পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার – প্রবন্ধ রচনা

Rahul

আজকের দিনে পরিবেশ দূষণ একটি জ্বলন্ত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ধনশীল জনসংখ্যা, শিল্পায়নের দ্রুত বৃদ্ধি এবং অযত্নে প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহারের ফলে আমাদের পরিবেশ দ্রুত দূষিত হচ্ছে। এই দূষণের ফলে আমাদের স্বাস্থ্য, জীববৈচিত্র্য এবং গ্রহের ভারসাম্যহীনতা সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

এই প্রবন্ধে আমরা পরিবেশ দূষণের বিভিন্ন ধরন, এর কারণ এবং প্রভাব, এবং এর সমাধানের বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো।

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় এবং স্কুলের পরীক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা। এই রচনাটি প্রায়ই পরীক্ষায় দেখা যায়। তাই, এই রচনাটি একবার মুখস্ত করলে ক্লাস ৬ থেকে ১২ পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারবেন।

পরিবেশদূষণ ও তার প্রতিকার - প্রবন্ধ রচনা

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার – প্রবন্ধ রচনা

এই নদী, এই মাটি বড়ো প্রিয় ছিল
এই মেঘ, এই রৌদ্র, এই বাতাসের উপভোগ
আমরা অনেক দূরে সরে গেছি, কে কোথায় আছি?

– সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

ভূমিকা –

একুশ শতকের পৃথিবী যে বিপদকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিন সর্বনাশের প্রহর গুনছে তার নাম পরিবেশ দূষণ। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে গতিশীল এই সভ্যতা দূষণের আক্রমণে প্রতিমুহূর্তে যেন মৃত্যুর হিমশীতলতাকে অনুভব করছে।

পরিবেশ –

যে পরিমণ্ডলে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীজগৎ বেঁচে থাকে ও বড়ো হয়ে ওঠে তাকেই তার পরিবেশ বলে। প্রাণীজগৎ ও প্রকৃতিজগতের সমন্বয়ে পরিবেশ গঠিত হয়। চারপাশের গাছপালা, নদীনালা, অরণ্য, পাহাড় কিংবা মরু অঞ্চল মিলে তৈরি হয় মানুষের পরিবেশ। অধ্যাপক সি সি পার্ক বলেছেন – কোনো বিশেষ সময়ে ও বিশেষ স্থানে মানুষের চারপাশে ঘিরে থাকা সামগ্রিক অবস্থাকে পরিবেশ বলে।

পরিবেশের দূষণ –

পরিবেশ যখন নানা নেতিবাচক কারণে প্রভাবিত হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাকেই পরিবেশ দূষণ বলে। পরিবেশ দূষণের ফলে পরিবেশের গুণগত মানের অবনমন ঘটে। প্রাকৃতিক দূষণের ক্ষেত্র অনুসারে পরিবেশ দূষণকে বায়ুদূষণ, জলদূষণ, মৃত্তিকাদূষণ, শব্দদূষণ ইত্যাদি নানা ভাগে ভাগ করা যায়।

দূষণের কারণ –

কলকারখানা ও যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ইত্যাদি ক্রমাগত বায়ুকে দূষিত করে চলেছে। শিল্পজাত ও কৃষিজাত বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ, গৃহস্থালির আবর্জনা ইত্যাদি জলদূষণ ঘটাচ্ছে। বিভিন্ন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক, শিল্পের বর্জ্য পদার্থ ইত্যাদি মাটিতে মিশে গিয়ে মৃত্তিকাদূষণ ঘটাচ্ছে। যানবাহনের শব্দ, শব্দবাজির ব্যবহার, লাউডস্পিকারের শব্দ ইত্যাদি শব্দদূষণের কারণ।

দূষণের ফলাফল –

পরিবেশবিজ্ঞানী সেম্পল মানুষকে বলেছিলেন ‘ভূপৃষ্ঠের ফসল’ এবং ‘প্রকৃতির সন্তান’। স্বাভাবিকভাবেই পরিবেশের বিপর্যয় মানবজীবনকে দারুণভাবেই প্রভাবিত করে।

  • শারীরিক অসুস্থতা – এই দূষণের কারণেই দেখা দেয় ফুসফুস, হৃদযন্ত্রের নানা অসুখ। জল ও মৃত্তিকাদুষণ কলেরা, হেপাটাইটিস, টাইফয়েড এরকম নানা অসুখকে নিশ্চিত করে।
  • বিশ্ব উষ্ণায়ন – শিল্পসভ্যতার অনিয়ন্ত্রিত উন্নতির ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়েছে, যা কিনা বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্ম দিয়েছে। এর ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে মেরুপ্রদেশের বরফ গলে যাচ্ছে, সমুদ্রে জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীজুড়ে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। সুনামির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ধ্বংসের বার্তা নিয়ে আসছে। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ শ্রেণির অরণ্য চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
  • বিভিন্ন প্রজাতির ধাণীর বিলুপ্তি – পরিবেশ দূষণের অন্যতম ফলস্বরূপ পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে প্যাসেঞ্জার পিজিয়ন, তোসমানিয়ান টাইগার, কোয়াগ্গা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, টেকোপা পাপ-এর মতো মাছ।

প্রতিকারের পথ –

পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন দূষণের কারণগুলিকে খুঁজে নিয়ে সেগুলি রোধে সচেষ্ট হওয়া। যেমন, যন্ত্রপাতির আধুনিকীকরণ, অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার, দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ইত্যাদির মাধ্যমে বায়ুদূষণ ঠেকানো যায়। জৈব সারের ব্যবহার মৃত্তিকাদূষণ কমায়। তবে দূষণ প্রতিরোধে সবথেকে কার্যকরী হল নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ করা এবং সামাজিক বৃক্ষরোপণ। নাগরিক সচেতনতা এবং প্রশাসনিক সক্রিয়তা—এই দুয়ে মিলে পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতে পারে। এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার –

একুশ শতকের সভ্যতার কাছে চাঁদে পৌঁছে যাওয়া যতটা গুরুত্বের বিষয় তার থেকেও পৃথিবীকে রক্ষা করা অনেক বেশি প্রয়োজনের। অনেকগুলো শীর্ষসম্মেলন পার করেও পৃথিবীর রাষ্ট্রনায়কেরা কোনো নিশ্চিত আশার বাণী শোনাতে পারেননি। শঙ্কার এই দিনযাপনই আজকের সভ্যতার নিয়তি।

পরিবেশ দূষণ আমাদের সময়ের অন্যতম গুরুতর সমস্যা। এটি আমাদের জীবনযাত্রার মান, স্বাস্থ্য এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকিস্বরূপ। এই সমস্যার সমাধানে আমাদের সকলের একসাথে কাজ করতে হবে।

Please Share This Article

Related Posts

ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায় প্রবন্ধ রচনা।

ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায় – প্রবন্ধ রচনা

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান - প্রবন্ধ রচনা

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান – প্রবন্ধ রচনা

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা – প্রবন্ধ রচনা

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

জেট বায়ুর বৈশিষ্ট্য – মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে জেট বায়ুর সম্পর্ক

নিরক্ষীয় অঞ্চলে পরিচলন বৃষ্টি হয় কেন? বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কীভাবে করা হয়?

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – বিষয়সংক্ষেপ