এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল – নীলকররা নীলচাষিদের উপর কীভাবে অত্যাচার করত?

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। নীলকররা নীলচাষিদের উপর কীভাবে অত্যাচার করত তা সংক্ষেপে আলোচনা করো। নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। নীলকররা নীলচাষিদের উপর কীভাবে অত্যাচার করত তা সংক্ষেপে আলোচনা করো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। নীলকররা নীলচাষিদের উপর কীভাবে অত্যাচার করত তা সংক্ষেপে আলোচনা করো।

নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো।

প্রাক্ কথন –

পরাধীন ভারতের ইতিহাসে এক তাৎপর্যময় বর্ণাঢ্য ঘটনা হলো 1859 – 1860 খ্রিস্টাব্দে নীল বিদ্রোহ। প্রকৃতপক্ষে এই বিদ্রোহ ছিল নীলকর সাহেবদের শোশন তথা পাশবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে দরিদ্র নীল চাষীদের ঐক্যবদ্ধ ব্রিটিশবিরোধী এক স্বতস্ফুর্ত গণ আন্দোলন।

নীল বিদ্রোহের কারণ –

একাধিক কারণে নীল চাষিরা নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল। যথা –

  • চাষিদের কাছে নীল চাষ ছিল অত্যন্ত অলাভজনক। কৃষক কৃষকেরা শ্রমের ন্যায্যমূল্য পেতেন না। তাদের বিঘা প্রতি আড়াই টাকা লোকসান হতো। তাই তারা নীলচাষে অনিচ্ছুক ছিল।
  • নীলকররা নীল চাষের জন্য উর্বর জমি বেছে নেওয়ার ফলে, খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমে যায় এবং চাষীদের খাদ্যশস্যের অভাব দেখা দেয়।
  • নীলকর সাহেবেরা চাষীদের (বিঘা প্রতি দুই টাকা করে) অগ্রিম অর্থ বা ‘দাদন’ দিয়ে আজীবন নীলচাষে বাধ্য করত। ‘দাদন’ গ্রহণের সময় নিরক্ষর কৃষকদের এমনই প্রতারণামূলক চুক্তিপত্রে সই করানো হতো যে, চাষিরা নিজের জমিতেগ বংশপরম্পরায় ভূমিদাসে পরিণত হতো।
  • চাষীদের বাধ্যতামূলক নীল চাষ করানোর জন্য, ইংরেজ সরকার 1830 খ্রিস্টাব্দে আইন তৈরি করেন। এই আইন পঞ্চম আইন নামে পরিচিত।
  • নীলচাষ করতে না চাইলে নীলকর সাহেবেরা নীলচাষীদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার চালাত। চাষীদের নীলকুঠিতে আটকে রেখে নানাভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হতো। তাদের গবাদি পশু ও ফসল কেড়ে নেওয়া হতো, ধানের গোলায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হতো, এমনকি চাষীদের স্ত্রী-কন্যাদের ওপরও নির্যাতন চালানো হতো।

যদিও চাষিরা প্রথমেই বিদ্রোহী হয়ে ওঠেনি। প্রতিকারের আশায় প্রথমে তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়। সেখান থেকে কোন সুফল না পাওয়ায়, তারা বাধ্য হয়েই বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

বিদ্রোহের সূচনা –

এই অবস্থায় 1859 খ্রিস্টাব্দে নদীয়ার চৌগাছা গ্রামের বিষ্ণুচরন বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাস নামে দুই চাষি নীল চাষ করতে অস্বীকার করেন এবং নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে সরব হন। শুরু হয় নীল বিদ্রোহ।

বিস্তার –

বিশ্বাস ভাতৃদ্বয়ের হাত ধরে খুব তাড়াতাড়ি এই বিদ্রোহ চৌগাছা গ্রাম ছাড়িয়ে, সমগ্র নদীয়া, যশোর পাবনা, ফরিদপুর, রাজশাহী, খুলনা, মালদা, মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুর, বারাসাত সহ গোটা গোটা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। বাংলার প্রায় 60 লক্ষ কৃষক এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেছিল।

নেতৃত্ব বর্গ –

নীল বিদ্রোহের উল্লেখযোগ্য নেতারা হলেন – বিষ্ণুচরন বিশ্বাস, দিগম্বর বিশ্বাস, রফিক মণ্ডল, কাদের মোল্লা, রামরতন মল্লিক (বাংলার নানাসাহেব) প্রমুখ।

বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য –

এই বিদ্রোহটি বিভিন্ন দিক থেকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত যথা –

  • নীল বিদ্রোহ ছিল একটি স্বতঃস্ফূর্ত কৃষক বিদ্রোহ।
  • এই বিদ্রোহ জমিদার বিরোধী ছিল না মূলত নীলকরদের অত্যাচারের প্রতিবাদ স্বরূপ এই বিদ্রোহ পরিচালিত হয়েছিল।
  • জমিদারদের একাংশ এই বিদ্রোহে কৃষক দেশ সমর্থন করেছিলেন। যথা – চন্ডীপুরের জমিদার শ্রীহরি রায় বিদ্রোহী কৃষকদের পক্ষে ছিলেন।
  • এই বিদ্রোহ ছিল সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ বাংলার হিন্দু মুসলমান কৃষক সম্প্রদায় একত্রে এই বিদ্রোহের শামিল হয়েছিল।
  • বিদ্রোহী কৃষকরা নীলকুঠি আক্রমণ করে লুট ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে এই বিদ্রোহকে হিংসার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল।
  • শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজ এই বিদ্রোহকে সমর্থন জানিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ এর সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর পত্রিকাতে নীল চাষীদের পক্ষে এবং নীলকরদের বিরুদ্ধে জোরালো খবর প্রকাশ করতেন।

ফলাফল ও গুরুত্ব –

বিদ্রোহের তীব্রতার কাছে নীলকররা মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়। প্রকৃতপক্ষে এই বিদ্রোহের প্রভাব ছিল সুদূর প্রসারী। যথা –

  • এই বিদ্রোহ প্রমাণ করে যে, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কাছে স্বৈরাচার মাথা নোয়াতে বাধ্য যা পরাধীন ভারতবাসীকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উৎসাহিত করে।
  • নীলবিদ্রোহের তীব্রতায় সরকার বাধ্য হয়ে, ‘নীল কমিশন’ গঠন করে (1860 খ্রিস্টাব্দ)।
  • কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ‘নীল চুক্তি’ আইন রদ করে, নীলচাষকে চাষীদের ইচ্ছাধীন ঘোষণা করা হয়।
  • অনেকের মতে, নীল ধর্মঘটই ছিল ভারতবর্ষের বুকে প্রথম ধর্মঘট।

উপসংহার –

পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলা তথা ভারতের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে নীল বিদ্রোহ ছিল একটি সঙ্গবদ্ধ স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলন। প্রকৃতপক্ষে, পরাধীন ভারতের মাটিতে নীল বিদ্রোহ জাতীয় আন্দোলনের প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। যা পরবর্তীকালে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারের ঘৃণ্য শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রধান অস্ত্র হিসাবে গ্রহণ করেছিল।

নীলকররা নীলচাষিদের উপর কীভাবে অত্যাচার করত তা সংক্ষেপে আলোচনা করো।

1859-1860 খ্রিস্টাব্দে নীলকর সাহেবদের সীমাতীত অত্যাচার ও শোষণের প্রতিবাদে কৃষকরা তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। নীলকররা নীলচাষিদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার করত-বলপূর্বক আটক, প্রহার, গৃহে অগ্নিসংযোগ, কৃষি-সরঞ্জাম বাজেয়াপ্তকরণ প্রভৃতি ছিল নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। এমনকি চাষিদের স্ত্রী-কন্যাদের সম্মানহানি করতেও নীলকর সাহেবরা পিছপা হত না।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

নীল বিদ্রোহ কী?

নীল বিদ্রোহ (1859-1860) ছিল ব্রিটিশ নীলকর সাহেবদের শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাংলার কৃষকদের স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলন।

নীল বিদ্রোহ কোথায় শুরু হয়?

1859 সালে নদীয়ার চৌগাছা গ্রামে বিষ্ণুচরন বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাসের নেতৃত্বে বিদ্রোহ শুরু হয়।

নীল বিদ্রোহের বিস্তার কেমন ছিল?

এটি নদীয়া, যশোর, পাবনা, ফরিদপুর, রাজশাহী, মালদা, মুর্শিদাবাদ, খুলনা, দিনাজপুর ও বারাসাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় 60 লক্ষ কৃষক অংশ নেয়।

নীল বিদ্রোহের নেতৃত্বে কারা ছিলেন?

বিষ্ণুচরন বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাস (চৌগাছা)। রফিক মণ্ডল, কাদের মোল্লা, রামরতন মল্লিক (বাংলার নানাসাহেব)।

নীল বিদ্রোহের ফলাফল কী ছিল?

নীল বিদ্রোহের ফলাফলগুলি হল –
1. ব্রিটিশ সরকার নীল কমিশন (1860) গঠন করে।
2. নীল চুক্তি আইন বাতিল করে চাষীদের ইচ্ছাধীন নীলচাষ দেওয়া হয়।
3. ভারতের প্রথম সফল কৃষক বিদ্রোহ হিসেবে স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রেরণা যুগিয়েছিল।

নীল বিদ্রোহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?

এটি ছিল ব্রিটিশ শোষণের বিরুদ্ধে প্রথম সফল কৃষক বিদ্রোহ, যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রামে গণআন্দোলনের ভিত্তি তৈরি করে।

নীল বিদ্রোহকে “প্রথম ধর্মঘট” বলা হয় কেন?

নীল বিদ্রোহকে “প্রথম ধর্মঘট” কারণ এটি ছিল সংগঠিত কৃষক প্রতিরোধ, যেখানে চাষীরা একত্রে নীলচাষ বন্ধ করে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নীল বিদ্রোহের কারণ লেখো। নীলকররা নীলচাষিদের উপর কীভাবে অত্যাচার করত তা সংক্ষেপে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “নীল বিদ্রোহের কারণ লেখো। নীলকররা নীলচাষিদের উপর কীভাবে অত্যাচার করত তা সংক্ষেপে আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Share via:

মন্তব্য করুন