুপাত হল — হলদে-গোল : হলদে-কুঞ্চিত : সবুজ-গোল : সবুজ-কুঞ্চিত = 9 : 3 : 3 : 1। এক্ষেত্রে প্রকার জিনোটাইপযুক্ত অপত্য উদ্ভিদ 1 : 2 : 2 : 4 : 1 : 2 : 1 : 2 : 1 অনুপাতে জন্মায়।

সিদ্ধান্ত

F2 জনুর ফলাফল বিশ্লেষণ করে মেন্ডেল সিদ্ধান্তে আসেন যে, 1. বীজের হলদে রং এবং গোল আকৃতির জন্য প্রয়োজনীয় ফ্যাক্টর, যা জনিতৃ উদ্ভিদের যে-কোনো একটির মধ্যে উপস্থিত ছিল তা পরবর্তী প্রজন্মে একসঙ্গে সঞ্চারিত হয় না। বীজপত্রের সবুজ রং এবং বীজত্বকের কুঞ্চিত আকৃতির ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটে। 2. বীজের রং ও বীজের আকৃতি নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিজোড়া ফ্যাক্টর স্বাধীনভাবে পরবর্তী প্রজন্মে সম্ভাব্য সকল প্রকার সমন্বয়ে সঞ্চারিত হয়েছে। তাই F2 জনুতে চার প্রকার উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি বৈশিষ্ট্য নির্ধারণকারী ফ্যাক্টর বিপরীতধর্মী ফ্যাক্টরের সঙ্গে স্বাধীনভাবে এবং সম্ভাব্য সকল প্রকার সমন্বয়ে মিলিত হওয়ার ফলে বিভিন্ন জিনোটাইপযুক্ত মটর উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়েছে। মটর গাছের ক্ষেত্রে হলদে ও গোলাকৃতি বীজ—এই বৈশিষ্ট্যগুলি প্রকট এবং সবুজ ও কুঞ্জিত বীজ—এগুলি প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য। এই পরীক্ষা থেকে মেন্ডেল তাঁর দ্বিসংকর জননের সূত্র বা স্বাধীন বিন্যাসের সূত্র প্রণয়ন করেন।

মেন্ডেলের একসংকর জননের পরীক্ষামূলক ফলাফল বংশগতির নীতিগুলির ভিত্তি তৈরি করেছিল। এই পরীক্ষামূলক ফলাফলের মাধ্যমে মেন্ডেল দেখিয়েছিলেন যে, বৈশিষ্ট্যগুলি জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং জিনগুলি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বহন করা হয়।

Share via:

মন্তব্য করুন