সেচবাঁধ ও বহুমুখী বাঁধ কি? সেচবাঁধ ও বহুমুখী বাঁধের পার্থক্য

আজকের আর্টিকেলে, আমরা সেচবাঁধ ও বহুমুখী বাঁধের ধারণা এবং তাদের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করবো। এই বিষয়টি দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ অধ্যায়ের “ভারতের জলসম্পদ” বিভাগে।

সেচবাঁধ ও বহুমুখী বাঁধ

সেচবাঁধ

সেচবাঁধ হলো একটি কৃত্রিম বাঁধ যা কৃষিজমিতে জল সরবরাহ করার জন্য নির্মিত হয়। এটি সাধারণত নদী, খাল বা অন্য কোন জলপ্রবাহের উপর নির্মিত হয় এবং জল ধরে রাখে যাতে সেচের জন্য ব্যবহার করা যায়।

  • সেচবাঁধ সাধারণত ঢালু ভূমিতে নির্মিত হয় যেখানে জল সহজেই প্রবাহিত হয় এবং জমিতে জমে থাকে।
    বহুমুখী বাঁধের তুলনায় সেচবাঁধের উচ্চতা কম হয়।
  • সেচবাঁধ বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে, যেমন মাটি, কংক্রিট, পাথর ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে মাটির তৈরি সেচবাঁধ ব্যবহার করা হয়।
  • বহুমুখী বাঁধের তুলনায় সেচবাঁধ তেমন মজবুত ও দৃঢ় হয় না
  • সেচবাঁধের জল ধারণক্ষমতা বিভিন্ন আকারের উপর নির্ভর করে।
  • সেচবাঁধ কৃষিক্ষেত্রে জল সরবরাহ নিশ্চিত করে, খরা প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং বন্যার ঝুঁকি কমায়।

বহুমুখী বাঁধ

বহুমুখী বাঁধ হলো এমন একটি বাঁধ যা কৃষি সেচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পণ্য পরিবহন, মৎস্য চাষ, পর্যটন বৃদ্ধি সহ একাধিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। এই বাঁধগুলোতে সারাবছর জল ধরে রাখার ব্যবস্থা থাকে যা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। বহুমুখী বাঁধ সাধারণত নদীর প্রবাহপথে নির্মিত হয় এবং এগুলো কংক্রিট, মাটি বা পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়। উচ্চতা বাঁধের নির্মাণের উদ্দেশ্য ও নদীর ধরন অনুসারে পরিবর্তিত হয়।

সেচবাঁধ ও বহুমুখী বাঁধের পার্থক্য

সেচবাঁধ ও বহুমুখী বাঁধের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়সেচবাঁধবহুমুখী বাঁধ
উদ্দেশ্যসেচবাঁধ মূলত কৃষিজমিতে জলসেচের জন্যে নির্মাণ করা হয়।বহুমুখী বাঁধ কৃষিজমিতে জলসেচ ছাড়াও বিদ্যুৎ উৎপাদন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পণ্য পরিবহণ, মৎস্যচাষ প্রভৃতির জন্য নির্মাণ করা হয়।
জলধারণের স্থিতিকালসেচবাঁধে সাধারণত বর্ষাকালের উদ্বৃত্ত জল সেচের জন্যে ব্যবহার করা হয়। কৃষি মরশুমের পরে ওই জল না থাকলেও চলে।বহুমুখী বাঁধে সারাবছরই জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। সারাবছরই ওই জল বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়।
নির্মাণের স্থানঢালু ভূমিতে সেচবাঁধ নির্মাণ করা হয়।পাহাড়ি অঞ্চলে বহুমুখী বাঁধ নির্মাণ করা হয়।
দৃঢ়তাবহুমুখী বাঁধের মতো সেচবাঁধ অত মজবুত ও দৃঢ় হয় না। অনেকক্ষেত্রে মাটির সেচবাঁধও আছে।বহুমুখী বাঁধ কংক্রীটের তৈরি অত্যন্ত মজবুত ও দৃঢ় হয়।
উচ্চতাবেশিরভাগ সেচবাঁধের উচ্চতা কম।বেশিরভাগ বহুমুখী বাঁধের উচ্চতা বেশি।
উদাহরণকংসাবতী, সুবর্ণরেখা প্রভৃতি নদীতে সেচবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।দামোদর, ময়ূরাক্ষী প্রভৃতি নদীতে বহুমুখী বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।

আজকের আলোচনায়, আমরা সেচবাঁধ এবং বহুমুখী বাঁধের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট করেছি। দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য এই পার্থক্য বোঝা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ভারতের জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে সাহায্য করবে।

Share via:

মন্তব্য করুন