এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “X, Y ও Z তিনটি মৌলের পরমাণু ক্রমাঙ্ক যথাক্রমে 6, 8, 10। 1. কোন্ মৌলটি নিষ্ক্রিয়? 2. কোনটি সবচেয়ে বেশি অপরাতড়িৎধর্মী মৌল? 3. কোনটির বিজারণ ধর্ম সবচেয়ে বেশি?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পর্যায়-সারণি এবং মৌলদের ধর্মের পর্যাবৃত্ততা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

X, Y ও Z তিনটি মৌলের পরমাণু ক্রমাঙ্ক যথাক্রমে 6, 8, 10। 1. কোন্ মৌলটি নিষ্ক্রিয়? 2. কোনটি সবচেয়ে বেশি অপরাতড়িৎধর্মী মৌল? 3. কোনটির বিজারণ ধর্ম সবচেয়ে বেশি?
X মৌলের পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস 2, 4।
Y মৌলের পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস 2, 6।
Z মৌলের পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস 2, 8।
মৌলটি নিষ্ক্রিয় হল –
Z মৌলের পরমাণুর সর্ববহিস্থ কক্ষে 8টি ইলেকট্রন বর্তমান। সুতরাং, Z মৌলটি নিষ্ক্রিয়।
সবচেয়ে বেশি অপরাতড়িৎধর্মী মৌল হল –
X, Y ও Z তিনটি মৌলই দ্বিতীয় পর্যায়ে অবস্থিত।
Y মৌলটি X মৌলের থেকে পর্যায়ে ডানদিকে অবস্থিত।
Y মৌলের সর্ববহিস্থ কক্ষে 6টি ইলেকট্রন উপস্থিত।
সুতরাং, Y মৌলটি সবচেয়ে বেশি অপরাতড়িৎধর্মী।
বিজারণ ধর্ম সবচেয়ে বেশি হল –
X মৌলটি দ্বিতীয় পর্যায়ে Y ও Z মৌল অপেক্ষা অধিকতর বামদিকে অবস্থিত। সুতরাং, X মৌলটির বিজারণ ধর্ম সবচেয়ে বেশি।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী?
নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলোর (He বাদে) সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরে 8টি ইলেকট্রন থাকে, যাকে অক্টেট নিয়ম বলে। এই পূর্ণ স্থিতিশীল অবস্থার কারণেই তারা রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয়। যেমন – Z মৌলের (পরমাণু ক্রমাঙ্ক 10, নিয়ন) ইলেকট্রন বিন্যাস 2, 8 যা একটি পূর্ণ অক্টেট।
অপরাতড়িৎধর্মীতা (Electronegativity) বলতে কী বোঝায়?
অপরাতড়িৎধর্মীতা হলো একটি মৌলের পরমাণুর নিজের দিকে শেয়ারকৃত ইলেকট্রন জোড়কে আকর্ষণ করার সামর্থ্য। একটি পর্যায়ে বাম থেকে ডানে গেলে পরমাণুর আকার ছোট হয় এবং প্রোটন সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, ফলে ইলেকট্রনকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা বাড়ে। তাই একটি পর্যায়ে ডানদিকের মৌলগুলোর (নিষ্ক্রিয় গ্যাস বাদে) অপরাতড়িৎধর্মীতা সবচেয়ে বেশি হয়। যেমন – Y (অক্সিজেন) -এর অপরাতড়িৎধর্মীতা X (কার্বন) -এর তুলনায় বেশি।
বিজারণ ক্ষমতা (Reducing Nature) কী? কোন মৌলের বিজারণ ক্ষমতা বেশি হয়?
যে মৌল অন্য কোনো পদার্থকে বিজারিত করতে পারে বা নিজে জারিত হয়, তাকে বিজারক বলে। এমন মৌলের বিজারণ ক্ষমতা বেশি। ধাতুগুলো সাধারণত ভালো বিজারক। একটি পর্যায়ে বাম থেকে ডানে গেলে পরমাণুর ইলেকট্রন ত্যাগ করার প্রবণতা (ধাতব ধর্ম) কমতে থাকে। তাই একটি পর্যায়ের বামপাশের মৌলগুলোর (গ্রুপ 1 ও 2) বিজারণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি হয়। যেমন – X (কার্বন, যদিও অধাতু) Y (অক্সিজেন) এবং Z (নিয়ন) -এর তুলনায় বেশি বিজারণ ক্ষমতা প্রদর্শন করে।
ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে কিভাবে পরমাণু ক্রমাঙ্ক (Atomic Number) নির্ণয় করা যায়?
ইলেকট্রন বিন্যাসের প্রতিটি শক্তিস্তরে থাকা ইলেকট্রন সংখ্যা যোগ করলে মোট ইলেকট্রন সংখ্যা পাওয়া যায়। একটি নিরপেক্ষ পরমাণুর ক্ষেত্রে মোট ইলেকট্রন সংখ্যাই তার পরমাণু ক্রমাঙ্ক।
X – 2 + 4 = 6 (কার্বন)
Y – 2 + 6 = 8 (অক্সিজেন)
Z – 2 + 8 = 10 (নিয়ন)
X, Y এবং Z মৌল তিনটির মধ্যে কোনটি তড়িৎধর্মী (Electropositive)?
তড়িৎধর্মীতা হলো পরমাণুর ধনাত্মক আয়ন (ক্যাটায়ন) গঠন করার প্রবণতা, অর্থাৎ ইলেকট্রন ত্যাগ করার ক্ষমতা। X, Y এবং Z -এর মধ্যে X (কার্বন) -এর ধাতব ধর্ম/তড়িৎধর্মীতা Y ও Z -এর চেয়ে বেশি, যদিও কার্বন একটি অধাতু। Z (নিয়ন) একেবারেই ইলেকট্রন ত্যাগ বা গ্রহণ করে না, তাই এর তড়িৎধর্মীতা নেই বললেই চলে।
Y মৌলটি দিয়ে গঠিত একটি যৌগের উদাহরণ দাও যেখানে এর বিজারণ ধর্ম দেখা যায়।
Y মৌলটি হলো অক্সিজেন (O), যা একটি শক্তিশালী জারক। এটি অন্য পদার্থকে জারিত করে এবং নিজে বিজারিত হয়, অর্থাৎ এর বিজারণ ধর্ম প্রকাশ পায়।
উদাহরণ – 2Cu + O₂ → 2CuO
এখানে অক্সিজেন (O₂) তামাকে জারিত করে কপার অক্সাইডে রূপান্তরিত করছে, অর্থাৎ অক্সিজেন নিজেই বিজারিত হচ্ছে।
X, Y এবং Z মৌল তিনটি পর্যায় সারণির কোন পর্যায়ে অবস্থিত?
যেহেতু তিনটি মৌলেরই ইলেকট্রন বিন্যাসে 2টি প্রধান শক্তিস্তর (n = 1 এবং n = 2) রয়েছে, সুতরাং এরা সবাই দ্বিতীয় পর্যায়ে অবস্থিত।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “X, Y ও Z তিনটি মৌলের পরমাণু ক্রমাঙ্ক যথাক্রমে 6, 8, 10। 1. কোন্ মৌলটি নিষ্ক্রিয়? 2. কোনটি সবচেয়ে বেশি অপরাতড়িৎধর্মী মৌল? 3. কোনটির বিজারণ ধর্ম সবচেয়ে বেশি?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পর্যায়-সারণি এবং মৌলদের ধর্মের পর্যাবৃত্ততা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন