আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের দ্বিতীয় অধ্যায় “জীবনের প্রবহমানতা” অধ্যায়ের ‘কোশ বিভাজন ও কোশচক্র‘ বিভাগের বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

ক্রোমোজোম
বিষয়সংক্ষেপ
- জীবনের প্রবহমানতার কারণ হল কোশ বিভাজন ও জনন। কোশের মধ্যে থাকে নিউক্লিয়াস, এবং নিউক্লিয়াসে থাকে ক্রোমোজোম। ক্রোমোজোমের DNA -তে জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে থাকে।
- দ্বিতন্ত্রী DNA -তে সরলরৈখিক সজ্জায় জিন অবস্থান করে। প্রতিটি জিন এক বা একাধিক জীবন বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে।
- ক্রোমোজোম দুই প্রকারের হয়, লিঙ্গ নির্ধারক ক্রোমোজোমকে বলে সেক্স ক্রোমোজোম বা অ্যালোজোম। পক্ষান্তরে, দেহজ বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে অটোজোম। মানুষের প্রতিটি দেহকোশে দুইটি সেক্স ক্রোমোজোম (X ও Y) ও 44টি অটোজোম থাকে।
- ক্রোমোজোমের ভৌত গঠনে ক্রোমাটিড, সেন্ট্রোমিয়ার, গৌণ খাঁজ, টেলোমিয়ার অংশ দেখা যায়। এর রাসায়নিক গঠন উপাদান হল DNA এবং হিস্টোন-অহিস্টোন প্রোটিন।
- DNA নিউক্লিওটাইড অণুর সমন্বয় বিশেষ। প্রতিটি নিউক্লিওটাইড নাইট্রোজেন-ঘটিত ক্ষার, পেন্টোজ শর্করা ও ফসফেট দিয়ে তৈরি। DNA গঠনকারী নাইট্রোজেন-ঘটিত ক্ষারগুলি হল – পিউরিন (অ্যাডেনিন ও গুয়ানিন) এবং পিরিমিডিন (থাইমিন ও সাইটোসিন)। DNA -এর গঠন দ্বিতন্ত্রী।
- DNA থেকে RNA তৈরি হয়। RNA -তে ও DNA -এর মতোই নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারগুলি উপস্থিত থাকে। শুধুমাত্র থাইমিনের পরিবর্তে ইউরাসিল থাকে। এগুলি একতন্ত্রী হয়।
- বিশ্রামরত কোশে ক্রোমোজোমের গঠন দেখা যায় না, ক্রোমাটিন জালিকা নামক সরু সুতোর মতো কম ঘনত্বের গঠন দেখা যায়। রঞ্জক গ্রহণ তথা কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী ক্রোমাটিন দুইপ্রকার – ইউক্রোমাটিন ও হেটেরোক্রোমাটিন।
কোশ বিভাজন – সাহায্যকারী অঙ্গাণু, তাৎপর্য, প্রকারভেদ ও কোশচক্র
বিষয়সংক্ষেপ
- কোশ বিভাজনে কোশীয় অঙ্গাণুগুলির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এদের মধ্যে নিউক্লিয়াস ক্রোমোজোম ধারণ ও বিভাজন, সেন্ট্রোজোম ও মাইক্রোটিউবিউল বেম তন্তু গঠনে, রাইবোজোম প্রোটিন সংশ্লেষে ও মাইটোকনড্রিয়া শক্তি উৎপাদনে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে।
- দেহের বৃদ্ধি, প্রজনন, ক্ষয়পূরণে কোশ বিভাজনের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
- জীবদেহে তিনপ্রকার কোশ বিভাজন দেখা যায়। যেমন – অ্যামাইটোসিস, মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোশ বিভাজন। এর মধ্যে অ্যামাইটোসিস ক্ষুদ্র নিম্নশ্রেণির জীবে দেখা যায়। উচ্চশ্রেণির প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহকোশে মাইটোসিস ঘটে এবং তাদের জননমাতৃকোশে মিয়োসিস কোশ বিভাজন হয়ে থাকে।
- কোশ বিভাজনের ধারাবাহিক পর্যায়গুলিকে একত্রে কোশচক্র বলে। এর ইনটারফেজ (I) বা বিশ্রাম দশার তিনটি ভাগ, যেমন – G1, S এবং G2 উপদশা। কোশ বিভাজন দশা বা মাইটোটিক দশার (M) চারটি প্রধান উপদশা আছে, যেমন – প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ এবং টেলোফেজ। কোশচক্র সঠিকভাবে না ঘটলে, কোশ বিভাজন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে টিউমার সৃষ্টি হতে পারে।
মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোশ বিভাজন
বিষয়সংক্ষেপ
- মাইটোসিস কোশ বিভাজনের সময় কোশে নিউক্লিয়াসের বিভাজনকে বলা হয় ক্যারিওকাইনেসিস এবং কোশের সাইটোপ্লাজমের বিভাজনকে বলে সাইটোকাইনেসিস।
- ক্যারিওকাইনেসিসের প্রোফেজ দশায় ক্রোমোজোম ও বেম গঠিত হয়। মেটাফেজে ক্রোমোজোমগুলি বেম সংলগ্ন হয়ে কোশের বিষুব তলে সজ্জিত হয়। অ্যানাফেজ দশায় ক্রোমোজোমের দুটি ক্রোমাটিড পৃথক হয় এবং টেলোফেজ দশায় কোশের দুই মেরুতে দুটি নতুন অপত্য নিউক্লিয়াস তৈরি হয়।
- প্রাণীকোশে ‘ফারোয়িং’ পদ্ধতিতে ও উদ্ভিদকোশে ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট ও কোশপাত গঠন দ্বারা সাইটোকাইনেসিস ঘটে। উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশে মাইটোসিসের নানা পার্থক্য দেখা যায়।
- মাইটোসিসে কোশে ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক থাকে (2n)। কিন্তু মিয়োসিসে ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস পেয়ে অর্ধেক (n) হয়ে যায়।
- মিয়োসিস কোশ বিভাজনে দুটি সমসংস্থ ক্রোমোজোমের নন্-সিস্টার ক্রোমাটিডে ক্রসিং ওভার ঘটে, ফলে অপত্য জননকোশগুলিতে প্রকরণ তৈরি হয়।
আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের দ্বিতীয় অধ্যায় “জীবনের প্রবহমানতা” অধ্যায়ের ‘কোশ বিভাজন ও কোশচক্র‘ বিভাগের বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন