আজকের আলোচনার বিষয় মানুষের বিজ্ঞাননির্ভরতা ও তার সংকট। মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং বিভিন্ন স্কুল পরীক্ষায় প্রায়শই এই প্রবন্ধ রচনার প্রশ্ন দেখা যায়। তাই, মানুষের বিজ্ঞাননির্ভরতা ও তার সংকট প্রবন্ধ রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই প্রবন্ধটি মুখস্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।
মানুষের বিজ্ঞাননির্ভরতা ও তার সংকট
ভূমিকা –
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম হাতিয়ার হল বিজ্ঞান। দৈনন্দিন জীবন থেকে গ্রহান্তরে জীবনের সন্ধান করা-প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানই হয়েছে মানুষের একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু সবক্ষেত্রে মানুষের বিজ্ঞাননির্ভরতা কখনও মানুষের আবেগ অনুভূতি ও পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সংকট তৈরি করে দিচ্ছে কিনা এটাই হয়ে উঠেছে একুশ শতকের চেতনাসম্পন্ন মানুষের অন্যতম বিবেচ্য বিষয়।
বিজ্ঞানের অবদান –
আজকের গোটা মানবসভ্যতাই বিজ্ঞানের অবদান। প্রতিদিনের জীবনে সকাল থেকে সন্ধে বিজ্ঞানকে সঙ্গে নিয়েই মানুষ চলে। বিজ্ঞান যোগাযোগ ব্যবস্থায় এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। শরীরে অদৃশ্য ডানা লাগিয়ে মানুষ এখন অনায়াসে চলে যেতে পারে পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তে। হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইল ফোন মুহূর্তে সংযোগ গড়ে দেয় অন্য গোলার্ধের কোনো মানুষের সঙ্গে। শুধু কথা বলা নয়, লাইন, স্কাইপ ইত্যাদির সাহায্যে মা তাঁর বহুদূরে থাকা ছেলেকে পর্দায় দেখতে পারেন। কৃষিতে বিজ্ঞানের প্রয়োগ নিয়ে এসেছে যুগান্তর। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতি মৃত্যুকে হয়তো পরাজিত করতে পারেনি, কিন্তু মানুষের জীবনকালকে আরও দীর্ঘ করেছে। কম্পিউটারের আবিষ্কার আলাদিনের আশ্চর্যপ্রদীপের সন্ধান দিয়েছে মানুষকে। নেট-ব্যাংকিং, অনলাইন কেনাকাটা থেকে শুরু করে রাস্তাঘাটের হদিস-সবই সম্ভব হয় ইনটারনেট সংযোগের মাধ্যমে। বিজ্ঞানের কল্যাণে পৃথিবীর বুকে আজ মানুষের ছায়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর।
সংকটের স্বরূপ –
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রতি মানুষের ঝোঁক তাকে ক্রমশই ভোগবাদের প্রতি আকৃষ্ট করে তুলছে। সুখস্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি আকর্ষণ মানুষের মধ্যে জন্ম দিচ্ছে সীমাহীন লোভ ও চাহিদার। মানুষ নিজের সুখের স্বার্থে পৃথিবীর অন্য প্রাণীদের অবহেলা করছে, তাদের থাকার জায়গার সংকট তৈরি করছে, মানুষ তার নিজের স্বার্থে জীববৈচিত্র্যকে বিপন্ন করছে। ভোগবাদী চাহিদা যে ইঁদুরদৌড়কে আহ্বান করছে তা শৈশবকে অনাবশ্যক চাপে ফেলে দিচ্ছে, তৈরি হচ্ছে মানসিক অবসাদ। আমরা এমন একটা সমাজ তৈরি করছি যেখানে টাকাপয়সাই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণের প্রধান মাপকাঠি হয়ে উঠেছে। আর নৈতিক মূল্যবোধ, নান্দনিক ধারণা সেখানে ক্রমশ অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতা মানুষকে যন্ত্রমানবে পরিণত করেছে। মানুষের সঙ্গে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, সহানুভূতির জায়গাগুলো ক্রমশই নষ্ট হচ্ছে। মানুষ ক্রমে ক্রমে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। ফলে সামাজিকতাবোধের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। যন্ত্রকে ব্যবহার করে নানা অপরাধমূলক কাজকর্ম ঘটছে। সাইবার ক্রাইম তো আধুনিক সমাজের সর্বস্তরে আতঙ্কের বিষয় হয়ে উঠছে। টুইটার, ফেসবুক ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করেও নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অতিরিক্ত যন্ত্রনির্ভরতা, বিশেষত কম্পিউটারের সর্বাত্মক ব্যবহার মানবসম্পদের বিকাশের ক্ষেত্রকে সংকুচিত করে দিচ্ছে।
উপসংহার –
বিজ্ঞানের সঠিক ব্যবহারই পারে এই সংকটমুক্তি ঘটাতে। অব্যাহত রাখতে হবে শিল্প-সাহিত্যের চর্চাকে, আর নিয়ন্ত্রণ করতে হবে নগরায়ণকে। মনে রাখতে হবে বিজ্ঞানের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্য বিজ্ঞান। তবেই তৈরি হতে পারে শঙ্কামুক্ত এক সুন্দর পৃথিবী।
আজকের আলোচনার মাধ্যমে আমরা মানুষের বিজ্ঞাননির্ভরতা ও এর ফলে সৃষ্ট সংকট সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছি। প্রবন্ধ রচনা মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। “মানুষের বিজ্ঞাননির্ভরতা ও তার সংকট” প্রবন্ধ রচনা বারবার পরীক্ষায় আসে। এই প্রবন্ধটি মুখস্ত করলে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর লিখতে সুবিধা হবে। তবে মনে রাখতে হবে, কেবল মুখস্ত করাই যথেষ্ট নয়। বিষয়বস্তুর গভীর বোঝাপড়া এবং নিজের চিন্তাভাবনা যুক্ত করে রচনা করলেই সফল হওয়া যাবে। এছাড়াও, বিভিন্ন উদাহরণ ব্যবহার করে রচনাকে আরও আকর্ষণীয় ও তথ্যপূর্ণ করা সম্ভব। পরিশেষে, নিয়মিত অনুশীলনই রচনা রচনায় দক্ষতা অর্জনে সহায়ক। এই আশা রাখি আজকের আলোচনা আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে।