পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কাকে বলে? ইহা কয় প্রকার ও কী কী? তাদের সংজ্ঞা দাও।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কাকে বলে? ইহা কয় প্রকার ও কী কী? তাদের সংজ্ঞা দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পর্যায়-সারণি এবং মৌলদের ধর্মের পর্যাবৃত্ততা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কাকে বলে? ইহা কয় প্রকার ও কী কী? তাদের সংজ্ঞা দাও।

পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কাকে বলে? ইহা কয় প্রকার ও কী কী? তাদের সংজ্ঞা দাও।

কোনো বিচ্ছিন্ন পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে ওই পরমাণুর ইলেকট্রনযুক্ত সর্ববহিস্থ ইলেকট্রন কক্ষের দূরত্বকে ওই পরমাণুর পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বলে। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, নির্দিষ্ট কোনো পরীক্ষা দ্বারা কোনো মৌলের বিচ্ছিন্ন পরমাণুর ব্যাসার্ধ পরিমাপ করা সম্ভব নয়।

মৌলের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ তিন প্রকার। যথা –

  1. সমযোজী ব্যাসার্ধ,
  2. ধাতব ব্যাসার্ধ ও
  3. ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ।

তিন প্রকার পারমাণবিক ব্যাসার্ধের ক্রম – সমযোজী ব্যাসার্ধ ধাতব ব্যাসার্ধ < ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ। সুতরাং, ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ তিন প্রকার ব্যাসার্ধের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো।

সমযোজী ব্যাসার্ধ –

দ্বিপরমাণুক অণুর ক্ষেত্রে, পরমাণু দুটি সমযোজী একবন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকা অবস্থায়, তাদের নিউক্লিয়াস দুটির মধ্যবর্তী দূরত্বের অর্ধেককে সমযোজী ব্যাসার্ধ বলে।

ধাতব ব্যাসার্ধ –

একটি ধাতব কেলাসের মধ্যে দুটি পাশাপাশি থাকা ধাতব পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যবর্তী দূরত্বের অর্ধেকে ধাতব ব্যাসার্ধ বলে।

ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ –

কঠিন অবস্থায় থাকা কোনো মৌলের কাছাকাছি অবস্থিত দুটি পৃথক অণুর অন্তর্গত নিকটতম দুটি বন্ধনহীন পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যবর্তী দূরত্বের অর্ধেককে ভ্যান ডার ওয়াল্স ব্যাসার্ধ বলে। যেমন – আয়োডিনের সমযোজী ও ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধের মান যথাক্রমে 139 pm এবং 198 pm।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বলতে কী বোঝায়?

কোনো বিচ্ছিন্ন পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে ওই পরমাণুর ইলেকট্রনযুক্ত সর্ববহিস্থ ইলেকট্রন কক্ষের দূরত্বকে তার পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বলে। তবে, একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো — কোনও নির্দিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে একটি বিচ্ছিন্ন পরমাণুর ব্যাসার্ধ সরাসরি পরিমাপ করা সম্ভব নয়।

পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কয় প্রকার ও কী কী?

পারমাণবিক ব্যাসার্ধ প্রধানত তিন প্রকার –
1. সমযোজী ব্যাসার্ধ,
2. ধাতব ব্যাসার্ধ ও
3. ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ।

সমযোজী ব্যাসার্ধ কাকে বলে?

দ্বিপরমাণুক অণুর ক্ষেত্রে, পরমাণু দুটি সমযোজী একবন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকা অবস্থায় তাদের নিউক্লিয়াস দুটির মধ্যবর্তী দূরত্বের অর্ধেককে সমযোজী ব্যাসার্ধ বলে।

ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ কী? উদাহরণ দাও।

কঠিন অবস্থায় থাকা কোনো মৌলের কাছাকাছি অবস্থিত দুটি পৃথক অণুর অন্তর্গত নিকটতম দুটি বন্ধনহীন পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যবর্তী দূরত্বের অর্ধেককে ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ বলে।
উদাহরণ – আয়োডিন (I₂) অণুর ক্ষেত্রে, সমযোজী ব্যাসার্ধ 139 pm এবং ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ 198 pm।

ধাতব ব্যাসার্ধ কী?

ধাতব স্ফটিক জালে দুটি সন্নিহিত ধাতব পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যবর্তী দূরত্বের অর্ধেককে ধাতব ব্যাসার্ধ বলে।

তিন প্রকার ব্যাসার্ধের মধ্যে আকারের ক্রম কী?

তিন প্রকার পারমাণবিক ব্যাসার্ধের আকারের ক্রম হল –
সমযোজী ব্যাসার্ধ < ধাতব ব্যাসার্ধ < ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ
অতএব, ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ এই তিনটির মধ্যে সবচেয়ে বড়।

কোন ব্যাসার্ধের মান সবচেয়ে ছোট এবং কেন?

সমযোজী ব্যাসার্ধের মান সবচেয়ে ছোট। কারণ এটি দুটি পরমাণুর মধ্যে একটি শক্তিশালী রাসায়নিক বন্ধন (সমযোজী বন্ধন) উপস্থিত অবস্থায় পরিমাপ করা হয়, যা নিউক্লিয়াসগুলোকে একে অপরের খুব কাছাকাছি নিয়ে আসে।

ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধের মান সবচেয়ে বড় হয় কেন?

ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ দুটি বন্ধনহীন (শুধুমাত্র দুর্বল ভ্যান ডার ওয়ালস বল দ্বারা আকৃষ্ট) পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যকার দূরত্বের উপর ভিত্তি করে গণনা করা হয়। যেহেতু এখানে কোনও শক্তিশালী আকর্ষণ বল (যেমন সমযোজী বা আয়নিক বন্ধন) কাজ করে না, তাই পরমাণুগুলো একে অপরের থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে, ফলে ব্যাসার্ধ তুলনামূলকভাবে বড় হয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কাকে বলে? ইহা কয় প্রকার ও কী কী? তাদের সংজ্ঞা দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পর্যায়-সারণি এবং মৌলদের ধর্মের পর্যাবৃত্ততা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

প্লাটিনাম তড়িদ্দ্বার ব্যবহার করে কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণের তড়িৎবিশ্লেষণ করলে কী ঘটে তা ক্যাথোড ও অ্যানোডে বিক্রিয়াসমূহ লেখো।

প্লাটিনাম তড়িদ্দ্বারে কপার সালফেটের দ্রবণ তড়িৎবিশ্লেষণ করলে ক্যাথোড ও অ্যানোডে কী বিক্রিয়া ঘটে?

কপার তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে কপার সালফেটের তড়িৎবিশ্লেষণ করলে কী ঘটনা ঘটবে তা ব্যাখ্যা করো। অথবা, কপার তড়িদ্দ্বার ব্যবহার করে কপার সালফেটের (CuSO₄) জলীয় দ্রবণের তড়িৎবিশ্লেষণ করলে ক্যাথোডে কী বিক্রিয়া হয় লেখো এবং অ্যানোডে কী বিক্রিয়া হয় লেখো।

কপার তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে কপার সালফেটের তড়িৎবিশ্লেষণ করলে কী ঘটনা ঘটবে?

গলিত খাদ্য লবণের তড়িৎবিশ্লেষণে ক্যাথোড ও অ্যানোডে কী কী উৎপন্ন হয় তা ব্যাখ্যা করো।

গলিত খাদ্য লবণের তড়িৎবিশ্লেষণে ক্যাথোড ও অ্যানোডে কী কী উৎপন্ন হয় তা ব্যাখ্যা করো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

প্লাটিনাম তড়িদ্দ্বারে কপার সালফেটের দ্রবণ তড়িৎবিশ্লেষণ করলে ক্যাথোড ও অ্যানোডে কী বিক্রিয়া ঘটে?

কপার তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে কপার সালফেটের তড়িৎবিশ্লেষণ করলে কী ঘটনা ঘটবে?

গলিত খাদ্য লবণের তড়িৎবিশ্লেষণে ক্যাথোড ও অ্যানোডে কী কী উৎপন্ন হয় তা ব্যাখ্যা করো।

Pt ক্যাথোড ও গ্রাফাইট অ্যানোডে গলিত AlCl₃-এর তড়িদ্বিশ্লেষণে কী ঘটে? ক্যাথোড ও অ্যানোডের বিক্রিয়া লেখো।

তড়িৎবিশ্লেষণের আয়নীয় উদাহরণসহ ব্যাখ্যা দাও।