এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুতি চিত্রসহ বর্ণনা করো। প্রারম্ভিক রাসায়নিকসমূহ, বিক্রিয়ার শর্ত, শমিত রাসায়নিক সমীকরণ, গ্যাস শুষ্ককরণ এবং গ্যাস সংগ্রহ বিষয়গুলির উল্লেখ করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুতি চিত্রসহ বর্ণনা করো। প্রারম্ভিক রাসায়নিকসমূহ, বিক্রিয়ার শর্ত, শমিত রাসায়নিক সমীকরণ, গ্যাস শুষ্ককরণ এবং গ্যাস সংগ্রহ বিষয়গুলির উল্লেখ করো।
অথবা, পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুতির বিক্রিয়ার শর্ত ও রাসায়নিক সমীকরণ লেখো।
অথবা, পরীক্ষাগারে উৎপন্ন অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুতির শুষ্ককরণ নীতিটি লেখো।
- প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য – অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (NH₄Cl) এবং পোড়া চুন (CaO)।
- বিক্রিয়ার শর্ত – পরীক্ষাগারে 1 : 3 ওজন অনুপাতে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড -এর সঙ্গে চুন মিশিয়ে উত্তপ্ত করে অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুত করা হয়।
- বিক্রিয়ার রাসায়নিক সমীকরণ – 2NH₄Cl + CaO → CaCl₂ + H₂O + 2NH₃↑
- পদ্ধতি – এক ভাগ ওজনের অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের সঙ্গে তিনভাগ ওজনের চুন ভালোভাবে মিশিয়ে মিশ্রণটিকে একটি গোলতল ফ্লাস্কের ভিতর নেওয়া হয়। ফ্লাস্কের মুখে কর্কের মাধ্যমে একটি নির্গমনল লাগানো থাকে। নির্গম নলের অপরপ্রান্তটি একটি পোড়া চুনস্তম্ভের নীচের দিকে যোগ করা হয়। এই চুনস্তম্ভের ওপর থেকে আর একটি নির্গম নল লাগানো থাকে যার মুখে একটি শুষ্ক গ্যাসজার উপুড় করে বসিয়ে গ্যাসজারটিকে ক্ল্যাম্পের সাহায্যে স্ট্যান্ডের সঙ্গে আটকানো হয়। গোলতল ফ্লাস্কটিকে ক্ল্যাম্পের সাহায্যে আটকে রাখা তারজালির ওপর বসিয়ে বুনসেন বার্নার দিয়ে উত্তপ্ত করা হয়। এর ফলে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড এবং পোড়াচুনের বিক্রিয়ায় অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন হয়।
- গ্যাস শুষ্ককরণ – উৎপন্ন অ্যামোনিয়া গ্যাসের সঙ্গে জলীয় বাষ্প মিশে থাকে। এই গ্যাস মিশ্রণ নির্গম নলের মধ্যে দিয়ে পোড়া চুনস্তম্ভের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। চুনস্তম্ভের ভিতর দিয়ে অতিক্রম করার সময় অ্যামোনিয়ার মধ্যস্থ জলীয় বাষ্প পোড়া চুন দ্বারা শোষিত হয়। পোড়া অ্যামোনিয়া এবং চুন (CaO) উভয়ই ক্ষারকীয় পদার্থ হওয়ায় এরা পরস্পরের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না উপরন্তু CaO অ্যামোনিয়ার মধ্যে মিশ্রিত জলীয় বাষ্প শোষণ করে কলিচুনে পরিণত হয়। CaO + H₂O → Ca(OH)₂
- গ্যাস সংগ্রহ – বায়ু অপেক্ষা হালকা বলে চুনস্তম্ভ থেকে নির্গত শুষ্ক অ্যামোনিয়াকে বায়ুর নিম্ন অপসারণ দ্বারা গ্যাসজারে সংগ্রহ করা হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুতির জন্য কী কী প্রারম্ভিক রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়?
পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুতির জন্য নিম্নলিখিত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় –
1. অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (NH₄Cl) – অ্যামোনিয়াম আয়নের (NH₄⁺) উৎস।
2. পোড়া চুন (ক্যালসিয়াম অক্সাইড, CaO) – একটি শক্তিশালী ক্ষারক যা গ্যাসকে শুষ্ক করতে এবং বিক্রিয়ায় সাহায্য করতে ব্যবহৃত হয়।
অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুতির বিক্রিয়াটির রাসায়নিক সমীকরণ কী?
বিক্রিয়াটির সম্পূর্ণ সমীকরণ নিম্নরূপ –
2NH₄Cl (s) + CaO (s) → CaCl₂ (s) + H₂O (g) + 2NH₃ (g)
এটি একটি অম্ল-ক্ষারক বিক্রিয়া, যেখানে NH₄Cl একটি লবণের ভূমিকায় (যা অম্লীয় ক্যাটায়ন NH₄⁺ দেয়) এবং CaO একটি ক্ষারক হিসেবে কাজ করে।
অ্যামোনিয়া গ্যাস সংগ্রহ করতে কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় এবং কেন?
অ্যামোনিয়া গ্যাস সংগ্রহ করতে বায়ুর অপেক্ষায় নিম্ন অপসারণ পদ্ধতি (Downward Displacement of Air) ব্যবহার করা হয়।
কারণ – অ্যামোনিয়া গ্যাস বায়ুর চেয়ে হালকা (এর বাষ্প ঘনত্ব 8.5, বায়ুর গড় বাষ্প ঘনত্ব 14.4)। তাই এটি সহজেই উপরের দিকে উঠে যায় এবং একটি সংগ্রহ পাত্রে (যেমন, উপুড় করা গ্যাস জার) নিচ থেকে উপরের দিকে জমা হতে থাকে, বায়ুকে নিচের দিকে অপসারিত করে।
অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুতির সময় বিক্রিয়া মিশ্রণকে উত্তপ্ত করার প্রয়োজন কেন?
বিক্রিয়াটি তাপ সাপেক্ষ। কক্ষ তাপমাত্রায় বিক্রিয়াটি খুব ধীর গতিতে ঘটে। উত্তপ্ত করলে বিক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি পায় এবং অ্যামোনিয়া গ্যাস দ্রুত ও অবিচ্ছিন্নভাবে উৎপন্ন হতে থাকে।
অ্যামোনিয়া গ্যাসের সংকেত NH₃ কেন?
নাইট্রোজেন পরমাণুর বহিস্থ কক্ষপথে 5টি ইলেকট্রন রয়েছে। এটি তিনটি হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে তিনটি সমযোজী বন্ধন গঠন করে, যার ফলে একটি একক ইলেকট্রন জোড় থেকে যায়। ফলে এর সংকেত NH₃ হয় এবং অণুটি পিরামিডাকার গঠন লাভ করে।
অ্যামোনিয়া গ্যাসের গন্ধ কেমন?
অ্যামোনিয়া গ্যাসের একটি তীব্র এবং ঝাঁঝালো গন্ধ রয়েছে। এটি শ্বাসনালীতে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে বলে পরীক্ষাগারে এটি সতর্কতার সাথে পরিচালনা করা উচিত।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুতি চিত্রসহ বর্ণনা করো। প্রারম্ভিক রাসায়নিকসমূহ, বিক্রিয়ার শর্ত, শমিত রাসায়নিক সমীকরণ, গ্যাস শুষ্ককরণ এবং গ্যাস সংগ্রহ বিষয়গুলির উল্লেখ করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন