আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের দ্বিতীয় অধ্যায় “জীবনের প্রবহমানতা” অধ্যায়ের ‘কোশ বিভাজন ও কোশচক্র‘ বিভাগের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

ক্রোমোজোম
ক্রোমোজোম কাকে বলে? ক্রোমোজোম, DNA ও জিনের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক ব্যাখ্যা করো।
ক্রোমোজোম –
ইউক্যারিওটিক কোশের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত DNA অণু ও প্রোটিন দ্বারা গঠিত সূত্রাকার বা দণ্ডাকার আত্মপ্রজননশীল যে সজীব সংগঠন জীবের যাবতীয় বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারক, বাহক ও নিয়ন্ত্রকরূপে কাজ করে তাকে ক্রোমোজোম বলে।
ক্রোমোজোম, DNA ও জিনের আন্তঃসম্পর্ক –
কোশের নিউক্লিয়াসের কতকগুলি সূক্ষ্ম সুতোর মতো জালকাকার গঠন দেখা যায়। এগুলি হল প্যাঁচানো সিঁড়ির মতো দ্বিতন্ত্রী গঠন যারা পরস্পরকে জড়িয়ে থাকে। এই গঠনগুলি হল DNA যা একটি বৃহৎ জৈব অণু। নিউক্লিয়াসে তারা সম্পূর্ণ কুণ্ডলীকৃত অবস্থায় থাকে। কোশ যখন বিভাজিত হয় না, তখন আংশিক উন্মুক্ত অবস্থায় বিন্যস্ত DNA -কে নিউক্লীয় জালিকা বা ক্রোমাটিন জালিকা বলে। কোশ বিভাজনের সময় DNA কুণ্ডলিত হয়। DNA তন্ত্রী বিভিন্ন প্রোটিনকে দৃঢ়ভাবে পাকিয়ে লুপ তৈরি করে ঘন কুণ্ডলী গঠন করে। এই কুণ্ডীলকৃত গঠনকে ক্রোমোজোম বল। অর্থাৎ, ক্রোমাটিন জালিকা ও ক্রোমোজোম হল একই DNA -এর যথাক্রমে স্বল্প ও অধিক কুণ্ডলীকৃত অবস্থা।
আবার, ক্রোমোজোমে যে DNA থাকে, তার নির্দিষ্ট অংশ নির্দিষ্ট প্রোটিন সংশ্লেষের সংকেত বহন করে। DNA -এর এই এক-একটি অংশই হল জিন, যা জীবের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বহন করে।
আদর্শ ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের অঙ্গসংস্থানিক বা ভৌত গঠন আলোচনা করো।
অথবা, ইউক্যারিওটিক কোশের ক্রোমোজোমের বহির্গঠন উল্লেখ করো।
ক্রোমোজোমের ভৌত গঠন –
কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় ক্রোমোজোমের বিভিন্ন অংশ সবচেয়ে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। এই দশায় ক্রোমোজোমের যেসব অংশ দেখা যায়, সেগুলি হল –
ক্রোমাটিড –
কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় প্রতিটি ক্রোমোজোমে লম্বালম্বিভাবে (অনুদৈর্ঘ্যভাবে) যে দুটি সমান (সমতুল) অংশ দেখা যায়, তাদের প্রতিটিকে ক্রোমাটিড বলে। মেটাফেজ ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিড দুটিকে বলে সিস্টারক্রোমাটিড। সিস্টার ক্রোমাটিড দুটি পরস্পর সেন্ট্রোমিয়ার অংশে যুক্ত থাকে।
ক্রোমোনিমা –
প্রতিটি ক্রোমাটিড যে সূক্ষ্ম তন্তু দ্বারা গঠিত, তাদের ক্রোমোনিমা বলে।
ক্রোমোমিয়ার –
প্রতিটি ক্রোমাটিড এক বা একাধিক ক্রোমোনিমাটা দ্বারা গঠিত (একবচনে ক্রোমোনিমাটা, বহুবচনে ক্রোমোনিমা)। ক্রোমোনিমা সূত্রে পুঁতির মতো সারিবদ্ধভাবে সজ্জিত গোলাকার সংগঠনকে ক্রোমোমিয়ার বলে।

মুখ্য খাঁজ ও সেন্ট্রোমিয়ার –
প্রত্যেক ক্রোমোজোমে একটি নির্দিষ্ট রঞ্জিত সংকোচন স্থান থাকে, তাকে মুখ্য খাঁজ বা প্রাথমিক খাঁজ বলে। ক্রোমোজোমের মুখ্য খাঁজ অংশে অবস্থিত যে গঠন সিস্টার ক্রোমাটিড দুটিকে পরস্পর সংলগ্ন করে রাখে ও কোশ বিভাজনকালে ক্রোমোজোমকে বেমতন্তুর সঙ্গে যুক্ত করে, তাকে সেন্ট্রোমিয়ার বলে। সেন্ট্রোমিয়ারের চাকতির মতো গঠন যা বেম সংলগ্ন হয়, তাদের কাইনেটোকোর বলে। সেন্ট্রোমিয়ারের দুই পাশে ক্রোমাটিডের দুটি অংশকে ক্রোমোজোমের বাহু (arm) বলে। এর ছোটো বাহুটিকে p বাহু ও বড়ো বাহুটিকে q বাহু বলে।
গৌণ খাঁজ –
অনেক সময় প্রাথমিক খাঁজ ছাড়াও ক্রোমোজোমে অপর এক বা একাধিক খাঁজ দেখা যায়। একে গৌণ খাঁজ বলে। ঐ অংশে নিউক্লিওলাস যুক্ত থাকে। এই অংশটি কোশ বিভাজনের টেলোফেজ দশায় নিউক্লিওলাসের পুনর্গঠনে সাহায্য করে বলে একে নিউক্লিওলাস সংগঠক অঞ্চল বা নিউক্লিওলার অর্গানাইজার রিজিওন (NOR) বলে।
স্যাটেলাইট –
গৌণ খাঁজ পরবর্তী ক্রোমোজোমীয় অংশকে স্যাটেলাইট বা SAT বডি বলে। স্যাটেলাইটযুক্ত ক্রোমোজোমকে স্যাট ক্রোমোজোম বলে।
টেলোমিয়ার –
ক্রোমোজোমের প্রান্ত দুটিকে টেলোমিয়ার বলে। এটি ক্রোমোজোমের নিষ্ক্রিয় অংশ। কোশের অবিভাজন দশায় DNA প্রতিলিপি গঠনে টেলোমিয়ার সাহায্য করে। এ ছাড়া নিকটবর্তী দুটি ক্রোমোজোমের প্রান্ত জুড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে এবং প্রয়োজনমতো কোশের বার্ধক্য ও মৃত্যু ঘটায়।
একটি আদর্শ ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের অংশগুলির নাম লেখো। সেন্ট্রোমিয়ার ও টেলোমিয়ারের কাজ কী কী?
আদর্শ ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের অংশ –
একটি আদর্শ ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের অঙ্গসংস্থানে প্রাপ্ত অংশগুলি হল –
- ক্রোমাটিড।
- মুখ্য খাঁজ ও সেন্ট্রোমিয়ার।
- গৌণ খাঁজ।
- স্যাটেলাইট।
- টেলোমিয়ার।
সেন্ট্রোমিয়ার ও টেলোমিয়ারের কাজ –
- মুখ্য খাঁজ ও সেন্ট্রোমিয়ার – প্রত্যেক ক্রোমোজোমে একটি নির্দিষ্ট রঞ্জিত সংকোচন স্থান থাকে, তাকে মুখ্য খাঁজ বা প্রাথমিক খাঁজ বলে। ক্রোমোজোমের মুখ্য খাঁজ অংশে অবস্থিত যে গঠন সিস্টার ক্রোমাটিড দুটিকে পরস্পর সংলগ্ন করে রাখে ও কোশ বিভাজনকালে ক্রোমোজোমকে বেমতন্তুর সঙ্গে যুক্ত করে, তাকে সেন্ট্রোমিয়ার বলে। সেন্ট্রোমিয়ারের চাকতির মতো গঠন যা বেম সংলগ্ন হয়, তাদের কাইনেটোকোর বলে। সেন্ট্রোমিয়ারের দুই পাশে ক্রোমাটিডের দুটি অংশকে ক্রোমোজোমের বাহু (arm) বলে। এর ছোটো বাহুটিকে p বাহু ও বড়ো বাহুটিকে q বাহু বলে।
- টেলোমিয়ার – ক্রোমোজোমের প্রান্ত দুটিকে টেলোমিয়ার বলে। এটি ক্রোমোজোমের নিষ্ক্রিয় অংশ। কোশের অবিভাজন দশায় DNA প্রতিলিপি গঠনে টেলোমিয়ার সাহায্য করে। এ ছাড়া নিকটবর্তী দুটি ক্রোমোজোমের প্রান্ত জুড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে এবং প্রয়োজনমতো কোশের বার্ধক্য ও মৃত্যু ঘটায়।
সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুসারে ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ করো ও বিভিন্ন প্রকারের বর্ণনা দাও।
ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ ও তার বর্ণনা –
সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুসারে ক্রোমোজোম চারপ্রকার, যথা –
টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম –
যে ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের একেবারে প্রান্তে অবস্থান করে তাকে টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। অ্যানাফেজীয় চলনকালে এই ক্রোমোজোম দেখতে ‘I’ আকৃতি মতো হয়।
অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম –
যে ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের মধ্যবিন্দু থেকে দূরে কিন্তু কোনো একটি প্রান্তের কাছাকাছি থাকে তাদের অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। এর ফলে ক্রোমোজোমের একটি বাহু বেশ বড়ো এবং অন্য বাহুটি বেশ ছোটো হয়। অ্যানাফেজীয় চলনকালে এই ধরনের ক্রোমোজোম দেখতে অনেকটা ‘J’ আকৃতির মতো হয়।
সাবমেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম –
যে ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের মধ্যবিন্দু থেকে সামান্য দূরে অবস্থান করে এবং এর ফলে ক্রোমোজোমের বাহুদুটি পরস্পর অসমান হয় তাকে সাবমেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। অ্যানাফেজীয় চলনকালে এই ধরনের ক্রোমোজোম দেখতে অনেকটা ‘L’ আকৃতির হয়।

মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম –
যে ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের প্রায় মাঝখানে অবস্থান করে এবং এর ফলে ক্রোমোজোমের বাহুদুটি পরস্পর প্রায় সমান হয়, তাকে মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। অ্যানাফেজীয় চলনকালে এই প্রকার ক্রোমোজোম দেখতে অনেকটা ‘V’ আকৃতির মতো হয়।
ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে আলোচনা করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠন একটি ছকের সাহায্যে দেখাও।
ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠন –
ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোম রাসায়নিকভাবে নিউক্লিক অ্যাসিড (DNA ও RNA), প্রোটিন (ক্ষারীয় এবং আম্লিক) এবং ধাতব আয়ন থাকে। সমস্ত ইউক্যারিওটিক কোশে ক্রোমোজোমের 90% হল DNA ও ক্ষারীয় (হিস্টোন) প্রোটিন, বাকি 10% হল RNA ও আম্লিক প্রোটিন (নন্-হিস্টোন) থাকে।

ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (DNA) –
ডিঅক্সিরাইবোজ শর্করা, ফসফেট ও নাইট্রোজেন-ঘটিত ক্ষার নির্মিত স্বপ্রজননক্ষম যে দ্বিতন্ত্রী নিউক্লিক অ্যাসিড অণু কোশীয় কাজের নিয়ন্ত্রক এবং বংশগতি বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক, তাকে DNA বলে। দ্বিতন্ত্রী DNA অণু লোহার প্যাঁচানো সিঁড়ির মতো বা হেলিক্সের আকৃতির হয়। এই সিঁড়ির হাতল শর্করা দ্বারা নির্মিত ও ধাপগুলি নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষার দ্বারা গঠিত। এই ক্ষার আবার দুই প্রকার, যথা –
- পিউরিন – অ্যাডেনিন (A) ও গুয়ানিন (G)।
- পিরিমিডিন – থাইমিন (T) ও সাইটোসিন (C)। অ্যাডেনিন, থাইমিনের সাথে ও গুয়ানিন, সাইটোসিনের সাথে যথাক্রমে দুটি ও তিনটি হাইড্রোজেন বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে।
রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (RNA) –
DNA থেকে সংশ্লেষিত রাইবোজ শর্করা, ফসফেট ও নাইট্রোজেন-ঘটিত ক্ষার নিয়ে গঠিত একতন্ত্রী গঠনকে RNA বা রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বলে। RNA -এর ক্ষারগুলি DNA -এর মতোই, কেবল RNA -তে থাইমিনের (T) পরিবর্তে ইউরাসিল (U) নামক পিরিমিডিন থাকে।
হিস্টোন প্রোটিন –
ক্রোমোজোমে অবস্থিত ক্ষারীয় প্রোটিনগুলিকে হিস্টোন বলে। ক্ষারীয় প্রকৃতির হওয়ায় এরা সহজেই আম্লিক DNA -এর সাথে যুক্ত হতে পারে। এগুলি পাঁচ প্রকার, যথা – H1, H2A, H2B, H3 এবং H4।
নন-হিস্টোন প্রোটিন –
ক্রোমোজোমে কিছু আম্লিক প্রোটিন থাকে যাদের নন্-হিস্টোন প্রোটিন বলে।
সেন্ট্রোমিয়ার ও সেন্ট্রোজোম – পার্থক্য লেখো।
সেন্ট্রোমিয়ার ও সেন্ট্রোজোম -এর পার্থক্য –
বিষয় | সেন্ট্রোমিয়ার | সেন্ট্রোজোম |
অবস্থান | ক্রোমোজোমে ক্রোমাটিডদ্বয়ের সংযোগস্থল বা মুখ্য খাঁজে। | সাইটোপ্লাজমে নিউক্লিয়াসের নিকটে অবস্থান করে। |
সংশ্লিষ্ট কোশ | উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়প্রকার কোশ। | কেবলমাত্র প্রাণীকোশে থাকে। |
গঠন প্রকৃতি | ক্রোমোজোমের মুখ্য খাঁজে অবস্থিত চাকতিসদৃশ অংশ। | সেন্ট্রোজোম হল কোশীয় অঙ্গাণু যা দুটি পিপের মতো সেন্ট্রিওল নিয়ে গঠিত। |
সংগঠন অংশ | চারটি সেন্ট্রোমেরিক ক্রোমোমিয়ার। | 9টি ত্রয়ী অণুনালিকা। |
কাজ | ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিডদ্বয়কে আবদ্ধ রাখে ও কোশ বিভাজনকালে ক্রোমোজোমকে বেমতন্তুর সঙ্গে সংযুক্ত রাখে। | প্রাণীকোশ বিভাজনকালে মাকু গঠন করে। |
একটি আদর্শ ক্রোমোজোমের পরিচ্ছন্ন চিত্র অঙ্কন করে চিহ্নিত করো – ক্রোমাটিড, সেন্ট্রোমিয়ার, গৌণ খাঁজ, টেলোমিয়ার। ক্রোমাটিড, সেন্ট্রোমিয়ার, NOR, টেলোমিয়ার।
একটি আদর্শ ক্রোমোজোমের ভৌত গঠন –

কোশ বিভাজন – সাহায্যকারী অঙ্গাণু, তাৎপর্য, প্রকারভেদ ও কোশচক্র
কোশ বিভাজনে অংশগ্রহণকারী কোশীয় অঙ্গাণুগুলির নাম ও তাদের ভূমিকা লেখো।
কোশ অঙ্গাণুগুলির নাম ও প্রধান ভূমিকা –
নিউক্লিয়াস –
এটি ক্রোমোজোম ধারণ করে যার বিভাজনের দ্বারা বংশগতির বৈশিষ্ট্যগুলি জনিতৃকোশ থেকে অপত্য কোশে সঞ্চারিত হয়।
সেন্ট্রোজোম ও মাইক্রোটিউবিউল –
সেন্ট্রোজোম কোশ বিভাজনকালে কোশের দুই মেরুতে বিন্যস্ত হয় ও মাইক্রোটিউবিউলের সহায়তায়, বেমতন্তু গঠনের মাধ্যমে বেম বা স্পিন্ডল গঠন করে। উদ্ভিদকোশে সেন্ট্রোজোম না থাকায় সাইটোপ্লাজমীয় মাইক্রোটিউবিউল বেমতন্তু গঠন করে এবং ক্রোমোজোমীয় চলনে সাহায্য করে।
রাইবোজোম –
রাইবোজোম কোশের প্রোটিন সংশ্লেষ করে। এই প্রোটিনগুলি ক্রোমোজোম, কোশীয় অঙ্গাণু ও সাইটোপ্লাজম গঠন করে এবং এইভাবে কোশ বিভাজনে সাহায্য করে।
মাইটোকনড্রিয়া –
মাইটোকনড্রিয়া কোশীয় শ্বসনের দ্বারা শক্তি উৎপাদন করে ও কোশ বিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করে। এ ছাড়া মাইটোকনড্রিয়া কোশচক্রেরও নিয়ন্ত্রক বলে বর্তমানে প্রমাণিত হয়েছে।
কোশচক্র বলতে কী বোঝ? কোশচক্রের বিভিন্ন দশা বর্ণনা করো।
কোশচক্র –
কোশ বিভাজনে নতুন কোশ সৃষ্টি থেকে পরবর্তী কোশ বিভাজন পর্যন্ত কোশে সংঘটিত ধারাবাহিক, ছন্দোবদ্ধ ও চক্রাকার ঘটনাক্রমকে কোশচক্র বলে।
কোশচক্রের বিভিন্ন দশা –
কোশচক্রের প্রধান দুটি দশা বর্তমান, যথা –
- ইনটারফেজ বা অবিভাজন দশা।
- মাইটোটিক বা বিভাজন দশা।

ইনটারফেজ –
কোশচক্রের অন্তর্গত যে দীর্ঘস্থায়ী দশায় DNA, প্রোটিন, RNA প্রভৃতি সংশ্লেষিত হয় এবং কোশ বিভাজনে উপযোগী হয়ে ওঠে, তাকে ইনটারফেজ বলে। এটি তিনটি উপদশায় বিভক্ত, যথা – G1 দশা, S দশা এবং G2 দশা।
- G1 দশা (প্রারম্ভিক দশা বা প্রাকসংশ্লেষ দশা) – পূর্ববর্তী কোশ বিভাজনের শেষ ও S উপদশার মধ্যবর্তী এই উপদশায় rRNA, mRNA এবং tRNA, রাইবোজোম, DNA সংশ্লেষের উপাদান প্রভৃতি সংশ্লেষিত হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন কোশীয় অঙ্গাণু দ্বিগুণিত হয়। একে প্রথম বৃদ্ধি দশা-ও বলে।
- S দশা (সংশ্লেষ দশা) – G1 ও G2 দশার মধ্যবর্তী এই দশায় DNA -এর প্রতিলিপিকরণ ও হিস্টোন প্রোটিন সংশ্লেষ ঘটে। এই দশায় DNA -এর মাত্রা দ্বিগুণিত হয়ে 2C থেকে 4C হয়।
- G2 দশা (সংশ্লেষ পরবর্তী দশা) – S উপদশা ও মাইটোটিক দশার মধ্যবর্তী এই উপদশায় কোশ বিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়। একে দ্বিতীয় বৃদ্ধি দশা-ও বলে। এই তিনটি দশা ছাড়াও G0 দশায় কোশ বিভাজন বন্ধ থাকায়, G0 -কে নিষ্ক্রিয় দশা বা বিশ্রাম দশা বলে।
মাইটোটিক দশা –
ইনটারফেজের পরবর্তী অপেক্ষাকৃত স্বল্পস্থায়ী কোশ বিভাজন দশাকে মাইটোটিক বা M দশা বলে। এই দশায় কোশ বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য কোশ গঠন করে। এর দুটি উপদশা।
ক্যারিওকাইনেসিস – এই দশায় প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ এবং টেলোফেজ -এর মাধ্যমে নিউক্লিয়াস বিভাজিত হয়।
সাইটোকাইনেসিস – এই দশায় নিউক্লিয়াস বিভাজনের সঙ্গে সঙ্গেই সাইটোপ্লাজমের বিভাজন শুরু হয়ে যায়।
মানবদেহের নির্দিষ্ট কোশ বিভাজনের জন্য মোট প্রায় 20-24 ঘণ্টা সময় লাগলে তার প্রায় 19-23 ঘণ্টা শুধুমাত্র ইনটারফেজ দশা সম্পন্ন করতে ও বাকি 1 ঘণ্টা সময় কোশ বিভাজনের জন্য ব্যয়িত হয়।
কোশচক্রের দুটি গুরুত্ব লেখো। কোশ বিভাজনের তাৎপর্য লেখো।
কোশচক্রের গুরুত্ব –
কোশ বিভাজন নিয়ন্ত্রণ –
কোশচক্রের কতকগুলি নির্দিষ্ট বিন্দুতে কোশ বিভাজন নিয়ন্ত্রিত হয়। কোশচক্রের নিয়ন্ত্রণ বিন্দুগুলি বিনষ্ট হলে কোশ বিভাজন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে, অনিয়ন্ত্রিত কোশ বিভাজন দ্বারা টিউমার সৃষ্টি হয়। টিউমার দুইপ্রকার হয়। যেমন – বিনাইন টিউমার ও ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। বিনাইন টিউমারগুলি দেহের পক্ষে ক্ষতিকর নয়। তবে ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের কোশগুলি পার্শ্ববর্তী কোশের সঙ্গে সংলগ্ন না থেকে রক্ত বা লসিকা দ্বারা বাহিত হয় ও অপর স্থানে গিয়ে পুনরায় টিউমার তৈরি করে। এই ঘটনাকে মেটাস্ট্যাসিস বলে। মেটাস্ট্যাসিস প্রকৃতপক্ষে ক্যানসারের কোশের বৈশিষ্ট্যবিশেষ।

স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ –
স্বাভাবিক কোশ বিভাজন নিয়ন্ত্রণ দ্বারা কোশের বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণের জন্য কোশচক্র গুরুত্বপূর্ণ।
কোশ বিভাজনের তাৎপর্য –
বৃদ্ধি –
কোশ বিভাজনের ফলে কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। উৎপন্ন কোশগুলি আবার আকারে বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ জীবদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি কোশ বিভাজনের ওপরেই নির্ভর করে।
প্রজনন –
মাইটোসিস, অ্যামাইটোসিস ও মিয়োসিস কোশ বিভাজন বিভিন্ন প্রকার জননে সহায়তা করে। যেমন – মিয়োসিস কোশ বিভাজনের মাধ্যমে গ্যামেট (শুক্রাণু, ডিম্বাণু) এবং রেণু উৎপন্ন হয় যা, যথাক্রমে যৌন ও অযৌন জননের একক। মাইটোসিস, অযৌন জনন ও অঙ্গজ জননের মাধ্যমে জীবের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অ্যামিবা অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিতে প্রজনন সম্পন্ন করে।
ক্ষয়পূরণ –
জীবের ক্ষতস্থান নিরাময়, অঙ্গের পুনরুৎপত্তি মূলত মাইটোসিস কোশ বিভাজনের ফলেই ঘটে থাকে।
বংশগত বৈশিষ্ট্যের সঞ্চারণ –
কোশ বিভাজনের ফলে মাতৃকোশের বৈশিষ্ট্য অপত্যকোশে সঞ্চারিত হয় এবং নতুন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অপত্যকোশ গঠিত হয়, যা অভিযোজন ও অভিব্যক্তিতে সহায়তা করে।
একটি কোশচক্রের ইনটারফেজের বিভিন্ন দশায় কী কী ধরণের রাসায়নিক উপাদান সংশ্লেষিত হয়? একটি কোশচক্রের বিভিন্ন বিন্দুতে স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হলে কী ঘটতে পারে?
ইনটারফেজে উৎপন্ন পদার্থ –
ইনটারফেজের নানা দশায় উৎপন্ন পদার্থগুলি হল –
G1 দশা বা গ্যাপ 1 দশা –
প্রোটিন mRNA, tRNA কোশীয় অঙ্গাণুর উৎপাদন হয়।
S দশা বা সংশ্লেষণ দশা –
DNA সংশ্লেষণ ও দ্বিত্বকরণ হয়।
G2 দশা বা প্যাপ 2 দশা –
মাইটোকনড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাস্ট, DNA -এর গঠনগত ত্রুটি নিবারণকারী প্রোটিন ইত্যাদির সংশ্লেষ হয়।
স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হলে সৃষ্ট অবস্থা –
কোশচক্রের বিভিন্ন চেকপয়েন্টগুলিতে স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হলে কোশ বিভাজন তার নিয়ন্ত্রণ হারাবে। DNA এবং স্পিন্ডিল -এর গঠনগত ত্রুটি থাকলেও যদি তখন কোশ বিভাজন ঘটে তাহলে ত্রুটিসম্পন্ন অপত্য কোশ তৈরি হয়। এ ছাড়া বিভাজন অনিয়ন্ত্রিত হলে অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির ফলে টিউমার সৃষ্টি হবে। অনেক ক্ষেত্রে কোশে ক্যানসার দেখা দিতে পারে।
মাইটোসিস ও অ্যামাইটোসিসের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
মাইটোসিস ও অ্যামাইটোসিস পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | মাইটোসিস | অ্যামাইটোসিস |
বিভাজন প্রকৃতি | পরোক্ষ ও জটিল বিভাজন। | প্রত্যক্ষ ও সরল বিভাজন। |
DNA উপাদানের বিন্যাস | অপত্যে সমমাত্রায় DNA বিন্যস্ত হয়। | অপত্যে DNA বিন্যাস সম বা অসম মাত্রায় হারে হয়ে থাকে। |
নিউক্লীয় পর্দার অবলুপ্তি | ঘটে। | এই ঘটনা ঘটার অবকাশ নেই। |
বেমতন্তু গঠন | ঘটে। | ঘটে না। |
নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের বিভাজনের সময় | সাধারণত নিউক্লিয়াস বিভাজনের পরে সাইটোপ্লাজমের বিভাজন হয়। | নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম প্রায় একই সঙ্গে বিভাজিত হয়। |
বিস্তার | উন্নত উদ্ভিদ ও প্রাণী কোশ। | অ্যামিবা, ঈস্ট, ব্যাকটেরিয়া কোশ। |
মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোশ বিভাজন
মাইটোসিসের বিভিন্ন দশার নাম লেখো। প্রত্যেক দশার মুখ্য ঘটনাক্রম উল্লেখ করো।
অংশ প্রশ্ন, মাইটোসিসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দশার বৈশিষ্ট্য লেখো।
মাইটোসিসের বিভিন্ন দশা –
মাইটোসিসের প্রধান দুটি পর্যায়, যথা – ক্যারিওকাইনেসিস বা নিউক্লিয়াসের বিভাজন এবং সাইটোকাইনেসিস বা সাইটোপ্লাজমের বিভাজন। ক্যারিও কাইনেসিস আবার প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ ও টেলোফেজ নামক চারটি দশায় বিভক্ত।
মাইটোসিসের বিভিন্ন দশার মুখ্য ঘটনাক্রম –
নীচে মাইটোসিসের বিভিন্ন দশার মুখ্য ঘটনাক্রম সারণির মাধ্যমে উল্লেখ করা হল –
মাইটোটিক দশার নাম | মুখ্য ঘটনাক্রম |
প্রোফেজ (প্রথম দশা) | [1] ক্রোমাটিন তন্তুগুলি ঘনীভূত ও স্থূল হয় এবং ক্রোমোজোম গঠন রূপে আবির্ভূত হয়। [2] ক্রোমোজোমগুলি একতন্ত্রী থেকে দ্বিতন্ত্রী অবস্থাপ্রাপ্ত হয়। [3] এই দশার শেষের দিকে নিউক্লীয় পর্দা ও নিউক্লিওলাসের অবলুপ্তি ঘটে। |
মেটাফেজ (দ্বিতীয় দশা) | [1] এই দশায় বেম ও বেমতন্তু গঠিত হয়। ক্রোমোজোমগুলি ছোটো, স্ফীত ও সর্বাধিক স্পষ্ট হয়। [2] এই দশায় বেমের বিষুব অঞ্চলে ক্রোমোজোমগুলি পরপর আড়াআড়িভাবে সজ্জিত হয়ে মেটাফেজ প্লেট বা ইকুয়েটোরিয়াল প্লেট গঠন করে। [3] প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারে অবস্থিত কাইনেটোকোর নামক বিশেষ গঠন বেমতন্তুর সঙ্গে সংযুক্ত হয়। এই বেমতন্তুগুলিকে ক্রোমোজোমাল বেমতন্তু বলে। |
অ্যানাফেজ (তৃতীয় দশা) | [1] এই দশায় সেন্ট্রোমিয়ার সম্পূর্ণভাবে দ্বি-বিভাজিত হয়। [2] এক-একটি ক্রোমাটিড একতন্ত্রী অপত্য ক্রোমোজোমে রূপান্তরিত হয়। [3] অপত্য ক্রোমোজোমদ্বয় বিপরীত মেরুর দিকে যাত্রা শুরু করে। একে অ্যানাফেজীয় চলন বা ক্রোমোজোমীয় চলন বলা হয়। |
টেলোফেজ (চতুর্থ তথা শেষ দশা) | [1] এই দশায় অপত্য ক্রোমোজোমগুলির ঘনীভবন দূর হয় এবং পাক খুলে গিয়ে পুনরায় নিউক্লীয় জালিকা গঠন করে। [2] এই দশায় নিউক্লিওলাসের পুনরাবির্ভাব ঘটে। [3] এই দশায় নিউক্লীয় পর্দার আবির্ভাব ও অপত্য ক্রোমোজোমকে বেষ্টন করে দুটি পূর্ণাঙ্গ নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। |
সাইটোকাইনেসিস | [1] এই দশায় সাইটোপ্লাজম বিভাজিত হয়। [2] দুটি নিউক্লিয়াসযুক্ত মাতৃকোশ থেকে একটি করে অপত্য নিউক্লিয়াসযুক্ত দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি হয়। [3] উদ্ভিদকোশে ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট গঠনের মাধ্যমে ও প্রাণীকোশে খাঁজ সৃষ্টি বা ক্লিভেজ বা ফারোয়িং -এর মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। |
প্রোফেজ বলতে কী বোঝ? উদ্ভিদকোশে ও প্রাণীকোশে মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজনের প্রোফেজ দশার বর্ণনা দাও।
প্রোফেজ দশা –
ক্যারিওকাইনেসিসের যে দশায় নিউক্লীয় পর্দা ও নিউক্লিওলাসের অবলুপ্তি ঘটে এবং ক্রোমাটিন বস্তু কুণ্ডলীকৃত হয়ে ক্রোমোজোম রূপে আবির্ভূত হয়, তাকে প্রোফেজ বলে।
প্রোফেজ দশার বৈশিষ্ট্য –
নীচে উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশে প্রোফেজ দশার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হল –
উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য –
- নিউক্লিয়াসটি আকারে ও আয়তনে বৃদ্ধি পায়।
- জল বিয়োজনের ফলে নিউক্লিয়াসের নিউক্লীয় জালক বা ক্রোমাটিন থেকে সূত্রাকার ক্রোমোজোম গঠিত হয়।
- প্রত্যেক ক্রোমোজোম লম্বালম্বি ভাগ হয়ে দুটি ক্রোমাটিড গঠন করে এবং ক্রোমাটিডদ্বয় সেন্ট্রোমিয়ার অঞ্চলে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে।
- ক্রোমাটিড দুটি পরস্পরের সঙ্গে স্প্রিং -এর মতো প্যাঁচানো থাকে, একে স্পাইরালাইজেশন বলে। এর ফলে ক্রোমোজোমগুলি ধীরে ধীরে ঘনীভূত ও স্থূল হতে থাকে।
- এইসময় নিউক্লিওলাসটি ক্রমশ ছোটো হতে থাকে এবং প্রোফেজের শেষ পর্যায়ে নিউক্লীয় পর্দা ও নিউক্লিওলাস বিলুপ্ত হয়।
- উদ্ভিদকোশের সাইটোপ্লাজমীয় মাইক্রোটিউবিউল থেকে বেমতন্তুর আবির্ভাব ঘটে যা পরবর্তীকালে বেম গঠনে সাহায্য করে। এদের অ্যানাস্ট্রাল বেমতন্তু বলে।

প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য –
ওপরে উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে বর্ণিত ঘটনাগুলি প্রাণীকোশের মাইটোসিস বিভাজনেও ঘটে। এ ছাড়াও –
- প্রাণীকোশে দুটি সেন্ট্রিওল প্রতিলিপি গঠনের মাধ্যমে দুটি অপত্য সেন্ট্রিওলের সৃষ্টি করে।
- দুটি করে সেন্ট্রিওলবিশিষ্ট একজোড়া সেন্ট্রোজোম পরস্পরের থেকে ক্রমশ দূরে সরে যায় এবং নিউক্লিয়াসের দুই বিপরীত মেরুতে পৌঁছোয়।
- সেন্ট্রোজোম দুটির চারদিক থেকে বিচ্ছুরিত রশ্মির মতো অ্যাস্ট্রাল রশ্মির আবির্ভাব ঘটে যা থেকে পরবর্তীকালে বেমতন্তু গঠিত হয়।

মেটাফেজ দশা কাকে বলে? উদ্ভিদকোশে ও প্রাণীকোশে মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশার বর্ণনা দাও।
মেটাফেজ দশা –
ক্যারিওকাইনেসিসের যে দশায় ক্রোমোজোমগুলি বেমতন্তুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিষুব অঞ্চলে সজ্জিত হয়, তাকে মেটাফেজ বলে। প্রোফেজের তুলনায় এই দশা স্বল্পস্থায়ী।
মেটাফেজ দশার বৈশিষ্ট্য –
নীচে উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশে প্রোফেজ দশার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হল –
উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য –
- নিউক্লীয় পর্দা এবং নিউক্লিওলাস বিলুপ্ত হয়।
- উদ্ভিদকোশে সেন্ট্রোজোম না থাকলেও বেম গঠিত হয়। এক্ষেত্রে সাইটোপ্লাজমের মাইক্রোটিউবিউলগুলি একত্রিত হয়ে বেমতন্তু গঠিত হয়। পরে তন্তুগুলি মেরুপ্রান্তে একত্রিত হয়ে মাকু আকৃতির বেম বা স্পিন্ডল গঠন করে। সেন্ট্রোজোমের সাহায্য ছাড়া গঠিত এইরূপ বেমকে অ্যানাস্ট্রাল বেম বলা হয়। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, মাকুর সূচালো প্রান্ত দুটিকে মেরু বলে।
- এইসময়ে প্রতিটি ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিডদ্বয় বেমের বিষুব অঞ্চলে, অর্থাৎ নিরক্ষীয় অঞ্চলে আড়াআড়িভাবে অবস্থান করে। ক্রোমোজোমের এই বিন্যাসযুক্ত অবস্থাকে নিরক্ষীয় প্লেট বা মেটাফেজ প্লেট বলে।
- মেটাফেজের শেষ পর্যায়ে প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার অনুদৈর্ঘ্যভাবে দ্বিখণ্ডিত হতে শুরু করে।

প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য –
ওপরের ঘটনা ছাড়া প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে মাইক্রোটিউবিউলের পরিবর্তে নিউক্লিয়াসের উভয় মেরুতে অবস্থিত দুটি সেন্ট্রিওলের অ্যাস্ট্রাল রশ্মি বিস্তৃত হয়ে বেমতন্তু গঠন করে। বেমতন্তুগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মাকু-আকৃতির বেম বা স্পিন্ডল গঠন করে।
অ্যানাফেজ দশা বলতে কী বোঝ? উদ্ভিদকোশে ও প্রাণীকোশে মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশার বর্ণনা দাও।
অ্যানাফেজ দশা –
ক্যারিওকাইনেসিসের যে দশায় ক্রোমাটিডগুলি বিষুব অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে চালিত হয়, তাকে অ্যানাফেজ বলে। মাইটোসিসের এই দশা সর্বাপেক্ষা স্বল্পস্থায়ী।
অ্যানাফেজ দশার বৈশিষ্ট্য –
উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে অ্যানাফেজ দশার বৈশিষ্ট্য নীচে আলোচনা করা হল।
উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য –
- এই দশার শুরুতেই ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারগুলি সমান দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।
- এর ফলে সিস্টার ক্রোমাটিডদ্বয় এক-একটি সেন্ট্রোমিয়ার -এর অংশসহ পৃথক হয়ে যায় এবং দুটি অপত্য ক্রোমোজোম গঠন করে।
- অপত্য ক্রোমোজোম দুটির মধ্যে বিকর্ষণ শুরু হয়। ফলে অপত্য ক্রোমোজোমগুলির অর্ধেক বিষুব অঞ্চল থেকে বেমের দুটি বিপরীয় মেরুর দিকে যাত্রা শুরু করে। ক্রোমোজোমের এইরূপ চলনকে ক্রোমোজোমীয় চলন বা অ্যানাফেজীয় চলন বলে। এটি অ্যানাফেজের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
- অপত্য ক্রোমোজোমগুলি পৃথক হওয়ায় ক্রোমোজোমের মাঝের তন্তুগুলিকে ইনটারজোনাল তন্ধু বলে।
- এই দশার শেষে অপর ক্রোমোজোমগুলিকে ইংরেজি ‘V’, ‘L’, ‘T’, ‘I’ অক্ষরের মতো দেখায়। এদের যথাক্রমে মেটাসেন্ট্রিক, সাব-মেটাসেন্ট্রিক, অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ও টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে।

প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য –
প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে অ্যানাফেজ দশায় উদ্ভিদকোশের অ্যানাফেজ দশার মতো একই ঘটনা ঘটে। তবে, এক্ষেত্রে বেমতন্তুগুলি পরস্পর যুক্ত হয়ে স্টেমবডি গঠন করে যা অ্যানাফেজীয় চলনে সাহায্য করে।
টেলোফেজ কাকে বলে? উদ্ভিদকোশে ও প্রাণীকোশে মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজনের টেলোফেজ দশার বর্ণনা দাও।
টেলোফেজ দশা –
ক্যারিওকাইনেসিসের যে দশায় দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস সৃষ্ট হয়, তাকে টেলোফেজ বলে।
টেলোফেজ দশার বৈশিষ্ট্য –
উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে টেলোফেজ দশার বৈশিষ্ট্য নীচে আলোচনা করা হল –
উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য –
- টেলোফেজ দশার শুরুতে বেমের উভয় মেরুপ্রান্তে সমান সংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে।
- ক্রোমোজোমগুলির পাক খুলে দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পায় এবং জালকের আকারে বিন্যস্ত হয়ে নিউক্লীয় জালক গঠন করে।
- ক্রোমোজোমগুলিকে বেষ্টন করে পুনরায় নিউক্লীয় পর্দার আবির্ভাব ঘটে।
- নিউক্লিয়াসের মধ্যে নিউক্লিওলাসের পুনরাবির্ভাব ঘটে।
- এরপর, ক্রোমোজোমগুলির ক্রমিক জলশোষণ, প্রসারণ প্রভৃতির ফলে দুই মেরুতে সমসংখ্যক ক্রোমোজোমবিশিষ্ট সমগুণসম্পন্ন এবং সম-আকৃতিবিশিষ্ট দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয়।

প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য –
প্রাণীকোশের টেলোফেজ দশায় উদ্ভিদকোশের টেলোফেজ দশার মতো একই ঘটনা ঘটে।

মাইটোসিস কোশ বিভাজনের গুরুত্ব লেখো।
অথবা, জীবের বৃদ্ধি, কোশ প্রতিস্থাপন ও ক্ষয়পূরণ, পুনরুৎপাদন এবং প্রজননে মাইটোসিস কীভাবে সাহায্য করে তা ব্যাখ্যা করো।
মাইটোসিস কোশ বিভাজনের গুরুত্ব –
উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহকোশে মাইটোসিস কোশ বিভাজন ঘটে। এর গুরুত্বগুলি নিম্নরূপ।
জীবদেহের আকার ও আয়তন বৃদ্ধি –
মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় দেহকোশের ক্রমাগত বিভাজনের ফলে কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে জীবদেহের আকার ও আয়তন বৃদ্ধি পায়। এককোশী জাইগোট মাইটোসিস পদ্ধতিতে বিভাজিত হয়ে বহুকোশী জীবের সৃষ্টি করে।
কোশ প্রতিস্থাপন এবং ক্ষয়পূরণ –
দেহের ক্ষয়প্রাপ্ত ও মৃতকোশ মাইটোসিস পদ্ধতিতে সৃষ্ট নতুন কোশ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। ফলে সেই অংশের ক্ষয়পূরণ ঘটে। যেমন – আমাদের কোনো স্থান কেটে গেলে মাইটোসিস দ্বারা উৎপন্ন কোশ দ্বারা প্রতিস্থাপন ও ক্ষয়পূরণ ঘটে থাকে।
পুনরুৎপাদন –
বিভিন্ন প্রাণীর দেহাংশ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে মাইটোসিস বিভাজনের দ্বারা তা পুনরুৎপাদিত হয়। যেমন – কবচী প্রাণীদের (কাঁকড়া) পদ, তারামাছের বাহু আঘাত বা অন্য কোনো কারণে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে, মাইটোসিস বিভাজনের দ্বারা পুনরুৎপাদিত হয়।
প্রজনন –
অ্যামিবা, প্যারামেসিয়াম, ঈস্ট প্রভৃতি এককোশী জীবের অযৌন জনন মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে হয়। আবার বিভিন্ন উদ্ভিদের অঙ্গজ জনন মাইটোসিস পদ্ধতি দ্বারাই ঘটে থাকে। যেমন – কচুরিপানা, মিষ্টি আলু, পাথরকুচির অঙ্গজ জনন প্রভৃতি।
সমবিভাজন –
মাইটোসিস পদ্ধতিতে সৃষ্ট দুটি অপত্য কোশ গুণগত ও পরিমাণগত বিচারে অর্থাৎ ক্রোমোজোম সংখ্যা ও অন্যান্য উপাদানের পরিমাণ এবং ক্রোমোজোমের সজ্জাগত বিচারে মাতৃকোশের সমান হয়।
সাইটোকাইনেসিস কাকে বলে? উদ্ভিদকোশের এবং প্রাণীকোশের সাইটোকাইনেসিস পদ্ধতি বর্ণনা করো।
সাইটোকাইনেসিস –
যে প্রক্রিয়ায় কোশের সাইটোপ্লাজম সমান দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি করে, তাকে সাইটোকাইনেসিস বলে। প্রকৃতপক্ষে টেলোফেজ দশাতেই সাইটোকাইনেসিস শুরু হয় এবং এই দশাতেই তা সম্পূর্ণ হয়।
উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশের সাইটোকাইনেসিস –
উদ্ভিদকোশের ও প্রাণীকোশের সাইটোকাইনেসিস পদ্ধতি নীচে বর্ণনা করা হল।
উদ্ভিদকোশের সাইটোকাইনেসিস –
- টেলোফেজের শেষ পর্যায়ে কোশের বিষুব অঞ্চল বরাবর মাইক্রোটিউবিউল সঞ্চিত হয়ে ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট নামক গঠন সৃষ্টি করে। এই স্থানে গলগি বস্তুগুলি জমা হয় এবং পরস্পর মিলিত হয়ে দুটি কোশপর্দা গঠন করে।
- এইসময় ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট পরিবর্তিত হয়ে কোশপাত বা সেলপ্লেট গঠন করে। এই সেলপ্লেট পরে মধ্যচ্ছদা বা মিডল্ ল্যামেলাতে পরিবর্তিত হয়। এটি প্রধানত ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম পেকটেট দ্বারা গঠিত।
- মধ্যচ্ছদার উভয়পার্শ্বে সেলুলোজ, ক্যালোজ, হেমিসেলুলোজ প্রভৃতি উপাদান সঞ্চিত হয়ে প্রাথমিক কোশপ্রাচীর তৈরি করে।
- এইভাবে সৃষ্ট কোশপর্দাসহ কোশপ্রাচীর কোশের মাঝবরাবর বিস্তৃত হয় ও শেষপর্যন্ত সাইটোপ্লাজমসহ দুটি অপত্য কোশকে সম্পূর্ণ পৃথক করে।

প্রাণীকোশের সাইটোকাইনেসিস –
- প্রাণীকোশে টেলোফেজ দশার শুরুতেই সাইটোকাইনেসিস শুরু হয়। কোশের মাঝ বরাবর অঞ্চলে দু-পাশ থেকে কোশপর্দা সংকুচিত হয়ে খাঁজ বা ফারো গঠন করে। অ্যাকটিন ও মায়োসিন প্রোটিন নির্মিত অণুনালিকা কোশপর্দার নীচে সঞ্চিত হয়ে মিডবডি গঠন করে। এদের আন্তঃক্রিয়ার ফলে সংকোচন বলের সৃষ্টি হয়, যার ফলে কোশপর্দায় খাঁজ সৃষ্টি হয়।
- এই খাঁজ বা ফারো ভিতরের দিকে ক্রমশ বিস্তৃত হয়ে পরস্পরকে স্পর্শ করলে সাইটোপ্লাজম দুটি সমান অংশে বিভক্ত হয়।
- এর ফলে সমগুণসম্পন্ন, সমান আকারের দুটি অপত্য কোশের সৃষ্টি হয়। প্রাণীকোশে সাইটোকাইনেসিস পদ্ধতিকে ক্লিভেজ বা ফারোয়িং বলে।

বেমতন্তুর গঠন ও সাইটোকাইনেসিসের প্রভেদ উল্লেখ করে উদ্ভিদকোশের মাইটোসিস ও প্রাণীকোশের মাইটোসিসের পার্থক্য লেখো। উদ্ভিদকোশের প্রাথমিক কোশপ্রাচীরের উপাদানগুলি কী কী?
উদ্ভিদ মাইটোসিস ও প্রাণী মাইটোসিসের পার্থক্য –
বিষয় | উদ্ভিদকোশের মাইটোসিস | প্রাণীকোশের মাইটোসিস |
বেমতন্তুর গঠন | মূলত কোশীয় কঙ্কাল, যেমন – অণুনালিকা থেকে বেমতন্তু গঠিত হয়। | সেন্ট্রিওল থেকে বেমতন্তু গঠিত হয়। |
অ্যাস্ট্রাল রশ্মি | অ্যাস্ট্রাল রশ্মি উৎপন্ন হয় না। | সেন্ট্রিওলকে ঘিরে তারার মতো অ্যাস্ট্রাল রশ্মি বিন্যস্ত থাকে। |
সাইটোকাইনেসিস পদ্ধতি | ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট ও কোশপাত গঠনের দ্বারা এই পদ্ধতি ঘটে থাকে। | ক্লিভেজ বা খাঁজ বা ফারোয়িং -এর মাধ্যমে এই পদ্ধতি ঘটে। |
অপত্য কোশের সংযুক্তি | উৎপন্ন অপত্য কোশগুলি পাশাপাশি সংযুক্ত থাকে। | উৎপন্ন অপত্য কোশগুলি পৃথক হয়ে যায়। |
উদ্ভিদকোশের প্রাথমিক কোশপ্রাচীরের উপাদান –
উদ্ভিদকোশের প্রাথমিক কোশপ্রাচীর, মধ্যচ্ছদার উভয়পাশে সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ প্রভৃতি জমা হয়ে পঠিত হয়।
উদ্ভিদকোশ ও প্রাণীকোশের সাইটোকাইনেসিসের মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো। উদ্ভিদদেহে মাইটোসিস কোশ বিভাজন ঘটে এমন তিনটি দেহাংশের নাম লেখো।
উদ্ভিদকোশে সাইটোকাইনেসিস ও প্রাণীকোশে সাইটোকাইনেসিস -এর পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | উদ্ভিদকোশে সাইটোকাইনেসিস | প্রাণীকোশে সাইটোকাইনেসিস |
পদ্ধতি | উদ্ভিদকোশে কোশপাত বা সেলপ্লেট গঠনের মাধ্যমে সাইটোকাইনেসিস ঘটে। | প্রাণীকোশে ক্লিভেজ বা ফারোয়িং পদ্ধতিতে সাইটোকাইনেসিস ঘটে। |
সময় | উদ্ভিদকোশে টেলোফেজের শেষে সাইটোকাইনেসিস হয়। | প্রাণীকোশে টেলোফেজ চলাকালীন ক্লিভেজ শুরু হয়। |
সংযুক্তি | উৎপন্ন অপত্য কোশ সংযুক্ত থাকে। | উৎপন্ন অপত্য কোশ পৃথক হয়ে যায়। |
অভিমুখ | কোশের কেন্দ্র থেকে পরিধির দিকে সাইটোকাইনেসিস ঘটে। | প্রাণীকোশে সাইটোকাইনেসিস কোশের পরিধি থেকে কেন্দ্রের দিকে ফারো অগ্রবর্তী হয়। |
উদ্ভিদদেহে মাইটোসিস কোশ বিভাজনের সংঘটনস্থল –
উদ্ভিদদেহে মাইটোসিস কোশ বিভাজন ঘটে এমন তিনটি দেহাংশ হল –
- কাণ্ড ও মূলের অগ্রভাগ।
- বর্ধনশীল পাতা।
- ভ্রূণমূল ও ভ্রূণমুকুল।
মিয়োসিস I এবং মিয়োসিস II -এর প্রধান বৈশিষ্ট্য মাইটোসিসের পরিপ্রেক্ষিতে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
মিয়োসিস I -এর প্রধান বৈশিষ্ট্য –
মিয়োসিস I -এ ক্রোমোজোমের পৃথককরণ –
- মিয়োসিস I -এর প্রোফেজ I দশায় সমসংস্থ ক্রোমোজামের অংশ বিনিময় বা ক্রসিং ওভার ঘটে।
- এরপর মিয়োসিস I -এর মেটাফেজ I দশায় সমসংস্থ ক্রোমোজোমগুলি নিরক্ষীয়তলে সজ্জিত হয়।
- এরপর অ্যানাফেজ I দশায় সমসংস্থ ক্রোমোজোমগুলি অ্যানাফেজীয় চলন দ্বারা দুটি বিপরীত মেরুতে পৌঁছে যায়। অর্থাৎ, দুটি সমসংস্থ ক্রোমোজোমের পৃথককরণ ঘটে। উল্লেখ্য যে, মাইটোসিসে অ্যানাফেজ দশায় প্রতিটি ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিড দুটির পৃথককরণ ঘটে থাকে।
ক্রোমোজোম সংখ্যার হ্রাস –
মিয়োসিস I -এ সমসংস্থ ক্রোমোজোমগুলি পৃথক হয়ে অপত্য কোশগুলিতে সমানভাবে বিন্যস্ত হয়। এর ফলে অপত্য কোশে ক্রোমোজোম সংখ্যা কমে দেহকোশের অর্ধেক হয়ে যায়।
ক্রসিং ওভার –
মিয়োসিস I -এর প্রোফেজ দশায় যে পদ্ধতিতে সমসংস্থ ক্রোমোজোমের দুটি নন্-সিস্টার ক্রোমাটিডের সমতুল্য অংশের বিনিময় ঘটে এবং নতুন জিনগত বিন্যাস সৃষ্টি হয়, তাকে ক্রসিং ওভার বলে। এই প্রক্রিয়াটির সময় ‘X’ -এর মতো গঠন বা কায়াজমা গঠিত হয়।

মিয়োসিস II -এর প্রধান বৈশিষ্ট্য –
মিয়োসিস II -এ ক্রোমোজোমের পৃথককরণ –
মিয়োসিস II -এর সঙ্গে মাইটোসিসের খুব সাদৃশ্য আছে। তবে মিয়োসিস II -তে হ্যাপ্লয়েড সংখ্যক ক্রোমোজোম অংশগ্রহণ করে এবং মাইটোসিসে সাধারণত ডিপ্লয়েড সংখ্যক ক্রোমোজোম অংশ নেয়। এক্ষেত্রে মাইটোসিসের মতো সমবিভাজন ঘটে, অর্থাৎ ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস পায় না। মাইটোসিসের মতো মিয়োসিস II -এর অ্যানাফেজ II দশায় প্রতিটি ক্রোমোজোমের দুটি ক্রোমাটিড পৃথক হয়ে কোশের বিপরীত দুই মেরুতে গিয়ে অপত্য নিউক্লিয়াস সৃষ্টি করে।
সমবিভাজন –
মিয়োসিস II কোশ বিভাজন ও মাইটোসিসে যথেষ্ট মিল দেখা যায়, শুধু প্রথমক্ষেত্রে n সংখ্যক ক্রোমোজোম ও দ্বিতীয়ক্ষেত্রে (মাইটোসিসে) 2n সংখ্যক ক্রোমোজোম অংশ নেয়। উভয়ক্ষেত্রে কোশ বিভাজন শেষে সমবিভাজন ঘটে অর্থাৎ ক্রোমোজোম সংখ্যার কোনো পরিবর্তন ঘটে না।
মিয়োসিসের প্রধান বৈশিষ্ট্য – ক্রোমোজোমের সংখ্যার হ্রাসকরণ পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করো এবং তার গুরুত্ব লেখো।
ক্রোমোজোম সংখ্যার হ্রাসকরণ পদ্ধতি –
মিয়োসিস I – এর অ্যানাফেজ I -এ সমসংস্থ ক্রোমোজোমগুলি পৃথক হয়ে বিপরীত মেরুতে চলে যায় ও দুটি ভিন্ন নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করে। এর ফলে মিয়োসিস I -এর শেষে উৎপন্ন অপত্য নিউক্লিয়াসে ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস পেয়ে অর্ধেক (2n থেকে n) হয়ে যায়।
ক্রোমোজোম সংখ্যার হ্রাসকরণের গুরুত্ব –
এইভাবে ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস পায় বলে জননকোশে, অর্থাৎ শুক্রাণু ও ডিম্বাণুতে ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক (n) হয়। শুক্রাণু (n) ও ডিম্বাণু (n) -এর নিষেকের ফলে জাইগোটে ক্রোমোজোম সংখ্যা পুনরায় 2n বা ডিপ্লয়েড হয়ে যায়। অর্থাৎ মিয়োসিসে ক্রোমোজোম হ্রাসকরণ বা হ্যাপ্লয়েড হয়ে যাওয়ার জন্য জীবের জীবনচক্রে ক্রোমোজোমের সংখ্যা ধ্রুবক থাকে।
মিয়োসিসের তাৎপর্য উল্লেখ করো। সম্পাদনের স্থান, ক্রোমোজোমের বিভাজনের প্রকৃতি এবং উৎপন্ন কোশের সংখ্যা অনুযায়ী মাইটোসিস ও মিয়োসিসের পার্থক্য লেখো।
অংশ প্রশ্ন, “মিয়োসিস বৈশিষ্ট্যগতভাবে মাইটোসিস থেকে পৃথক” – তুমি কীভাবে বক্তব্যটির যথার্থতা প্রমাণ করবে?
মিয়োসিসের তাৎপর্য –
উদ্ভিদ ও প্রাণীর জনন-মাতৃকোশে মিয়োসিস কোশ বিভাজন ঘটে। এর তাৎপর্যগুলি নিম্নরূপ।
প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক রাখা –
মিয়োসিসের ফলে মাতৃকোশের তুলনায় অপত্য কোশে ক্রোমোজোমের সংখ্যা অর্ধেক হয়। দুটি হ্যাপ্লয়েড কোশ মিলিত হয়ে ডিপ্লয়েড ভ্রূণাণু বা জাইগোট গঠিত হয়। যা বিভাজিত হয় ও বৃদ্ধি পেয়ে পূর্ণাঙ্গ ডিপ্লয়েড জীব গঠন করে। অর্থাৎ জীবদেহে ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক থাকে। যদি মিয়োসিস বিভাজন না হত, তাহলে নিষেকের পরে প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা গুণিতক হারে বৃদ্ধি পেত ও প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটত।
জিনগত প্রকরণ সৃষ্টি –
এই প্রক্রিয়ায় ক্রসিং ওভারের সময়ে ক্রোমোজোমের খণ্ড-বিনিময় ঘটে, ফলে তাদের চারিত্রিক গুণাবলির মিশ্রণ ঘটে, একে জিনের রিকমবিনেশন বলে। এর ফলে সৃষ্ট অপত্য জীব ক্রমবিবর্তনের সহায়ক নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হয়। একে প্রকরণ বলে।
জননকোশ বা গ্যামেট তৈরি –
মিয়োসিসের ফলে জননকোশ বা গ্যামেট (শুক্রাণু ও ডিম্বাণু) তৈরি হয়, যা জীবের যৌন জননের জন্য একান্ত আবশ্যক।
জনুক্রম বজায় রাখা –
এইপ্রকার কোশ বিভাজনের ফলে হ্যাপ্লয়েড (n) ও ডিপ্লয়েড (2n) দশার পরিবর্তন চক্রাকারে ঘটতে থাকে, অর্থাৎ জনুক্রম বজায় থাকে।
মাইটোসিস ও মিয়োসিসের পার্থক্য –
বিষয় | মাইটোসিস | মিয়োসিস |
সম্পাদনের স্থান | দেহকোশ এবং সাধারণ সংখ্যা বৃদ্ধির সময়ে জনন কোশে মাইটোসিস ঘটে। | জনন মাতৃকোশ থেকে জননকোশ বা গ্যামেট সৃষ্টির সময় ঘটে। |
অপত্য কোশের সংখ্যা | একটি জনিতৃকোশ থেকে একবার বিভাজন দ্বারা দুটি অপত্য কোশ উৎপন্ন হয়। | জনিতৃকোশ থেকে দু-বার বিভাজন দ্বারা চারটি অপত্য কোশ সৃষ্টি হয়। |
ক্রোমোজোম বিভাজনের প্রকৃতি | এটি সমবিভাজন, অর্থাৎ উৎপন্ন অপত্য কোশ দুটিতে ক্রোমোজোম সংখ্যা জনিতৃ কোশের সমান (2n) থাকে। | এটি হ্রাসবিভাজন, অর্থাৎ উৎপন্ন চারটি অপত্য কোশে ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোশের অর্ধেক হয়ে যায় (2n) |
ক্রসিং ওভার কাকে বলে? এর গুরুত্ব লেখো।
অংশ প্রশ্ন, ক্রসিং ওভার পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করো।
ক্রসিং ওভার –
সংজ্ঞা – মিয়োসিস I -এর প্রোফেজ I দশায় যে পদ্ধতিতে সমসংস্থ ক্রোমোজোমের নন্-সিস্টার ক্রোমাটিডের মধ্যে সমতুল্য অংশের বিনিময় ঘটে ও ক্রোমোজোমে নতুন অ্যালিল সমন্বয়ের সৃষ্টি হয়, তাকে ক্রসিং ওভার বলে।
পদ্ধতি – প্রোফেজ I -এ প্রতিজোড়া সমসংস্থ ক্রোমোজোম পাশাপাশি জোড় বাঁধে, যাকে সাইন্যাপসিস বলে। জোড় বাঁধা একক ক্রোমাটিডযুক্ত সমসংস্থ ক্রোমোজোম দুটিকে বাইভ্যালেন্ট বলে। পরে প্রতিটি ক্রোমোজোম দুটি ক্রোমাটিড সৃষ্টি করে, অর্থাৎ সমসংস্থ ক্রোমোজোম জোড়ায় চারটি ক্রোমাটিড দেখা যায়। এই অবস্থাকে টেট্রাড বলে। ক্রসিং ওভারে দুটি নন-সিস্টার ক্রোমাটিড একে অপরের সঙ্গে ইংরাজি ‘X’ আকারের গঠনে আবদ্ধ হয়। এই গঠনকে কায়াজমা বলে। পরবর্তী পর্যায়ে নন্-সিস্টার ক্রোমাটিডের কায়াজমা বিন্দুর নীচের অংশের পারস্পরিক বিনিময় ঘটে। এর ফলে ক্রোমোজোমে নতুন অ্যালিল সমন্বয় দেখা দেয়।

ক্রসিং ওভারের গুরুত্ব –
- ক্রসিং ওভারের ফলে নতুন জিনগত পুনর্বিন্যাস ঘটে। এর ফলে প্রকরণ সৃষ্টি হয়।
- ক্রসিং ওভার প্রমাণ করে যে, ক্রোমোজোমে জিন (তথা অ্যালিল) গুলি সরলরৈখিকভাবে অবস্থান করে।
একটি উদ্ভিদকোশ বা একটি প্রাণীকোশের মাইটোসিস কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশার পরিচ্ছন্ন চিত্র অঙ্কন করো এবং নিম্নলিখিত অংশগুলি চিহ্নিত করো। (1) ক্রোমোজোম (2) বেমতন্তু (3) মেরু অঞ্চল (4) সেন্ট্রোমিয়ার।
উদ্ভিদকোশ ও প্রাণীকোশের মাইটোসিস কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশার চিহ্নিত চিত্র –

উদ্ভিদকোশে মাইটোসিস কোশ বিভাজনের চিহ্নিত চিত্র আঁকো।
উদ্ভিদকোশে মাইটোসিস কোশ বিভাজনের চিহ্নিত চিত্র –

প্রাণীকোশে মাইটোসিস কোশ বিভাজনের চিহ্নিত চিত্র আঁকো।
অনুরূপ প্রশ্ন, প্রাণীকোশের মাইটোসিস কোশ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশার পরিচ্ছন্ন চিত্র অঙ্কন করে নিম্নলিখিত অংশগুলি চিহ্নিত করো – (1) মেরু অঞ্চল (2) বেমতন্তু (3) ক্রোমাটিড (4) সেন্ট্রোমিয়ার।
প্রাণীকোশে মাইটোসিস কোশ বিভাজনের চিহ্নিত চিত্র –

উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশে সাইটোকাইনেসিসের চিহ্নিত চিত্র আঁকো।
উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশে সাইটোকাইনেসিসের চিহ্নিত চিত্র –

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের দ্বিতীয় অধ্যায় “জীবনের প্রবহমানতা” অধ্যায়ের ‘কোশ বিভাজন ও কোশচক্র‘ বিভাগের উপ-অধ্যায় ‘ক্রোমোজোম‘ -এর রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন