অবরোহণ কি? অবরোহণের নিয়ন্ত্রক বলতে কি বোঝ?

অবরোহণ বা ক্ষয়সাধন হল বহির্জাত প্রক্রিয়াসমূহের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা পর্যায়ক্রমিকভাবে হ্রাস পাওয়া বা ভূমিভাগ নীচু হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া। এটি নগ্নীভবন বা নির্মোচনের মাধ্যমে ঘটে।

অবরোহণের মাত্রা নির্ভর করে নিম্নলিখিত প্রাকৃতিক অবস্থার ওপর –
1. নদী, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয় করার ক্ষমতা।
2. পুঞ্জিত স্খলনের পরিমাণ।
3. আবহবিকারের তীব্রতা ও ব্যাপ্তি।
4. ভূমিরূপের বৈশিষ্ট্য।
5. ভূতাত্ত্বিক অবস্থা (ভূ-আলোড়ন, শিলার গঠন ও প্রকৃতি)।
6. আবহাওয়া ও জলবায়ুগত অবস্থা (উষ্ণতা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি)।
7. স্বাভাবিক উদ্ভিদের আচ্ছাদন প্রভৃতি।

অবরোহণ বা ক্ষয়সাধন প্রক্রিয়ায় ভূমির উচ্চতা হ্রাস পায় এবং ভূমি নতুন রূপ ধারণ করে। এই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ক্ষয়জাত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, যেমন নদীর ক্ষেত্রে ‘V’ আকৃতির উপত্যকা গড়ে ওঠে।

আবহবিকার হল শিলার ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তন যা শিলাকে ভাঙ্গনপ্রবণ করে তোলে, অন্যদিকে অবরোহণ হল সেই ভাঙ্গনপ্রবণ শিলা বা মাটি অপসারণের প্রক্রিয়া। আবহবিকার অবরোহণের পূর্বশর্ত।

নদীর অবরোহণ প্রক্রিয়া প্রধানত তিনটি উপায়ে কাজ করে –
1. ঘর্ষণ (Abrasion) – নদীর পানির সাথে বাহিত শিলাখণ্ড দ্বারা নদীতল ও তীর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
2. দ্রবণ (Solution) – পানিতে দ্রবীভূত রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা শিলা দ্রবীভূত হয়।
3. আঘাত (Hydraulic Action) – পানির প্রবল স্রোত দ্বারা শিলা খণ্ডিত হয়।

হিমবাহের অবরোহণ প্রক্রিয়া প্রধানত দুটি উপায়ে কাজ করে –
1. ঘর্ষণ (Abrasion) – হিমবাহের নিচে থাকা শিলাখণ্ড দ্বারা ভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
2. প্লাকিং (Plucking) – হিমবাহের চাপে শিলা খণ্ডিত হয়ে হিমবাহের সাথে বাহিত হয়।

বায়ুপ্রবাহের অবরোহণ প্রক্রিয়া প্রধানত দুটি উপায়ে কাজ করে –
1. ঘর্ষণ (Abrasion) – বায়ুর সাথে বাহিত বালিকণা দ্বারা শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
2. অপসারণ (Deflation) – বায়ুপ্রবাহ দ্বারা মাটি ও বালি অপসারিত হয়।

অবরোহণের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –
1. নদীর ক্ষেত্রে ‘V’ আকৃতির উপত্যকা, জলপ্রপাত, গিরিখাত।
2. হিমবাহের ক্ষেত্রে U আকৃতির উপত্যকা, সির্ক, মোরেন।
3. বায়ুপ্রবাহের ক্ষেত্রে ইয়ার্দাং, জিউজেন, বালিয়াড়ি।

অবরোহণ প্রক্রিয়া পরিবেশকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে –
1. ভূমির উচ্চতা হ্রাস পায় এবং নতুন ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়।
2. মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে কৃষিজমির উর্বরতা হ্রাস পায়।
3. নদী ও হিমবাহের অবরোহণ দ্বারা গিরিখাত ও উপত্যকা সৃষ্টি হয় যা ভূদৃশ্যকে পরিবর্তন করে।

অবরোহণ প্রক্রিয়া মানবজীবনকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে –
1. কৃষিজমির উর্বরতা হ্রাস পায় যা কৃষিকাজকে প্রভাবিত করে।
2. নদী ও হিমবাহের অবরোহণ দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে।
3. মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বন্যা ও ভূমিধসের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।