এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “প্রাণীদের উদ্দীপনায় সাড়া প্রদানের স্নায়ুপথটি ফ্লোচার্টের মাধ্যমে উদাহরণসহ দেখাও। স্নায়ুতন্ত্রের উপাদান কী কী?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাণীদের উদ্দীপনায় সাড়া প্রদানের স্নায়ুপথটি ফ্লোচার্টের মাধ্যমে উদাহরণসহ দেখাও। স্নায়ুতন্ত্রের উপাদান কী কী?
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক ঘটনাই ঘটে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট স্নায়ুপথ দ্বারা আমরা সেই উদ্দীপনায় সাড়া দিই।
বাড়ির সদর দরজায় কোনো অতিথি বা আগন্তুক এসে কলিং বেল বাজালে আমরা তা শুনে দরজা খুলে দিই।
এক্ষেত্রে উদ্দীপনা গ্রহণ করে যে সাড়া প্রদান করা হয়, তার স্নায়ুপথটি নিম্নরূপ –

স্নায়ুতন্ত্রের উপাদান
স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান দুটি উপাদান হল যথা – নিউরোন ও নিউরোগ্লিয়া।
নিউরোন – স্নায়ুতন্ত্রের গঠনগত ও কার্যগত একক হল নিউরোন। প্রতিটি নিউরোন একটি কোশদেহ ও ক্ষুদ্র প্রবর্ধক (ডেনড্রন) এবং দীর্ঘ প্রবর্ধক (অ্যাক্সন) নিয়ে গঠিত। স্নায়ুকোশ বা নিউরোনের কোশদেহে নিউক্লিয়াস, বিভিন্ন কোশীয় অঙ্গানু (মাইটোকনড্রিয়া, গলগিবডি প্রভৃতি), নিজল দানা, নিউরোফাইব্রিল উপস্থিত। ডেনড্রন শাখাপ্রশাখাযুক্ত হয়। ডেনড্রনের প্রতিটি শাখাকে ডেনড্রাইট বলে। অ্যাক্সন সাধারণত শাখাবিহীন হয়। রক্তবাহ সমন্বিত ও এপিনিউরিয়াম নামক যোগ কলা বেষ্টিত অনেকগুলি অ্যাক্সনের বান্ডিলকে একত্রে স্নায়ু বলে। নিউরোনের প্রধান কাজ স্নায়ু স্পন্দন গ্রহণ, পরিমার্জন ও পরিবহণ করা।
নিউরোগ্লিয়া – স্নায়ুতন্ত্রে ধারককোশ হিসাবে থাকে। নিউরোগ্লিয়া বিভিন্ন ধরনের হয়, যথা – মাইক্রোগ্লিয়াল কোশ, অলিগোডেনড্রোসাইট, অ্যাস্ট্রোসাইট, এপেনডাইমাল কোশ। এরা নিউরোনকে পুষ্টিপ্রদান করে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে ও নিউরোনের অপরিবাহী স্তর মায়েলিন শিদ সংশ্লেষ করে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
স্নায়ুপথ (Reflex Arc) বলতে কী বোঝায়? এর প্রধান উপাদানগুলো কী কী?
স্নায়ুপথ হলো স্নায়ুতন্ত্রের একটি স্বয়ংক্রিয় পথ যার মাধ্যমে দ্রুত ও অবচেতন প্রতিক্রিয়া ঘটে। এর উপাদানগুলো হলো –
1. গ্রহণকারী (Receptor) – উদ্দীপনা গ্রহণ করে।
2. সংবেদী নিউরন (Sensory Neuron) – সংকেত স্নায়ুরজ্জু বা মস্তিষ্কে বহন করে।
3. সমন্বয়কারী নিউরন (Interneuron) – স্নায়ুরজ্জুতে অবস্থান করে সংকেত প্রেরণ করে (প্রতিক্রিয়া পথে)।
4. চালক নিউরন (Motor Neuron) – সঙ্কেত কার্যকরী অঙ্গে (পেশী বা গ্রন্থি) পৌঁছায়।
5. কার্যকরী অঙ্গ (Effector) – যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেখায় (যেমন – পেশী সংকোচন)।
প্রতিবর্ত ক্রিয়া (Reflex Action) ও ইচ্ছাকৃত ক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য কী?
প্রতিবর্ত ক্রিয়া – স্বয়ংক্রিয়, দ্রুত, মস্তিষ্কের চিন্তা না করে স্নায়ুরজ্জু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
উদাহরণ – গরম জিনিস স্পর্শ করলে হাত সরানো।
ইচ্ছাকৃত ক্রিয়া – চেতন মনে মস্তিষ্কের নির্দেশে ঘটে, অপেক্ষাকৃত ধীরগতি।
উদাহরণ – বই পড়া, কথা বলা।
মায়েলিন শীথের কাজ কী? এটি কোন কোন নিউরোনে পাওয়া যায়?
কাজ – স্নায়ু স্পন্দনের গতি বৃদ্ধি করা, নিউরোনকে বিদ্যুৎরোধী আবরণ দেওয়া।
পাওয়া যায় – বেশিরভাগ করোটিক স্নায়ু ও সুষুম্না স্নায়ুর নিউরোনে। এটি নিউরোগ্লিয়া (শ্বান কোশ/অলিগোডেনড্রোসাইট) দ্বারা তৈরি হয়।
স্নায়ুতন্ত্রের শ্রেণিবিভাগ কী?
স্নায়ুতন্ত্রের শ্রেণিবিভাগ –
1. কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (CNS) – মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ড।
2. প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র (PNS) – করোটিক স্নায়ু (12 জোড়া) ও সুষুম্না স্নায়ু (31 জোড়া)।
3. স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র (ANS) – সহানুভূতিশীল ও পরাসহানুভূতিশীল স্নায়ুতন্ত্র।
কলিং বেলের শব্দ শুনে দরজা খোলার ঘটনাটি কি একটি প্রতিবর্ত ক্রিয়া? ব্যাখ্যা করো।
না, এটি প্রতিবর্ত ক্রিয়া নয়। কারণ এই ঘটনায় –
1. শ্রবণেন্দ্রিয়ে শব্দ গ্রহণ।
2. স্নায়ুস্পন্দন মস্তিষ্কে যায়।
3. মস্তিষ্ক সিদ্ধান্ত নেয়।
4. ইচ্ছাকৃতভাবে পেশীকে দরজা খোলার নির্দেশ দেয়।
এখানে সচেতন চিন্তা ও মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ জড়িত, তাই এটি একটি ইচ্ছাকৃত ক্রিয়া।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “প্রাণীদের উদ্দীপনায় সাড়া প্রদানের স্নায়ুপথটি ফ্লোচার্টের মাধ্যমে উদাহরণসহ দেখাও। স্নায়ুতন্ত্রের উপাদান কী কী?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন