এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “রাজা রামমোহনের নেতৃত্বে সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “রাজা রামমোহনের নেতৃত্বে সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

রাজা রামমোহনের নেতৃত্বে সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও?
উনিশ শতকের নবজাগরিত বাংলায় ধর্ম তথা সমাজ জীবনে যে সংস্কার-যজ্ঞের সূচনা হয়, সতীদাহ প্রথা নিবারণ তার মধ্যে অগ্রগণ্য।
সতীদাহ প্রথা –
মৃত স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় সদ্য বিধবাকে নববধূর সাজে বলপূর্বক পুড়িয়ে মারাই সতীদাহ বা সহমরণ নামে হিন্দু সমাজে প্রচলিত ছিল।
রামমোহনের উদ্যোগ –
রাজা রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথা বন্ধের জন্য প্রকৃত অর্থেই এক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।

ধর্মীয় প্রমাণ –
রক্ষণশীল হিন্দুরা সতীদাহ প্রথার সমর্থনে ‘সমাচার চন্দ্রিকা’য় নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে থাকলে রামমোহন ‘মনু সংহিতা’ -সহ বিভিন্ন হিন্দু শাস্ত্র ও ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, সতীদাহ প্রথা হিন্দু ধর্ম তথা শাস্ত্র বিরোধী। এক্ষেত্রে তাঁর ‘সংবাদ কৌমুদি’ পত্রিকা রক্ষণশীলদের বিরোধিতার প্রতীক হয়ে ওঠে।
প্রচার কার্য –
বিভিন্ন পুস্তিকা প্রকাশের মাধ্যমে সতীদাহের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে রামমোহন জনসচেতনতা গড়ে তোলেন। 1818 – 19 খ্রিস্টাব্দে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয় ‘সহমরণ বিষয়ক প্রবর্তক ও নিবর্তক সম্বাদ’।
আবেদনপত্র প্রেরণ –
সতীদাহ প্রথা নিবারণে রামমোহনের অপর উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল এই প্রথা বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে তৎকালীন বাংলার তিনশো জন বিশিষ্ট নাগরিকের স্বাক্ষর সংবলিত আবেদনপত্র বড়োলাট বেন্টিষ্কের কাছে প্রেরণ করা।
আইন পাস –
শেষপর্যন্ত রামমোহনের আবেদনে সাড়া দিয়ে বড়োলাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক 1829 খ্রিস্টাব্দে 17 নং রেগুলেশন জারির মাধ্যমে সতীদাহ প্রথাকে আইনত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
মন্তব্য –
সতীদাহ প্রথা নিবারণে রাজা রামমোহনের ঐতিহাসিক ভূমিকা শ্রদ্ধার সহিত স্মরণীয়। তিনি যথার্থই নবভারতের পথিকৃৎ।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
সতীদাহ প্রথা কী?
সতীদাহ প্রথা ছিল হিন্দু সমাজে প্রচলিত একটি কুপ্রথা, যেখানে মৃত স্বামীর চিতায় জীবন্ত স্ত্রীকে জোরপূর্বক পুড়িয়ে মারা হতো। এটি সহমরণ নামেও পরিচিত ছিল।
রাজা রামমোহন রায় কে ছিলেন?
রাজা রামমোহন রায় ছিলেন উনিশ শতকের বাংলার একজন সমাজ সংস্কারক, যিনি সতীদাহ প্রথা বন্ধের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি “ভারতের নবজাগরণের পথিকৃৎ” হিসেবে পরিচিত।
সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনে রামমোহনের ভূমিকা কী ছিল?
রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন, ধর্মীয় শাস্ত্র থেকে প্রমাণ উপস্থাপন করেন, পুস্তিকা প্রকাশ করেন এবং ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদনপত্র জমা দেন। তাঁর প্রচেষ্টায় 1829 সালে সতীদাহ প্রথা আইনত নিষিদ্ধ হয়।
রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে কীভাবে যুক্তি দিয়েছিলেন?
তিনি হিন্দু শাস্ত্র, যেমন ‘মনু সংহিতা’ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করেন যে সতীদাহ প্রথা হিন্দু ধর্ম ও শাস্ত্রবিরোধী। তিনি ‘সংবাদ কৌমুদী’ পত্রিকার মাধ্যমে রক্ষণশীলদের বিরোধিতা মোকাবিলা করেন।
সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনে রামমোহনের প্রকাশনা কী ছিল?
রামমোহন রায় 1818-19 সালে ‘সহমরণ বিষয়ক প্রবর্তক ও নিবর্তক সম্বাদ’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করার জন্য রামমোহন কী করেছিলেন?
তিনি বাংলার তিনশো বিশিষ্ট নাগরিকের স্বাক্ষর সংবলিত একটি আবেদনপত্র ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের কাছে প্রেরণ করেন, যার ফলশ্রুতিতে 1829 সালে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ হয়।
সতীদাহ প্রথা কখন নিষিদ্ধ হয়?
1829 সালের 4 ডিসেম্বর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক 17 নং রেগুলেশন জারি করে সতীদাহ প্রথাকে আইনত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?
এই আন্দোলন শুধু একটি কুপ্রথা বন্ধই করেনি, বরং ভারতীয় সমাজে নারী অধিকার ও সামাজিক সংস্কারের পথ প্রশস্ত করে। রাজা রামমোহন রায়ের এই ভূমিকা তাঁকে ভারতের নবজাগরণের অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
রামমোহন রায়ের এই আন্দোলন কীভাবে সমাজকে প্রভাবিত করেছিল?
তাঁর আন্দোলন সমাজে নারী অধিকার, শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধের গুরুত্ব বাড়িয়েছিল। এটি রক্ষণশীল সমাজের বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রগতিশীল চিন্তাধারার বিকাশে সাহায্য করেছিল।
রাজা রামমোহন রায়কে কেন “নবভারতের পথিকৃৎ” বলা হয়?
কারণ তিনি ভারতীয় সমাজে আধুনিকতা, যুক্তিবাদ ও মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর সংস্কারমূলক কাজগুলি ভারতের নবজাগরণের সূচনা করেছিল।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “রাজা রামমোহনের নেতৃত্বে সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “রাজা রামমোহনের নেতৃত্বে সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।