পরিবেশের ওপর বর্জ্য পদার্থের প্রভাব লেখো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “পরিবেশের ওপর বর্জ্য পদার্থের তিনটি প্রভাব সংক্ষেপে লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “পরিবেশের ওপর বর্জ্য পদার্থের তিনটি প্রভাব সংক্ষেপে লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

পরিবেশের ওপর বর্জ্য পদার্থের তিনটি প্রভাব সংক্ষেপে লেখো।
পরিবেশের ওপর বর্জ্য পদার্থের তিনটি প্রভাব সংক্ষেপে লেখো।
Contents Show

পরিবেশের ওপর বর্জ্য পদার্থের তিনটি প্রভাব সংক্ষেপে লেখো।

অথবা, পরিবেশের ওপর বর্জ্যের প্রভাব আলোচনা করো।

পরিবেশের ওপর বর্জ্য পদার্থের প্রভাব –

সমগ্র পৃথিবীতে মানুষের দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপের জন্য উৎপাদিত বর্জ্যের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। এই বর্জ্য পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের (যেমন – মৃত্তিকা, জলাশয়, বায়ু) যেমন ক্ষতি করে, মানব স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে। বর্জ্যের ক্ষতিরকারক প্রভাবগুলি হল –

মৃত্তিকার ওপর প্রভাব –

  • আমাদের ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থসমূহ যেমন – কীটনাশক, আগাছানাশক, ডিটারজেন্ট ইত্যাদি।
  • কলকারখানা ও মোটরগাড়ি থেকে নির্গত দূষিত পদার্থ।
  • প্লাস্টিক, পলিথিন, পলিব্যাগ, সিরিঞ্জ ও অন্যান্য প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য মৃত্তিকাতে বিয়োজিত হয় না বলে দীর্ঘদিন ধরে মৃত্তিকাতে সঞ্চিত থাকে এবং মৃত্তিকা দূষিত করে। এগুলি থেকে নির্গত বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান জল, বায়ু, আলো চলাচলে বাধা দেয়। ফলে মৃত্তিকাস্থিত অণুজীব মারা যায় ও জীব বিবর্ধনের কারণে মনুষ্য ও অন্যান্য প্রাণীর ক্ষতি হয় এবং খাদ্যশৃঙ্খল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

বায়ুর ওপর প্রভাব –

দীর্ঘদিন খোলা স্থানে বর্জ্য পদার্থ জমিয়ে রাখলে তা পচে গিয়ে বায়ুকে দূষিত করে। মানুষের দেহ ও মনের অস্বস্তি বাড়িয়ে তোলে এবং সৌন্দর্য নষ্ট করে, যা জীবন বিকাশের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। কলকারখানা থেকে নির্গত মারাত্মক ক্ষতিকারক গ্যাসগুলি প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে এনেছে।

জলের ওপর প্রভাব –

পৃথিবীর মহাসাগর, সাগর, হ্রদ, নদী প্রভৃতি স্থানে প্রচুর বর্জ্য জমার ফলে জল দূষিত হওয়ায় জলজ প্রাণীর অপমৃত্যু ঘটছে, তাদের প্রজনন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের শৈবাল নষ্ট হচ্ছে। জলজ বাস্তুতন্ত্রের বিপর্যয়ের সম্ভাবনা বাড়ছে। অতিরিক্ত পরিমাণে প্লাস্টিকের ব্যবহার এবং যত্রতত্র তার নিক্ষেপের ফলে শহরাঞ্চলের হাইড্রেনগুলিতে প্লাস্টিকের সঞ্চয় ঘটছে। ফলে হাইড্রেনগুলির মুখ বুজে গিয়ে পয়ঃপ্রণালী ব্যাহত হচ্ছে। যার ফলে নর্দমার দূষিত জল মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীদের দেহে বিভিন্ন রোগ সংক্রমণ ঘটাচ্ছে।

মানবস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব –

চিকিৎসা কেন্দ্র ও অন্যান্য উৎস থেকে নির্গত বর্জ্যগুলি যে সমস্ত রোগ ছড়াতে পারে তাদের মধ্যে প্রধান কয়েকটি হল – কৃমির প্রকোপ, ফুসফুসের রোগ, টিটেনাস, পেপটিক আলসার, হেপাটাইটিস, পেটের বিভিন্ন রোগ (আমাশয়, জন্ডিস), বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ, চোখের প্রদাহ, টাইফয়েড, ব্রংকাইটিস, এমফাইসিমা, ফ্লুরোসিস। DNA পরিবর্তন, রক্তচাপ বৃদ্ধি প্রভৃতি। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ক্লোরোসিস, নেক্রোসিস রোগ হয়, উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও উৎপাদনশীলতা হ্রাস ইত্যাদি। তেজস্ক্রিয় বর্জ্য মানবদেহে স্নায়ুর রোগ, পঙ্গুতা, বন্ধ্যাত্ব, ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের মতো রোগ সৃষ্টি করে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

পরিবেশের ওপর বর্জ্য পদার্থের তিনটি প্রধান প্রভাব কী কী?

1. মৃত্তিকা দূষণ – প্লাস্টিক, রাসায়নিক বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ মাটিতে মিশে মাটির উর্বরতা নষ্ট করে।
2. বায়ু দূষণ – পচনশীল বর্জ্য থেকে ক্ষতিকর গ্যাস (মিথেন, হাইড্রোজেন সালফাইড) নির্গত হয়, যা বায়ুকে দূষিত করে।
3. জল দূষণ – নদী, সমুদ্র ও ভূগর্ভস্থ জলে বর্জ্য মিশে জলজ প্রাণী ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর হয়।

বর্জ্য কীভাবে মৃত্তিকা দূষণ করে?

1. প্লাস্টিক ও পলিথিন মাটিতে পচে না, দীর্ঘদিন জমে থেকে মাটির স্বাভাবিক গঠন নষ্ট করে।
2. রাসায়নিক বর্জ্য (কীটনাশক, ভারী ধাতু) মাটির অণুজীব ধ্বংস করে, যা ফসলের বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে।

বর্জ্য বায়ু দূষণে কীভাবে ভূমিকা রাখে?

1. খোলা স্থানে বর্জ্য পচে মিথেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস সৃষ্টি করে, যা বায়ুদূষণ ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং বৃদ্ধি করে।
2. প্লাস্টিক পোড়ালে বিষাক্ত ডাইঅক্সিন নির্গত হয়, যা শ্বাসকষ্ট ও ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।

জলাশয়ে বর্জ্যের প্রভাব কী?

1. প্লাস্টিক বর্জ্য জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটায় (যেমন – কচ্ছপ, মাছ প্লাস্টিক খেয়ে মারা যায়)।
2. শিল্পবর্জ্য ও স্যুয়েজ জলকে বিষাক্ত করে, যা ডায়রিয়া, টাইফয়েড ও হেপাটাইটিসের কারণ হয়।

বর্জ্য মানবস্বাস্থ্যের কী ক্ষতি করে?

1. দূষিত জল ও বায়ু থেকে শ্বাসকষ্ট, ত্বকের রোগ, ক্যান্সার ও পেটের অসুখ হয়।
2. প্লাস্টিক থেকে নির্গত বিষাক্ত রাসায়নিক (BPA, ফথালেট) হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কিছু সমাধান কী?

1. পুনর্ব্যবহার (Recycling) – প্লাস্টিক, কাগজ, ধাতু পুনরায় ব্যবহার।
2. জৈব বর্জ্য কম্পোস্টিং – খাদ্যবর্জ্য থেকে সার তৈরি।
3. কম প্লাস্টিক ব্যবহার – কাপড়ের ব্যাগ, স্টিলের বোতল ব্যবহার।

প্লাস্টিক বর্জ্য কেন সবচেয়ে বিপজ্জনক?

1. এটি প্রায় 400 বছর পর্যন্ত পচে না এবং মাটি, জল ও বায়ুকে দীর্ঘমেয়াদে দূষিত করে।
2. সামুদ্রিক প্রাণীর মাধ্যমে মাইক্রোপ্লাস্টিক মানুষের খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে।

ই-বর্জ্য (ইলেকট্রনিক বর্জ্য) কীভাবে ক্ষতিকর?

1. ইলেকট্রনিক ডিভাইসে সীসা, মার্কারি, ক্যাডমিয়াম থাকে, যা মাটি ও জলে মিশে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
2. উপসংহার – বর্জ্য পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। সচেতনতা, পুনর্ব্যবহার ও সরকারি নীতির মাধ্যমে এর প্রভাব কমানো সম্ভব।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “পরিবেশের ওপর বর্জ্য পদার্থের তিনটি প্রভাব সংক্ষেপে লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “পরিবেশের ওপর বর্জ্য পদার্থের তিনটি প্রভাব সংক্ষেপে লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

বর্জ্যজনিত বায়ুদূষণ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে

বর্জ্যজনিত বায়ুদূষণ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে?

জীব-বিশ্লেষ্য ও জীব-অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলতে কী বোঝো

জীব-বিশ্লেষ্য ও জীব-অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলতে কী বোঝো? উদাহরণসহ বিপজ্জনক পদার্থের শ্রেণিবিভাগ করো।

বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাস কীভাবে করা যায়

বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাস কীভাবে করা যায়?

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারী সমাজের অংশগ্রহণ ও সীমাবদ্ধতা লেখো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে বাংলার ছাত্র সমাজ কীরূপ ভূমিকা পালন করেছিল?

পরিবেশের ওপর বর্জ্য পদার্থের প্রভাব লেখো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি সম্পর্কে টীকা লেখো।