এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সবুজ বিপ্লবের সুফল ও কুফল সম্পর্কে টীকা লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের কৃষি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সবুজ বিপ্লব
অথবা, পাঞ্জাব-হরিয়ানা রাজ্যের কৃষি বিপ্লবের সুফলগুলি উল্লেখ করো।
ধারণা – 1960 -এর দশকের মাঝামাঝি ভারতে কৃষিজাত ফসল উৎপাদনের যে অভাবনীয় অগ্রগতি হয়েছিল তাকে সবুজ বিপ্লব বলে। কিন্তু এর যেমন সুফল ছিল তেমন কুফলও ছিল।
সবুজ বিপ্লবের সুফল
সবুজ বিপ্লবের সুফলগুলি হল –
- খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি – সবুজ বিপ্লবের ফলে ভারতে গম, ধান, ভুট্টা প্রভৃতির উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। 2011-12 খ্রিস্টাব্দে ভারতে খাদ্যশস্য উৎপাদনের মোট পরিমাণ ছিল 26 কোটি টন।
- খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা – খাদ্যফসলের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতের বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করার আর প্রয়োজন নেই।
- খাদ্যশস্যের হেক্টর প্রতি উৎপাদন বৃদ্ধি – সবুজ বিপ্লবের ফলে অন্যান্য ফসলের সাথে গমের উৎপাদনও বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল। 1960 খ্রিস্টাব্দে গমের হেক্টর প্রতি উৎপাদন ছিল 8.6 কুইন্ট্যাল/হেক্টর যা 2009-10 খ্রিস্টাব্দে বেড়ে হয় প্রায় 1800 কেজি/হেক্টর।
- কৃষকদের উপার্জন বৃদ্ধি – ফসলের হেক্টর প্রতি উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকদের কাছে উদ্বৃত্ত ফসলের পরিমাণ বেড়ে যায়। যা বিক্রি করে কৃষকেরা অর্থ উপার্জন করে।
- জীবনযাত্রার মানের উন্নতি – সবুজ বিপ্লবের ফলে ফসল বিক্রয় করে চাষিদের হাতে অধিক অর্থ আসে। ফলে কৃষকদের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটে।
- কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি – কৃষিজমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ, কীটনাশক, বীজ বপন, চারা রোপণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে কৃষি শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সবুজ বিপ্লবের কুফল
সবুজ বিপ্লবের কুফলগুলি হল –
- আঞ্চলিক বৈষম্য – সবুজ বিপ্লবের সাফল্যে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাংশের কৃষকেরা যতটা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছিলেন বিহার, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গের কৃষকেরা ততটা লাভবান হয়নি।
- শস্যভিত্তিক বৈষম্য – সবুজ বিপ্লবের ফলে গম, ধান, ভুট্টা, বাজরার উৎপাদন বাড়লেও ডাল, ছোলা, বার্লি প্রভৃতির উৎপাদন বাড়েনি।
- মাটির লবণতা বৃদ্ধি – উচ্চফলনশীল বীজ চাষের জন্য প্রচুর জলসেচের দরকার। অতিরিক্ত জলসেচের ফলে জমির লবণতা বৃদ্ধি পায়।
- ভৌমজলস্তরের হ্রাস – স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত এলাকায় (পাঞ্জাব, হরিয়ানা) অতিরিক্ত মাত্রায় কূপ ও নলকূপ দ্বারা সেচের ফলে ভৌমজলের পরিমাণ কমে যায়।
- মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস – অতিরিক্ত মাত্রায় রাসায়নিক সারের ব্যবহার করলে মাটির নিজ গঠন ও উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। মাটির গুণগত মান কমে যায়।
- মানবদেহের ক্ষতি – সবুজ বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে মৃত্তিকার সমীক্ষা করে দেখা গেছে মাটিতে সিসা, তামা, জিংক, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম প্রভৃতি ধাতুর উপস্থিতি রয়েছে যা মানব স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি করে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
সবুজ বিপ্লব কী?
1960 -এর দশকের মাঝামাঝি ভারতে উচ্চফলনশীল বীজ (HYV), রাসায়নিক সার, সেচ ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এই অভূতপূর্ব অগ্রগতিকে সবুজ বিপ্লব বলা হয়।
সবুজ বিপ্লবের প্রধান সুফলগুলি কী কী?
সবুজ বিপ্লবের প্রধান সুফলগুলি হল –
1. খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি (গম, ধান, ভুট্টা ইত্যাদি)।
2. ভারত খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়।
3. হেক্টর প্রতি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি।
4. কৃষকদের আয় ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন।
5. কৃষিক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি।
সবুজ বিপ্লবের কুফলগুলি উল্লেখ করো।
সবুজ বিপ্লবের কুফলগুলি হল –
1. আঞ্চলিক বৈষম্য (পাঞ্জাব-হরিয়ানা লাভবান হলেও পূর্বাঞ্চল পিছিয়ে থাকে)।
2. শস্যভিত্তিক বৈষম্য (গম-ধান বৃদ্ধি পেলেও ডাল, তেলবীজ কম উৎপাদিত হয়)।
3. মাটির লবণতা ও উর্বরতা হ্রাস (অতিরিক্ত সেচ ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার)।
4. ভৌমজলের স্তর নিচে নেমে যাওয়া (অত্যধিক নলকূপের ব্যবহার)।
5. মাটি ও জলে দূষণ (কীটনাশক ও ভারী ধাতুর প্রভাব)।
পাঞ্জাব-হরিয়ানা রাজ্যে সবুজ বিপ্লবের প্রধান সুফলগুলি কী কী?
পাঞ্জাব‑হরিয়ানা রাজ্যে সবুজ বিপ্লবের প্রধান সুফলগুলি হল –
1. খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি (ভারতের গম ও ধানের প্রধান উৎপাদক এলাকা)।
2. কৃষি যান্ত্রিকীকরণ (ট্রাক্টর, হারভেস্টার, নলকূপের ব্যবহার বৃদ্ধি)।
3. কৃষকদের আর্থিক উন্নতি (ফসল বিক্রি করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি)।
4. কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশ (চিনি কল, বয়লার, কৃষি যন্ত্রপাতি শিল্প গড়ে ওঠে)।
সবুজ বিপ্লব কেন পাঞ্জাব-হরিয়ানায় সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছিল?
সবুজ বিপ্লব পাঞ্জাব‑হরিয়ানায় সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছিল কারণ –
1. উর্বর মাটি ও নদীভিত্তিক সেচ সুবিধা (সিন্ধু-গঙ্গা সমভূমি অঞ্চল)।
2. সরকারি সহায়তা (কৃষিঋণ, বিদ্যুৎ, ভর্তুকি)।
3. কৃষি গবেষণা কেন্দ্র (PAU লুধিয়ানা, IARI -এর সহযোগিতা)।
4. কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণের মানসিকতা।
সবুজ বিপ্লবের পরিবেশগত প্রভাব কী?
সবুজ বিপ্লবের পরিবেশগত প্রভাব হল –
1. মাটির অবনতি (জৈব পদার্থের অভাব)।
2. জলের স্তর নিচে নেমে যাওয়া (পাঞ্জাবে জল সংকট)।
3. জৈব বৈচিত্র্য হ্রাস (একই ফসল বারবার চাষের ফলে)।
4. কীটনাশকের প্রভাবে মৌমাছি ও অন্যান্য উপকারী পোকামাকড় মারা যায়।
সবুজ বিপ্লবের কুফল কাটিয়ে উঠতে কী করা উচিত?
সবুজ বিপ্লবের কুফল কাটিয়ে উঠতে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত –
1. জৈব কৃষির প্রচলন (রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার)।
2. ফসলের আবর্তন (একই জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষ)।
3. ড্রিপ সেচ পদ্ধতি (জলের অপচয় রোধ)।
4. সরকারি নীতির পরিবর্তন (টেকসই কৃষির দিকে জোর দেওয়া)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সবুজ বিপ্লবের সুফল ও কুফল সম্পর্কে টীকা লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের কৃষি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন