এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ফোটোট্রপিক চলন এবং ফোটোট্যাকটিক চলন কাকে বলে? উদাহরণ দাও। ফোটোট্রপিক চলন এবং ফোটোট্যাকটিক চলনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ফোটোট্রপিক চলন এবং ফোটোট্যাকটিক চলন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
ফোটোট্রপিক চলন –
যে প্রকার আবিষ্ট বক্র চলনে উদ্ভিদ অঙ্গের চলন আলোক উদ্দীপকের উৎস বা গতিপথ অনুসারে হয়, তাকে ফোটোট্রপিক চলন বলে।
উদাহরণ – উদ্ভিদের কাণ্ড আলোর দিকে অগ্রসর হয়, অর্থাৎ কাণ্ড আলোক-অনুকূলবর্তী বা পজিটিভলি ফোটোট্রপিক। আবার উদ্ভিদের মূল আলোকের বিপরীত দিকে অগ্রসর হয়, অর্থাৎ মূল আলোক-প্রতিকূলবর্তী বা নেগেটিভলি ফোটোট্রপিক।
ফোটোট্যাকটিক চলন –
আলোক উদ্দীপকের প্রভাবে উদ্ভিদের সমগ্র দেহ যখন স্থান পরিবর্তন করে, তখন তাকে ফোটোট্যাকটিক চলন বলে।
উদাহরণ – Chlamydomonas (ক্ল্যামাইডোমোনাস), Volvox (ভলভক্স) প্রভৃতি শৈবাল জাতীয় উদ্ভিদ স্বল্প আলোকের দিকে অগ্রসর হয় কিন্তু তীব্র আলোক থেকে দূরে সরে যায়।
ফোটোট্রপিক চলন এবং ফোটোট্যাকটিক চলনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
ফোটোট্রপিক চলন এবং ফোটোট্যাকটিক চলনের মধ্যে পার্থক্য হল –
| বিষয় | ফোটোট্রপিক চলন | ফোটোট্যাকটিক চলন |
| উদ্দীপকের প্রকৃতি | ফোটোট্রপিক চলন আলোর উৎসের গতিপথ দ্বারা প্রভাবিত হয়। | ফোটোট্যাকটিক চলন আলোর উৎসের গতিপথ এবং তীব্রতা উভয় দ্বারাই প্রভাবিত হয়। |
| স্থান পরিবর্তন ঘটে | এই চলনে উদ্ভিদের স্থান পরিবর্তন ঘটে। | এই চলনে উদ্ভিদের স্থান পরিবর্তন ঘটে না। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
উদ্ভিদের কাণ্ডকে “ধনাত্মক ফোটোট্রপিক” এবং মূলকে “ঋণাত্মক ফোটোট্রপিক” বলা হয় কেন?
আলোর প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়ার ভিন্নতার কারণে –
1. কাণ্ড আলোর উৎসের দিকে বেঁকে যায়, তাই এটিকে আলোক-অনুকূলবর্তী বা ধনাত্মক ফোটোট্রপিক বলে।
2. মূল আলোর উৎসের বিপরীত দিকে বেঁকে যায়, তাই এটিকে আলোক-প্রতিকূলবর্তী বা ঋণাত্মক ফোটোট্রপিক বলে।
ফোটোট্যাকটিক চলন শুধুমাত্র কোন ধরনের উদ্ভিদে দেখা যায়?
ফোটোট্যাকটিক চলন সাধারণত জলীয় ও সচল এককোষী বা colonial শৈবালে দেখা যায়, যেমন – ক্ল্যামাইডোমোনাস, ভলভক্স ইত্যাদি। স্থলজ উচ্চশ্রেণীর উদ্ভিদে (যেমন – গাছপালা) এই ধরনের চলন দেখা যায় না।
ফোটোট্যাকটিক চলন শুধুমাত্র আলোর দিক নাকি আলোর তীব্রতা দ্বারাও প্রভাবিত হয়?
হ্যাঁ, ফোটোট্যাকটিক চলন আলোর দিক এবং তীব্রতা – উভয় দ্বারাই প্রভাবিত হয়।
উদাহরণ – ক্ল্যামাইডোমোনাস স্বল্প তীব্রতার আলোর দিকে অগ্রসর হয় কিন্তু উচ্চ তীব্রতার আলো থেকে দূরে সরে যায়।
ফোটোট্রপিক চলন কী শুধু সূর্যের আলোর জন্য হয়?
না, ফোটোট্রপিক চলন যেকোনো আলোর উৎসের (সূর্য, বাতি ইত্যাদি) জন্যই হতে পারে। এটি একটি আলোক-উদ্দীপক প্রতিক্রিয়া। তবে সূর্যের আলোই প্রকৃতিতে এর প্রধান উদ্দীপক।
ফোটোট্যাকটিক চলনের উদাহরণ হিসেবে ক্ল্যামাইডোমোনাসের আচরণটি ব্যাখ্যা করো।
ক্ল্যামাইডোমোনাস নামক এককোষী শৈবালের দেহে একটি চক্ষুবিন্দু (Eyespot) থাকে, যা আলো অনুভব করতে পারে। এটি সালোকসংশ্লেষণের জন্য উপযুক্ত পরিমাণ (স্বল্প তীব্রতার) আলোর দিকে সাঁতার কেটে যায় — এটিকে বলে ধনাত্মক ফোটোট্যাক্সিস। অন্যদিকে, খুব বেশি তীব্রতার আলো এর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, তখন এটি আলো থেকে দূরে সরে যায় — এটিকে বলে ঋণাত্মক ফোটোট্যাক্সিস।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ফোটোট্রপিক চলন এবং ফোটোট্যাকটিক চলন কাকে বলে? উদাহরণ দাও। ফোটোট্রপিক চলন এবং ফোটোট্যাকটিক চলনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন