এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “মিথেনের শনাক্তকরণ পরীক্ষাটি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

মিথেনের শনাক্তকরণ পরীক্ষাটি লেখো।
ওজোনের সঙ্গে মিথেন বিক্রিয়া করে ফরমালডিহাইড উৎপন্ন করে।
CH₄ + 2O₃ → HCHO + H₂O + 2O₂↑
ফরমালডিহাইডকে তার ঝাঁজালো গন্ধ এবং স্ক্রিভারের রং পরীক্ষা (Schryver’s colour test) দ্বারা শনাক্ত করা যায়।
কোনো গ্যাসীয় পদার্থে মিথেনের উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য পরীক্ষনীয় গ্যাসের সঙ্গে ওজোনমিশ্রিত অক্সিজেন যোগ করা হয়। নমুনা গ্যাস মিথেন হলে ফরমালডিহাইডের ঝাঁজালো গন্ধ পাওয়া যায়। গ্যাস মিশ্রণে জল মিশিয়ে লঘু দ্রবণ প্রস্তুত করার পর লঘু দ্রবণ নিয়ে স্ক্রিভারের রং পরীক্ষা করা হয়।
স্ক্রিভারের রং পরীক্ষা (Schryver’s colour test) – 2 মিলি জলীয় ফিনাইলহাইড্রাজিন হাইড্রোক্লোরাইড এবং 1 মিলি 5% পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড দ্রবণের মিশ্রণে উপরোক্ত লঘু ফরমালডিহাইডের দ্রবণ যোগ করে 5 মিলি গাঢ় হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড যোগ করা হয়। দ্রবণে ফরমালডিহাইড থাকলে গোলাপি লাল রং উৎপন্ন হয়।
ফরমালডিহাইডের উপস্থিতি প্রমাণিত হলে সিদ্ধান্ত করা যায় যে পরীক্ষনীয় গ্যাসটি মিথেন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
মিথেন শনাক্তকরণের এই পরীক্ষার মূল নীতিটি কী?
এই পরীক্ষার মূল নীতি হলো মিথেন (CH₄) গ্যাসকে প্রথমে একটি সহজে শনাক্তযোগ্য যৌগে রূপান্তর করা। ওজোন (O₃) এর সাথে বিক্রিয়ার ফলে মিথেন থেকে ফরমালডিহাইড (HCHO) উৎপন্ন হয়। ফরমালডিহাইডের একটি সুনির্দিষ্ট ঝাঁজালো গন্ধ রয়েছে এবং এটি স্ক্রিভারের রঙ পরীক্ষা মতো সহজ রাসায়নিক পরীক্ষার মাধ্যমে সহজে শনাক্ত করা যায়। তাই মূলত মিথেন শনাক্ত করার জন্য ফরমালডিহাইডকেই শনাক্ত করা হয়।
মিথেন শনাক্তকরণের পরীক্ষা দিয়ে কি গ্যাসীয় নমুনায় অল্প পরিমাণ মিথেনও শনাক্ত করা সম্ভব?
এটি একটি গুণগত পরীক্ষা, যা কেবল মিথেনের উপস্থিতি নির্দেশ করে; এর সঠিক পরিমাণ (পরিমাণগত তথ্য) নির্ধারণ করতে পারে না। তবে স্ক্রিভারের পরীক্ষা যথেষ্ট সংবেদনশীল — অল্প পরিমাণ মিথেন থাকলেও যদি পর্যাপ্ত ফরমালডিহাইড তৈরি হয়, তবে তা শনাক্ত করা সম্ভব। খুব অল্প ঘনত্ব শনাক্ত করতে আধুনিক যন্ত্রপাতি (যেমন গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফ) ব্যবহার করা আরও কার্যকর।
মিথেন শনাক্ত করতে কোন রাসায়নিক বিক্রিয়াটি ব্যবহার করা হয়?
মিথেন শনাক্ত করতে ওজোন (O₃) এর সাথে এর বিক্রিয়াটি ব্যবহার করা হয়। বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ –
CH₄ + 2O₃ → HCHO + H₂O + 2O₂↑
এই বিক্রিয়ায় মিথেন (CH₄) ওজোনের সাথে বিক্রিয়া করে ফরমালডিহাইড (HCHO) উৎপন্ন করে।
মিথেন শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ফরমালডিহাইড কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ফরমালডিহাইড এই পরীক্ষার একটি মধ্যবর্তী যৌগ। মিথেনের সাথে ওজোনের বিক্রিয়ায় এটি তৈরি হয়। যেহেতু ফরমালডিহাইডকে সহজেই তার গন্ধ ও রং পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়, তাই এর উপস্থিতি পরোক্ষভাবে প্রমাণ করে যে নমুনা গ্যাসটিতে মিথেন ছিল।
স্ক্রিভারের রং পরীক্ষাটি বিস্তারিত বর্ণনা করো।
স্ক্রিভারের রং পরীক্ষা নিম্নলিখিত ধাপগুলোতে সম্পন্ন করা হয় –
1. প্রথমে 2 মিলি জলীয় ফিনাইলহাইড্রাজিন হাইড্রোক্লোরাইড এবং 1 মিলি 5% পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড দ্রবণ মেশানো হয়।
2. এই মিশ্রণে ফরমালডিহাইডের লঘু দ্রবণ যোগ করা হয়।
3. তারপর মিশ্রণে 5 মিলি গাঢ় হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড যোগ করা হয়।
4. যদি ফরমালডিহাইড উপস্থিত থাকে, তবে দ্রবণটি একটি স্পষ্ট গোলাপি-লাল রং ধারণ করবে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “মিথেনের শনাক্তকরণ পরীক্ষাটি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন