এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কীভাবে উনিশ শতকের ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছিল?

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কীভাবে উনিশ শতকের ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছিল? নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কীভাবে উনিশ শতকের ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কীভাবে উনিশ শতকের ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছিল?

নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কীভাবে উনিশ শতকের ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছিল?

নব্যবঙ্গ আন্দোলন –

পরিচিতি –

হিন্দু কলেজের তরুণ অধ্যাপক ডিরোজিও তার ছাত্রদের মনে জ্বেলে দেন পাশ্চাত্যের যুক্তিবাদ, সাহিত্য ও দর্শনের দীপশিখা। তাঁর চিন্তা-চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে ওই কলেজের একদল ছাত্র উনিশ শতকের প্রথমার্ধে হিন্দুধর্ম ও সমাজের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেন এবং পাশ্চাত্যের অনুকরণে এক চরমপন্থী মতাদর্শ গড়ে তোলেন। ইতিহাসে এই আন্দোলন ‘নব্যবঙ্গ আন্দোলন’ নামে পরিচিত।

লক্ষ্য ও কর্মসূচি –

নব্যবঙ্গীয়দের মূল লক্ষ্য ছিল হিন্দুধর্ম ও সমাজের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা। তাঁরা যেমন মূর্তি পূজা, উপবীত ধারণের বিরোধিতা করেছিলেন তেমনই স্ত্রী শিক্ষার প্রসার, সতীদাহ প্রথা রদ, বাক্ স্বাধীনতার স্বপক্ষে সোচ্চার হয়েছিলেন। তাঁরা ‘পার্থেনন’, ‘জ্ঞানান্বেষণ’, ‘ক্যালাইডোস্কোপ’, ‘এনকোয়ারার’ প্রভৃতি পত্র-পত্রিকার প্রকাশনার মাধ্যমে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন গঠন –

1828 খ্রিস্টাব্দে ডিরোজিও তার ছাত্রমণ্ডলীকে নিয়ে অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন গঠন করেন। উল্লেখ্য, এটিই ছিল বাংলা তথা ভারতের প্রথম ছাত্র সংগঠন তথা বিতর্ক সভা। ডিরোজিয়ানদের মুক্তচিন্তা এখানেই ভাষা পেত।

নেতৃবর্গ –

ডিরোজিও -র অনুগামীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন – রামগোপাল ঘোষ, প্যারীচাঁদ মিত্র, রামতনু লাহিড়ি, কৃষ্ণমোহন ব্যানার্জি, রাধানাথ শিকদার প্রমুখ।

ব্যর্থতা –

বিপুল উদ্দীপনা জাগিয়ে শুরু হলেও ডিরোজিওর অকাল প্রয়াণের পর উপযুক্ত নেতৃত্ব, সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি এবং জনসমর্থনের অভাবে এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

মন্তব্য –

নব্যবঙ্গ আন্দোলন সমাজের মূলস্রোত থেকে ছিল বিচ্ছিন্ন। শুধুমাত্র পাশ্চাত্য ভাবধারার অন্ধ অনুকরণ করায় সমাজ বা জাতির জীবনে তারা কোনো দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রেখে যেতে পারেনি। ড. অনীল শীল তাই সমালোচনার সুরে বলেছেন – ‘এক প্রজন্মেই তাদের সব শেষ, তাদের কোনো পিতা এবং সন্তান-সন্ততি নেই।’

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কারা ছিলেন?

নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী ছিলেন হিন্দু কলেজের একদল প্রগতিশীল ছাত্র ও যুবক, যারা ডিরোজিওর চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে হিন্দু সমাজের কুসংস্কার ও রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। তাঁরা পাশ্চাত্য যুক্তিবাদ, মুক্তচিন্তা ও সমাজ সংস্কারের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন।

নব্যবঙ্গ আন্দোলনের মূল লক্ষ্য কী ছিল?

নব্যবঙ্গ আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল –
1. হিন্দু সমাজের কুসংস্কার (যেমন – মূর্তিপূজা, বর্ণবৈষম্য, শিশুবিবাহ) এর বিরুদ্ধে সংস্কার আন্দোলন গড়ে তোলা।
2. নারীশিক্ষা, সতীদাহ প্রথা বিলোপ ও বাকস্বাধীনতার পক্ষে জনমত তৈরি করা।
3. পাশ্চাত্য বিজ্ঞান, দর্শন ও যুক্তিবাদের মাধ্যমে সমাজে প্রগতিশীল চিন্তার প্রসার ঘটানো।

নব্যবঙ্গীয়রা কীভাবে ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছিলেন?

নব্যবঙ্গীয়রা যেভাবে ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছিলেন –
1. ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরোধিতা – তারা হিন্দুধর্মের রীতিনীতি যেমন – মূর্তিপূজা, জাতিভেদ, উপবীত ধারণের সমালোচনা করেছিলেন।
2. সামাজিক সংস্কার – সতীদাহ প্রথার বিরোধিতা, নারীশিক্ষার প্রসার এবং বিধবাবিবাহের পক্ষে মত দেন।
3. ব্রিটিশ শাসনের দ্বৈত নীতির সমালোচনা – যদিও তারা পাশ্চাত্য শিক্ষায় অনুপ্রাণিত ছিলেন, তবুও ঔপনিবেশিক শাসনের বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধেও কণ্ঠ তুলেছিলেন।
4. সাংস্কৃতিক পরিবর্তন – বাংলা সাহিত্য ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে মুক্তচিন্তার প্রচার করেন (যেমন – পার্থেনন, জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকা)।

নব্যবঙ্গ আন্দোলন কেন ব্যর্থ হয়েছিল?

নব্যবঙ্গ আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছিল কারণ –
1. ডিরোজিওর অকালমৃত্যুর পর নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি হয়।
2. তাঁদের চিন্তাধারা সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন পায়নি, কারণ তা ছিল মূলত ইংরেজি শিক্ষিত অভিজাত শ্রেণিকেন্দ্রিক।
3. রক্ষণশীল হিন্দু সমাজ ও ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

নব্যবঙ্গ আন্দোলনের উত্তরাধিকার কী?

যদিও এই আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, তবুও এটি বাংলার নবজাগরণের পথ প্রশস্ত করেছিল। পরবর্তীতে ব্রাহ্মসমাজ, ইয়ং বেঙ্গল ও অন্যান্য সংস্কার আন্দোলনে নব্যবঙ্গীয়দের ভাবধারা প্রভাব ফেলেছিল।

সমালোচকরা নব্যবঙ্গ আন্দোলন সম্পর্কে কী বলেন?

ড. অনীল শীলের মতে, নব্যবঙ্গীয়রা ছিলেন “এক প্রজন্মের ফেনোমেনন” – তাদের কোনো পূর্বসূরি বা উত্তরাধিকার ছিল না। তাঁরা পাশ্চাত্য অনুকরণে এতটাই মগ্ন ছিলেন যে বাংলার সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারেননি।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কীভাবে উনিশ শতকের ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কীভাবে উনিশ শতকের ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Share via:

মন্তব্য করুন