জীবনের প্রবাহমানতা হল জীববিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই অধ্যায়ে, আমরা জীবনের প্রজনন প্রক্রিয়াগুলি সম্পর্কে শিখি। জীবনের প্রবাহমানতা নিশ্চিত করার জন্য, জীবগুলি প্রজনন করতে পারে। প্রজনন হল নতুন জীবের সৃষ্টির প্রক্রিয়া।
ফুল কাকে বলে?
উদ্ভিদের যৌন জননে সাহায্যকারী বিশেষভাবে পরিবর্তিত ও সীমিত বৃদ্ধিসম্পন্ন পরিবর্তিত বিটপকে ফুল বা পুষ্প বলে।
ফুলের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লেখো।
ফুলের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল — 1. ফুল হল বিটপের পরিবর্তিত রূপ। 2. ফুল সাধারণত কাক্ষিক বা অগ্রমুকুল থেকে উৎপন্ন হয়। 3. ফুলের প্রধান চারটি স্তবক হল — বৃতি, দলমণ্ডল, পুংকেশর চক্র ও গর্ভকেশর চক্র।
আদর্শ ফুল কাকে বলে?
যে ফুলের পুষ্পাক্ষের ওপরে চারটি স্তবক উপস্থিত থাকে এবং সবকটি স্বাভাবিক রীতিতে সজ্জিত থাকে, তাকে আদর্শ ফুল বলে। যেমন — জবা ফুল।
নগ্ন ফুল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যেসব ফুলে সাহায্যকারী স্তবক অর্থাৎ বৃতি এবং দলমণ্ডল থাকে না, তাদের নগ্ন ফুল বলে।
উদাহরণ – লাল পাতা ফুল।
সবৃন্তক ফুল ও অবৃন্তক ফুল কাকে বলে?
সমৃদ্ধক ফুল – যেসব ফুলের পুষ্পবৃন্ত বা বোঁটা থাকে, তাদের সবৃন্তক ফুল বলে। যেমন — জবা ফুল, গোলাপ ফুল ইত্যাদি।
অবৃত্তক ফুল – যেসব ফুলের পুষ্পবৃন্ত বা বোঁটা থাকে না, তাদের অবৃন্তক ফুল বলে। যেমন — রজনিগন্ধা।
সম্পূর্ণ ফুল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যেসব ফুলে বৃতি, দলমণ্ডল, পুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবক — এই চারটি স্তবকই বর্তমান তাদের সম্পূর্ণ ফুল বলে।
উদাহরণ – জবা, মটর, অপরাজিতা, সরষে ইত্যাদি।
অসম্পূর্ণ ফুল কাকে বলে? উদাহরণ দাও|
যেসব ফুলে চারটি স্তবকের (বৃতি, দলমণ্ডল, পুংকেশর চক্র ও গর্ভকেশর চক্র) মধ্যে এক বা একাধিক স্তবক অনুপস্থিত, তাদের অসম্পূর্ণ ফুল বলে।
উদাহরণ – কুমড়ো, পেঁপে, বনতুলসী, মুক্তঝুরি ইত্যাদি।
একলিঙ্গ ফুল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যেসব ফুলে পুংস্তবক এবং স্ত্রীস্তবকের মধ্যে যে-কোনো একটি উপস্থিত থাকে, তাদের একলিঙ্গ ফুল বলে। শুধুমাত্র পুংস্তবক থাকলে তাকে পুরুষ ফুল বলে এবং শুধুমাত্র স্ত্রীস্তবক থাকলে তাকে স্ত্রী ফুল বলে।
উদাহরণ – কুমড়ো ফুল।
দ্বিলিঙ্গ ফুল বা উভলিঙ্গ ফুল বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।
যেসব ফুলে পুংস্তবক এবং স্ত্রীস্তবক উভয়ই থাকে, তাদের দ্বিলিঙ্গ (বাইসেক্সুয়াল) ফুল বা উভলিঙ্গ (হারমাফ্রোডাইট) ফুল বলে।
উদাহরণ – জবা ফুল, ধুতরো ফুল।
বন্ধ্যা ফুল বা ক্লীব ফুল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যেসব ফুলে পুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবকের কোনোটিই থাকে না, তাদের বন্ধ্যা ফুল বা ক্লীব ফুল বলে।
উদাহরণ – সূর্যমুখীর প্রাপ্ত পুষ্পিকা, তল।
নিষেক বা গর্ভাধান কাকে বলে?
উদ্ভিদের পুংজননকোশ বা পরাগরেণু ও স্ত্রী-জননকোশ বা ডিম্বাণুর মিলনকে নিষেক বা গর্ভাধান বা ফার্টিলাইজেশন বলে।
দ্বিনিষেক কাকে বলে?
গুপ্তবীজী উদ্ভিদের দুটি শুক্রাণুর একটি ডিম্বাণুকে এবং অপরটি ডেফিনিটিভ (নির্ণীত) নিউক্লিয়াসকে নিষিক্ত করার পদ্ধতিকে দ্বিনিষেক বলে। পরপর দুবার নিষেক ঘটার জন্যই একে দ্বিনিষেক বলা হয়ে থাকে। প্রথম ক্ষেত্রে ভ্রুণ বা জাইগোট এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সস্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। সস্য-নিউক্লিয়াস ট্রিপ্লয়েড (3n) প্রকৃতির হয়।
একপ্রতিসম ফুল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যখন কোনো ফুলকে তার অক্ষ বরাবর কেবলমাত্র একবার সমান দুটি অংশে ভাগ করা যায়, তখন সেই ফুলকে এক প্রতিসম ফুল বলে।
উদাহরণ – মটর ফুল।
বহুপ্রতিসম ফুল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে ফুলকে তার অক্ষ বরাবর যে-কোনো উল্লম্বতলে কাটলে সর্বদা পরস্পর সমান দুটি অংশ পাওয়া যায়, তাকে বহুপ্রতিসম ফুল বলে।
উদাহরণ – জবা ফুল।
সুষম ফুল বা সমাঙ্গ ফুল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যেসব ফুলের প্রতিটি স্তবকের অংশগুলি আকৃতিগতভাবে প্রায় সমান এবং একইরকম দেখতে হয়, তাদের সমাঙ্গ ফুল বা সুষম ফুল বলে।
উদাহরণ – ধুতরো ফুল।
বিষম ফুল বা অসমাঙ্গ ফুল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যেসব ফুলের প্রতিটি স্তবকের বা যে-কোনো একটি স্তবকের পুষ্পপত্রগুলি আকৃতিগতভাবে একে অপরের থেকে অসমান, তাদের বিষম ফুল বা অসমাঙ্গ ফুল বলে।
উদাহরণ – মটর ফুল।
পুষ্পবৃত্ত কাকে বলে? এর কাজ কী?
পুষ্পবৃত্ত – আদর্শ পুষ্পের পুষ্পাক্ষটি যে সরু অংশ দ্বারা কাণ্ডের শাখাপ্রশাখার সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাকে পুষ্পবৃত্ত বলে।
পুষ্পবৃত্তের কাজ – ফুলকে কান্ডের শাখাপ্রশাখার সঙ্গে যুক্ত রাখা।
পুষ্পাক্ষ বা থ্যালামাস কাকে বলে? এর কাজ কী?
পুষ্পাক্ষ – বৃন্তের ওপরের দিকে যে সংহত, স্ফীত অক্ষে পুষ্পস্তবকগুলি পরপর আর্বতাকারে বা সর্পিলাকারে বিন্যস্ত থাকে, তাকে পুষ্পাক্ষ বা থ্যালামাস বলে।
পুষ্পাক্ষের কাজ – ফুলের বিভিন্ন স্তবককে ধারণ করা।
পুষ্পাক্ষের ওপর যে চারটি স্তবক পরপর সাজানো থাকে, তাদের নাম কী?
পুষ্পাক্ষের ওপর যে চারটি স্তবক পরপর সাজানো থাকে, তাদের নাম — 1. বৃতি, 2. দলমণ্ডল, 3. পুংস্তবক, 4. স্ত্রীস্তবক।
বৃত্তি ও দলমণ্ডলকে ফুলের সাহায্যকারী স্তবক বলে কেন?
বৃতি ও দলমণ্ডলকে ফুলের সাহায্যকারী স্তবক বলে কারণ, এরা উদ্ভিদের জননে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ না করলেও পরোক্ষভাবে সাহায্য করে, যেমন — পরাগযোগের জন্য বিভিন্ন বাহকদের আকৃষ্ট করা।
বৃতি কাকে বলে?
ফুলের সর্বাপেক্ষা বাইরের বা নীচের দিকে অবস্থিত স্তবক যা ফুলকে কুঁড়ি অবস্থায় ঢেকে রাখে এবং তাকে রক্ষা করে, তাকে বৃতি বা ক্যালিক্স বলে। বৃতির প্রতিটি একককে বৃত্যংশ বলা হয়। কিছুকিছু ফুলে বৃতির ঠিক নীচে উপবৃতি থাকে।
বৃতির দুটি কাজ লেখো।
বৃতির দুটি কাজ হল — 1. কুঁড়ি অবস্থায় ফুলের অন্যান্য স্তবকগুলিকে উষ্ণতা, রোদ, বৃষ্টি, কীটপতঙ্গের আক্রমণ ও বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করা 2. সবুজ বৃতি উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
বৃত্যংশ কী?
সাধারণত বৃতি কতকগুলি সবুজ পাতার মতো অংশ দ্বারা গঠিত। এই সবুজ অংশ বা একককে বৃত্যংশ বা সেপাল বলে।
উপবৃতি কী?
কোনো কোনো ফুলে বৃতির নীচে সবুজ বর্ণের পাতার মতো অংশ থাকে, তাদের উপবৃতি বা এপিক্যালিক্স বলে। যেমন — জবা ফুলে উপবৃতি দেখা যায়।
ভ্ৰূণাক্ষ কী?
ভ্রূণের যে দণ্ডাকার অংশ থেকে ভ্রূণমূল ও ভ্রূণমুকুল গঠিত হয়, তাকে ভ্রূণাক্ষ বলে।
দলমণ্ডল কাকে বলে?
পাপড়ি বা দলাংশ দ্বারা গঠিত ফুলের বৃতির ভিতরের দিকে থাকা রঙিন বা সাদা দ্বিতীয় স্তবককে দলমণ্ডল বা করোলা বলে।
দলমণ্ডলের কাজ কী?
দলমণ্ডলের কাজ হল — 1. কুঁড়ি অবস্থায় ফুলের অপরিহার্য স্তবক, অর্থাৎ পুংকেশর চক্র এবং গর্ভকেশর চক্রকে ঢেকে রাখে ও রক্ষা করা। 2. উজ্জ্বল রং ও মিষ্টি গন্ধের দ্বারা পরাগযোগের জন্য কীটপতঙ্গকে আকৃষ্ট করা।
বৃতি ও দলমণ্ডলের দুটি পার্থক্য লেখো।
বৃতি ও দলমণ্ডলের পার্থক্যগুলি হল —
বিষয় | বৃতি | দলমণ্ডল |
বর্ণ | সাধারণত সবুজ বর্ণের হয়। | সাধারণত সাদা বা রঙিন হয়। |
কাজ | কুঁড়ি অবস্থায় অন্যান্য স্তবককে রক্ষা করা। | বাহককে আকৃষ্ট করে পরাগযোগে সাহায্য করে। |
পুংকেশর চক্র কাকে বলে? এর কাজ কী?
পুংকেশর চক্র – পুংদণ্ড ও পরাগধানী সমন্বিত পুংকেশর নিয়ে গঠিত, দলমণ্ডল বা করোলার ভিতরের দিকে অবস্থিত, ফুলের তৃতীয় এবং অপরিহার্য স্তবককে পুংকেশর চক্র বা অ্যান্ড্রোসিয়াম বলে।
পুংকেশর চক্রের কাজ – পরাগরেণু উৎপন্ন করে বংশবিস্তারে সহায়তা করা।
গর্ভকেশর চক্র কাকে বলে? এর কাজ কী?
গর্ভকেশর চক্র – গর্ভাশয়, গর্ভদণ্ড এবং গর্ভমুণ্ড নিয়ে গঠিত, সব থেকে ভিতরে অবস্থিত, ফুলের চতুর্থ এবং অপরিহার্য স্তবককে গর্ভকেশর চক্র বা গাইনিসিয়াম বলে।
গর্ভকেশর চক্রের কাজ – গর্ভকেশর চক্র বা স্ত্রীস্তবক ডিম্বাণু উৎপাদনের মাধ্যমে গাছের বংশবিস্তারে সাহায্য করে।
সম্পূর্ণ অসমাঙ্গ বা অপ্রতিসম ফুল কাকে বলে? একটি উদাহরণ দাও।
যখন কোনো ফুলকে তার অক্ষ বরাবর কখনোই সমান ভাগে ভাগ করা যায় না, তখন সেই ফুলকে সম্পূর্ণ অসমাঙ্গ বা অপ্রতিসম ফুল বলে।
উদাহরণ – অর্কিড ফুল।
পরাগযোগ কাকে বলে?
যে পদ্ধতিতে ফুলের পরাগধানী থেকে পরাগরেণু একই ফুলের বা একই গাছের অন্য কোনো ফুলের বা একই প্রজাতির অন্য গাছের কোনো ফুলের গর্ভকেশরের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হয় তাকে পরাগযোগ বলে।
সহবাসী উদ্ভিদ (monoecious plant) কাকে বলে?
যে উদ্ভিদে পুরুষ ফুল এবং স্ত্রীফুল পৃথকভাবে কিন্তু একই উদ্ভিদে জন্মায়, তাকে সহবাসী উদ্ভিদ বলে। যেমন লাউ, কুমড়ো ইত্যাদি।
ভিন্নবাসী উদ্ভিদ (dioecious plant) কাকে বলে?
যে উদ্ভিদে পুরুষ অথবা স্ত্রী যে-কোনো একপ্রকারের ফুল জন্মায় তাকে ভিন্নবাসী উদ্ভিদ বলে। যেমন, পেঁপে, তাল প্রভৃতি।
স্বপরাগী উদ্ভিদের সঙ্গে ইতরপরাগী উদ্ভিদের দুটি পার্থক্য লেখো।
স্বপরাগী ও ইতরপরাগী উদ্ভিদের পার্থক্যগুলি হল —
বিষয় | স্বপরাগী উদ্ভিদ | ইতরপরাগী উদ্ভিদ |
উদ্ভিদের প্রকৃতি | অবশ্যই সহবাসী। | ভিন্নবাসী বা সহবাসী। |
পরাগধানী ও গর্ভমুণ্ড পরিণত হওয়ার সময় | ফুলের পরাগধানী ও গর্ভমুণ্ড একই সময়ে পরিণত হয়। | ফুলের পরাগধানী ও গর্তমুক্ত ভিন্ন সময়ে পরিণত হয়। |
উদ্ভিদের যৌন জনন হল একটি জটিল প্রক্রিয়া যা উদ্ভিদের জীবনের জন্য অপরিহার্য। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্য তৈরি হয়, বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পায় এবং জীবনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।