এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কেন? রবীন্দ্রনাথ কীভাবে ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কেন? রবীন্দ্রনাথ কীভাবে ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কেন?
শিক্ষা-দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ একদিকে যেমন ছিলেন ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার কঠোর সমালোচক, অন্যদিকে উপনিষদীয় শিক্ষাচিন্তার দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত। পাশ্চাত্যের ‘কেরানি তৈরির শিক্ষা’ তাঁর মনঃপূত হয়নি। তাই ঔপনিবেশিক শিক্ষার কেরানি গড়ার কল ভেঙে সজীব মানুষ গড়তে 1901 খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ বোলপুর-সন্নিকটস্থ ভুবনডাঙার মাঠে গড়ে তুললেন আধুনিক তপোবন – ‘ব্রহ্মচর্যাশ্রম’। এখানে মুক্ত প্রকৃতির অঙ্গনে, খোলা আকাশের নীচে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়।
রবীন্দ্রনাথ কীভাবে ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন?
শিক্ষা-দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার কঠোর সমালোচক ছিলেন। পাশ্চাত্যের ‘কেরানি তৈরীর শিক্ষা’ তাঁর মনঃপূত হয়নি। ‘শিক্ষা সমন্বয়’, ‘তপোবন’, ‘শিক্ষার হেরফের’, ‘তোতাকাহিনী’ প্রভৃতি প্রবন্ধ ও ছোটোগল্পে তিনি ঔপনিবেশিক শিক্ষানীতির চরম সমালোচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথের কাছে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল ‘মানুষ তৈরি করা।’ তিনি মনে প্রাণে উপনিষদীয় চিন্তা-ধারায় প্রভাবিত ছিলেন। ঔপনিবেশিক শিক্ষার কেরানি গড়ার কল ভেঙে সজীব মানুষ গড়তে 1901 খ্রিস্টাব্দে বোলপুরে তিনি গড়ে তোলেন ব্রহ্মচর্যাশ্রম। পরে 1921 খ্রিস্টাব্দে একে মহাবিদ্যালয়ে পরিণত করেন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ব্রহ্মচর্যাশ্রমের শিক্ষাপদ্ধতি কী ছিল?
এখানে শিক্ষা দেওয়া হত মুক্ত প্রকৃতির কোলে, খোলা আকাশের নিচে। পাঠ্যসূচিতে ছিল সাহিত্য, সংগীত, শিল্প, কৃষিকাজ, শরীরচর্চা ও স্বনির্ভরতার প্রশিক্ষণ। মুখস্থবিদ্যার বদলে সৃজনশীলতা ও বাস্তবানুভূতিকে প্রাধান্য দেওয়া হত।
রবীন্দ্রনাথ কেন ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করেছিলেন?
তিনি মনে করতেন, ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা শুধু সরকারি চাকরির জন্য “যন্ত্রমানুষ” তৈরি করে, যা জীবনের সমন্বয়হীনতা ও প্রকৃতিবিচ্ছিন্নতা ডেকে আনে। তাঁর মতে, শিক্ষার লক্ষ্য হওয়া উচিত “মনুষ্যত্বের বিকাশ”।
ব্রহ্মচর্যাশ্রমের পরবর্তী রূপ কী?
1921 সালে রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মচর্যাশ্রমকে “বিশ্বভারতী” মহাবিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করেন, যা পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পায়। এটি ভারতীয় ও বিশ্ব সংস্কৃতির সমন্বয়ের কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
রবীন্দ্রনাথের কোন রচনায় তাঁর শিক্ষাদর্শন ফুটে উঠেছে?
1. প্রবন্ধ – শিক্ষার সমন্বয়, তপোবন, শিক্ষার হেরফের।
2. ছোটগল্প – তোতাকাহিনী (যেখানে পাখির মাধ্যমে শিক্ষার যান্ত্রিকতাকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে)।
3. উপন্যাস – গোরা (ঔপনিবেশিক ও স্বদেশী চিন্তার দ্বন্দ্ব)।
ব্রহ্মচর্যাশ্রমের নামকরণের তাৎপর্য কী?
“ব্রহ্মচর্য” অর্থ আত্মনিয়ন্ত্রণ ও জ্ঞানার্জনের সাধনা। রবীন্দ্রনাথ প্রাচীন গুরুকুলের আদর্শে এই নাম রাখেন, যেখানে শিক্ষার্থীরা সরল জীবনযাপন করে জ্ঞানচর্চা করবে।
রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তায় প্রকৃতির ভূমিকা কী ছিল?
তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রকৃতিই শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। ব্রহ্মচর্যাশ্রমে গাছপালা, মাঠ-নদীকে শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হত, যাতে শিক্ষার্থীরা প্রকৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে শিখতে পারে।
আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় ব্রহ্মচর্যাশ্রমের প্রাসঙ্গিকতা কী?
আজও রবীন্দ্রনাথের দর্শন প্রাসঙ্গিক, বিশেষত প্রকৃতি-ভিত্তিক শিক্ষা, রোট memorization-বিরোধিতা এবং শিক্ষাকে জীবনমুখী করার তাঁর ধারণা। বিশ্বভারতী এখনও তাঁর আদর্শ বহন করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কেন? রবীন্দ্রনাথ কীভাবে ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কেন? রবীন্দ্রনাথ কীভাবে ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন