পর্যায়-সারণিতে মৌলের জারণ-বিজারণ ধর্মের পর্যাবৃত্তি কীভাবে ঘটে?

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “পর্যায়-সারণিতে মৌলের জারণ-বিজারণ ধর্মের পর্যাবৃত্তি কীভাবে ঘটে তা উদাহরণসহ উল্লেখ করো। অথবা, পর্যায়-সারণিতে পর্যায় ও শ্রেণি বরাবর মৌলের জারণ ও বিজারণ ধর্মের কীভাবে পরিবর্তন ঘটে?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পর্যায়-সারণি এবং মৌলদের ধর্মের পর্যাবৃত্ততা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

পর্যায়-সারণিতে মৌলের জারণ-বিজারণ ধর্মের পর্যাবৃত্তি কীভাবে ঘটে তা উদাহরণসহ উল্লেখ করো। অথবা, পর্যায়-সারণিতে পর্যায় ও শ্রেণি বরাবর মৌলের জারণ ও বিজারণ ধর্মের কীভাবে পরিবর্তন ঘটে?
Contents Show

পর্যায়-সারণিতে মৌলের জারণ-বিজারণ ধর্মের পর্যাবৃত্তি কীভাবে ঘটে তা উদাহরণসহ উল্লেখ করো।

অথবা, পর্যায়-সারণিতে পর্যায় ও শ্রেণি বরাবর মৌলের জারণ ও বিজারণ ধর্মের কীভাবে পরিবর্তন ঘটে?

পর্যায় বরাবর –

কোনো পর্যায়ের প্রথম মৌল থেকে আরম্ভ করে ডান দিকে অগ্রসর হলে মৌলসমূহের বিজারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়। অন্যদিকে পর্যায় বরাবর বাম থেকে ডান দিকে অগ্রসর হলে তাদের জারণ ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। কারণ, পর্যায় বরাবর বামদিক থেকে ডানদিকে অগ্রসর হলে পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নিউক্লিয় চার্জ বৃদ্ধি পায়। ফলে সর্ববহিস্থ কক্ষের ইলেকট্রনগুলির উপর নিউক্লিয় আকর্ষণ বল ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং মৌলগুলির ইলেকট্রন ত্যাগের প্রবণতা হ্রাস পায়। যেমন – দ্বিতীয় পর্যায়ে লিথিয়াম শক্তিশালী বিজারক আবার ফ্লুরিন তীব্রতম জারক পদার্থ, 2 নং পর্যায়ে মৌলগুলির বিজারণ ধর্মের ক্রম – Li > Be > B > C > N > O > F

শ্রেণি বরাবর –

পর্যায় সারণির কোনো একটি শ্রেণি ধরে উপর থেকে নীচে নামলে মৌলসমূহের বিজারণ ক্ষমতা ক্রমশ বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ জারণ ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পায়। কারণ, শ্রেণি বরাবর ওপর থেকে নীচের দিকে গেলে পরমাণুর ব্যাসার্ধ তথা আকার ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। ফলে সর্ববহিস্থ কক্ষের ইলেকট্রনগুলির ওপর নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ ক্রমশ কমতে থাকে এবং মৌলগুলির যোজ্যতা কক্ষ থেকে ইলেকট্রন ত্যাগের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। যেমন – গ্রুপ 17 -এর মৌলগুলির জারণ ক্ষমতার ক্রম – F > Cl > Br > I

বিজারণ ক্ষমতার ক্রম – F < Cl < Br < I

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

জারণ ক্ষমতা এবং বিজারণ ক্ষমতা বলতে কী বোঝায়?

জারণ ক্ষমতা – জারণ ক্ষমতা হলো কোনো মৌল বা যৌগের অন্য একটি প্রজাতিকে (species) জারিত করার (ইলেকট্রন গ্রহণ করার) সামর্থ্য। যে প্রজাতি ইলেকট্রন গ্রহণ করে তাকে জারক বলে।
বিজারণ ক্ষমতা – বিজারণ ক্ষমতা হলো অন্য একটি প্রজাতিকে বিজারিত করার (ইলেকট্রন দান করার) সামর্থ্য। যে প্রজাতি ইলেকট্রন দান করে তাকে বিজারক বলে।

পর্যায় বরাবর (বাম থেকে ডানে) জারণ ক্ষমতা বাড়ে কিন্তু বিজারণ ক্ষমতা কমে –এর মূল কারণ কী?

পর্যায় বরাবর (বাম থেকে ডানে) জারণ ক্ষমতা বাড়ে কিন্তু বিজারণ ক্ষমতা কমে –এর মূল কারণ হল নিউক্লিয়াসের কার্যকরী আধান (Effective Nuclear Charge) বৃদ্ধি পাওয়া।
1. একটি পর্যায়ে বাম থেকে ডানে যাওয়ার সময় পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক আধান বাড়ে, কিন্তু নতুন ইলেকট্রনগুলো একই প্রধান শক্তিস্তরে (n) যুক্ত হয়।
2. এর ফলে নিউক্লিয়াসের ইলেকট্রন আকর্ষণের বল বৃদ্ধি পায়।
3. ফলে পরমাণুর আকার (Atomic radius) কমতে থাকে।
4. এই কারণে সর্ববহিঃস্থ ইলেকট্রনগুলোকে নিউক্লিয়াস শক্তভাবে ধরে রাখে। তাই, ইলেকট্রন ত্যাগ করা (বিজারক হওয়া) কঠিন হয়ে পড়ে কিন্তু অন্যের ইলেকট্রন গ্রহণ (জারক হওয়া) তুলনামূলকভাবে সহজ হয়।

দ্বিতীয় পর্যায়ের মৌলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বিজারক এবং সবচেয়ে শক্তিশালী জারক কোনগুলো? উদাহরণ দাও।

দ্বিতীয় পর্যায়ের সবচেয়ে শক্তিশালী বিজারক হল লিথিয়াম (Li), কারণ তার ইলেকট্রন ত্যাগের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। সবচেয়ে শক্তিশালী জারক হল ফ্লুরিন (F), কারণ তার ইলেকট্রন গ্রহণের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।
বিজারণ ক্ষমতার ক্রম – Li > Be > B > C > N > O > F
জারণ ক্ষমতার ক্রম – F > O > N > C > B > Be > Li

হ্যালোজেন মৌলগুলোর (Group 17) মধ্যে জারণ ক্ষমতার ক্রম কী এবং কেন?

হ্যালোজেন মৌলগুলোর জারণ ক্ষমতার ক্রম হল – F > Cl > Br > I
কারণ – হ্যালোজেন শ্রেণিতে উপর থেকে নীচে নামার সাথে সাথে পরমাণুর আকার বাড়ে। ফলে নিউক্লিয়াসের ইলেকট্রন আকর্ষণ বল কমে যায়, তাই ঋণাত্মক আয়ন গঠনের প্রবণতা হ্রাস পায়। এজন্য জারণ ক্ষমতা উপর থেকে নীচের দিকে কমতে থাকে।

ক্ষারক ধাতুগুলোর (Group 1) মধ্যে বিজারণ ক্ষমতার ক্রম কী?

ক্ষারক ধাতুগুলোর (Li, Na, K, Rb, Cs, Fr) বিজারণ ক্ষমতার ক্রম হল – Li < Na < K < Rb < Cs < Fr
কারণ – শ্রেণি বরাবর নীচের দিকে নামলে পরমাণুর আকার বাড়ে এবং সর্ববহিঃস্থ ইলেকট্রন নিউক্লিয়াস থেকে দূরে চলে যায়। ফলে আকর্ষণ বল দুর্বল হয় এবং ইলেকট্রন ত্যাগ করা সহজ হয়।
তাই, উপর থেকে নীচে যাওয়ার সাথে সাথে বিজারণ ক্ষমতা বাড়ে। সিজিয়াম (Cs) সবচেয়ে শক্তিশালী সাধারণ বিজারক। (ফ্রানসিয়াম তেজস্ক্রিয় ও অত্যন্ত দুর্লভ, তাই সাধারণত আলোচনায় আনা হয় না)।

নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলোর (Group 18) জারণ-বিজারণ ধর্ম কেমন হয়?

নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলোর ইলেকট্রন বিন্যাস অত্যন্ত স্থিতিশীল (Stable octet বা duplet পূর্ণ)। তাই এদের সাধারণত না ইলেকট্রন ত্যাগ করার (বিজারক), না ইলেকট্রন গ্রহণ করার (জারক) প্রবণতা থাকে।
এ কারণেই এদেরকে জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ায় নিষ্ক্রিয় (Inert) ধরা হয়। তবে, কিছু ভারী নিষ্ক্রিয় গ্যাস (যেমন – Xe, Kr) বিশেষ কিছু অবস্থায় অত্যন্ত তড়িৎ-ঋণাত্মক মৌলের সাথে বিক্রিয়া করে যৌগ গঠন করতে পারে (যেমন – XeF₂, XeF₄, XeF₆)।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “পর্যায়-সারণিতে মৌলের জারণ-বিজারণ ধর্মের পর্যাবৃত্তি কীভাবে ঘটে তা উদাহরণসহ উল্লেখ করো। অথবা, পর্যায়-সারণিতে পর্যায় ও শ্রেণি বরাবর মৌলের জারণ ও বিজারণ ধর্মের কীভাবে পরিবর্তন ঘটে?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পর্যায়-সারণি এবং মৌলদের ধর্মের পর্যাবৃত্ততা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ব্রোমিনের সঙ্গে অ্যাসিটিলিনের যুত বিক্রিয়াটি উল্লেখ করো।

ব্রোমিনের সঙ্গে অ্যাসিটিলিনের যুত বিক্রিয়াটি উল্লেখ করো।

কার্যকরী মূলক বা ক্রিয়াশীল গ্রুপ কাকে বলে? কার্যকরী মূলক ও জৈব মূলকের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।

কার্যকরী মূলক বা ক্রিয়াশীল গ্রুপ কাকে বলে? কার্যকরী মূলক ও জৈব মূলকের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।

একটি জৈব যৌগের আণবিক সংকেত C₂H₄O₂। যৌগটি জলে দ্রাব্য এবং যৌগটির জলীয় দ্রবণে NaHCO₃ যোগ করলে CO₂ নির্গত হয়। জৈব যৌগটিকে শনাক্ত করো। জৈব যৌগটির সঙ্গে ইথানলের বিক্রিয়া শর্ত ও সমিত রাসায়নিক সমীকরণসহ লেখো।

C₂H₄O₂ সংকেতের একটি জৈব যৌগ NaHCO₃-এর সাথে CO₂ গ্যাস দেয়। যৌগটি শনাক্ত করো ও ইথানলের সাথে এর বিক্রিয়ার শর্তসহ সমীকরণ দাও।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণস্থল উল্লেখ করে এর প্রধান কাজগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

ইনসুলিন হরমোনের প্রধান কাজগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

হরমোনের ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ কাকে বলে? উদাহরণসহ হরমোনের ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

প্রাণীদেহের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণে হরমোনের ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

প্রাণী হরমোনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।