এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “বায়ুতে বা অক্সিজেনের উপস্থিতিতে মিথেনের দহনে কী উৎপন্ন হয়? বিক্রিয়ার সমীকরণ দাও। এই বিক্রিয়ার গুরুত্ব কী?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বায়ুতে বা অক্সিজেনের উপস্থিতিতে মিথেনের দহনে কী উৎপন্ন হয়? বিক্রিয়ার সমীকরণ দাও। এই বিক্রিয়ার গুরুত্ব কী?
মিথেনের দহন – মিথেন সহজদাহ্য পদার্থ। অতিরিক্ত বায়ু বা অক্সিজেনের উপস্থিতিতে অগ্নিসংযোগ করলে মিথেন জ্বলে উঠে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জলীয় বাষ্প উৎপন্ন করে এবং প্রচুর তাপশক্তি নির্গত হয়।
CH4 + 2O2 → CO2 + 2H2O + 213 kcal/mol
গুরুত্ব – এই বিক্রিয়াটি একটি তাপ উৎপাদক বিক্রিয়া তাই মিথেন তাপ উৎপাদক জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
মিথেনের দহন একটি তাপ-উৎপাদক না তাপ-হারক বিক্রিয়া?
মিথেনের দহন একটি তাপ-উৎপাদক (Exothermic) বিক্রিয়া। কারণ এই বিক্রিয়া সংঘটিত হলে প্রচুর পরিমাণে তাপশক্তি পরিবেশে মুক্ত হয়।
মিথেন জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করলে পরিবেশের উপর এর কী প্রভাব পড়ে?
মিথেন জ্বালানি হিসেবে পোড়ালে এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂) গ্যাস উৎপন্ন করে, যা একটি প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস। এই গ্যাস বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। তবে, প্রাকৃতিক গ্যাস (যার মূল উপাদান মিথেন) অন্য জীবাশ্ম জ্বালানির (যেমন – কয়লা) তুলনায় কম CO₂ উৎপন্ন করে।
মিথেনের দহনের জন্য কী কী শর্ত প্রয়োজন?
মিথেনের দহন ঘটার জন্য তিনটি মূল শর্ত প্রয়োজন –
1. জ্বালানি (মিথেন),
2. দহনকারী বস্তু (অক্সিজেন গ্যাস),
3. জ্বলনাঙ্কে পৌঁছানোর জন্য প্রারম্ভিক তাপশক্তি (অগ্নিসংযোগ)।
মিথেনের দহনে যদি অক্সিজেনের পরিমাণ সীমিত হয়, তাহলে কী হবে?
যদি অক্সিজেনের সরবরাহ সীমিত বা অপর্যাপ্ত হয়, তাহলে অসম্পূর্ণ দহন ঘটে। এই ক্ষেত্রে কার্বন ডাই-অক্সাইডের বদলে বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড (CO) গ্যাস এবং কার্বন কণা (কালি) উৎপন্ন হয়।
বিক্রিয়ার সমীকরণ (অসম্পূর্ণ দহন) – 2CH₄ (মিথেন) + 3O₂ (অক্সিজেন) → 2CO (কার্বন মনোক্সাইড) + 4H₂O (জল)
মিথেনের দহন বিক্রিয়াটির গুরুত্ব বা ব্যবহারিক প্রয়োগগুলো কী কী?
মিথেনের দহন বিক্রিয়াটির গুরুত্ব অপরিসীম, এর কিছু ব্যবহার নিম্নরূপ –
1. গৃহস্থালি ও শিল্পে জ্বালানি – রান্না, গরম জল করা এবং ঘর গরম করতে প্রাকৃতিক গ্যাস (মিথেন) ব্যবহৃত হয়।
2. বিদ্যুৎ উৎপাদন – অনেক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে টারবাইন চালিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মিথেন জ্বালানো হয়।
3. শিল্প কারখানায় জ্বালানি – বিভিন্ন শিল্প প্রক্রিয়া এবং বয়লারে তাপের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
4. যানবাহনে জ্বালানি – সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস (CNG) গাড়ি, বাস এবং ট্রাক চালানোর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
মিথেনকে একটি ভালো জ্বালানি কেন বলা হয়?
মিথেনকে একটি ভালো জ্বালানি বলা হয় কারণ –
1. এটি উচ্চ তাপশক্তি (প্রতি মোলে 213 kcal) উৎপন্ন করে।
2. এটি সহজলভ্য এবং প্রাকৃতিক গ্যাস আকারে প্রচুর মজুদ রয়েছে।
3. এটি পোড়ানোর পর ছাই বা অন্য কোনো কঠিন বর্জ্য অবশিষ্ট রাখে না।
4. এটি অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির (কয়লা, তেল) তুলনায় অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার, কারণ এটি পোড়ালে ধোঁয়া বা গন্ধ কম হয়।
মিথেনের দহন থেকে উৎপন্ন তাপশক্তির হিসাব কীভাবে করা হয়?
মিথেনের দহন থেকে উৎপন্ন তাপশক্তির বিক্রিয়ায় অংশ নেওয়া সকল বন্ধন ভাঙতে শক্তি ব্যয় হয় এবং নতুন বন্ধন গঠিত হলে শক্তি মুক্ত হয়। মিথেন ও অক্সিজেনের বন্ধন ভাঙার চেয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও পানির বন্ধন গঠনে বেশি শক্তি মুক্ত হয়। এই শক্তির পার্থক্যই বিক্রিয়ায় মুক্ত তাপশক্তি (213 kcal/mol) হিসেবে প্রকাশ পায়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “বায়ুতে বা অক্সিজেনের উপস্থিতিতে মিথেনের দহনে কী উৎপন্ন হয়? বিক্রিয়ার সমীকরণ দাও। এই বিক্রিয়ার গুরুত্ব কী?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন