এই আর্টিকেলটিতে, আমরা সর্বশিক্ষা অভিযান প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রবন্ধটি মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষায় প্রায়শই দেখা যায়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ কারণ এটি শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযানের সাথে সম্পর্কিত।
এই প্রবন্ধটি মুখস্ত করলে, আপনি ক্লাস ৬ থেকে ১২ পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারবেন।
প্রবন্ধে, আপনাকে সর্বশিক্ষা অভিযানের উদ্দেশ্য, গুরুত্ব, বাস্তবায়ন, এবং চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। আপনাকে অবশ্যই সর্বশিক্ষা অভিযানের সাফল্য এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কেও আপনার মতামত উপস্থাপন করতে হবে।
সর্বশিক্ষা অভিযান – প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা –
সর্বশিক্ষা অভিযান এমন একটি প্রকল্প, যা জেলাস্তরে শিক্ষার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে। শিক্ষার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটিয়ে আঞ্চলিক অধিবাসীদের দ্বারা বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যবস্থাকে পরিচালিত করেছে এই প্রকল্প। এটি সমগ্র দেশের অন্যান্য সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকেও নিজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে।
সূচনা ও বিকাশ –
১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ এবং ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে ওই শিক্ষানীতির সংশোধিত লক্ষ্য অনুযায়ী একাধিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। এগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল ৬-১৪ বছর বয়স পর্যন্ত আমাদের দেশের সমস্ত শিশুকে ব্যবহারোপযোগী এবং নির্দিষ্ট মানসম্পন্ন ন্যূনতম আবশ্যিক শিক্ষার (অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত) অন্তর্ভুক্ত করা। এই লক্ষ্য অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার ২০০০ খ্রিস্টাব্দে সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্প চালু করে। সর্বশিক্ষার এই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করবার জন্য সর্বশেষ সময়সীমা ধরা হয়েছিল ২০১০ খ্রিস্টাব্দ।
বৈশিষ্ট্য –
- সারা দেশে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয় শিক্ষার মানের উন্নতি সাধন করা এবং এই শিক্ষা যাতে শিশুর জীবনে কার্যকরী প্রভাব বিস্তার করতে পারে তার ব্যবস্থা করা।
- এই প্রকল্পকে সর্বতোভাবে সফল করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় স্তর থেকে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত দায়িত্বের বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় সরকার প্রকল্পটির সার্থক রূপায়ণের জন্য রাজ্য সরকারকে এই প্রকল্পে শামিল করেছে ও তার পাশাপাশি জেলা-পরিষদ, গ্রাম পঞ্চায়েত, ক্লাব ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদেরও অভিযানে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
- এই প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী সংস্থা ও ব্যক্তি যাতে স্থানীয় প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষা পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্যকে বজায় রেখে নিজ নিজ কর্মসূচির পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে পারে সে-বিষয়ে ওইসব সংস্থা এবং ব্যক্তিদের যথেষ্ট স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ তাৎপর্য –
সর্বশিক্ষা অভিযানের বিশেষ তাৎপর্য হল ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত বিদ্যালয় শিক্ষার কার্যকারিতার উন্নতি সাধন করা এবং এক-একটি জনগোষ্ঠীর পরিচালনায় সমাজসেবামূলক মনোভাব নিয়ে নির্দিষ্ট বয়সের শিশুদের উপযুক্ত মানের ন্যূনতম আবশ্যিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা। এই অভিযানের অন্যতম প্রয়াস হল লিঙ্গবৈষম্য ও সামাজিক বৈষম্য দূর করা। অভিযানটি মেয়েদের, তপশিলি জাতি, উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত শিশুদের ও প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার চাহিদাপুরণে বিশেষ খেয়াল রাখে।
লক্ষ্য –
- ২০০৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আমাদের দেশের সমস্ত শিশুকে বিদ্যালয়ে ভরতি করা, পরিবর্ত বিদ্যালয় (Alternative Schools), বিদ্যালয় প্রত্যাবর্তন ক্যাম্প (Back to School Camps) প্রভৃতি স্থাপন করা।
- ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এদেশের সমস্ত শিশু যাতে পাঁচ বছরব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে তা সুনিশ্চিত করা।
- ২০১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দেশের সমস্ত শিশু যাতে আট বছরব্যাপী ন্যূনতম আবশ্যিক শিক্ষা পায় তার ব্যবস্থা করা।
- ২০১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ভরতি হওয়া সমস্ত ছাত্রের একজনও যাতে বিদ্যালয় ছেড়ে না যায় তা সুনিশ্চিত করা।
উপসংহার –
স্বশিক্ষা অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি এখনও অর্জন করা যায়নি। তবে সরকার ও জনগণের মিলিত প্রয়াসে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষয়িষ্ণু অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব হবে এই আশা নিয়ে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
সর্বশিক্ষা অভিযান শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই অভিযানের মাধ্যমে সকল শিশু, বিশেষ করে বঞ্চিত ও দরিদ্র শিশুদের মৌলিক শিক্ষার সুযোগ প্রদান করা হচ্ছে। শিক্ষার হার বৃদ্ধি, শিক্ষার মান উন্নত করা এবং লিঙ্গসমতা অর্জনের লক্ষ্যে সরকার এই অভিযান বাস্তবায়ন করছে।
তবে, এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। শিক্ষকের অভাব, পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব, দারিদ্র্য, এবং সামাজিক রীতিনীতির বাধা এই অভিযানের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করে সর্বশিক্ষা অভিযানকে সফল করতে হবে। শিক্ষিত জাতি গঠনের জন্য সকল শিশুর শিক্ষা অধিকার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
এই অভিযানের মাধ্যমে আমরা শুধুমাত্র শিক্ষার হার বৃদ্ধি করতে পারব না, বরং একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি গঠন করতে পারব।