ফটোগ্রাফকে উদ্বাস্তু সমস্যার ইতিহাস রচনার উপাদান হিসাবে কিভাবে ব্যবহার করা যায়? উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে ভারত সরকারের উদ্যোগ

Gopi

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ফটোগ্রাফকে উদ্বাস্তু সমস্যার ইতিহাস রচনার উপাদান হিসাবে কিভাবে ব্যবহার করা যায়? উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে ভারত সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করে? নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “ফটোগ্রাফকে উদ্বাস্তু সমস্যার ইতিহাস রচনার উপাদান হিসাবে কিভাবে ব্যবহার করা যায়? উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে ভারত সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করে?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের প্রথম অধ্যায় “ইতিহাসের ধারণা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

ফটোগ্রাফকে উদ্বাস্তু সমস্যার ইতিহাস রচনার উপাদান হিসাবে কিভাবে ব্যবহার করা যায়? উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে ভারত সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করে?

ফটোগ্রাফকে উদ্বাস্তু সমস্যার ইতিহাস রচনার উপাদান হিসাবে কিভাবে ব্যবহার করা যায়?

মার্গারেট ব্রুক-হোয়াইট, হেনরি কার্টিয়ার প্রমুখ বিদগ্ধ আলোকচিত্রীর ক্যামেরায় দেশভাগের অপরিসীম দুঃখ-দুর্দশা, যন্ত্রণা, ছন্নছাড়া জীবন, বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় গ্রহণ ও পুনর্বাসন প্রভৃতির এক নির্ভেজাল চিত্র ফুটে উঠেছে। জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ নেতৃবৃন্দ দেশভাগ তথা উদ্বাস্তু সমস্যাকে বহুলাংশে খাটো করে দেখাতে চাইলেও এই সময়ের ফটোগ্রাফগুলি নিঃসন্দেহে উদ্বাস্তু সমস্যার আকর উপাদান।

উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে ভারত সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করে?

দেশভাগের সবচেয়ে ভয়াবহ ও বেদনাদায়ক বিষয় হল উদ্বাস্তু সমস্যা। দেশভাগকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, খুন, লুটপাট, ধর্ষণের শিকার হয়ে পূর্ব পাকিস্তান থেকে হিন্দু বাঙালি এবং পশ্চিম পাকিস্তান থেকে হিন্দু ও শিখ সম্প্রদায়ের মানুষকে ভারতে চলে আসতে বাধ্য করা হয়। পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু কেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার গুলিকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যার মুখে ঠেলে দেয়। উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে ভারত সরকার যেসকল উদ্যোগ গ্রহণ করে ছিল তা হল –

  • নেহেরু-লিয়াকৎ চুক্তি – পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা উদ্বাস্তু স্রোত কমানোর জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকৎ আলির মধ্যে 1950 খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত হয় “নেহেরু-লিয়াকৎ চুক্তি” বা “দিল্লি চুক্তি”। মৌলবাদী পাকিস্তানের এটি ছিল একটি কৌশল। যার করণে এই চুক্তির প্রতি নেহেরু মন্ত্রীসভার অনেকেই আস্থা রাখতে পারেনি। ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও ড. ক্ষিতিশ চন্দ্র নিয়োগী মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেন। তারা মনে করেন এতে উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধান হবে না।
  • পুনর্বাসন বিতর্ক – “নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি” পরেও উদ্বাস্তু আগমন বন্ধ হয়নি। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ভারতে আগত উদ্বাস্তুরা যাতে তাদের স্থবর সম্পত্তি ফিরে পান সে ব্যাপারে নেহেরু উদ্যোগী হলেও পূর্ব পাকিস্তানের ফেলে আসা সম্পত্তি হিন্দুরা যাতে ফিরে পান সে ব্যাপারে ভারত সরকারের উদ্যোগ দেখা যায়নি। সরকার পশ্চিম পাঞ্জাব থেকে আগত উদ্বাস্তুদের ব্যাপারে সুপরিকল্প পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিলেও বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তুদের ক্ষেত্রে তেমন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়নি। পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ব পাঞ্জাবের উদ্বাস্তুদের প্রতি নেহেরুর এরকম আলাদা আলাদা নীতির ফলে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। তৎকালীন উদ্বাস্তু কমিশনার হিরণ্ময় বন্দোপাধ্যায়ের ‘উদ্বাস্তু’, প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তীর ‘দ্যা মার্জিনাল মেন’, রণজিৎ রায়ের ‘ধ্বংসের পথে পশ্চিমবঙ্গ’ প্রভৃতি গ্রন্থে যথেষ্ট তথ্য দিয়ে এই বিতর্ক দেখানো হয়েছে।
  • অপ্রতুলতা – সরকারের তরফে যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে উদ্বাস্তু শিবির, ত্রাণ শিবির, আবাসন প্রকল্প, জীবিকার ব্যবস্থা, সরকারি ঋণদান ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল ছিল। বাঙালি উদ্বাস্তুরা শিয়ালদহ, হাওড়া স্টেশন, ফুটপাতে, খোলা আকাশের নীচে, নদীয়া জেলার কুপার্স পি. এল. হোম, রূপশ্রী পল্লী রাণাঘাট পি. এল. হোম, ধুবুলিয়া পি. এল. হোম সহ বিভিন্ন উদ্বাস্তু শিবিরে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন।

পরিশেষে বলা যায়, ভারত সরকার প্রথম পাঁচ বছর (1947 – 1952) উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধান ও তাদের পুনর্বাসনের ওপর গুরুত্ব দেয়, তাই এই সময়কাল “পুনর্বাসনের যুগ” নামে পরিচিত। তবে এতে করেও উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধান হয়নি।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

নেহেরু-লিয়াকৎ চুক্তি কী এবং এর ফলাফল কী ছিল?

1950 সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকৎ আলির মধ্যে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তান থেকে ভারতে উদ্বাস্তু আগমন কমানো এবং উভয় দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তবে এই চুক্তি সম্পূর্ণ সফল হয়নি, কারণ পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তু আগমন বন্ধ হয়নি এবং চুক্তির প্রতি অনেকেই আস্থা রাখতে পারেননি। ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও ড. ক্ষিতিশ চন্দ্র নিয়োগী এই চুক্তির বিরোধিতা করে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।

পুনর্বাসন বিতর্ক কী ছিল?

পুনর্বাসন নিয়ে বিতর্কের মূল কারণ ছিল পশ্চিম পাঞ্জাব ও বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তুদের প্রতি ভারত সরকারের ভিন্ন নীতি। পশ্চিম পাঞ্জাব থেকে আগত উদ্বাস্তুদের জন্য সুপরিকল্পিত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হলেও বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তুদের ক্ষেত্রে তেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই বৈষম্য নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়। হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তী, রণজিৎ রায় প্রমুখ লেখকদের রচনায় এই বিতর্কের বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়।

উদ্বাস্তু শিবিরগুলির অবস্থা কেমন ছিল?

উদ্বাস্তু শিবিরগুলির অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু শিয়ালদহ, হাওড়া স্টেশন, ফুটপাত, খোলা আকাশের নীচে এবং বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত শিবিরে থাকতে বাধ্য হন। শিবিরগুলিতে আবাসন, খাদ্য, চিকিৎসা ও অন্যান্য মৌলিক সুবিধার অভাব ছিল। উদ্বাস্তুদের জীবনযাত্রা ছিল অমানবিক ও কষ্টকর।

পুনর্বাসনের যুগ বলতে কী বোঝায়?

1947 থেকে 1952 সাল পর্যন্ত সময়কালকে “পুনর্বাসনের যুগ” বলা হয়। এই সময়ে ভারত সরকার উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধান ও তাদের পুনর্বাসনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়। তবে এই প্রচেষ্টা সত্ত্বেও উদ্বাস্তু সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান হয়নি। এই সময়কালে বিভিন্ন পুনর্বাসন প্রকল্প, শিবির ও ত্রাণ ব্যবস্থা চালু করা হয়, কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ছিল।

ফটোগ্রাফ কিভাবে ইতিহাস রচনায় সাহায্য করে?

ফটোগ্রাফ ইতিহাসের একটি দৃশ্যমান ও বাস্তবসম্মত রূপ তুলে ধরে। এটি ঐতিহাসিক ঘটনাগুলির একটি প্রামাণিক দলিল হিসাবে কাজ করে, যা লিখিত তথ্যের পাশাপাশি অতীতকে আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে সাহায্য করে।

দেশভাগের সময়ের ফটোগ্রাফগুলি কি ধরনের চিত্র তুলে ধরে?

দেশভাগের সময়ের ফটোগ্রাফগুলি উদ্বাস্তুদের দুঃখ-দুর্দশা, যন্ত্রণা, ছন্নছাড়া জীবন, ক্যাম্পে আশ্রয় ও পুনর্বাসনের চিত্র তুলে ধরে। এই ছবিগুলি ঐতিহাসিক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ফটোগ্রাফকে উদ্বাস্তু সমস্যার ইতিহাস রচনার উপাদান হিসাবে কিভাবে ব্যবহার করা যায়? উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে ভারত সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করে?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “ফটোগ্রাফকে উদ্বাস্তু সমস্যার ইতিহাস রচনার উপাদান হিসাবে কিভাবে ব্যবহার করা যায়? উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে ভারত সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করে?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের প্রথম অধ্যায় “ইতিহাসের ধারণা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

শ্রীনিকেতন কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

শ্রীনিকেতন কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

তারকনাথ পালিত স্মরণীয় কেন?

তারকনাথ পালিত স্মরণীয় কেন?

বাংলা লাইনোটাইপ প্রবর্তনের গুরুত্ব কী?

বাংলা লাইনোটাইপ প্রবর্তনের গুরুত্ব কী?

About The Author

Gopi

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

শ্রীনিকেতন কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

তারকনাথ পালিত স্মরণীয় কেন?

বাংলা লাইনোটাইপ প্রবর্তনের গুরুত্ব কী?

চার্লস উইলকিনস্ কে ছিলেন? বাংলা ছাপাখানার বিকাশে চার্লস উইলকিন্সের ভূমিকা

ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ ছিল কেন?