প্রকৃতিতে জৈব পলিমার প্রোটিনের বায়োডিগ্রেডেশন হয় কীভাবে?

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “প্রকৃতিতে জৈব পলিমার প্রোটিনের বায়োডিগ্রেডেশন হয় কীভাবে?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রকৃতিতে জৈব পলিমার প্রোটিনের বায়োডিগ্রেডেশন হয় কীভাবে?

প্রকৃতিতে জৈব পলিমার প্রোটিনের বায়োডিগ্রেডেশন হয় কীভাবে?

প্রোটিন অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে উৎপন্ন পলিমার। কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ও সালফার সংযোগে গঠিত অ্যামাইনো অ্যাসিডের মনোমারগুলি পরস্পর পেপটাইড বন্ধনের মাধ্যমে সংযোজিত হয়ে প্রোটিন গঠন করে। মাটিতে অবস্থিত বিভিন্ন বিয়োজক যেমন – ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদির দেহ থেকে নিঃসৃত উৎসেচকের ক্রিয়ায় প্রোটিন বিয়োজিত হয়ে প্রথমে অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং পরে অ্যামোনিয়ায় পরিণত হয়। এই পদ্ধতিটি ‘অ্যামোনিফিকেশন’ নামে পরিচিত। এই অ্যামোনিয়া পুনরায় মাটিতে বসবাসকারী জীবাণুর ক্রিয়ার ফলে প্রথমে নাইট্রাইট এবং পরে নাইট্রেট যৌগে রূপান্তরিত হয়। একে নাইট্রিফিকেশন বলে। অবশেষে মৃত্তিকাস্থিত ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া নাইট্রেট যৌগকে বিয়োজিত করে নাইট্রোজেন মুক্ত করে, যা বায়ুতে মেশে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

প্রকৃতিতে প্রোটিনের জৈব-অবনমন (বায়োডিগ্রেডেশন) বলতে কী বোঝায়?

প্রোটিনের বায়োডিগ্রেডেশন হলো একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের মতো বিয়োজক জীব (decomposers) তাদের নিঃসৃত উৎসেচকের (এনজাইম) সাহায্যে জটিল প্রোটিন অণুকে ভেঙে সরল অণু, যেমন – অ্যামাইনো অ্যাসিড, অ্যামোনিয়া এবং শেষ পর্যন্ত নাইট্রোজেন গ্যাসে রূপান্তরিত করে। এর ফলে প্রোটিনে আবদ্ধ নাইট্রোজেন পুনরায় পরিবেশে ফিরে যায় এবং প্রাণী ও উদ্ভিদের পুষ্টিচক্রের অংশ হয়।

প্রকৃতিতে জৈব পলিমার প্রোটিনের ভাঙার প্রথম ধাপটি কী এবং কীভাবে এটি ঘটে?

প্রোটিন ভাঙার প্রথম ধাপকে প্রোটিনিয়েসিস বা অ্যামোনিফিকেশনের প্রাথমিক ধাপ বলা হয়। এই ধাপে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের মতো বিয়োজক জীব প্রোটিনেজ নামক এনজাইম নিঃসরণ করে, যা প্রোটিনের পেপটাইড বন্ধন ভেঙে দেয়। ফলে প্রোটিন প্রথমে ছোট পেপটাইডে এবং পরে পৃথক পৃথক অ্যামাইনো অ্যাসিডে ভেঙে যায়।

অ্যামোনিফিকেশন কী?

অ্যামোনিফিকেশন হলো সেই জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যেখানে অণুজীব অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে অ্যামিনো গ্রুপ (–NH₂) অপসারণ করে এবং তা অ্যামোনিয়ায় (NH₃) রূপান্তরিত করে। এটি প্রোটিন অবনমনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, কারণ এর মাধ্যমে নাইট্রোজেন একটি অজৈব রূপে (অ্যামোনিয়া) মুক্ত হয়।

নাইট্রিফিকেশনের পর নাইট্রোজেন চক্র কীভাবে সম্পূর্ণ হয়?

নাইট্রিফিকেশনের পর উৎপন্ন নাইট্রেট মাটিতে থাকা অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া (যেমন – Pseudomonas ও Paracoccus প্রজাতি) ব্যবহার করে। এই ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া নাইট্রেটকে নাইট্রোজেন গ্যাসে (N₂) রূপান্তরিত করে এবং তা বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে দেয়। এই প্রক্রিয়াটিকে ডিনাইট্রিফিকেশন বলা হয়। এভাবেই প্রোটিন থেকে মুক্ত নাইট্রোজেন পুনরায় বায়ুমণ্ডলে ফিরে গিয়ে নাইট্রোজেন চক্র সম্পূর্ণ করে।

প্রোটিনের বায়োডিগ্রেডেশন কী?

এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যেখানে মাইক্রোঅর্গানিজম (ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক) নিঃসৃত এনজাইমের সাহায্যে জটিল প্রোটিন অণু ভেঙে সরল অ্যামাইনো অ্যাসিড ও পরে অ্যামোনিয়ায় পরিণত হয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “প্রকৃতিতে জৈব পলিমার প্রোটিনের বায়োডিগ্রেডেশন হয় কীভাবে?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ব্রোমিনের সঙ্গে অ্যাসিটিলিনের যুত বিক্রিয়াটি উল্লেখ করো।

ব্রোমিনের সঙ্গে অ্যাসিটিলিনের যুত বিক্রিয়াটি উল্লেখ করো।

কার্যকরী মূলক বা ক্রিয়াশীল গ্রুপ কাকে বলে? কার্যকরী মূলক ও জৈব মূলকের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।

কার্যকরী মূলক বা ক্রিয়াশীল গ্রুপ কাকে বলে? কার্যকরী মূলক ও জৈব মূলকের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।

একটি জৈব যৌগের আণবিক সংকেত C₂H₄O₂। যৌগটি জলে দ্রাব্য এবং যৌগটির জলীয় দ্রবণে NaHCO₃ যোগ করলে CO₂ নির্গত হয়। জৈব যৌগটিকে শনাক্ত করো। জৈব যৌগটির সঙ্গে ইথানলের বিক্রিয়া শর্ত ও সমিত রাসায়নিক সমীকরণসহ লেখো।

C₂H₄O₂ সংকেতের একটি জৈব যৌগ NaHCO₃-এর সাথে CO₂ গ্যাস দেয়। যৌগটি শনাক্ত করো ও ইথানলের সাথে এর বিক্রিয়ার শর্তসহ সমীকরণ দাও।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণস্থল উল্লেখ করে এর প্রধান কাজগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

ইনসুলিন হরমোনের প্রধান কাজগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

হরমোনের ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ কাকে বলে? উদাহরণসহ হরমোনের ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

প্রাণীদেহের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণে হরমোনের ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

প্রাণী হরমোনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।