ঔপনিবেশিক বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

Gopi

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ঔপনিবেশিক বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “ঔপনিবেশিক বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

ঔপনিবেশিক বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
Contents Show

ঔপনিবেশিক বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

বিজ্ঞান ও কারিগরি কর্মে ভারতবর্ষের ঐতিহ্য অতি প্রাচীন। সুপ্রাচীন হরপ্পা সভ্যতার যুগেও ভারতীয়দের উচ্চ বৈজ্ঞানিক জ্ঞান কারিগরি দক্ষতার পরিচয় মেলে। ভারতীয় বিজ্ঞানচর্চার এই বহমান ধারা ঊনবিংশ শতকে পাশ্চাত্য জ্ঞানালোকের স্পর্শে নব উদ্দীপনা লাভ করে। কায়েমী স্বার্থরক্ষাকারী ও প্রভুত্ববাদী ঔপনিবেশিক শিক্ষানীতির পালটা ভাবনারূপে জন্ম নেয় জাতীয় বিজ্ঞানচর্চা।

ঔপনিবেশিক বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স

ঔপনিবেশিক শাসনাধীনে ভারতীয়দের মধ্যে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার সম্প্রসারণ এবং জাতীয় বিজ্ঞান গবেষণাগার নির্মাণে এগিয়ে এসেছিলেন কলকাতা মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় এম. ডি. ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার।

পেশায় চিকিৎসক মহেন্দ্রলাল সরকার মানুষের অন্ধবিশ্বাস দূর করে তাদের যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞান মনস্ক হওয়ার পরামর্শ দেন। বিজ্ঞানের অধ্যাপক ফাদার ইউজিন লাঁফো-র সহায়তায় 1876 খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ (আই. এ. সি. এস.) বা ‘ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা’।

বিশুদ্ধ বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণা, বিজ্ঞান বিষয়ক বক্তৃতার আয়োজন প্রভৃতিতে এই প্রতিষ্ঠান তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। আই. এ. সি. এস. -এর নিজস্ব পত্রিকা ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ফিজিক্স’-সহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিজ্ঞান পত্রিকায় এখানকার বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হত। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন, মেঘনাদ সাহা প্রমুখ খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ও গবেষক নানা সময়ে এই প্রতিষ্ঠানে গবেষণাকর্মে নিযুক্ত ছিলেন। ডঃ রমন এখানে গবেষণা করেই তাঁর বিখ্যাত ‘রমন ক্রিয়া’ আবিষ্কার করেন এবং 1930 খ্রিস্টাব্দে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।

বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা পরবর্তীকালে এখানে একটি সক্রিয় গবেষণা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে এক্স রশ্মি, আলোকবিজ্ঞান, চৌম্বকত্ব, রমন ক্রিয়া প্রভৃতি বিষয়ে নানা মৌলিক গবেষণার কাজ হয়।

ঔপনিবেশিক বাংলা তথা ভারতে বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে আই. এ. সি. এস. এবং তার প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের নাম নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য। আজও এই প্রতিষ্ঠান সগৌরবে তার অস্তিত্ব বজায় রেখে চলেছে।

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের প্রতিষ্ঠা –

স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এবং তারকনাথ পালিত ও রাসবিহারী ঘোষের অর্থানুকূল্যে 1914 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের বহুমুখী বিজ্ঞানচর্চা –

বিশুদ্ধ বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গবেষণার উদ্দেশ্যে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজে একে একে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণীবিদ্যা, পরিবেশ বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিভাগ খোলা হয়।

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের মৌলিক গবেষণা –

বিজ্ঞানচর্চার এই মুক্ত অঙ্গনে শিক্ষার্থী ও গবেষকরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণার সুযোগ পান। ফলে বিজ্ঞানচর্চায় যথেষ্ট মানোন্নয়ন ঘটে। গবেষক ছাত্রদের জন্য এখানে আটটি বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়।

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের খ্যাতনামা শিক্ষার্থীগণ –

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজে পড়াশোনা এবং বিজ্ঞান সাধনা করে বহু শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে জগৎজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই কৃতি ছাত্রগোষ্ঠীর মধ্যে সত্যেন্দ্রনাথ বোস, মেঘনাদ সাহা প্রমুখ ছিলেন বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের খ্যাতনামা শিক্ষকগণ –

স্বদেশি বাংলার বহু স্বনামধন্য শিক্ষক ও বিজ্ঞানীগণ এই শিক্ষায়তনে শিক্ষাদান করেন। আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, ডঃ চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন প্রমুখ ছিলেন এই প্রথিতযশা শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এখানে বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে এর যোগসূত্র স্থাপিত হয়।

বসু বিজ্ঞান মন্দির

বসু বিজ্ঞান মন্দিরের প্রতিষ্ঠা –

1917 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞান সাধক জগদীশচন্দ্র বসু ইংল্যান্ডের রয়‍্যাল ইনস্টিটিউশনের আদলে কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’। প্রতিষ্ঠালগ্নে তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ে ঘোষণা করেন – “আজ যাহা প্রতিষ্ঠা করিলাম তাহা মন্দির, কেবলমাত্র পরীক্ষাগার নহে।”

বসু বিজ্ঞান মন্দিরের উদ্দেশ্য –

এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠাতা স্বয়ং জগদীশচন্দ্র লিখেছেন – “এর মুখ্য উদ্দেশ্য বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও জ্ঞানের প্রসার ঘটানো।” তরুণতর বিজ্ঞানীদের সামনে বিশ্বমানের গবেষণার দ্বার উন্মোচন করে দিতে তিনি এই প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ব্রতী হন। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে যে সমস্ত আবিষ্কার হবে তার সুফলে প্রত্যেকের অধিকার থাকবে।

বসু বিজ্ঞান মন্দিরের বহুমুখী বিজ্ঞানচর্চা –

বিশুদ্ধ বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণার উদ্দেশ্যে বসু বিজ্ঞান মন্দিরে পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণীবিদ্যা, মাইক্রোবায়োলজি, বায়ো-কেমিস্ট্রি, বায়োফিজিক্স প্রভৃতি বিভাগ খোলা হয়।

বসু বিজ্ঞান মন্দিরের পরিচালক সমিতি –

বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার পর তার পরিচালনার জন্য একটি তত্ত্বাবধায়ক সমিতি গঠিত হয়। এই সমিতির সদস্যদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নীলরতন সরকার, ভূপেন্দ্রনাথ বসু এবং স্বয়ং জগদীশচন্দ্র বসু ছিলেন উল্লেখযোগ্য।

বসু বিজ্ঞান মন্দিরের উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার –

বসু বিজ্ঞান মন্দিরে দীর্ঘ গবেষণার পর 1918 খ্রিস্টাব্দে জগদীশচন্দ্র বসু ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্র আবিষ্কার করেন এবং প্রমাণ করেন যে, উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে।

ঔপনিবেশিক বাংলায় কারিগরি শিক্ষার প্রসার

ঔপনিবেশিক বাংলায় কারিগরি বিদ্যার ইতিহাস ঘাটলে যে নামটি সর্বাগ্রে উঠে আসে, তিনি হলেন শ্রীরামপুর মিশন প্রেসের জনৈক কর্মী গোলকচন্দ্র, যিনি বিলিতি বাস্পীয় ইঞ্জিনের আদলে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে বাষ্পীয় ইঞ্জিন নির্মাণের কৃতিত্ব দেখান। 1851-1852 খ্রিস্টাব্দে ঔপনিবেশিক সরকার ভারতে টেলিগ্রাফ প্রচলনের উদ্যোগ নিলে বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার শিবচন্দ্র নন্দী দুর্বার গতিতে পদ্মার বুকে সাবমেরিন কেবল পাতার কাজ নিতান্ত স্বল্প ব‍্যয়ে সমাপ্ত করেন। মহেন্দ্রনাথ নন্দী কাপড় বোনার যন্ত্র প্রস্তুত করেন। রাজকৃষ্ণ কর্মকার জলচক্র, বন্দুক এমনকি মেশিনগান তৈরিতেও পারদর্শিতা দেখান। প্রসন্ন কুমার ঘোষ, কালিদাস শীল, বিপিনবিহারী দাস প্রমুখ ব্যক্তিরাও কারিগরি বিদ্যায় যথেষ্ট কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। কারিগরি শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করে যোগেশচন্দ্র ঘোষ একটি অর্থভাণ্ডার গড়ে তোলেন, লক্ষ বিদেশে গিয়ে কারিগরি বিষয়ে জ্ঞানার্জনকারী ছাত্রদের আর্থিক সাহায্য করা।

কারিগরি শিক্ষা ও শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুভূত হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার। কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে সরকার 1856 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করে ‘কলকাতা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’, যা পরবর্তীকালে ‘বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’ নামে পরিচিত হয় এবং যাদবপুরে স্থানান্তরিত হয়। 1905 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে একদিকে যেমন ছিল সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করার প্রবণতা, অন্যদিকে ছিল জাতীয় উদ্যোগে স্বদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রয়াস। এরই সূত্র ধরে কারিগরি শিক্ষার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ এবং বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট।

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ

1906 খ্রিস্টাব্দে রাসবিহারী ঘোষের সভাপতিত্বে এবং রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক, ব্রজেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরি প্রমুখ শিক্ষাব্রতীর অর্থানুকূল্যে কলকাতায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।

জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্দেশ্য –

এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বিদেশি নিয়ন্ত্রণ-মুক্ত শিক্ষা-ব্যবস্থার প্রচলন এবং বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার।

জাতীয় শিক্ষা পরিষদের কর্মকান্ড –

কোনোপ্রকার সরকারি সাহায্য ছাড়াই জাতীয় শিক্ষা পরিষদের পরিচালনায় বাংলা ও বাংলার বাইরে শতাধিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুর দিকে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করে। প্রথমটি হল সাধারণ বিজ্ঞান ও কলাবিদ্যার জন্য ‘বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ’ আর দ্বিতীয়টি হল কারিগরি শিক্ষার জন্য ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’। কারিগরি শিক্ষাকে সর্বজনীন ও বাধ্যতামূলক করার জন্য জাতীয় শিক্ষা পরিষদ উদ্যোগ নেয়। মাতৃভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করে এই পরিষদ। সুরেন্দ্রনাথ জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রতিষ্ঠাকে ‘স্বদেশি আন্দোলনের প্রথম বৃহৎ গঠনমূলক প্রচেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছেন।

জাতীয় শিক্ষা পরিষদের ব্যর্থতা –

বিপুল উদ্দীপনা জাগিয়ে শুরু হলেও শেষপর্যন্ত চরম অর্থাভাব এবং সরকারি চাকুরিতে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিগ্রির মূল্যহীনতা একে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে।

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠা –

বিশিষ্ট আইনজীবী ও শিক্ষা-দরদী তারকনাথ পালিতের উদ্যোগে 1906 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের উদ্দেশ্য –

এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বিদেশি নিয়ন্ত্রণ-মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন এবং বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার।

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের পৃষ্ঠপোষকগণ –

এই শিক্ষায়তনের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন প্রমথনাথ বসু এবং প্রথম সভাপতি নিযুক্ত হন রাসবিহারী ঘোষ। এ ছাড়াও মহারাজা মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দী, ভূপেন্দ্রনাথ বোস, নীলরতন সরকার প্রমুখ শিক্ষাব্রতী প্রথম থেকেই এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করেন।

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের পাঠ্যক্রম –

প্রথমদিকে এখানে দুই রকমের পাঠ্যক্রম চালু হয়। একটি ছিল তিন বছরের অন্তর্বর্তী পাঠ্যক্রম। অপরটি ছিল চার বছরের মাধ্যমিক পাঠ্যক্রম। প্রবেশিকা পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ছাত্ররাও এখানে অন্তর্বর্তী পাঠ্যক্রমে, আর প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা মাধ্যমিক পাঠ্যক্রমে ভরতির সুযোগ পেত। মাধ্যমিক পাঠ্যক্রমের তিনটি প্রধান বিষয় ছিল – যন্ত্র বিজ্ঞান ও বৈদ্যুতিক যন্ত্র বিজ্ঞান, ফলিত রসায়ন এবং ভূবিদ্যা। প্রমথ বসু, শরৎ দত্ত, প্রফুল্ল মিত্র প্রমুখ খ্যাতনামা শিক্ষক এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের সমন্বয় –

1910 খ্রিস্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সঙ্গে মিশে যায়। আর স্বাধীনতার পর 1955 খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।

ঔপনিবেশিক বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশের মূল্যায়ন –

স্বদেশি যুগের এই সকল বিজ্ঞান ও কারিগরি চর্চার প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নিঃসন্দেহে জাগরিত হয়েছে স্বদেশবোধ ও ‘জাতীয়তা। ঔপনিবেশিক শিক্ষার পুতুল গড়ার কল ভেঙে সজীব মানুষ গড়ার শপথ নিয়েছিল এই সকল প্রতিষ্ঠান ও এর সঙ্গে যুক্ত শিক্ষাব্রতীরা।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান সংস্থাটির নাম কী? এর গুরুত্ব কী?

1. ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স (আই. এ. সি. এস.)।
2. এটি ভারতীয়দের দ্বারা পরিচালিত প্রথম বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যেখানে জগদীশচন্দ্র বসু, সি. ভি. রমন, মেঘনাদ সাহার মতো বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেছিলেন। রমন এখানেই “রমন ক্রিয়া” আবিষ্কার করেন।

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ কে প্রতিষ্ঠা করেন? এর উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষক কারা ছিলেন?

1. কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের প্রতিষ্ঠাতা – স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, তর্কনাথ পালিত ও রাসবিহারী ঘোষের অর্থানুকূল্যে (1914 খ্রিস্টাব্দ)।
2. কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থী – সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা।
3. কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষক – আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সি. ভি. রমন।

বসু বিজ্ঞান মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা কে? এর প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?

1. বসু বিজ্ঞান মন্দিরে প্রতিষ্ঠাতা – জগদীশচন্দ্র বসু (1914 খ্রিস্টাব্দ)।
2. বসু বিজ্ঞান মন্দিরে উদ্দেশ্য – বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও মৌলিক গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবন প্রক্রিয়া আবিষ্কার। এখানে তিনি ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রের মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে।

ঔপনিবেশিক বাংলায় কারিগরি শিক্ষার প্রসারে কোন প্রতিষ্ঠানগুলি ভূমিকা রাখে?

1. কলকাতা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (1914 খ্রিস্টাব্দ, পরবর্তীতে বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ)।
2. জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (1914 খ্রিস্টাব্দ) ও বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট (1914 খ্রিস্টাব্দ), যা পরবর্তীতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়।

জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্দেশ্য ও সীমাবদ্ধতা কী ছিল?

জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্দেশ্য –
1. স্বদেশি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা।
2. বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার।
3. মাতৃভাষায় শিক্ষাদান।
জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সীমাবদ্ধতা – অর্থাভাব ও সরকারি চাকরিতে এই ডিগ্রির স্বীকৃতি না পাওয়া।

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের পাঠ্যক্রম কেমন ছিল?

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের পাঠ্যক্রম ছিল –
1. 3 বছরের অন্তর্বর্তী কোর্স (অনুত্তীর্ণ ছাত্রদের জন্য)।
2. 4 বছরের মাধ্যমিক কোর্স (প্রবেশিকা উত্তীর্ণদের জন্য), যার বিষয়গুলি ছিল – যন্ত্র বিজ্ঞান ও বৈদ্যুতিক যন্ত্র বিজ্ঞান, ফলিত রসায়ন, ভূবিদ্যা।

ঔপনিবেশিক বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী?

ঔপনিবেশিক বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশের ঐতিহাসিক তাৎপর্য –
1. এটি স্বদেশি চেতনা ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে শক্তিশালী করেছিল।
2. বিদেশি নির্ভরতা কমিয়ে স্বাধীন গবেষণা ও প্রযুক্তিগত স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথ তৈরি করেছিল।
3. পরবর্তীতে আইআইটি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়-এর মতো প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি রচনা করেছিল।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ঔপনিবেশিক বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “ঔপনিবেশিক বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

তুন্দ্রা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো।

কারিগরি শিক্ষাবিস্তারে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ভূমিকা কী ছিল?

কারিগরি শিক্ষাবিস্তারে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ভূমিকা

ছাপা বই শিক্ষার প্রসারে কী ভূমিকা নিয়েছিল? ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

ছাপা বই শিক্ষার প্রসারে কী ভূমিকা নিয়েছিল? ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের সম্পর্ক

About The Author

Gopi

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

সিঙ্গাপুরের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্ত করো।

বাংলায় ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?

তুন্দ্রা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর অবস্থান ও বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর অবস্থান ও প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী তা আলোচনা করো।