অরণ্য আইন বলতে কী বোঝো? 1878 খ্রিস্টাব্দের অরণ্য আইনে কী বলা হয়েছিল?

Gopi

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “অরণ্য আইন বলতে কী বোঝো? 1878 খ্রিস্টাব্দের অরণ্য আইনে কী বলা হয়েছিল? নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “অরণ্য আইন বলতে কী বোঝো? 1878 খ্রিস্টাব্দের অরণ্য আইনে কী বলা হয়েছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

অরণ্য আইন বলতে কী বোঝো? 1878 খ্রিস্টাব্দের অরণ্য আইনে কী বলা হয়েছিল?

অরণ্য আইন বলতে কী বোঝো?

ভূমিকা –

ভারতের বনসম্পদ নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্রিটিশ সরকার (লর্ড ডালহৌসি) 1855 খ্রিস্টাব্দে ‘অরণ্য সনদ’ পাস করে। এর দ্বারা আদিবাসী এবং অরণ্য সংলগ্ন অধিবাসীদের কাঠ সংগ্রহ ও ব্যবসার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

অরণ্য আইন –

1864 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার বন বিভাগ গঠন করে। ডেইট্রিক ব্রান্ডিস হন ভারতীয় বন বিভাগের প্রথম ইন্সপেক্টর জেনারেল। 1865 খ্রিস্টাব্দে পাস হয় প্রথম ভারতীয় অরণ্য আইন। এই আইনে ঘোষণা করা হয় অরণ্যে ঘেরা যেকোনো ভূমিই সরকারের সম্পত্তি।

দ্বিতীয় অরণ্য আইন –

প্রথম আইনের সংশোধনী রূপে 1878 খ্রিস্টাব্দে পাশ হয় দ্বিতীয় ভারতীয় অরণ্য আইন। এই আইনে বনাঞ্চলকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। যথা –

  • সংরক্ষিত অরণ্য – এই শ্রেণির অরণ্যের পূর্ণ কর্তৃত্ব ছিল সরকারের হাতে। এখানে জনগণের প্রবেশ,গাছ কাটা এবং শিকার করা প্রভৃতি কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ ছিল।
  • সুরক্ষিত অরণ্য – স্থানীয় বাসিন্দারা এই জঙ্গল থেকে কাঠ, পাতা, মধু ইত্যাদি সংগ্রহ করতে পারতেন। কিন্তু এগুলি বিক্রি করার অধিকার তাদের ছিল না।
  • শ্রেণি বহির্ভূত অরণ্য – গ্রাম্য বনাঞ্চলে আদিবাসীদের প্রবেশ,কাঠ সংগ্ৰহ সহ সব রকমের অধিকার ছিল।

এছাড়া প্রথম আইনের সংশোধনী রূপে 1927 খ্রিস্টাব্দে অরণ্য বিষয়ক অপরাধ এবং শাস্তি সংক্রান্ত আরেকটি অরণ্য আইন পাস হয়।

উপসংহার –

উপনিবেশিক অরণ্য আইনের ফলে আদিবাসীদের জীবন ও জীবিকায় ব্যাঘাত ঘটে। অরণ্যের অধিকার ফিরে পেতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হয়ে বিদ্রোহে অবতীর্ণ হয়। অরণ্য আইনের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য উপজাতি বিদ্রোহ হল – সাঁওতাল’মুণ্ডা’ ভিল, রাম্পা বিদ্রোহ ইত্যাদি।

1878 খ্রিস্টাব্দের অরণ্য আইনে কী বলা হয়েছিল?

ঔপনিবেশিক স্বার্থ সুরক্ষা ও আধিপত্য সুদৃঢ় করণের লক্ষ্যে প্রণীত 1878 খ্রিস্টাব্দের অরণ্য আইনে অরণ্যকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা – সংরক্ষিত অরণ্য, সুরক্ষিত অরণ্য ও গ্রামীণ অরণ্য। এই আইনে সংরক্ষিত অরণ্য থেকে আদিবাসীদের অরণ্যসম্পদ আহরণের উপর কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়। যদিও অন্য দুই ধরনের অরণ্য থেকে জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহের সীমিত অধিকার আদিবাসী জনগোষ্ঠী লাভ করেছিল। নিঃসন্দেহে এই আইন ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শোষণকে দৃঢ়তর করেছিল।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

অরণ্য আইন কেন প্রণয়ন করা হয়েছিল?

ব্রিটিশ সরকারের মূল উদ্দেশ্য ছিল –
1. রেলওয়ে ও জাহাজ নির্মাণের জন্য কাঠের যোগান নিশ্চিত করা,
2. বনজ সম্পদে সরকারের একচ্ছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠা করা,
3. আদিবাসী ও স্থানীয় জনগণের ঐতিহ্যগত অধিকার সীমিত করা।

অরণ্য আইনের ফলে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল?

আদিবাসী (সাঁওতাল, মুণ্ডা, ভিল, গোণ্ড ইত্যাদি) ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, কারণ তাদের জীবনযাত্রা ও অর্থনীতি বননির্ভর ছিল। এই আইনের ফলে তাদের জঙ্গলে প্রবেশ, কাঠ সংগ্রহ ও কৃষিকাজে বাধা সৃষ্টি হয়।

অরণ্য আইনের বিরুদ্ধে কোন বিদ্রোহগুলি হয়েছিল?

উল্লেখযোগ্য বিদ্রোহগুলির মধ্যে রয়েছে – সাঁওতাল বিদ্রোহ (1855-56),
মুণ্ডা বিদ্রোহ (1899-1900), ভিল বিদ্রোহ (1913), রাম্পা বিদ্রোহ (1922-24)।

অরণ্য আইন কি বর্তমানে প্রযোজ্য?

ব্রিটিশ আমলের অরণ্য আইনগুলি পরবর্তীতে সংশোধিত হয়েছে। 1927 সালের ভারতীয় বন আইন এখনও কার্যকর, তবে স্বাধীনতার পরে এতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। বর্তমানে বন অধিকার আইন (2006) আদিবাসীদের বনজ সম্পদে অধিকার দিয়েছে।

ড. ডিয়েট্রিক ব্রান্ডিস কে ছিলেন?

তিনি ছিলেন ভারতীয় বন বিভাগের প্রথম ইন্সপেক্টর জেনারেল (1864)। তাকে ভারতের আধুনিক বন ব্যবস্থাপনার জনক বলা হয়। তিনি অরণ্য সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনার উপর জোর দিয়েছিলেন।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “অরণ্য আইন বলতে কী বোঝো? 1878 খ্রিস্টাব্দের অরণ্য আইনে কী বলা হয়েছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “অরণ্য আইন বলতে কী বোঝো? 1878 খ্রিস্টাব্দের অরণ্য আইনে কী বলা হয়েছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

শিশির, কুয়াশা প্রভৃতি অধঃক্ষেপণ নয় কেন

অধঃক্ষেপণ কাকে বলে? অধঃক্ষেপণের রূপভেদ গুলি আলোচনা করো।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে টীকা লেখো।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে টীকা লেখো।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

About The Author

Gopi

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

অধঃক্ষেপণ কাকে বলে? অধঃক্ষেপণের রূপভেদ গুলি আলোচনা করো।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে টীকা লেখো।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

বিংশ শতকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতে সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে কৃষক সমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল?