মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয় – স্নায়ুতন্ত্র – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

Rahul

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” অধ্যায়ের ‘প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়‘ বিভাগের উপ-অধ্যায় ‘স্নায়ুতন্ত্র‘ -এর রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয় - স্নায়ুতন্ত্র – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
স্নায়ুর প্রকারভেদ; স্নায়ুগ্রন্থি; স্নায়ুসন্নিধি – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
Contents Show

স্নায়বিক নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়; স্নায়বিক পথ; স্নায়ুকোশ, নিউরোগ্লিয়া এবং স্নায়ু; স্নায়ুর প্রকারভেদ; স্নায়ুগ্রন্থি; স্নায়ুসন্নিধি

স্নায়বিক পথ বিষয়টি একটি উদাহরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে লেখো।

স্নায়বিক পথ –

স্নায়ুতন্ত্র বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনা গ্রহণ করে তার পরিপ্রেক্ষিতে দেহে প্রতিক্রিয়া বা সাড়া সৃষ্টি করে। কিন্তু দেহে স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা এই সমন্বয়সাধনের জন্য স্নায়বিক পথের প্রয়োজন। বাহ্যিক উদ্দীপনার উপস্থিতিতে তা গ্রাহক বা রিসেপটর দ্বারা গৃহীত হয়। তারপর তা সংবেদী স্নায়ু বা নার্ভ দ্বারা স্নায়ুকেন্দ্রে (মস্তিষ্ক বা সুষুম্নাকাণ্ড) যায়। মস্তিষ্ক উদ্দীপনাটি বিশ্লেষণ করে এবং ভিন্ন স্নায়ুপথে চেষ্টীয় স্নায়ুর মাধ্যমে তা কারক বা ইফেকটর অংশে প্রতিক্রিয়া পাঠায়। পেশি, গ্রন্থি প্রভৃতি কারক তখন সেই প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী কাজ করে থাকে।

স্নায়বিক পথ
স্নায়বিক পথ…

উদাহরণ –

আমাদের বাড়িতে দরজায় কেউ বেল বাজালে তা কান দিয়ে অনুভব করি ও তারপর দরজা খুলে দিই। এক্ষেত্রে কানে উপস্থিত গ্রাহক শব্দের উদ্দীপনা গ্রহণ করে স্নায়ুর দ্বারা মস্তিষ্কে পাঠায়। মস্তিষ্ক তা বিশ্লেষণ করে দেহের কারক অঙ্গে (হাত, পা -এর পেশি) তার চেষ্টীয় উদ্দীপনা পাঠায় ও আমরা দরজা খুলি।

স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান উপাদান দুটির নাম লেখো এবং এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও ও কাজ উল্লেখ করো।

স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান উপাদান –

স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান উপাদান দুটি হল –

  • নিউরোন বা স্নায়ুকোশ।
  • নিউরোগ্লিয়া বা ধারক কোশ।

নিউরোন –

স্নায়ুতন্ত্রের গঠনগত এবং কার্যগত একক হল নিউরোন। প্রতিটি নিউরোনে একটি কোশদেহ এবং কতকগুলি প্রবর্ধক থাকে। কোশদেহের কেন্দ্রে একটি আদর্শ নিউক্লিয়াস থাকে। এ ছাড়া কোশদেহে নিসল দানা ও নিউরোফাইব্রিল বর্তমান। অন্যান্য কোশীয় অঙ্গাণু, যেমন – মাইটোকনড্রিয়া, গলগি বডি প্রভৃতিও উপস্থিত থাকে, তবে সেন্ট্রোজোম নিষ্ক্রিয় প্রকৃতির। স্নায়ুকোশের প্রবর্ধক দু-প্রকারের হয়। দীর্ঘ, অশাখ প্রবর্ধক বা অ্যাক্সন এবং ক্ষুদ্র প্রবর্ধক বা ডেনড্রন। ডেনড্রন সাধারণত শাখাপ্রশাখাযুক্ত হয়। অশাখ অ্যাক্সন মায়েলিন আবরণযুক্ত বা নগ্ন হতে পারে। অনেকগুলি অ্যাক্সনের বান্ডিলকেই স্নায়ু বলে। এগুলির মধ্যে দিয়েই স্নায়ুসংবেদ পরিবাহিত হয়।

কাজ – নিউরোনের প্রধান কাজ হল স্নায়ুস্পন্দন পরিবহণ করা।

নিউরোগ্লিয়া –

নিউরোগ্লিয়া ধারক কোশ হিসেবে স্নায়ুতন্ত্রে উপস্থিত থাকে। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে স্নায়ুকোশের তুলনায় অধিক সংখ্যক নিউরোগ্লিয়া থাকে এবং প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রেও নিউরোগ্লিয়া বা গ্লিয়াল কোশ বর্তমান। নিউরোগ্লিয়া বিভিন্ন প্রকারের হয়। যথা – মাইক্রোগ্লিয়া, অলিগোডেনড্রোগ্লিয়া, অ্যাস্ট্রোসাইট। নিউরোগ্লিয়া উদ্দীপনা বা স্নায়ুস্পন্দন পরিবহণে অক্ষম।

কাজ – এরা প্রধানত ধারক কোশ হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া এরা আগ্রাসী কোশ হিসেবে স্নায়ুকে রক্ষা করে ও মায়েলিন আবরণী তৈরিতে সাহায্য করে।

নিউরোগ্লিয়া ও নিউরোন
নিউরোগ্লিয়া ও নিউরোন .

একটি আদর্শ নিউরোনের গঠন চিত্রসহ বর্ণনা করো।

আদর্শ নিউরোনের গঠন –

একটি আদর্শ নিউরোনের প্রধানত তিনটি গঠনগত অংশ –

  1. সেল বডি বা কোশদেহ।
  2. অ্যাক্সন।
  3. ডেনড্রন।
একটি আদর্শ নিউরোন
একটি আদর্শ নিউরোন

কোশদেহ বা সেলবডি বা সোমা –

  • নিউরোনের প্রোটোপ্লাজম সমন্বিত সর্বাপেক্ষা স্ফীত গোলাকার বা ডিম্বাকার বা তারকাকার অংশটিকে কোশদেহ বলে।
  • কোশদেহের কেন্দ্রে সুগঠিত আদর্শ নিউক্লিয়াস থাকে।
  • কোশদেহের সাইটোপ্লাজমকে নিউরোপ্লাজম বলা হয়।
  • নিউরোপ্লাজমে অবস্থিত নিউক্লিওপ্রোটিন নির্মিত দানাগুলিকে নিসল দানা বলে। এগুলি মূলত অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা (RER) যা প্রোটিন উৎপাদন করে।
  • কোশদেহের মধ্যে সূক্ষ্ম তন্তুর মতো নিউরোফাইব্রিল বা নিউরোফিলামেন্ট উপস্থিত।
  • অন্যান্য কোশ-অঙ্গাণুর মধ্যে মাইটোকনড্রিয়া ও গলগি বডির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। তবে সেন্ট্রোজোম উপস্থিত থাকলেও তা নিষ্ক্রিয় হয়। তাই নিউরোন বিভাজিত হতে পারে না।

ডেনড্রন –

  • যে ক্ষুদ্র প্রোটোপ্লাজমীয় শাখান্বিত সূত্র নিউরোনের কোশদেহ থেকে নির্গত হয় তাকে ডেনড্রন বলে। ডেনড্রন সাধারণত গোড়ার দিকে চওড়া হয় এবং ক্রমশ সরু হয়ে শাখান্বিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
  • ডেনড্রনে মায়েলিন সিদ্‌ এবং সোয়ান কোশ থাকে না।
  • এতে নিউরোপ্লাজম, নিউরোফাইব্রিল এবং নিসল দানা থাকে।

অ্যাক্সন –

  • নিউরোনের যে দীর্ঘ ও সাধারণত শাখাহীন অংশ কোশদেহ থেকে নির্গত হয় তাকে, অ্যাক্সন বলে।
  • অ্যাক্সনের অভ্যন্তরে যে অর্ধতরল সাইটোপ্লাজম থাকে তাকে অ্যাক্সোপ্লাজম বলে।
  • কোশদেহের যে শাঙ্কব অংশ থেকে অ্যাক্সন উৎপন্ন হয় তাকে অ্যাক্সন হিলক বলে।
  • অ্যাক্সোপ্লাজম যে পাতলা পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে তাকে অ্যাক্সোলেমা বলে।
  • অ্যাক্সোলেমার বাইরে স্নেহজাতীয় পদার্থ সঞ্চিত হয়ে একটি বিশেষ ধরনের আবরণ তৈরি করে, একে মায়েলিন সিদ্‌ বলা হয়।
  • মায়েলিন সিদ্‌ স্থানে স্থানে বিচ্ছিন্ন হয়ে যে ছোটো ছোটো পর্বের সৃষ্টি করে তাদের র‍্যানভিয়ারের পর্ব বলে।
  • মায়েলিন সিদযুক্ত স্নায়ুতন্তুকে মায়েলিনেটেড স্নায়ু বা মেডুলেটেড স্নায়ু বলে। যেসব স্নায়ুতন্তুর মায়েলিন সিদ্‌ থাকে না সেগুলিকে নন্-মায়েলিনেটেড স্নায়ু বা নন্-মেডুলেটেড স্নায়ু বলে।
  • অ্যাক্সনের শেষ প্রান্ত সূক্ষ্ম শাখান্বিত হয়ে এন্ডব্রাশ বা প্রান্তবুরুশ গঠন করে।
  • প্রান্তবুরুশের প্রতিটি শাখাপ্রান্ত স্ফীত হয়ে প্রান্তীয় নব বা প্রান্তস্ফীতি গঠন করে।

নিউরোনের কার্যগত শ্রেণিবিন্যাস বর্ণনা করো। অ্যাক্সন ও ডেনড্রন -এর প্রধান কাজ লেখো।

নিউরোনের কার্যগত প্রকারভেদ –

কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী নিউরোন তিন ধরনের। যথা –

  • সংজ্ঞাবহ নিউরোন।
  • আজ্ঞাবহ নিওরোন।
  • সহযোগী নিউরোন।

সংজ্ঞাবহ নিউরোন –

যে নিউরোন গ্রাহক থেকে স্নায়ুস্পন্দনকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে পরিবহণ করে তাকে সংজ্ঞাবহ নিউরোন বলে। এই ধরনের নিউরোন বাইরে থেকে ভিতরে উদ্দীপনা বহন করে বলে এদের অন্তর্বাহী বা অ্যাফারেন্ট নিউরোনও বলা হয়।

আজ্ঞাবহ নিউরোন –

যে নিউরোন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে উদ্দীপনা কারকে (ইফেকটর -এ) বহন করে তাকে আজ্ঞাবহ নিউরোন বলে। এই প্রকার নিউরোন দেহের অভ্যন্তর থেকে বাইরের দিকে স্নায়ুস্পন্দন বহন করে বলে এদের বহির্বাহী বা ইফারেন্ট নিউরোনও বলা হয়ে থাকে।

সহযোগী নিউরোন –

যে নিউরোন সংজ্ঞাবহ ও আজ্ঞাবহ নিউরোনের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে তাকে সহযোগী নিউরোন বলে। এই নিউরোনগুলির অপর নাম রিলে নিউরোন।

ডেনড্রন ও অ্যাক্সন -এর কাজ –

ডেনড্রন –

ডেনড্রন কোনো পেশি, গ্রাহক অঙ্গ বা অন্য কোনো নিউরোন থেকে স্নায়ুস্পন্দন গ্রহণ করে তা কোশদেহে প্রেরণ করে।

অ্যাক্সন –

অ্যাক্সন একটি নিউরোনের কোশদেহ থেকে স্নায়ুস্পন্দন গ্রহণ করে তা পরবর্তী নিউরোন বা কারক অঙ্গে প্রেরণ করে।

নিউরোন ও স্নায়ুর মধ্যে সম্পর্ক ছবি এঁকে বুঝিয়ে দাও।

নিউরোন ও স্নায়ুর মধ্যে সম্পর্ক –

নিউরোন ও স্নায়ুর মধ্যে সম্পর্কগুলি হল –

  • স্নায়ুতন্ত্রের গঠনগত ও কার্যগত একক হল নিউরোন। একটি আদর্শ নিউরোন অ্যাক্সন, ডেনড্রন ও কোশদেহ দ্বারা গঠিত। ডেনড্রন -এর সাহায্যে নিউরোন উদ্দীপনা গ্রহণ করে এবং অ্যাক্সন -এর সাহায্যে তাকে পরবর্তী নিউরোন বা পেশিতে প্রেরণ করে। অন্যদিকে, আবরণীযুক্ত অ্যাক্সনকে স্নায়ুতন্তু বলে। যে তন্তুময় পর্দা দ্বারা অ্যাক্সন আবৃত থাকে, তাকে এন্ডোনিউরিয়াম বলে। কিছু সংখ্যক স্নায়ুতন্তু একত্রিত হয়ে বান্ডিল গঠন করে। এই বান্ডিলগুলি যে পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে তাকে পেরিনিউরিয়াম বলে। এইজাতীয় ছোটো ছোটো কতকগুলি বান্ডিল আবার এপিনিউরিয়াম দ্বারা আবৃত হয়ে স্নায়ু গঠন করে।
  • অন্তর্বাহী স্নায়ু গ্রাহক থেকে উদ্দীপনা বহন করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে নিয়ে যায় এবং বহির্বাহী স্নায়ু কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে ইফেকটরে উদ্দীপনা বহন করে আনে। এরা যথাক্রমে সেনসরি বা সংজ্ঞাবহ নিউরোন ও মোটর বা আজ্ঞাবহ নিউরোনের সমন্বয়ে গঠিত হয়। অর্থাৎ, নিউরোন ও স্নায়ু উভয়ই স্নায়ুস্পন্দন পরিবহণ করে। প্রকৃতপক্ষে স্নায়ুর গঠনগত উপাদান নিউরোনই স্নায়ুর মধ্যে উপস্থিত থেকে স্নায়ুস্পন্দন পরিবহণ করে। সুতরাং বলা যায়, নিউরোন ও স্নায়ু পরস্পর ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত।
নিউরোন ও স্নায়ুর সম্পর্ক
নিউরোন ও স্নায়ুর সম্পর্ক ..

স্নায়ুকোশের চিহ্নিত চিত্র অঙ্কন করো।

অথবা, একটি আদর্শ নিউরোনের পরিষ্কার চিত্র অঙ্কন করে নিম্নলিখিত অংশগুলি চিহ্নিত করো। (1) অ্যাক্সন, (2) ডেনড্রন, (3) মায়েলিন আবরণী, (4) সোয়ান কোশ

অথবা, একটি আদর্শ নিউরোনের পরিচ্ছন্ন চিত্র অঙ্কন করো এবং নিম্নলিখিত অংশগুলি চিহ্নিত করো। (1) ডেনড্রন, (2) র‍্যানভিয়ারের পর্ব, (3) মায়েলিন সিদ্, ④ সোয়ান কোশ

নিউরোন বা স্নায়ুকোশের চিহ্নিত চিত্র –

একটি আদর্শ নিউরোন
একটি আদর্শ নিউরোন

অ্যাক্সন ও ডেনড্রন -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।

অ্যাক্সন ও ডেনড্রন -এর পার্থক্য –

বিষয়অ্যাক্সনডেনড্রন
কার্যগত প্রকৃতিচেষ্টীয় অংশ (প্রেরক)।সংজ্ঞাবহ অংশ (গ্রাহক)।
শাখাপ্রশাখার উপস্থিতিএটি সাধারণত শাখাহীন।এটি শাখাপ্রশাখাযুক্ত।
মায়েলিন আবরণীর উপস্থিতিউপস্থিত।অনুপস্থিত।
সোয়ান কোশের উপস্থিতিউপস্থিত।অনুপস্থিত।
নিসল দানার উপস্থিতিঅনুপস্থিত।উপস্থিত।
র‍্যানভিয়ারের পর্বের উপস্থিতিউপস্থিত।অনুপস্থিত।
কাজস্নায়ুস্পন্দন প্রেরণ করা।স্নায়ুস্পন্দন গ্রহণ করা।

স্নায়ুতন্ত্রের প্রকারভেদ; মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকাণ্ড; প্রতিবর্ত ক্রিয়া ও প্রতিবর্ত পথ

স্নায়ুতন্ত্রের শ্রেণিবিভাগ করো ও বিভাগগুলির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

স্নায়ুতন্ত্রের শ্রেণিবিভাগ –

মানুষ ও অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্রকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা –

  • কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র।
  • প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র।
  • স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র।

এখানে স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অংশগুলি রেখচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হল।

স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অংশগুলি রেখচিত্র
স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অংশগুলি রেখচিত্র-

স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অংশের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা –

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম (CNS) –

মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ড নিয়ে গঠিত দেহের কেন্দ্রীয় অক্ষ বরাবর বিন্যস্ত স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী অংশ হল কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র। দেহের সঙ্গে বাহ্যিক পরিবেশের সমন্বয় ও বুদ্ধি-আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা এর প্রধান কাজ। 

প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র বা পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেম (PNS) –

যে তন্ত্র কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে সংজ্ঞাবহ ও আজ্ঞাবহ স্নায়ু দ্বারা যথাক্রমে গ্রাহক ও কারক অঙ্গের সমন্বয়সাধন করে তাকে প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র বলে। মানুষের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক নির্গত 12 জোড়া করোটি স্নায়ু ও 31 জোড়া সুষুম্না স্নায়ু নিয়ে প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র গঠিত। এই তন্ত্র বাহ্যিক উদ্দীপনায় সাড়াপ্রদানে সহায়তা করে।

স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র বা অটোনোমিক নার্ভাস সিস্টেম (ANS) –

স্নায়ুতন্ত্রের যে অংশ দেহের আন্তরযন্ত্র, গ্রন্থি, অনৈচ্ছিক পেশিতে বিন্যস্ত হয়ে তাদের কার্যকারিতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করে তাকে স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র বলে। স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র দুইপ্রকার – সমবেদী বা সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র এবং পরাসমবেদী বা প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র। দেহের বিভিন্ন আন্তরযন্ত্র, যেমন – বিভিন্ন গ্রন্থি, অনৈচ্ছিক পেশি প্রভৃতির কাজ নিয়ন্ত্রণ করে স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র।

মানব কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অংশের বিবরণ দাও।

মানব কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ –

মেরুদণ্ডী প্রাণীর কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ড নিয়ে গঠিত।

মস্তিষ্ক –

মানুষের মস্তিষ্কের তিনটি প্রধান অংশ –

  • অগ্রমস্তিষ্ক।
  • মধ্যমস্তিষ্ক।
  • পশ্চাদমস্তিষ্ক।
মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ
মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ
অগ্রমস্তিষ্ক –
  • গুরুমস্তিষ্ক বা সেরিব্রাম, থ্যালামাস ও হাইপোথ্যালামাস নিয়ে অগ্রমস্তিষ্ক গঠিত।
  • গুরুমস্তিষ্ক মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড়ো অংশ। একটি গভীর স্নায়ুখাঁজ গুরুমস্তিষ্ককে মাঝ-বরাবর বাম ও ডান গোলার্ধে ভাগ করেছে। এদের প্রতিটিকে বলে সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার। দুটি গোলার্ধের মধ্যে সংযোগস্থাপন করে একটি অনুপ্রস্থ স্নায়ুতন্তুগুচ্ছ। একে করপাস ক্যালোসাম বলে।
  • গুরুমস্তিষ্কের বাইরের দিকে থাকে ধূসর বস্তু এবং ভিতরের দিকে থাকে শ্বেত বস্তু। সেরিব্রামের ধূসর অংশকে বলে সেরিব্রাল, কর্টেক্স।
  • থ্যালামাস গুরুমস্তিষ্কের নীচে অবস্থিত এবং ধূসর বস্তু দিয়ে গঠিত। 
  • হাইপোথ্যালামাস থ্যালামাসের নীচে অবস্থিত এবং শ্বেত ও ধূসর বস্তু দিয়ে গঠিত।

মধ্যমস্তিষ্ক –

মস্তিষ্কের এই অংশটি অগ্র ও পশ্চাদমস্তিষ্কের মাঝখানে অবস্থান করে। এই অংশটি টেকটাম ও সেরিব্রাল পেডাংকল নিয়ে গঠিত।

পশ্চাদমস্তিষ্ক –

এটি মস্তিষ্কের সব থেকে পিছনের অংশ। লঘুমস্তিষ্ক, পনস্ এবং সুষুম্নাশীর্ষক নিয়ে পশ্চাদমস্তিষ্ক গঠিত। এর মধ্যে লঘু মস্তিষ্ক পশ্চাদমস্তিষ্কের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

সুষুম্নাকাণ্ড –

  • এটি মস্তিষ্কের সুষুম্নাশীর্ষকের শেষভাগ থেকে শুরু হয়ে সাধারণত প্রথম লাম্বার কশেরুকা পর্যন্ত বিস্তৃত।
  • সুষুম্নাকাণ্ড 31টি খণ্ডক নিয়ে গঠিত। প্রতিটি খণ্ডক থেকে এক জোড়া করে মোট 31 জোড়া সুষুম্না স্নায়ু উৎপন্ন হয়েছে। এই খণ্ডকগুলি পাঁচটি অংশের অন্তর্গত –
    • সারভাইক্যাল (খণ্ডক সংখ্যা 8)।
    • থোরাসিক (খণ্ডক সংখ্যা 12)।
    • লাম্বার (খণ্ডক সংখ্যা 5)।
    • স্যাক্রাল (খণ্ডক সংখ্যা 5)।
    • কক্সিজিয়াল (খণ্ডক সংখ্যা 1)।
  • সুষুম্নাকাণ্ডের বাইরের দিকে থাকে শ্বেত বস্তু এবং ভিতরের দিকে থাকে ধূসর বস্তু। কেন্দ্রে থাকে কেন্দ্রীয় নালী বা নিউরোসিল, যা মস্তিষ্ক-সুষুম্না রস বা সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (CSF) দ্বারা পূর্ণ।
  • মানুষের সুষুম্নাকাণ্ড দৈর্ঘ্যে প্রায় 18 inch (45 cm)।
  • সুষুম্নাকাণ্ডের শেষপ্রান্তটি ছুঁচালো।

মানব মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ ছকের সাহায্যে দেখাও।

মানব মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ –

মানব মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ নীচে ছকের সাহায্যে উল্লেখ করা হল।

মানব মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ
মানব মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ

মানব মস্তিষ্কের যে-কোনো পাঁচটি অংশের নাম, অবস্থান ও মানবদেহে এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলি লেখো।

মানব মস্তিষ্কের পাঁচটি অংশের নাম, অবস্থান ও মানবদেহে ভূমিকা –

নামঅবস্থানভূমিকা
সেরিব্রাল কর্টেক্সসেরিব্রাম বা গুরুমস্তিষ্কের অন্তর্গত দুটি সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ারের মেনিনজেস-এর নীচে অবস্থিত।1. বুদ্ধি, স্মৃতি, বিচার, পরিকল্পনা ইত্যাদি উচ্চ মানসিক গুণাবলীর নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।

2. দর্শন, স্বাদ, ঘ্রাণ, গরম, ঠান্ডা প্রভৃতির নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে।
থ্যালামাসমস্তিষ্কের তৃতীয় নিলয়ের উভয় পাশে অবস্থিত।1. চাপ, তাপ, দর্শন, বেদনা প্রভৃতি সংজ্ঞাবহ উদ্দীপনা বিশ্লেষিত করে গুরুমস্তিষ্কে প্রেরণ করে অর্থাৎ রিলে কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।

2. নিদ্রা ও জাগরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
হাইপোথ্যালামাসথ্যালামাসের নীচে তৃতীয় ভেন্ট্রিকলের অঙ্কদেশে অবস্থিত।1. ক্ষুধা, তৃষ্ণা, নিদ্রা, দৈহিক উষ্ণতা, মানসিক উত্তেজনা প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে।

2. অগ্র পিটুইটারির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে ও পশ্চাৎ পিটুইটারি নিঃসৃত হরমোন সংশ্লেষ করে।
মধ্যমস্তিষ্কঅগ্র ও পশ্চাদমস্তিষ্কের মাঝামাঝি অংশে অবস্থিত।1. অগ্র ও পশ্চাদমস্তিষ্কের কাজের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে।

2. মধ্যমস্তিষ্কের টেকটাম দর্শন ও শ্রবণ প্রতিবর্তের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
লঘুমস্তিষ্কমস্তিষ্কের চতুর্থ নিলয়ের পৃষ্ঠদেশে, গুরুমস্তিষ্কের নীচে অবস্থিত।1. প্রধান কাজ হল দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে।

2. পেশির টান ও হাত-পায়ের ঐচ্ছিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে।

মধ্যমস্তিষ্ক এবং মেডালা অবলংগাটা-র অবস্থান ও কাজ সংক্ষেপে আলোচনা করো।

মধ্যমস্তিষ্ক বা মেসেনসেফালন –

মধ্যমস্তিষ্ক বা মেসেনসেফালনের অবস্থান –

অগ্র ও পশ্চামস্তিষ্কের সংযোগকারী অংশরূপে মধ্যমস্তিষ্ক অবস্থিত। এটি টেকটাম ও সেরিব্রাল পেডাংকল নিয়ে গঠিত একটি ক্ষুদ্র অংশ।

মধ্যমস্তিষ্ক বা মেসেনসেফালনের কাজ –

  • অগ্র ও পশ্চাদমস্তিষ্কের মধ্যে সমন্বয়ের কাজ করে।
  • মধ্য-মস্তিষ্কের টেকটাম অংশ দর্শন ও শ্রবণ প্রতিবর্ত নিয়ন্ত্রণ করে।
  • দৈহিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে মধ্যমস্তিষ্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেশির টান এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
  • এ ছাড়া ঐচ্ছিক পেশির কার্যকারিতায় সমন্বয়সাধন করে।

মেডালা অবলংগাটা বা সুষুম্নাশীর্ষক –

মেডালা অবলংগাটা বা সুষুম্নাশীর্ষকের অবস্থান –

পশ্চাদমস্তিষ্কের পনস অংশটির নীচে এবং সুষুম্নাকান্ডের ঠিক ওপরে এর অবস্থান।

মেডালা অবলংগাটা বা সুষুম্নাশীর্ষকের কাজ –

  • শ্বাসক্রিয়া, হৃৎপিণ্ডের সংকোচন প্রসারণ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • লালাক্ষরণ ও বমি নিয়ন্ত্রণ করে।
  • মেডালা অবলংগাটা শ্বাসকার্য নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • এ ছাড়া এই স্থান থেকে নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ করোটি স্নায়ুজোড়া উৎপন্ন হয়।

সুষুম্নাকাণ্ডের গঠন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো। সুষুম্নাকাণ্ডের অবস্থান ও কাজ লেখো।

সুষুম্নাকাণ্ডের গঠন –

সুষুম্নাশীর্ষকের পশ্চাদভাগ থেকে শুরু করে প্রথম বা দ্বিতীয় লাম্বার কশেরুকা পর্যন্ত বিস্তৃত ও সেরিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইড বা CSF পূর্ণ যে ফাঁপা স্নায়ুরজ্জু মেরুদণ্ডের দৈর্ঘ্য বরাবর অবস্থান করে, তাকে সুষুম্নাকাণ্ড বলে। মেরুদণ্ডকে অবস্থান অনুসারে মোট পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা – সারভাইক্যাল, থোরাসিক, লাম্বার, স্যাক্রাল এবং কক্সিজিয়াল অংশ। মেরুদণ্ডের মধ্যস্থ নিউরাল ক্যানেল দিয়ে সুষুম্নাকাণ্ড বিন্যস্ত হওয়ায় সুষুম্নাকাণ্ডকেও এই পাঁচটি অংশে ভাগ করা যায়। এর সারভাইক্যাল, থোরাসিক, লাম্বার, স্যাক্রাল ও কক্সিজিয়াল অংশ থেকে সর্বমোট 31 জোড়া স্নায়ু বেরিয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি প্রায় 45 cm লম্বা ও প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি প্রায় 42 cm লম্বা হয়। এটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের অংশ।

সুষুম্নাকাণ্ডের গঠন
সুষুম্নাকাণ্ডের গঠন

সুষুম্নাকাণ্ডের প্রস্থচ্ছেদে তার কেন্দ্রে ধূসর বস্তু ও পরিধিতে শ্বেত বস্তু বিন্যস্ত থাকে। ধূসর বস্তু ‘H’ অক্ষরের আকারে গঠিত হয়। এর কেন্দ্রে নিউরোসিল বর্তমান।

সুষুম্নাকান্ডের প্রস্থচ্ছেদ
সুষুম্নাকান্ডের প্রস্থচ্ছেদ

সুষুম্নাকাণ্ডের অবস্থান ও কাজ –

নীচে সুষুম্নাকাণ্ডের অবস্থান ও কাজ সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।

সুষুম্নাকাণ্ডের অবস্থান –

মানবমস্তিষ্কের সুষুম্নাশীর্ষকের নীচে এর উৎপত্তি, এটি ফোরামেন ম্যাগনাম ছিদ্র পথ দিয়ে তা মেরুদণ্ডের নিউরাল ক্যানেল বরাবর সাধারণত প্রথম লাম্বার কশেরুকা পর্যন্ত বিন্যস্ত থাকে।

সুষুম্নাকাণ্ডের কাজ –

  • সুষুম্নাকাণ্ড দেহের সংজ্ঞাবহ উদ্দীপনা মস্তিষ্কে প্রেরণ করে এবং মস্তিষ্ক থেকে স্নায়ু-উদ্দীপনা গ্রহণ করে পেশি ও আন্তরযন্ত্রীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাজের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে।
  • সুষুম্নাকাণ্ড বিভিন্ন ধরনের প্রতিবর্ত ক্রিয়াগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
  • পেশিটান নিয়ন্ত্রণ করে।
  • রক্তনালীর ব্যাসের হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে ও তার মাধ্যমে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণ করে।

নীচের ঘটনাগুলি ঘটলে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিবর্ত ক্রিয়া ঘটে। এই প্রতিবর্ত ক্রিয়া দুটির গুরুত্ব লেখো। (1) যখন শ্বাসনালীতে খাদ্যকণা ঢুকে পড়ে, (2) যখন নাকের মধ্যে কোনো বিজাতীয় বস্তু ঢুকে পড়ে।

অথবা, প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিবর্ত ক্রিয়ার গুরুত্ব কী? উদাহরণের সাহায্যে বোঝাও।

অথবা, উদাহরণসহ একটি সরল প্রতিবর্ত পথের কার্যপ্রণালী সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিবর্ত ক্রিয়ার গুরুত্ব –

আমাদের দেহের অধিকাংশ ক্রিয়াই মস্তিষ্কের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু বহুক্ষেত্রে দ্রুত ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন হয়। এই সকল ক্ষেত্রে প্রতিবর্ত ক্রিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। মস্তিষ্কের সাহায্য ছাড়াই দ্রুত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় প্রতিবর্তের মাধ্যমে। একটি উদাহরণের সাহায্যে ঘটনাটি বোঝা যায়। শ্বাসনালীতে কোনো অবাঞ্ছিত বস্তু, যেমন – বিষাক্ত গ্যাস, জল, খাদ্যের কণা প্রভৃতি প্রবেশ করলে তৎক্ষণাৎ কাশির উদ্রেক হয়। এই কাশির ফলে ফুসফুসীয় বায়ুর মাধ্যমে ওই বস্তুর নির্গমন ঘটে। এটি একপ্রকার প্রতিবর্ত ক্রিয়া। এক্ষেত্রে কোনোরূপ চিন্তাভাবনা ছাড়াই কাশির উদ্রেক হয়, অর্থাৎ এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কোনো ভূমিকা থাকে না। এইভাবে প্রতিবর্ত ক্রিয়ার মাধ্যমে শ্বাসনালী থেকে অবাঞ্ছিত বস্তু নির্গমন হয় ও দেহের স্বাভাবিক ক্রিয়া চলতে থাকে। এ ছাড়াও চোখে হঠাৎ আলো বা ধূলো পরলে দ্রুত আমাদের চোখের পলক পড়ে। ধূলিকণার সংস্পর্শে আমরা হাঁচি। এগুলিও আমাদের দৈহিক প্রতিরক্ষায় সাহায্য করে।

উদহারণসহ একটি সরল প্রতিবর্ত পথের কার্যপ্রণালী –

রাস্তায় হাঁটার সময়ে কাঁটা বিঁধলে পা তৎক্ষণাৎ রাস্তা থেকে সরে যায়। এটি একটি প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উদাহরণ। নীচে এই প্রতিবর্ত ক্রিয়ার প্রণালীটি আলোচিত হল –

  • পায়ের নীচের চামড়ায় অবস্থিত গ্রাহক বা রিসেপটর কাঁটা বেঁধার অনুভূতি গ্রহণ করে।
  • এই অনুভূতি গ্রাহক থেকে অন্তর্বাহী নিউরোন মাধ্যমে বাহিত হয়ে সুষুম্নাকাণ্ডে পৌঁছোয়।
  • প্রতিবর্ত ক্রিয়ার ফলে সংজ্ঞাবহ সংবেদ সুষুম্নাকাণ্ডেই আজ্ঞাবহ সংবেদে রূপান্তরিত হয়।
  • সুষুম্নাকাণ্ড থেকে বহির্বাহী নিউরোনের মাধ্যমে কারক বা ইফেকটরে, অর্থাৎ পায়ের পেশিতে বার্তা পৌঁছোয়।
  • এর ফলে পায়ের পেশি সংকুচিত হয় এবং পা তৎক্ষণাৎ মাটি থেকে উঠে আসে।

প্রতিবর্ত পথ বা প্রতিবর্ত চাপ কাকে বলে? একটি সরল প্রতিবর্ত পথের চিহ্নিত চিত্র এঁকে ব্যাখ্যা করো।

অথবা, একটি প্রতিবর্ত চাপের চিত্র এঁকে নিম্নলিখিত অংশগুলি চিহ্নিত করো। (1) গ্রাহক, (2) সংজ্ঞাবহ স্নায়ু, (3) স্নায়ুকেন্দ্র, (4) চেষ্টীয় স্নায়ী।

প্রতিবর্ত পথ বা প্রতিবর্ত চাপ –

যে নির্দিষ্ট স্নায়ুপথে স্নায়ুস্পন্দন আবর্তনের দ্বারা প্রতিবর্ত ক্রিয়া সংঘটিত হয়, সেই স্নায়ুপথটিকে প্রতিবর্ত পথ বা প্রতিবর্ত চাপ বলে। প্রতিবর্ত পথটি একটি রেখাচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হল।

উদ্দীপক → গ্রাহক → স্নায়ুকেন্দ্র → কারক → সাড়াপ্রদান

প্রতিবর্ত পথের অংশ ও তার কাজ –

প্রতিবর্ত পথের পাঁচটি অংশ। নীচে এদের সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

  • গ্রাহক – এর মাধ্যমে পরিবেশ থেকে আগত উদ্দীপনা গৃহীত হয় এবং স্নায়বিক উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়।
  • অন্তর্বাহী নিউরোন – এর মাধ্যমে উদ্দীপনা গ্রাহক থেকে স্নায়ুকেন্দ্রে পৌঁছোয়।
  • স্নায়ুকেন্দ্র – এটি সুষুম্নাকাণ্ডের ধূসর বস্তুতে অবস্থিত। এখানে সংজ্ঞাবহ উদ্দীপনা চেষ্টীয় উদ্দীপনায় রূপান্তরিত হয়।
  • বহির্বাহী নিউরোন – এটি মোটর নিউরোন দিয়ে গঠিত। এর মাধ্যমে চেষ্টীয় উদ্দীপনা কারকে বাহিত হয়।
  • কারক – পেশি, গ্রন্থি ইত্যাদি হল কারক। এরা উদ্দীপনার প্রভাবে উদ্দীপিত হলে সাড়া দেয়।
প্রতিবর্ত পথ
প্রতিবর্ত পথ

নানাপ্রকার প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উদাহরণ ও প্রকৃতি লেখো।

প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উদাহরণ ও প্রকৃতি –

নানাপ্রকার প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উদাহরণ ও তাদের প্রকৃতি নীচে সারণির সাহায্যে উল্লেখ করা হল।

প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উদাহরণপ্রকৃতি 
উজ্জ্বল আলোতে চোখ বুজে ফেলা, জন্মের পরে শিশুর স্তন্যপানের ইচ্ছা, খাদ্যগ্রহণে লালা ক্ষরণ, হাঁটুতে আঘাত করলে হাঁটুর ঝাঁকুনি দিয়ে সামনে সরে যাওয়া, মল-মূত্রের বেগ অনুভব, হাঁচি, বমি, কাশি, পায়ে পিন বিঁধলে তৎক্ষণাৎ পা সরানো, আগুনে ছ্যাঁকা লাগলে তৎক্ষণাৎ হাত বা দেহাংশ সরিয়ে নেওয়া।সহজাত বা শর্ত নিরপেক্ষ প্রতিবর্ত ক্রিয়া।
সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, খাদ্যের দর্শনে, সুগন্ধে বা নাম শুনলে লালা ক্ষরণ, শিশুদের হাঁটতে ও কথা বলতে শেখা, কুকুরের খাদ্যদানের অভ্যাসগত সময়ে ঘণ্টা বাজানোয় লালা ক্ষরণ, স্নানের পর খিদে পাওয়া।অর্জিত বা আহৃত বা শর্তাধীন প্রতিবর্ত ক্রিয়া।

চোখ-মানুষের জ্ঞানেন্দ্রিয়; উপযোজন; দৃষ্টির ত্রুটি এবং সংশোধন পদ্ধতি

অক্ষিগোলকের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ও কাজ লেখো।

অথবা, মানব চোখের গঠন ও কাজ সংক্ষেপে আলোচনা করো।

অক্ষিগোলক –

এটি চোখের গোলাকার অংশবিশেষ যা স্বচ্ছ তরল দ্বারা পূর্ণ থাকে। অক্ষিগোলকের দুটি অংশ –

  1. আবরক।
  2. প্রতিসারক মাধ্যম।

আবরক –

  • আবরক তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত-তন্তুময় বহিস্তর, রক্তজালকসমৃদ্ধ মধ্যস্তর ও স্নায়বিক অন্তঃস্তর।
  • তন্তুময় বহিরাবরকের দুটি অংশ – পিছন দিকের \(\frac56\) অংশকে স্ক্লেরা বলে এবং সামনের দিকের \(\frac16\) অংশকে অচ্ছোদপটল বা কর্নিয়া বলে। স্ক্লেরা অংশটি চোখের আকৃতি বজায় রাখে, অন্যদিকে কর্নিয়া আলোকরশ্মিকে প্রতিসৃত করতে সাহায্য করে।
  • রক্তজালকসমৃদ্ধ মধ্যস্তরের তিনটি অংশ – অক্ষিগোলকের পশ্চাদভাগে অবস্থিত কোরয়েড বা কৃষ্ণমণ্ডল, যা মেলানিন নামক রঙ্গক পদার্থে পূর্ণ থাকে। এই অংশটি অক্ষিগোলকে প্রবিষ্ট অতিরিক্ত আলো শোষণ করে।
  • এ ছাড়া, বাকি দুটি অংশ হল সিলিয়ারি বডি এবং আইরিস। অক্ষিগোলকের মধ্যস্তরের যে স্থূল পেশিময় অংশ লেন্সকে নিজের স্থানে ধরে রাখে তাকে সিলিয়ারি বডি বলে। এর সাথে তন্তুময় সাসপেনসরি লিগামেন্ট যুক্ত থাকে। মানব চোখের লেন্সটি বৃত্তাকার, দ্বি-উত্তল ও স্থিতিস্থাপক হয়। আর কর্নিয়ার পিছনে যে বৃত্তাকার কালো পেশিময় রঙ্গকযুক্ত পর্দা থাকে, তাকে আইরিস বলে। আইরিস -এর কেন্দ্রে অবস্থিত গোলাকার ছিদ্রটিকে তারারন্ধ্র বা পিউপিল বলে। আইরিস তারারন্ধ্রের ব্যাস ছোটো-বড়ো করে চোখে প্রবিষ্ট আলোর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • স্নায়বিক অন্তঃস্তর স্নায়ুকোশ দ্বারা গঠিত। এই স্তরকে রেটিনা বলে। এটি আলোক গ্রাহক হিসেবে কাজ করে। রেটিনায় বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠিত হয়। এটি রড ও কোন নামক দু-প্রকার কোশ দ্বারা গঠিত। রড কোশগুলি মৃদু আলোকসুবেদী এবং কোন কোশগুলি উজ্জ্বল আলোকসুবেদী।
  • তারারন্ধ্রের বিপরীতে রেটিনার কেন্দ্রে যে ক্ষুদ্র ডিম্বাকার অংশ থাকে তাকে পীতবিন্দু বা ম্যাকুলা লুটিয়া বলে। এই অংশে শুধু কোন কোশ থাকে ও সৃষ্ট প্রতিবিম্ব সর্বাধিক স্পষ্ট হয়।
  • রেটিনার যে অংশ দিয়ে অপটিক নার্ভ চোখ থেকে বেরিয়ে যায় সেই অংশে রড ও কোন কোশ না থাকায় সেখানে প্রতিবিম্ব গঠিত হওয়া সত্ত্বেও কোনো দৃষ্টি-সংবেদ সৃষ্টি হয় না। এই অংশটিকে অন্ধবিন্দু বা ব্লাইন্ড স্পট বলে।

প্রতিসারক মাধ্যম –

  • চোখের প্রতিসারক মাধ্যমগুলি হল – কর্নিয়া, অ্যাকুয়াস হিউমর, লেন্স ও ভিট্রিয়াস হিউমর।
  • কর্নিয়া অক্ষিগোলকের সম্মুখভাগে অবস্থিত উত্তলাকার একটি স্বচ্ছ স্তর বিশেষ।
  • অক্ষিগোলকে আইরিসের ঠিক পিছনে স্বচ্ছ, স্থিতিস্থাপক উভোত্তল প্রায় বৃত্তাকার একটি, লেন্স অবস্থান করে। লেন্সটি সূত্রাকার সাসপেনসরি লিগামেন্ট ও সিলিয়ারি পেশির দ্বারা অক্ষিগোলকের সঙ্গে সংলগ্ন থাকে। লেন্সের প্রতিসরাঙ্ক খুব বেশি। আলোকরশ্মিকে প্রতিসৃত করে রেটিনাতে ফোকাস করে স্পষ্ট প্রতিবিম্ব তৈরি করা লেন্সের কাজ।
  • কর্নিয়ার ও আইরিসের মধ্যবর্তী ছোটো অগ্রপ্রকোষ্ঠটি এবং আইরিস ও লেন্সের মধ্যবর্তী পশ্চাদ প্রকোষ্ঠটি অ্যাকুয়াস হিউমর নামক তরল পদার্থে পূর্ণ থাকে।
  • লেন্স এবং রেটিনার মধ্যবর্তী বৃহৎ ভিট্রিয়াস প্রকোষ্ঠটি ভিট্রিয়াস হিউমর নামক স্বচ্ছ সান্দ্র তরলে পূর্ণ থাকে। এই দুই তরলের কাজগুলি হল – চোখের আকৃতি বজায় রাখা, পুষ্টিপ্রদান করা এবং আলোর প্রতিসরণে সাহায্য করা।
লম্বচ্ছেদে মানুষের চোখের বিভিন্ন অংশ-
লম্বচ্ছেদে মানুষের চোখের বিভিন্ন অংশ-

উপযোজনের সংজ্ঞা ও প্রাত্যহিক জীবনে এর গুরুত্ব উল্লেখ করো। কাছের ও দূরের বস্তু দেখার সময়ে চোখের উপযোজন কীভাবে হয়?

উপযোজন –

যে বিশেষ প্রক্রিয়ার দ্বারা স্থান পরিবর্তন না করে চক্ষু পেশির সাহায্যে লেন্সের বক্রতার পরিবর্তন করে বস্তুর সঠিক । দর্শন সম্ভব হয়, তাকে উপযোজন বলে।

প্রাত্যহিক জীবনে উপযোজনের গুরুত্ব –

রাস্তাঘাটে পথচারীকে বা গাড়িচালককে কাছের ও দূরের বস্তুকে দেখে দ্রুত সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। রাস্তার নানা বাধা, ট্রাফিক সিগন্যাল প্রভৃতি নজর করার সময় উপযোজনই আমাদের সাহায্য করে থাকে।

কাছের ও দূরের বস্তু দেখার ক্ষেত্রে উপযোজনের ভূমিকা –

কাছের ও দূরের বস্তু দেখার ক্ষেত্রে উপযোজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলি নীচে আলোচনা করা হল।

কাছের বস্তু দেখার ক্ষেত্রে – কোনো বস্তু চোখের থেকে 6m দূরত্ব পর্যন্ত অবস্থান করলে তাকে কাছের বস্তু হিসেবে গণ্য করা হয়। এক্ষেত্রে উপযোজন নিম্নলিখিতভাবে হয়।

সিলিয়ারি পেশির সংকোচন → লেন্সের বক্রতা বৃদ্ধি → লেন্সের পুরুত্ব বৃদ্ধি হয় → লেন্সের ফোকাস দৈর্ঘ্য হ্রাস → রেটিনায় বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠন।

দূরের বস্তু দেখার ক্ষেত্রে – কোনো বস্তুর দূরত্ব চোখের থেকে 6m -এর বেশি হলে, তাকে দূরের বস্তু হিসেবে গণ্য করা হয়। এক্ষেত্রে চোখের উপযোজন নিম্নলিখিতভাবে হয়।

সিলিয়ারি পেশির শ্লথন → লেন্সের বক্রতা হ্রাস → লেন্সের পুরুত্ব হ্রাস (চ্যাপটা হয়) → লেন্সের ফোকাস দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি → রেটিনায় বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠন।

চোখের উপযোজন-
চোখের উপযোজন-

মায়োপিয়া বা নিকটবদ্ধ দৃষ্টি সম্পর্কে চিত্রসহ ব্যাখ্যা দাও।প্রেসবায়োপিয়া সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।

মায়োপিয়া বা নিকটবদ্ধ দৃষ্টি –

চোখের যে ত্রুটিতে কাছের দৃষ্টি ঠিক থাকে অথচ দূরের দৃষ্টি ব্যাহত হয়, তাকে মায়োপিয়া বলে। এর বৈশিষ্ট্য ও প্রতিকার নীচে আলোচনা করা হল।

মায়োপিয়ার বৈশিষ্ট্য – এক্ষেত্রে অক্ষিগোলকের আকৃতি স্বাভাবিকের তুলনায় বড়ো হওয়ায় বস্তু থেকে আগত আলোকরশ্মি রেটিনার সামনে প্রতিবিম্ব গঠন করে। ফলে কাছের বস্তু স্পষ্ট, কিন্তু দূরের বস্তু অস্পষ্ট হয়ে যায়।

মায়োপিয়ার প্রতিকার – অবতল লেন্সের মাইনাস (-) পাওয়ারযুক্ত চশমার ব্যবহার প্রতিবিম্বকে রেটিনায় সঠিকভাবে ফোকাস করে এবং এই ত্রুটি দূর করতে সাহায্য করে।

মায়োপিয়া-ত্রুটি ও সংশোধন-
মায়োপিয়া-ত্রুটি ও সংশোধন

প্রেসবায়োপিয়া –

40 বছরের কাছাকাছি বয়সে পৌঁছোলে, বহু মানুষের চোখের লেন্সের সংকোচন-প্রসারণশীলতা কমে যায় এবং তার ফলে চোখের উপযোজন ক্ষমতা কমে যায়। এই ত্রুটিকে প্রেসবায়োপিয়া বলে। এই রোগে প্রতিবিম্ব রেটিনার পিছনে গঠিত হয়।

প্রেসবায়োপিয়ার বৈশিষ্ট্য – এইজাতীয় ত্রুটিতে কাছের বস্তুকে দেখতে বিশেষ করে বই পড়তে অসুবিধা হয়।

প্রেসবায়োপিয়ার প্রতিকার – উত্তল লেন্স যুক্ত (+4.0 ডায়োপ্টার অবধি) চশমা ব্যবহারের দ্বারা এই ত্রুটি দূর করা যায়।

প্রেসবায়োপিয়া-ত্রুটি ও সংশোধন-
প্রেসবায়োপিয়া-ত্রুটি ও সংশোধন

হাইপারমেট্রোপিয়া বা দূরবদ্ধ দৃষ্টি সম্পর্কে চিত্রসহ ধারণা দাও। ক্যাটার‍্যাক্ট সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।

হাইপারমেট্রোপিয়া –

চোখের যে ত্রুটিতে দূরের দৃষ্টি ঠিক থাকে অথচ কাছের দৃষ্টি ব্যাহত হয়, তাকে হাইপারমেট্রোপিয়া বা দূরবদ্ধ দৃষ্টি বলে।

হাইপারমেট্রোপিয়ার বৈশিষ্ট্য – এক্ষেত্রে, অক্ষিগোলকের আকার স্বাভাবিকের তুলনায় ছোটো হয়। এর ফলে বস্তু থেকে আগত আলোকরশ্মি রেটিনার পিছনে প্রতিবিম্ব গঠন করে। রেটিনার ওপরে ওই বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠিত হয় না। ফলে দূরের বস্তু স্পষ্ট দেখা গেলেও কাছের বস্তু অস্পষ্ট হয়ে যায়।

হাইপারমেট্রোপিয়া-ত্রুটি ও সংশোধন-
হাইপারমেট্রোপিয়া-ত্রুটি ও সংশোধন

হাইপারমেট্রোপিয়ার প্রতিকার – উত্তল কৃত্রিম লেন্সের প্লাস (+) পাওয়ারযুক্ত চশমার ব্যবহারের মাধ্যমে রেটিনার পিছনে গঠিত প্রতিবিম্বকে সঠিক অবস্থানে আনা যায় এবং এই ত্রুটি দূর করা যায়।

ক্যাটার‍্যাক্ট –

বয়সজনিত কারণে লেন্সের ওপর প্রোটিন জমা হয়ে দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে গেলে সেই অবস্থাকে ছানি বা ক্যাটারাক্ট বলা হয়। প্রধানত লেন্সের পুষ্টির অভাব হলে লেন্সের স্বচ্ছতা হ্রাস পায় ও লেন্স ঘোলাটে হয়ে যায়। শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে লেন্স প্রতিস্থাপন করলে সমস্যার সমাধান করা যায়। বর্তমানে ফেকোইমালসিফিকেশন পদ্ধতিতে লেন্স প্রতিস্থাপন করা হয়।

রড কোশ ও কোন কোশ – পার্থক্য লেখো।

রড কোশ ও কোন কোশের পার্থক্য –

বিষয়রড কোশকোন কোশ
গঠনচোখের রেটিনা স্তরে অবস্থিত দণ্ডাকৃতি আলোক সংবেদী কোশ।চোখের রেটিনা স্তরে বিন্যস্ত শঙ্কু আকৃতির আলোক সংবেদী কোশ।
রঙ্গকরড কোশে রোডপসিন নামক রঙ্গক থাকে।কোন কোশে আয়োডপসিন নামক রঙ্গক থাকে।
অবস্থানসাধারণত রেটিনার পরিধিতে অবস্থিত।সাধারণত রেটিনার কেন্দ্রের দিকে বিন্যস্ত থাকে।
সংখ্যারড কোশের সংখ্যা রেটিনাতে অনেক বেশি (12.5 কোটি)।কোন কোশের সংখ্যা রেটিনাতে অনেক কম (70 লক্ষ)।
কাজমৃদু আলোতে দেখতে সহায়তা করে, বর্ণ নিরুপণে ভূমিকা নেই।উজ্জ্বল আলোতে দেখতে সাহায্য করে। বর্ণ নিরুপণে ভূমিকা রয়েছে।

মানবচোখের চিহ্নিত চিত্র অঙ্কন করো।

অথবা, মানুষের চোখের অক্ষিগোলকের লম্বচ্ছেদ -এর একটি পরিচ্ছন্ন চিত্র অঙ্কন করো এবং নিম্নলিখিত অংশগুলি চিহ্নিত করো। (A) কর্নিয়া, (B) লেন্স, (C) ভিট্রিয়াস হিউমর, (D) রেটিনা

মানবচোখের চিহ্নিত চিত্র –

লম্বচ্ছেদে মানুষের চোখের বিভিন্ন অংশ-
লম্বচ্ছেদে মানুষের চোখের বিভিন্ন অংশ

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” অধ্যায়ের ‘প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়‘ বিভাগের উপ-অধ্যায় ‘স্নায়ুতন্ত্র‘ -এর রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

নিউরোগ্লিয়া এবং স্নায়ু; স্নায়ুর প্রকারভেদ; স্নায়ুগ্রন্থি; স্নায়ুসন্নিধি – বিষয়সংক্ষেপ

মাধ্যমিক – জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয় – স্নায়ুতন্ত্র – বিষয়সংক্ষেপ

প্রাণীদেহে সাড়া প্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয় হরমোন – বিষয়সংক্ষেপ

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদেহে সাড়া প্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয় হরমোন – বিষয়সংক্ষেপ

উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয় হরমোন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয় হরমোন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক – জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয় – স্নায়ুতন্ত্র – বিষয়সংক্ষেপ

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয় – স্নায়ুতন্ত্র – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদেহে সাড়া প্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয় হরমোন – বিষয়সংক্ষেপ

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয় হরমোন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক – জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয় হরমোন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর