মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদানের একটি প্রকার হিসেবে গমন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Rahul

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” অধ্যায়ের ‘প্রাণীদের সাড়াপ্রদানের একটি প্রকার হিসেবে গমন‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

প্রাণীদের সাড়াপ্রদানের একটি প্রকার হিসেবে গমন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
প্রাণীদের সাড়াপ্রদানের একটি প্রকার হিসেবে গমন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
Contents Show

প্রাণীদের ক্ষেত্রে সাড়াপ্রদান বলতে কী বোঝায়?

প্রাণীদের ক্ষেত্রে সাড়াপ্রদান করা বলতে পেশি, অস্থি এবং অস্থিসন্ধি ব্যবহার করে দ্রুত চলাচল করার ক্ষমতাকে বোঝায়।

গমনের দুটি কারণ উল্লেখ করো।

অথবা, গমনের দুটি চালিকাশক্তি উল্লেখ করো।

খাদ্যান্বেষণ 

উপযুক্ত আলো, বাতাস, জল ও খাদ্যের সন্ধানে প্রাণী গমন করে।

আত্মরক্ষা –

শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অর্থাৎ আত্মরক্ষার্থেও প্রাণী গমন করে।

আত্মরক্ষা-গমনের একটি কারণ
আত্মরক্ষা-গমনের একটি কারণ

অ্যামিবয়েড গমন বলতে কী বোঝ? অন্য কোন্ জীবে এই গমন দেখা যায়?

অ্যামিবয়েড গমন –

ক্ষণপদ-নির্ভর গমন যা প্রধানত অ্যামিবার ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়, তাকে অ্যামিবয়েড গমন বলে।

অ্যামিবয়েড গমনের উদাহরণ –

অ্যামিবা ছাড়াও মানুষের কিছু শ্বেত রক্তকণিকায় ও অন্যান্য কিছু প্রাণীতে, প্রোটোজোয়া ও ছত্রাকে অ্যামিবয়েড গমন দেখা যায়।

ক্ষণপদ বা সিউডোপোডিয়াম কী?

অ্যামিবার গমনের সময় কোশস্থ সাইটোপ্লাজমের ঘনত্বের পরিবর্তনের ফলে কোশের পরিধির দিকে কোশপর্দাসহ সাইটোপ্লাজমের আঙুলের মতো প্রবর্ধক সৃষ্টি হয়। এই ধরনের প্রবর্ধককে ক্ষণপদ বা সিউডোপোডিয়াম বলে।

সিলিয়া কাকে বলে? এটি কোন্ জীবে দেখা যায়?

সিলিয়া –

আণুবীক্ষণিক সূক্ষ্ম সুতোর মতো, সঞ্চালন ক্ষমতাসম্পন্ন, একক পর্দাবৃত সাইটোপ্লাজমীয় বহিঃবৃদ্ধি বা কোশীয় প্রবর্ধককে সিলিয়া বলে।

সিলিয়ার উদাহরণ –

এটি প্যারামেসিয়াম নামক প্রোটোজোয়ায় দেখা যায়।

সিলিয়ারি গমন কাকে বলে?

দেহের পরিধি বরাবর বিন্যস্ত সিলিয়ার পর্যায়ক্রমিক সঞ্চালনের দ্বারা গমন সম্পন্ন হলে তাকে সিলিয়ারি গমন বলা হয়। প্যারামেসিয়াম নামক এককোশীর দেহে এইপ্রকার গমন দেখা যায়।

ফ্ল্যাজেলা কাকে বলে? এটির অবস্থান উল্লেখ করো।

ফ্ল্যাজেলা –

আণুবীক্ষণিক সূক্ষ্ম তন্তুর মতো, সঞ্চালন ক্ষমতাযুক্ত, একক পর্দাবৃত সাইটোপ্লাজমীয় বহিঃবৃদ্ধি বা কোশীয় প্রবর্ধককে ফ্ল্যাজেলা বলা হয়। এই ফ্ল্যাজেলাগুলি সাধারণত সিলিয়ার থেকে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ ও মোটা হয়।

ফ্ল্যাজেলার অবস্থান –

এটি ইউগ্লিনার গমন অঙ্গ।

ফ্ল্যাজেলারি গমন বলতে কী বোঝ?

যখন কোনো জীবের গমন ফ্ল্যাজেলার সুশৃঙ্খল সঞ্চালনের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়, তখন সেই ধরনের সঞ্চালনকে ফ্ল্যাজেলারি গমন বা ফ্ল্যাজেলা-নির্ভর গমন বলে।

ইউগ্লিনার গমনে ফ্ল্যাজেলার ভূমিকা লেখো।

অথবা, ইউগ্লিনা কীভাবে ফ্ল্যাজেলা ব্যবহার করে?

ইউগ্লিনার গমন অঙ্গ হল ফ্ল্যাজেলা। ফ্ল্যাজেলাটিকে চাবুকের মতো সঞ্চালিত করে জলে ঘাত সৃষ্টি করে, এর প্রত্যাঘাতে দেহ বিপরীতে এগিয়ে যায়।

মাছের গমনে পাখনার ভূমিকা কী?

মাছের দেহে উপস্থিত বিভিন্ন পাখনা মাছের গমনে সাহায্য করে। যেমন –

  • বক্ষপাখনা ও শ্রোণিপাখনা মাছকে জলের ওপরে ও নীচে নিয়ে যেতে,
  • পায়ু ও পৃষ্ঠপাখনা মাছকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে এবং
  • পুচ্ছপাখনা দিক পরিবর্তনে সাহায্য করে।

একটি অস্থিযুক্ত মাছের জোড় পাখনা কেটে দিলে মাছটির কী হবে?

একটি অস্থিযুক্ত মাছের জোড় পাখনা কেটে দিলে মাছটি জলে স্থির হয়ে এক জায়গায় ভেসে থাকতে পারবে না ও জলের গভীরে যেতে পারবে না।

মাছের পুচ্ছপাখনার কাজ কী?

মাছের পুচ্ছপাখনার কাজ –

  • সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে চলন বল (driving force) সৃষ্টি করা।
  • চলাচলের সময় হালের মতো দিক পরিবর্তনে সাহায্য করা।

মায়োটম পেশি কাকে বলে?

মাছের মস্তকের পিছন থেকে শুরু করে ল্যাজ পর্যন্ত, মেরুদণ্ডের দুপাশে অবস্থিত ‘V’ আকৃতির যে পেশিগুলি মাছের সাঁতার কাটার সময়ে দেহকে দুপাশে আন্দোলিত করতে সাহায্য করে, তাকে মায়োটম পেশি বলে।

মায়োটম পেশির অবস্থান লেখো। এর কাজ উল্লেখ করো।

মায়োটম পেশির অবস্থান –

মায়োটম পেশি মাছের মেরুদণ্ডের দুই পাশে কানকো থেকে পুচ্ছপাখনার গোড়া পর্যন্ত সজ্জিত।

মায়োটম পেশির কাজ –

মায়োটম পেশি সংকোচন-প্রসারণের দ্বারা মাছের দেহে তরঙ্গের মতো আন্দোলন সৃষ্টি করে এবং মাছকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।

মায়োটম পেশি
মায়োটম পেশি

পাখির উড্ডয়ন পেশিগুলির নাম লেখো।

পাখির উড্ডয়ন পেশিগুলির নাম হল –

  • পেক্টোরালিস মেজর।
  • পেক্টোরালিস মাইনর।
  • কোরাকো ব্রাকিয়ালিস।
পাখির উড্ডয়ন পেশি
পাখির উড্ডয়ন পেশি

পেক্টোরালিস মেজর পেশির কাজ কী?

পেক্টোরালিস মেজর হল পাখির প্রধান বক্ষপেশি, যার সংকোচন ও প্রসারণ পাখির ডানা ঝাপটানোর জন্য বল সৃষ্টি করে। ফলে পাখি উড়তে পারে।

পাখির উড্ডয়ন পালক (উড়বার পালক) কাকে বলে? এগুলি কত প্রকার?

উড্ডয়ন পালক –

পাখির ডানায় ও ল্যাজে বিন্যস্ত যে পালকগুলি পাখির উড্ডয়নে সাহায্য করে, তাদের উড্ডয়ন পালক বলে।

উড্ডয়ন পালকের প্রকারভেদ –

পাখির উড্ডয়ন পালক দুই প্রকার –

  1. ডানার পালক বা রেমিজেস।
  2. ল্যাজের পালক বা রেস্ট্রিসেস।
পাখির উড্ডয়ন বা ওড়ার পালক-রেমিজেস
পাখির উড্ডয়ন বা ওড়ার পালক-রেমিজেস

পাখির পালক বাতাসের চাপে নষ্ট হয়ে যায় না কেন?

পাখির পালকগুলিতে থাকা বার্ব, বার্বিউল ও হুক একে অপরের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে আটকে থেকে পালকগুলিতে একটি তল সৃষ্টি করে। ফলে বাতাসের চাপে পায়রার পালক ছিঁড়ে যায় না।

গমনে লঘু মস্তিষ্কের ভূমিকা লেখো।

লঘু মস্তিষ্ক গমনের সময় হাত ও পায়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করে এবং দেহভঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া ঐচ্ছিক পেশির কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পেশিটান বজায় রেখে সাবলীল চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করে।

অন্তঃকর্ণ কীভাবে মানবদেহের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে?

অন্তঃকর্ণের ভেস্টিবুলার যন্ত্র দেহের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন্তঃকর্ণের ইউট্রিকল ও অর্ধচন্দ্রাকৃতি নালীর সংযোগস্থলে অ্যাম্পুলাতে সংবেদনশীল রোম থাকে যার সাথে ভেস্টিবুলার স্নায়ু যুক্ত থাকে। দেহ স্থানচ্যূত হলে অর্ধচন্দ্রাকৃতি নালীর এন্ডোলিম্ফে আন্দোলন হয়, যা সংবেদনশীল রোমের সাহায্যে স্নায়ুর মাধ্যমে লঘুমস্তিষ্কে পৌঁছোয় ও দেহের ভারসাম্য রক্ষা পায়।

গমনে মানুষের কঙ্কালতন্ত্রের ভূমিকা কী?

মানুষের কঙ্কালতন্ত্র বিভিন্ন অস্থির সমন্বয়ে গঠিত। ঐচ্ছিক পেশির ক্রিয়াশীলতায় সংশ্লিষ্ট অস্থিগুলির বিচলন ঘটে। তার ফলেই মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালিত হয় ও মানুষের দ্বিপদ গমন সম্পন্ন হয়।

সাইনোভিয়াল সন্ধি কাকে বলে? উদাহরণ দাও। 

সাইনোভিয়াল সন্ধি –

যেসব অস্থিসন্ধিতে সংশ্লিষ্ট অস্থিগুলির সহজে বিচলন ঘটে, সন্ধিস্থলগুলি সাধারণত সাইনোভিয়াল তরল দ্বারা পূর্ণ থাকে, তাদের সাইনোভিয়াল সন্ধি বলা হয়।

সাইনোভিয়াল সন্ধির উদাহরণ –

বল ও সকেট সন্ধি।

সাইনোভিয়াল ফ্লুইডের কাজ কী?

সাইনোভিয়াল ফ্লুইডের কাজ হল –

  • দুটি হাড়ের ঘর্ষণজনিত ক্ষয় রোধ করা।
  • সন্ধিতে অবস্থিত কার্টিলেজকে পুষ্টি প্রদান করা।

কবজা সন্ধি বা হিঞ্জ জয়েন্ট কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

কবজা সন্ধি –

যে সচল অস্থিসন্ধিতে সংযুক্ত অস্থি দুটির প্রান্ত দরজার কবজার মতো সংলগ্ন থাকে, তাকে কবজা সন্ধি বা হিঞ্জ জয়েন্ট বলে। এই অস্থিসন্ধিগুলি 180° কোণে বিচলন করতে পারে।

কবজা সন্ধির উদাহরণ –

হাঁটু ও কনুইয়ের সন্ধি এই প্রকৃতির।

বল ও সকেট সন্ধি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

বল ও সকেট সন্ধি –

যে সচল অস্থিসন্ধিতে একটি অস্থির গোলাকার মস্তক অপর অস্থির কাপের মতো সকেটের মধ্যে সংলগ্ন হয়, তাকে বল ও সকেট সন্ধি বলে।

বল ও সকেট সন্ধির উদাহরণ –

কোমর ও কাঁধের সন্ধি এইপ্রকারের হয়ে থাকে।

ফিমার অস্থি কোনটি? এর কাজ কী?

ফিমার অস্থি –

এটি মানবদেহের দুটি পায়ের উরুতে অবস্থিত দীর্ঘতম অস্থি।

ফিমার অস্থির কাজ –

সংযুক্ত পেশির সংকোচন ও প্রসারণ ঘটিয়ে চলনে সাহায্য করে।

অ্যাসিটাবুলাম কী? এর গুরুত্ব লেখো।

অ্যাসিটাবুলাম –

মানুষের শ্রোণিচক্রের দুটি অর্ধাংশের প্রতিটির বাইরের দিকে একটি অবতল অংশ বা কাপের মতো গহ্বর বর্তমান। একে অ্যাসিটাবুলাম বলে।

অ্যাসিটাবুলামের গুরুত্ব –

এই গহ্বরের মধ্যে পায়ের ফিমার নামক অস্থির গোলাকার খণ্ডক অংশ প্রবিষ্ট থেকে বল ও কোটর সন্ধি গঠন করে।

টিবিয়া ও ফিবিউলার অবস্থান ও কাজ লেখো।

টিবিয়া ও ফিবিউলা অস্থি দুটি প্রতি পায়ের জঙ্ঘায় অবস্থিত।

এদের ঊর্ধ্বপ্রান্ত ফিমারের সঙ্গে জানুসন্ধি গঠন করে চলনে সাহায্য করে। এই সন্ধি 180° কোণে বিচলন করতে পারে। ফলে মানুষের গমন সহজসাধ্য হয়।

লিগামেন্ট বা অস্থি-বন্ধনী কাকে বলে?

অস্থিসন্ধিগুলি যাদের সাহায্যে পরস্পর যুক্ত থাকে, সেগুলিকে লিগামেন্ট বা অস্থিবন্ধনী বলে। এটি তন্তুময় যোগকলা দ্বারা গঠিত একটি অংশ।

লিগামেন্ট ও টেনডন
লিগামেন্ট ও টেনডন

টেনডন বা কণ্ডরা কী?

অথবা, টেনডনের কাজ কী?

ঐচ্ছিক পেশির রজ্জুর মতো, প্যাঁচানো প্রান্ত যা পেশির সঙ্গে অস্থির সংযোগ রক্ষা করে, তাকে টেনডন বা কণ্ডরা বলে। এটি সাধারণত সাদা বর্ণের হয়ে থাকে।

পেশি-নির্ভর গমন বলতে কী বোঝ?

মানুষ ও অন্যান্য উন্নত প্রাণীদেহে পেশির ক্রিয়াশীলতায় যে গমন সম্পন্ন হয়, তাকে পেশি-নির্ভর গমন বলা হয়। এক্ষেত্রে পেশির সংকোচন-প্রসারণশীলতার জন্য প্রাণীর গমন ঘটে থাকে।

কঙ্কাল পেশি কাকে বলে? গমনে সহায়ক দুটি পেশির নাম করো।

কঙ্কাল পেশি –

মানবদেহে অস্থি সংলগ্ন যেসব ঐচ্ছিক পেশি মানুষের গমনে সাহায্য করে, তাদের কঙ্কাল পেশি বলে।

গমনে সহায়ক পেশি –

গমনে সাহায্যকারী দুটি পেশি হল –

  1. বাইসেপস ফিমোরিস।
  2. গ্যাস্ট্রকনেমিয়াস পেশি।
কঙ্কাল পেশি
কঙ্কাল পেশি

এক্সটেনসর পেশি কী? উদাহরণ দাও।

এক্সটেনসর পেশি –

যে পেশি সংকোচনের দ্বারা ভাঁজ হওয়া অস্থিকে দূরে সরে যেতে সাহায্য করে, তাকে এক্সটেনসর পেশি বলে।

এক্সটেনসর পেশির উদাহরণ –

ট্রাইসেপস পেশি।

ফ্লেক্সর পেশি কী? এই প্রকার পেশির উদাহরণ দাও।

ফ্লেক্সর পেশি –

যে পেশি সংকোচনের দ্বারা দুটি অস্থিকে কাছাকাছি আসতে সাহায্য করে, সেই পেশিকে ফ্লেক্সর পেশি বলে।

ফ্লেক্সর পেশির উদাহরণ –

বাইসেপস পেশি।

ফ্লেক্সর পেশি
ফ্লেক্সর পেশি

অ্যাডাক্টর পেশি কী? একটি উদাহরণ দাও।

অ্যাডাক্টর পেশি –

যে সকল অস্থিপেশির ক্রিয়ায় কোনো অঙ্গ দেহের অক্ষের কাছাকাছি আসে, তাদের অ্যাডাক্টর পেশি বলে।

অ্যাডাক্টর পেশির উদাহরণ –

  • অ্যাডাক্টর লঙ্গাস পেশি।
  • ল্যাটিসিমাস ডরসি।

অ্যাবডাক্টর পেশি কী? একটি এই পেশির নাম লেখো।

অ্যাবডাক্টর পেশি –

যে সকল অস্থিপেশির ক্রিয়ায় কোনো অঙ্গ দেহের অক্ষ থেকে দূরে সরে যায়, তাদের অ্যাবডাক্টর পেশি বলে।

অ্যাবডাক্টর পেশির উদাহরণ –

  • গ্লুটিয়াস ম্যাক্সিমাস পেশি।
  • ডেলটয়েড পেশি।
ডেলটয়েড পেশি
ডেলটয়েড পেশি

রোটেটর পেশি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

রোটেটর পেশি –

যে সকল পেশির ক্রিয়ায় কোনো অঙ্গ দেহের মধ্যবর্তী অক্ষের চারপাশে বৃত্তাকারে ঘুরতে পারে, সেই সকল পেশিকে রোটেটর পেশি বলে।

রোটেটর পেশির উদাহরণ –

পাইরিফরমিস পেশি।

রোটেশন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

রোটেশন –

পেশির যেরকম ক্রিয়ার ফলে কোনো অঙ্গ বা হাড় অপর কোনো অঙ্গ বা হাড়ের চারপাশে ঘুরতে পারে তাকে রোটেশন বলে।

রোটেশনের উদাহরণ –

স্টারনোক্লিডোম্যাসটয়েড পেশির ক্রিয়ায় ঘাড়ের ওপর মাথা ঘুরতে পারে।

রেমিজেস ও রেস্ট্রিসেস -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।

রেমিজেস ও রেস্ট্রিসেস -এর মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়রেমিজেসরেস্ট্রিসেস
অবস্থানপাখির ডানার পালক।পাখির ল্যাজের পালক।
সংখ্যাসাধারণত সংখ্যায় বেশি থাকে। যেমন – পায়রার ডানায় 23টি রেমিজেস থাকে।সাধারণত সংখ্যায় কম থাকে। যেমন – পায়রার ল্যাজে 12টি রেস্ট্রিসেস থাকে।
কাজবাতাসে চাপ দিয়ে উড়তে সাহায্য করে।উড়বার সময় দেহ সাম্য বজায় রাখা ও দিক পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ করে।

কবজা সন্ধি এবং বল ও সকেট সন্ধির মধ্যে পার্থক্য লেখো।

কবজা সন্ধি এবং বল ও সকেট সন্ধির মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়কবজা সন্ধিবল ও সকেট সন্ধি
অবস্থানহাতের কনুই ও পায়ে, হাঁটুতে অবস্থিত সন্ধি।উরশ্চক্র ও হিউমেরাস অস্থির সন্ধি এবং শ্রোণিচক্র ও ফিমার অস্থির সন্ধি।
গঠনএকটি অস্থির অবতল খাঁজযুক্ত প্রান্ত আর অস্থির উত্তল প্রান্তে সংলগ্ন হয়।একটি অস্থির গোলাকার মস্তক অপর অস্থির গোলাকার কাপের মতো গহ্বরে (সকেট) প্রবেশ করে সংলগ্ন থাকে।
সঞ্চালনঅস্থিসন্ধিতে একটি তলে 180° সঞ্চালন ঘটে।অস্থিসন্ধিতে হাত বা পায়ের ঘূর্ণন (360°) সম্ভব।

অ্যাবডাকশন পেশি ও অ্যাডাকশন পেশি – পার্থক্য লেখো।

অ্যাবডাকশন পেশি ও অ্যাডাকশন পেশির পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়অ্যাবডাকশন পেশিঅ্যাডাকশন পেশি
কাজএই পেশির ক্রিয়ায় কোনো অঙ্গ দেহের মধ্যরেখা থেকে দূরে সরে যায়।এই পেশির ক্রিয়ায় কোনো অঙ্গ দেহের মধ্যরেখায় ফিরে আসে।
উদাহরণডেলটয়েড পেশির সংকোচনে হাত দেহের অক্ষ থেকে দূরে সরে যায়।ল্যাটিসিমাস ডরসি পেশির সংকোচনে হাত দেহঅক্ষের কাছে চলে আসে।

সাইক্লোসিস কী? এটি কয়প্রকার ও কী কী?

সাইক্লোসিস –

উদ্ভিদকোশে অঙ্গাণুসহ সাইটোপ্লাজমের চক্রাকার চলনকে বলে সাইক্লোসিস।

সাইক্লোসিসের প্রকারভেদ –

এটি দুই প্রকার, যথা –

  1. রোটেশন – একটি বৃহৎ কোশীয় ভ্যাকুওলকে কেন্দ্র করে সমস্ত সাইটোপ্লাজম চক্রাকারে চলন করলে তাকে রোটেশন বলে। যেমন – কারা, হাইড্রিলা প্রভৃতি উদ্ভিদের কোশ।
  2. সারকুলেশন – ছোটো ছোটো ভ্যাকুওলকে ঘিরে সাইটোপ্লাজমের চক্রাকার ঘূর্ণনকে বলে সারকুলেশন। যেমন – ট্রাডেসক্যানশিয়া উদ্ভিদ।

ইনসুলিন কীভাবে রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা কমায় তার পদ্ধতি উল্লেখ করো।

ইনসুলিন কোশে গ্লুকোজের শোষণ ঘটাতে সাহায্য করে। খাদ্যগ্রহণের পর রক্তে হরমোনটির মাত্রা বৃদ্ধি পায়, ফলে খাদ্যের গ্লুকোজ কোশে জারিত হয় ও দেহকোশের জন্য শক্তির উৎপত্তি ঘটে। এর ফলে রক্তে গ্লুকোজমাত্রা পুনরায় স্বাভাবিক হয়ে যায়।

কীল অস্থি কী?

পাখিদের দেহে বক্ষ অঞ্চলে অবস্থিত স্টারনাম অস্থিটি দেখতে অনেকটা নৌকার চ্যাপটা তলদেশ বা কীল -এর মতো। তাই একে কীল (keel) অস্থি বলা হয়। কীল, বক্ষপেশিকে যথাযথভাবে আবদ্ধ রাখে এবং দেহের ভরকেন্দ্ররূপে ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে।

ফ্যালানজেস কী?

হাতের এবং পায়ের আঙুলের অস্থিগুলিকে ফ্যালানজেস বলে। এই অস্থিগুলি প্রাণীদের গমনে ও দেহের ভার বহনে সহায়তা করে।

মানুষের 12 জোড়া করোটি স্নায়ু ও তাদের প্রকৃতি এবং প্রধান কাজ লেখো।

করোটি স্নায়ু ও তাদের কাজ –

করোটি স্নায়ুপ্রকৃতিকাজ
অলফ্যাক্টরিসংজ্ঞাবহঘ্রাণ গ্রহণ।
অপটিকসংজ্ঞাবহদর্শন।
অকুলোমোটরচেষ্টীয়চক্ষুগোলকের সঞ্চালন।
ট্রকলিয়ারচেষ্টীয়চক্ষুগোলকের সঞ্চালন।
ট্রাইজেমিনালমিশ্রমুখমণ্ডলের স্পর্শ, তাপ প্রভৃতি অনুভূতি গ্রহণ।
অ্যাবডুসেন্সচেষ্টীয়চক্ষুগোলকের সঞ্চালন।
ফেসিয়ালমিশ্রমুখের ভাব প্রকাশ, অশ্রু ও লালা ক্ষরণ।
অডিটরিসংজ্ঞাবহশ্রবণ ও ভারসাম্য রক্ষা।
গ্লসোফ্যারিনজিয়ালমিশ্রস্বাদগ্রহণ।
ভেগাসমিশ্রহৃদস্পন্দন, শ্বাসক্রিয়া, পাকস্থলী বিচলন।
স্পাইনাল অ্যাকসেসারিচেষ্টীয়গলা, স্বরযন্ত্রের পেশি সঞ্চালন।
হাইপোগ্লসালচেষ্টীয়জিভ ও স্বরযন্ত্রের পেশি সঞ্চালন।

ফ্লেক্সন ও এক্সটেশন -এর পার্থক্য লেখো।

ফ্লেক্সন ও এক্সটেশন -এর পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়ফ্লেক্সনএক্সটেশন
বৈশিষ্ট্যএইপ্রকার পেশি-ক্রিয়ায় অস্থিসংলগ্ন পেশিটি সংকুচিত হলে পরপর অবস্থিত দুটি অস্থি ভাঁজ হয়ে পরস্পরের কাছে চলে আসে।এইপ্রকার পেশি-ক্রিয়ায় অস্থিসংলগ্ন পেশিটি সংকুচিত হলে, পরপর অবস্থিত দুটি অস্থি পরস্পরের থেকে দূরে সরে যায়।
অংশগ্রহণকারী পেশির প্রকৃতিএই পেশি-ক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী পেশিকে ফ্লেক্সর পেশি বলে।এই পেশি-ক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী পেশিকে এক্সটেনসর পেশি বলে।
উদাহরণবাইসেপস পেশির সংকোচনে কনুই ভাঁজ হয়।ট্রাইসেপস পেশির সংকোচনে ভাঁজ করা হাত সোজা হয়।

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” অধ্যায়ের ‘প্রাণীদের সাড়াপ্রদানের একটি প্রকার হিসেবে গমন‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান - জীবনের প্রবহমানতা - কোশ বিভাজন ও কোশচক্র - রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা – কোশ বিভাজন ও কোশচক্র – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

জীবনের প্রবহমানতা – কোশ বিভাজন ও কোশচক্র

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা – কোশ বিভাজন ও কোশচক্র – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান - জীবনের প্রবহমানতা - কোশ বিভাজন ও কোশচক্র - বিষয়সংক্ষেপ

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা – কোশ বিভাজন ও কোশচক্র – বিষয়সংক্ষেপ

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা – কোশ বিভাজন ও কোশচক্র – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা – কোশ বিভাজন ও কোশচক্র – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা – কোশ বিভাজন ও কোশচক্র – বিষয়সংক্ষেপ

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদানের একটি প্রকার হিসেবে গমন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদানের একটি প্রকার হিসেবে গমন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর