সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল – ব্যবসায়ীরা কীভাবে সাঁওতালদের শোষণ করত?

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। ব্যবসায়ীরা কীভাবে সাঁওতালদের শোষণ করত? নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। ব্যবসায়ীরা কীভাবে সাঁওতালদের শোষণ করত?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। ব্যবসায়ীরা কীভাবে সাঁওতালদের শোষণ করত?

সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো।

প্রেক্ষাপট –

সাঁওতালরা ছিল অত্যন্ত সরল ও কর্মঠ প্রকৃতির। জঙ্গলের ধারে এবং পার্বত্য অঞ্চলে তারা বাস করত। কৃষি ও পশুপালন ছিলো তাদের প্রধান জীবিকা। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু তারা আদি বাসভূমি ত্যাগ করে রাজমহলে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস শুরু করে। এই অঞ্চল দামিন-ই-কোহ নামে পরিচিত।

বিদ্রোহের কারণ –

কোম্পানির ভূমি বন্দোবস্ত –

সাঁওতালরা জঙ্গল পরিষ্কার করে জমি আবাদযোগ্য করে তুললে কোম্পানি সেখানে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করে। কৃষি জমিতে খাজনা বসালে তারা ক্ষুব্ধ হয়।

জমিদার ও মহাজনদের শোষণ –

খাজনার হার ছিল চড়া। জমিদাররা অকথ্য অত্যাচার করে তা আদায় করত। তাই খাজনা মেটাতে গিয়ে তারা মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিতে বাধ্য হতো এবং টাকা পরিশোধ করতে না পেরে সব কিছু হারাত।

ব্যবসায়ীদের প্রতারণা –

বহিরাগত ব্যবসায়ীরাও সাঁওতালদের চড়া দামে জিনিসপত্র বিক্রি করত এবং ওজনে কারচুপি করে তাদের ঠাকাত।

রেলের ঠিকাদারদের শোষণ –

এই অঞ্চলে রেলপথ নির্মানের কাজ শুরু হলে সাঁওতালরা নতুন শোষণের শিকার হয়। অতি স্বল্প মজুরিতে তাদের কাজ করতে বাধ্য করা হত। এছাড়া তাদের মুরগি ছাগল ঠিকাদাররা কেড়ে নিত।

খ্রীষ্টান মিশনারীদের ধর্মপ্রচার –

খ্রিস্টান মিশনারিরা নানা প্রলোভন দেখিয়ে সাঁওতালদের ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করলে তারা ক্ষুব্ধ হয়।

বিদ্রোহের সূচনা –

সিধুও কানহুর নেতৃত্বে দশ হাজার সাঁওতাল ভাগনাডিহির মাঠে সমবেত হয় 30শে জুন 1954।

নেতৃত্ব –

সিধু, কানহু, চাঁদ, ভৈরব, ডোমন মাঝি ও কালোও প্রামাণিক বিদ্রোহীরা বহিরাগত জমিদার, দারোগা মহাজনদের নির্বিচারে হত্যা করে। 

শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সেনা বাহিনী বিদ্রোহ দমন করে।

ব্যবসায়ীরা কীভাবে সাঁওতালদের শোষণ করত?

বহিরাগত অসাধু ব্যবসায়ীরা সাঁওতালদের সরলতা ও অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে একদিকে ‘কেনারাম’ নামক বাটখারা দিয়ে তাদের কাছ থেকে সঠিক ওজন অপেক্ষা বেশি দ্রব্য সংগ্রহ করত, অন্যদিকে ‘বেচারাম’ নামক বাটখারা দিয়ে সঠিক ওজন অপেক্ষা কম ওজনের দ্রব্য দিয়ে প্রায়শই তাদের ঠকাত। এই ব্যবসায়িক কারচুপি সাঁওতালদের কাছে ক্রমে পরিস্ফুট হতে থাকলে তারা এই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিতাড়িত ‘করার উদ্যোগ নেয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

সাঁওতাল বিদ্রোহ কী?

সাঁওতাল বিদ্রোহ (1855-1856) ছিল ব্রিটিশ শাসন, জমিদার, মহাজন ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে সাঁওতাল আদিবাসীদের একটি সংগঠিত প্রতিরোধ আন্দোলন। সিধু ও কানহুর নেতৃত্বে এই বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল।

সাঁওতালরা মূলত কোথায় বাস করত?

সাঁওতালরা মূলত রাজমহল পর্বতের দামিন-ই-কোহ অঞ্চলে (বর্তমান ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ওড়িশা) বসবাস করত।

সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলো কী ছিল?

সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলো হল –
1. জমি ও খাজনা নীতি – ব্রিটিশরা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করে সাঁওতালদের জমিতে উচ্চ হারে খাজনা বসায়।
2. জমিদার ও মহাজনদের শোষণ – সাঁওতালরা খাজনা দিতে না পেরে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিত এবং পরে জমি হারাত।
3. ব্যবসায়ীদের প্রতারণা – অসাধু ব্যবসায়ীরা ওজনে কারচুপি করে সাঁওতালদের ঠকাত।
4. রেলওয়ে ঠিকাদারদের অত্যাচার – রেলপথ নির্মাণে সাঁওতালদের জোর করে খাটানো হত এবং তাদের সম্পদ লুট করা হত।
5. ধর্মীয় হস্তক্ষেপ – খ্রিস্টান মিশনারিরা সাঁওতালদের ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করত।

বিদ্রোহের নেতৃত্ব কারা দিয়েছিলেন?

সিধু, কানহু, চাঁদ, ভৈরব, ডোমন মাঝি ও কালো প্রামাণিক প্রমুখ নেতারা এই বিদ্রোহ সংগঠিত করেছিলেন।

বিদ্রোহ কীভাবে শুরু হয়েছিল?

1855 সালের 30 জুন, ভাগনাডিহির মাঠে প্রায় 10,000 সাঁওতাল সমবেত হয়ে ব্রিটিশ শাসন, জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

সাঁওতাল বিদ্রোহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?

এটি ছিল আদিবাসী জনগণের প্রথম সংগঠিত ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, যা পরবর্তীতে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রেরণা যুগিয়েছিল।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। ব্যবসায়ীরা কীভাবে সাঁওতালদের শোষণ করত?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। ব্যবসায়ীরা কীভাবে সাঁওতালদের শোষণ করত?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

আলোর প্রতিসরণ কাকে বলে? প্রতিসরণের সূত্র দুটি লেখো।

আলোর প্রতিসরণ কাকে বলে? প্রতিসরণের সূত্রসমূহ

প্রতিসরাঙ্ক কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

প্রতিসরাঙ্ক কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

কাচের স্ল্যাবের মধ্য দিয়ে আলোর প্রতিসরণের ক্ষেত্রে দেখাও যে আপতিত ও নির্গত আলোকরশ্মি পরস্পরের সমান্তরাল। অথবা, দেখাও যে, সমান কাচফলকের মধ্য দিয়ে আলোকরশ্মির শুধুমাত্র পার্শ্বসরণ ঘটে।

দেখাও যে, সমান কাচফলকের মধ্য দিয়ে আলোকরশ্মির শুধুমাত্র পার্শ্বসরণ ঘটে।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

একটি গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

র‍্যাগিং ও ছাত্রসমাজ – প্রবন্ধ রচনা

আলোর প্রতিসরণ কাকে বলে? প্রতিসরণের সূত্রসমূহ

প্রতিসরাঙ্ক কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?