অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো।
Contents Show

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো।

নারী সমাজের সক্রিয় তথা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের এক উজ্জ্বল ইতিবৃত্ত।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে নারী নেতৃত্ব –

ইতিহাসের এই সন্ধিক্ষণে বাসন্তী দেবী, ঊর্মিলা দেবী, সরোজিনী নাইডু, সুনীতি দেবী, হেমপ্রভা মজুমদার, অ্যানি বেসান্ত, জ্যোর্তিময়ী গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ উচ্চ ও মধ্যবিত্ত নারীদের পাশাপাশি সমাজের প্রান্তিক স্তরের বহু নারীরাও আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে নারীদের রাজনৈতিক সভা-সমিতিতে যোগদান –

অসহযোগ আন্দোলনেই প্রথম ভারতীয় নারী সমাজ পুরুষের আজ্ঞাবাহীর পথ ছেড়ে পুরুষের সহকর্মীরূপে, সমমর্যাদায় রাজনৈতিক সভা-সমিতিতে যোগদান করতে শুরু করে। দেশবন্ধুর পত্নী বাসন্তী দেবী বাংলার বিভিন্ন স্থানে পরিভ্রমণ করে গান্ধিজির অসহযোগিতার আদর্শ প্রচার করেন। 1921 খ্রিস্টাব্দে প্রিন্স অব ওয়েলস্ ভারতে এলে বোম্বাইয়ে সহস্রাধিক মহিলা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

মেদিনীপুরের কাঁথিতে বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের নেতৃত্বে ‘ইউনিয়ন বোর্ড বিরোধী আন্দোলনে’ নারীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। 1922 খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের চাঁদপুরে কুলি নিগ্রহ ও স্টীমার ধর্মঘটে দেশপ্রিয়-পত্নী নেলী সেনগুপ্তা এবং হেমপ্রভা মজুমদার নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে নারীবাদী সংগঠন –

ইতিহাসের এই পর্বে অসহযোগ আন্দোলনের সূত্রে বাংলা তথা ভারতের নানা স্থানে একাধিক নারীবাদী সংগঠন গড়ে ওঠে। 1921 খ্রিস্টাব্দে ঊর্মিলা দেবী প্রতিষ্ঠা করেন ‘নারী কর্মমন্দির’, বাসন্তী দেবী প্রতিষ্ঠা করেন ‘নারী সত্যাগ্রহ সমিতি’, আশালতা সেন প্রতিষ্ঠা করেন ‘শিল্পাশ্রম’ প্রভৃতি নারীবাদী সংগঠন। মাদক বিরোধী প্রচার, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ, স্বদেশি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, চরকা ও খাদির ব্যাপক প্রচলন প্রভৃতি কর্মসূচির রূপায়ণে ব্রতী হয় এই সকল প্রতিষ্ঠানগুলি।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে নারীদের মন্তব্য –

অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন ভারতীয় নারী সমাজের মধ্যে প্রবল রাজনৈতিক উদ্দীপনার সঞ্চার করে এবং এই আন্দোলনে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-পেশা-নির্বিশেষে নারী সমাজের বিপুল অংশগ্রহণ ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন মাত্রা সংযোজিত করে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের গুরুত্ব কী ছিল?

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে একটি নতুন মাত্রা যোগ করে। নারীরা শুধু সমর্থনই করেনি, বরং নেতৃত্ব দিয়েছে, সভা-সমিতি আয়োজন করেছে, স্বদেশি প্রচারে অংশ নিয়েছে এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হয়েছে।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে কোন কোন নারী নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে যে সমস্ত নারী নেতৃত্ব দিয়েছিলেন –
1. বাসন্তী দেবী (চিত্তরঞ্জন দাশের পত্নী) – নারী সত্যাগ্রহ সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন।
2. সরোজিনী নাইডু – ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম মহিলা সভাপতি ছিলেন।
3. ঊর্মিলা দেবী – নারী কর্মমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
4. হেমপ্রভা মজুমদার – চাঁদপুরের কুলি নিগ্রহ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
5. অ্যানি বেসান্ত – থিওসফিক্যাল সোসাইটির মাধ্যমে স্বাধীনতা আন্দোলনে অবদান রাখেন।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে নারীরা কীভাবে রাজনৈতিক সভা-সমিতিতে অংশ নিতেন?

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের আগে নারীরা সাধারণত রাজনীতি থেকে দূরে থাকতেন, কিন্তু অসহযোগ আন্দোলনে তারা সক্রিয়ভাবে সভা-সমিতিতে যোগ দিয়ে বক্তৃতা দিতেন, স্বদেশি প্রচার করতেন এবং বিক্ষোভে অংশ নিতেন। যেমন – 1921 সালে প্রিন্স অব ওয়েলসের ভারতে আগমনকালে বোম্বাইয়ে হাজারো মহিলা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের দ্বারা গঠিত কিছু সংগঠনের নাম লেখো।

নারীদের দ্বারা গঠিত কিছু সংগঠনের নাম হল – নারী কর্মমন্দির (ঊর্মিলা দেবী), নারী সত্যাগ্রহ সমিতি (বাসন্তী দেবী), শিল্পাশ্রম (আশালতা সেন) – এই সংগঠনগুলি মাদকবিরোধী আন্দোলন, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ, স্বদেশি শিক্ষা ও খাদি প্রচারে কাজ করত।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে নারীরা কীভাবে স্বদেশি আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন?

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে নারীরা চরকা কাটা, খাদি বুনন, বিদেশি পণ্য বর্জন এবং স্বদেশি স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আন্দোলনে অংশ নেন। তারা অর্থ সংগ্রহ, পিকেটিং এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে সাধারণ নারীদের ভূমিকা কেমন ছিল?

শুধু উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত নারীরা নয়, গ্রামীণ ও প্রান্তিক শ্রেণির নারীরাও এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। তারা স্থানীয় আন্দোলন, ধর্মঘট এবং প্রতিবাদে অংশ নিয়ে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন নারী সমাজকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন নারীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালনে উদ্বুদ্ধ করে। এটি পরবর্তীতে নারী অধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহণের পথ সুগম করে।

মেদিনীপুর ও চাঁদপুরের আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা কী ছিল?

1. মেদিনীপুরের কাঁথি – ইউনিয়ন বোর্ড বিরোধী আন্দোলনে নারীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
2. চাঁদপুর – কুলি নিগ্রহ ও স্টিমার ধর্মঘটে নেলী সেনগুপ্তা ও হেমপ্রভা মজুমদারের নেতৃত্বে নারীরা প্রতিবাদে সামিল হন।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তা বিশ্লেষণ করো।

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তা বিশ্লেষণ করো।

দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের ভারতভুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করো।

দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের ভারতভুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা – কোশ বিভাজন ও কোশচক্র – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা – কোশ বিভাজন ও কোশচক্র – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা – কোশ বিভাজন ও কোশচক্র – বিষয়সংক্ষেপ

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদানের একটি প্রকার হিসেবে গমন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদানের একটি প্রকার হিসেবে গমন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর