পশ্চিম হিমালয়ের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করো

Rahul

আজকের আর্টিকেলে, আমরা পশ্চিম হিমালয়ের মনোরম ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করব। এই অঞ্চলটি তার বিচিত্র ভূ-দৃশ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত, যা এটিকে পর্যটক এবং ভূগোলবিদদের জন্য একটি জনপ্রিয় আকর্ষণ করে তোলে। দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” অধ্যায়ের “ভারতের ভূপ্রকৃতি” বিভাগে এই প্রশ্নটি বারবার আসে, তাই এটি সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

হিমালয় পর্বতমালা বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতমালা, যা ভারতের উত্তর দিকে অবস্থিত। এই বিশাল পর্বতমালাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়: পশ্চিম হিমালয়, মধ্য হিমালয় এবং পূর্ব হিমালয়। আজকের আলোচনায় আমরা মনোযোগ দেবো পশ্চিম হিমালয়ের অপূর্ব ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলোর উপর।

পশ্চিম হিমালয়ের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য –

অবস্থান – জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তের নাঙ্গা পর্বত থেকে নেপালের পশ্চিম সীমায় অবস্থিত কালী নদী পর্যন্ত বিস্তৃত অংশকে বলা হয় পশ্চিম হিমালয়। এর তিনটি ভাগ —

  • কাশ্মীর হিমালয়,
  • হিমাচল হিমালয় বা পাঞ্জাব হিমালয় এবং
  • কুমায়ুন হিমালয়।
পশ্চিম হিমালয়ের অবস্থান

কাশ্মীর হিমালয় –

  • এই অংশটি জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে অবস্থিত।
  • কাশ্মীর হিমালয়ের দক্ষিণে পরপর পিরপাঞ্জাল, জম্মু ও পুঞ্জ পাহাড় অবস্থিত। এই পাহাড় প্রধানত বেলেপাথর ও শেল দিয়ে গঠিত।
  • এই হিমালয়ের উত্তর অংশটিতে অনেক উপত্যকা ও দুন দেখা যায়। যেমন — কাশ্মীর উপত্যকা ও উধমপুর দুন প্রভৃতি।
  • পিরপাঞ্জাল পর্বতশ্রেণি কাশ্মীর উপত্যকাকে ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। কেবলমাত্র বানিহাল ও পিরপাঞ্জাল গিরিপথ দুটি দিয়ে কাশ্মীর উপত্যকায় প্রবেশ করা যায়।
  • হিমবাহ সৃষ্ট ডাল, উলার, আনছার, নাগিন প্রভৃতি হ্রদ এই উপত্যকায় দেখা যায়।
  • কাশ্মীর উপত্যকার পূর্ব থেকে দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত হয়েছে হারামোশ ও জাস্কর পর্বতশ্রেণি।
  • কাশ্মীরের সিন্ধু উপত্যকার উত্তরভাগে ভারতের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কারাকোরাম পর্বতশ্রেণির গডউইন অস্টিন বা K2 (8611 মি) অবস্থিত। এই পর্বতের অন্যান্য শৃঙ্গ হল গাশারব্রুম বা হিডনপিক, ব্রডপিক, গাশারব্রুম-II প্রভৃতি। এই পর্বতে অবস্থিত সিয়াচেন (76 কিমি) হল ভারতের দীর্ঘতম ও বৃহত্তম হিমবাহ।
  • কারাকোরামের দক্ষিণে লাদাখ পর্বতশ্রেণি অবস্থিত। এর পূর্বদিকে ভারতের সর্বোচ্চ লাদাখ মালভূমি অবস্থিত। এর গড় উচ্চতা প্রায় 3500 মি।
  • জোজিলা ও বানিহাল হল কাশ্মীর হিমালয়ের প্রধান গিরিপথ।

হিমাচল হিমালয় বা পাঞ্জাব হিমালয় –

  • হিমালয়ের যে অংশ হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত তাকে হিমাচল হিমালয় বলা হয়।
  • এই অঞ্চলের উত্তরে 5000 থেকে 6000 মিটার উঁচু হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয় পর্বতশ্রেণি অবস্থিত।
  • হিমাদ্রির দক্ষিণে মধ্য হিমালয়ের চারটি পর্বতশ্রেণি — ধওলাধর, পিরপাঞ্জাল, জাস্কর, নাগটিব্বা ও মুসৌরি অবস্থিত। এদের মধ্যে পিরপাঞ্জাল পর্বতশ্রেণির শৃঙ্গগুলি প্রায়ই তুষারাবৃত থাকে। এই পর্বতশ্রেণিগুলির গড় উচ্চতা 1500 4500 মিটারের মধ্যে।
  • সবচেয়ে দক্ষিণে আছে শিবালিক পর্বতশ্রেণি। এর গড় উচ্চতা 600-1500 মি।
  • এই অংশেও অনেক পার্বত্য উপত্যকা দেখা যায়, যেমন — লাহুল, স্পিতি, কুলু, কাংড়া প্রভৃতি।

কুমায়ুন হিমালয় –

  • উত্তরাখণ্ড রাজ্যে হিমালয়ের যে অংশটি বিস্তৃত, তার নাম কুমায়ুন হিমালয়।
  • মধ্য হিমালয় পর্বতশ্রেণির উত্তরে কতকগুলি বিখ্যাত তুষারাবৃত শৃঙ্গ আছে, যেমন — নন্দাদেবী (7816 মি), গঙ্গোত্রী (6614 মি), কেদারনাথ (7188 মি), কামেট (7756 মি), ত্রিশূল (7120 মি) প্রভৃতি।
  • এই অঞ্চলের দক্ষিণ ভাগে শিবালিক পর্বতশ্রেণির মধ্যে কতকগুলি বিখ্যাত উপত্যকা বা দুন আছে, যেমন — দেরাদুন, চৌখাম্বা, কোটা পাতিয়া প্রভৃতি।
  • এই অংশে বিস্তৃত নাগটিব্বা ও মুসৌরি পর্বতের পূর্বাংশে অনেকগুলি হ্রদ দেখা যায়। যেমন — নৈনিতাল, ভীমতাল, সাততাল প্রভৃতি।
  • এখানে গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে যথাক্রমে গঙ্গা ও যমুনা নদীর উৎপত্তি হয়েছে।

পশ্চিম হিমালয় তার বৈচিত্র্যময় ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের জন্য একটি অনন্য এবং মনোমুগ্ধকর অঞ্চল। এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এটিকে পর্যটক, ভূগোলবিদ এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য করে তোলে। দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য এই অঞ্চল সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

Please Share This Article

Related Posts

ওহমের সূত্রটিকে লেখচিত্রের সাহায্যে প্রকাশ করো।

ওহমের সূত্রটিকে লেখচিত্রের সাহায্যে প্রকাশ করো।

বৈদ্যুতিক তার হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে তামা ও অ্যালুমিনিয়ামের মধ্যে কোনটি শ্রেষ্ঠতর ও কেন?

বৈদ্যুতিক তার হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে তামা ও অ্যালুমিনিয়ামের মধ্যে কোনটি শ্রেষ্ঠতর ও কেন?

ওহমীয় পরিবাহী বলতে কী বোঝো? উদাহরণ দাও। অ-ওহমীয় পরিবাহী বলতে কী বোঝো?

ওহমীয় পরিবাহী ও অ-ওহমীয় পরিবাহী বলতে কী বোঝো? উদাহরণ দাও।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ওহমের সূত্রটিকে লেখচিত্রের সাহায্যে প্রকাশ করো।

বৈদ্যুতিক তার হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে তামা ও অ্যালুমিনিয়ামের মধ্যে কোনটি শ্রেষ্ঠতর ও কেন?

ওহমীয় পরিবাহী ও অ-ওহমীয় পরিবাহী বলতে কী বোঝো? উদাহরণ দাও।

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – চলতড়িৎ – রোধ

শ্রেণি ও সমান্তরাল সমবায়ে তুল্য রোধের তুলনামূলক বিশ্লেষণ