আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘সময়ের মূল্য‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

সময়ের মূল্য – প্রবন্ধ রচনা
‘কারো পানে ফিরে চাহিবার নাই যে সময়, নাই নাই।’
– রবীন্দ্রনাথ
ভূমিকা
সৃষ্টির আদি উৎস থেকেই মানুষের হাহাকার ধ্বনিত হয়: ‘নাই যে সময়, নাই নাই’। আকাশ-বাতাস, অরণ্য-পর্বত, দিন-রাত্রি—সর্বত্রই কালস্রোতের অবিরাম গতি জীবনের যৌবন, ধন ও মানকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। অনন্ত সময়ের পথে খণ্ডকালের বন্দী হয়ে চলেছে অগণন মানুষ। জীবনের ঘাটে ঘাটে এক হাটে বোঝা চাপানো, অন্য হাটে তা শূন্য করার চিরন্তন খেলা। কাল নিরবধি, মানবজীবন ক্ষণস্থায়ী। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত, জন্ম থেকে মৃত্যু—এই চক্রে সময় নদীর স্রোতের মতো অবিশ্রাম বহমান। কারও জন্য তার অপেক্ষা নেই, নেই কোনো আসক্তি। শুধু ‘চরৈবেতি’ (চলো, আরও চলো) মন্ত্রে সে নিরন্তর ধাবমান।
অনন্ত সময়, দুর্লভ জীবন
সময়ের তরঙ্গে জীবন সদা চঞ্চল, বিন্দুর মতো ক্ষণভঙ্গুর। সময় অনন্ত, কিন্তু জীবন সীমাবদ্ধ—এই সংক্ষিপ্ততাই তার মধুময় আকর্ষণের উৎস। জীবনের একপ্রান্তে জন্ম, অন্যপ্রান্তে মৃত্যু; মধ্যবর্তী ক্ষণিকের জাগরণই আমাদের পরিচয়। ঘণ্টা-মিনিট-বছরের বেড়াজালে বাঁধা পড়ে এই জীবন, শেষে মুক্তির ঘণ্টাধ্বনি। অন্ধকার থেকে যাত্রা, অন্ধকারেই সমাপ্তি। সময় কোনো মূল্যে কেনা যায় না, কোনো শক্তিতেই ফেরানো যায় না। এই অনন্ত প্রবাহই মানুষের পরম সম্পদ।
সময়ের অপচয়
মহাকালের তরঙ্গে মানবজীবন তৃণদলার মতো তুচ্ছ। সময়ের সদ্ব্যবহারেই ক্ষণস্থায়ী জীবন চিরস্মরণীয় হয়ে ওঠে। কিন্তু মানুষ যখন আলস্য, অবহেলা ও অপচয়ে সময় নষ্ট করে, তখন জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। জীবনের সায়াহ্নে শুধু দীর্ঘশ্বাস, ব্যর্থতার বিলাপ ও অনুশোচনার দহন থাকে সঙ্গী। হারানো সময় কখনও ফিরে আসে না—এটিই জীবনের ভয়ঙ্কর সত্য।
ছাত্রজীবন ও সময়-নিষ্ঠা
সময়ের সদ্ব্যবহার ভবিষ্যৎ সাফল্যের ভিত্তি। সময়ানুবর্তী মানুষই কর্মে অর্থ খুঁজে পায়। যেমন কৃষক নির্দিষ্ট মৌসুমে বীজ বপন করলে ফসল ফলে, তেমনি ছাত্রজীবনই ভবিষ্যতের বীজবপনের সময়। এই পর্বে সময়ের মূল্য উপলব্ধি করা না গেলে পরীক্ষায় ব্যর্থতা ও জীবনের প্রতি পদক্ষেপে হতাশা ঘিরে ধরে। শ্রমবিমুখ ও সময়-অসচেতন ছাত্র ব্যর্থতার গ্লানি বহন করে চিরজীবন।
মহাপুরুষের জীবনে সময়-নিষ্ঠার মূল্য
ইতিহাসের মহাপুরুষেরা সময়ের অমূল্যতা বুঝেছিলেন বলেই অমর হয়েছেন। কবি, বিজ্ঞানী, ধর্মগুরু—সকলেই খণ্ড জীবনে কালজয়ী সৃষ্টি রেখে গেছেন। রবীন্দ্রনাথ, নিউটন, গান্ধী—তাঁদের সাফল্যের রহস্য ছিল সময়ের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা। বিজ্ঞানীর নিরলস গবেষণা, সাধকের ধ্যান, শিল্পীর সৃজনশীলতা—সবই সময়ের কঠোর শৃঙ্খলায় গড়ে উঠেছে। সময়ের মূল্যবোধই তাঁদের ললাটে এঁকে দিয়েছে সাফল্যের তিলক।
উপসংহার
সময়-জ্ঞান ব্যক্তি ও জাতির উন্নতির চাবিকাঠি। সময়ানুবর্তিতা ব্যক্তিকে সাফল্য এনে দেয়, জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যায় সমৃদ্ধির পথে। শৈশব ও কৈশোরই এই শিক্ষার সূতিকাগৃহ। সময়ের অপচয় জাতীয় জীবনে বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয়। জীবনের প্রকৃত মাপকাঠি আয়ু নয়, সময়ের সদ্ব্যবহারে গড়ে ওঠা কল্যাণময় কর্ম। তাই রবীন্দ্রনাথের সেই আহ্বানই চিরসত্য:
‘কারো পানে ফিরে চাহিবার নাই যে সময়, নাই নাই।’
সময়ের প্রতি মমত্ববোধই মানুষকে দান করে অমরত্ব—একটি সুন্দর, সার্থক ও গৌরবময় জীবনের স্বাক্ষর।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘সময়ের মূল্য‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘সময়ের মূল্য‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন