এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড তড়িৎযোজী না সমযোজী ব্যাখ্যা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড তড়িৎযোজী না সমযোজী ব্যাখ্যা করো।
ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড তড়িৎযোজী যৌগ – ম্যাগনেশিয়াম পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস হল 2, 8, 2 এবং অক্সিজেন পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস হল 2, 6। একটি ম্যাগনেশিয়াম পরমাণু তার বাইরের কক্ষের 2টি ইলেকট্রন একটি অক্সিজেন পরমাণুর বাইরের কক্ষে স্থানান্তরিত করে। ফলে ম্যাগনেশিয়াম পরমাণু 2টি ইলেকট্রন বর্জন করে Mg2+ আয়নে এবং অক্সিজেন পরমাণু 2টি ইলেকট্রন গ্রহণ করে O2- আয়নে পরিণত হয়। অতঃপর Mg2+ এবং O2- আয়ন স্থির তড়িদাকর্ষণে যুক্ত হয়ে MgO অণু গঠন করে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড (MgO) কেন তড়িৎযোজী যৌগ?
ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড তড়িৎযোজী যৌগ কারণ এটি একটি ধাতু (ম্যাগনেশিয়াম) এবং একটি অধাতু (অক্সিজেন) এর মধ্যে বিক্রিয়ায় গঠিত হয়। এখানে, ম্যাগনেশিয়াম পরমাণু তার বাইরের কক্ষের দুটি ইলেকট্রন সম্পূর্ণরূপে অক্সিজেন পরমাণুকে দান করে। এর ফলে বিপরীত আধানযুক্ত Mg²⁺ এবং O²⁻ আয়ন সৃষ্টি হয়। এই আয়নগুলোর মধ্যে স্থির তড়িৎ আকর্ষণ বল (ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক ফোর্স) কাজ করে, যা আয়নিক বন্ধন নামে পরিচিত। এই আয়নিক বন্ধনের কারণে MgO একটি তড়িৎযোজী যৌগ।
MgO কে সমযোজী যৌগ বলা যায় না কেন?
MgO কে সমযোজী যৌগ বলা যায় না, কারণ এখানে ইলেকট্রন জোড়ার ভাগাভাগি (sharing) ঘটে না। সমযোজী বন্ধন সাধারণত দুটি অধাতুর পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রন শেয়ারের মাধ্যমে গঠিত হয় (যেমন – H₂O, CO₂)। কিন্তু MgO -এর ক্ষেত্রে একটি ধাতু ও একটি অধাতুর মধ্যে ইলেকট্রনের পুরোপুরি স্থানান্তর ঘটে, যা সমযোজী বন্ধনের বৈশিষ্ট্য নয়।
ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইডের গলনাংক ও স্ফুটনাংক খুব উচ্চ হয় কেন?
ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইডের গলনাংক (~2852°C) ও স্ফুটনাংক অত্যন্ত উচ্চ। এর কারণ হলো, Mg²⁺ এবং O²⁻ আয়নগুলোর মধ্যে আকর্ষণ বল (আয়নিক বন্ধন) অত্যন্ত শক্তিশালী। এই শক্তিশালী আকর্ষণ বল ভাঙার জন্য প্রচুর তাপশক্তির প্রয়োজন হয়। তাই MgO -এর গলনাংক ও স্ফুটনাংক খুব বেশি।
ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড কী জলে দ্রবণীয়?
হ্যাঁ, ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড জলে অল্প পরিমাণে দ্রবণীয়। এটি জলের সাথে বিক্রিয়া করে ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রোক্সাইড [Mg(OH)₂] গঠন করে, যা একটি দুর্বল ক্ষার।
প্রতিক্রিয়া – MgO + H₂O → Mg(OH)₂
ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড কী তড়িৎ পরিবাহী?
কঠিন অবস্থায় – না, কঠিন অবস্থায় MgO তড়িৎ পরিবহন করে না। কারণ, কঠিন অবস্থায় আয়নগুলি স্থির অবস্থানে আবদ্ধ থাকে এবং মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না।
গলিত অবস্থায় বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় – হ্যাঁ, গলিত অবস্থায় বা জলে দ্রবীভূত হলে MgO -এর আয়নগুলি (Mg²⁺ ও O²⁻) মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে এবং তড়িৎ প্রবাহ বহন করতে পারে। তাই এই অবস্থায় এটি তড়িৎ পরিবাহী।
ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইডের দৈনন্দিন ব্যবহার কী?
ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইডের ব্যবহার ব্যাপক। যেমন –
1. অগ্নিরোধী উপকরণ – উচ্চ গলনাংকের জন্য ইট, সিমেন্ট ও চুল্লি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
2. চিকিৎসাক্ষেত্রে – অম্লনাশক হিসেবে (দুধে ম্যাগনেশিয়া নামে পরিচিত) এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে।
3. কৃষিকাজে – মাটিতে ম্যাগনেশিয়ামের অভাব পূরণে।
4. খাদ্য সংরক্ষক ও পুষ্টি উপাদান হিসেবে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড তড়িৎযোজী না সমযোজী ব্যাখ্যা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন