এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অসওয়াল্ড পদ্ধতিতে কীভাবে নাইট্রিক অ্যাসিড প্রস্তুত করা হয়? অথবা, অসওয়াল্ড পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়া থেকে নাইট্রিক অ্যাসিডের শিল্পোৎপাদন -এর শর্তাবলি ও সমিত সমীকরণগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

অসওয়াল্ড পদ্ধতিতে কীভাবে নাইট্রিক অ্যাসিড প্রস্তুত করা হয়?
অথবা, অসওয়াল্ড পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়া থেকে নাইট্রিক অ্যাসিডের শিল্পোৎপাদন -এর শর্তাবলি ও সমিত সমীকরণগুলি লেখো।
নাইট্রিক অ্যাসিডের শিল্প উৎপাদন-অসওয়াল্ড পদ্ধতি (Ostwald process) –
1. শুষ্ক অ্যামোনিয়া গ্যাসের সঙ্গে শুষ্ক বায়ু মিশিয়ে মিশ্রণটিকে 7-8 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে 700°C উষ্ণতায় উত্তপ্ত 10% রোডিয়ামযুক্ত প্ল্যাটিনাম তারজালির উপর দিয়ে দ্রুত চালনা করলে অ্যামোনিয়া বায়ুর অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয়ে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্ন করে।
4NH₃ + 5O₂ ⇌ 4NO + 6H₂O
এখানে 10% রোডিয়ামযুক্ত প্ল্যাটিনাম তারজালি অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। এখানে প্ল্যাটিনামকে তারজালি রূপে রাখার ফলে এর পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল অনেক বেশি হয়। ফলে বিকারকগুলি বেশি করে অনুঘটকের সংস্পর্শে আসতে পারে।
2. উৎপন্ন নাইট্রিক অক্সাইডের সঙ্গে বায়ু মেশালে নাইট্রিক অক্সাইড বায়ুর অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয়ে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডে পরিণত হয়।
2NO + O₂ → 2NO₂
3. এইভাবে উৎপন্ন নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের সঙ্গে জল মেশালে নাইট্রিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়।
4NO₂ + 2H₂O + O₂ → 4HNO₃
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
অসওয়াল্ড পদ্ধতি কী?
অসওয়াল্ড পদ্ধতি হল নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO₃) শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদনের একটি প্রধান পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়া গ্যাসের জারণের মাধ্যমে নাইট্রিক অ্যাসিড তৈরি করা হয়।
অসওয়াল্ড পদ্ধতির মূল রাসায়নিক বিক্রিয়া বা সমিত সমীকরণগুলি কী কী?
এই পদ্ধতিতে তিনটি ধাপবদ্ধ প্রধান বিক্রিয়া ঘটে –
1. অ্যামোনিয়ার জারণ – 4NH₃ + 5O₂ → 4NO + 6H₂O
2. নাইট্রিক অক্সাইডের জারণ – 2NO + O₂ → 2NO₂
3. নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড থেকে অ্যাসিড গঠন – 4NO₂ + 2H₂O + O₂ → 4HNO₃
অসওয়াল্ড পদ্ধতিতে কোন অনুঘটক ব্যবহার করা হয় এবং কেন?
প্রথম ধাপে (অ্যামোনিয়ার জারণ) 10% রোডিয়াম যুক্ত প্ল্যাটিনামের তারজালি অনুঘটক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্ল্যাটিনাম একটি উত্তম অনুঘটক এবং তারজালি আকারে ব্যবহার করলে এর পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল অনেক গুণ বেড়ে যায়, যার ফলে বিক্রিয়কগুলি (অ্যামোনিয়া ও অক্সিজেন) সহজেই এবং দ্রুততার সাথে বিক্রিয়া করতে পারে।
অসওয়াল্ড পদ্ধতির অপারেটিং শর্তাবলি (উষ্ণতা ও চাপ) কী?
অসওয়াল্ড পদ্ধতির অপারেটিং শর্তাবলি (উষ্ণতা ও চাপ) –
1. উষ্ণতা – প্রায় 700° সেলসিয়াস,
2. চাপ – প্রায় 7-8 বায়ুমণ্ডলীয় চাপ,
3. অনুঘটক – 10% Rh যুক্ত Pt তারজালি।
এই নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপ অনুঘটকের কার্যকারিতা সর্বাধিক রাখে এবং কাঙ্ক্ষিত উৎপাদ (NO) -এর পরিমাণ সর্বাধিক করে।
অসওয়াল্ড পদ্ধতিতে “শুষ্ক” অ্যামোনিয়া ও “শুষ্ক” বায়ু ব্যবহার করা হয় কেন?
অনুঘটক প্ল্যাটিনাম খুবই দামি। যদি বায়ু বা অ্যামোনিয়ায় জলীয় বাষ্প থাকে, তা অনুঘটকের পৃষ্ঠতলে জমে এর কার্যকারিতা হ্রাস করতে পারে (যাকে অনুঘটক বিষাক্তকরণ বলে)। এছাড়াও, আর্দ্রতা অন্যান্য পার্শ্ব বিক্রিয়া ঘটাতে পারে। তাই, বিক্রিয়কগুলিকে শুষ্ক রাখা প্রক্রিয়াটির কার্যকারিতা ও অনুঘটকের আয়ু বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অসওয়াল্ড পদ্ধতিতে কীভাবে নাইট্রিক অ্যাসিড প্রস্তুত করা হয়? অথবা, অসওয়াল্ড পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়া থেকে নাইট্রিক অ্যাসিডের শিল্পোৎপাদন -এর শর্তাবলি ও সমিত সমীকরণগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন