এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সমুদ্রগামী জাহাজের জলে নিমজ্জিত অংশে দ্রুত মরচে ধরে কেন?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “ধাতুবিদ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সমুদ্রগামী জাহাজের জলে নিমজ্জিত অংশে দ্রুত মরচে ধরে কেন?
জলে উপস্থিত ক্লোরাইড (Cl–) আয়ন লোহায় মরচে ধরাকে ত্বরান্বিত করে। সমুদ্রের জলে অধিক পরিমাণ ক্লোরাইড লবণ থাকায় সমুদ্রের জলে ক্লোরাইড (Cl–) আয়ন অধিক পরিমাণে থাকে। ফলে জাহাজের জলে নিমজ্জিত অংশ ক্লোরাইড আয়নের সংস্পর্শে আসে। তাই ওই অংশে দ্রুত মরচে ধরে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
সমুদ্রের জলে সাধারণ লবণ (NaCl) ছাড়াও অন্য কোন উপাদান মরচে সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে?
হ্যাঁ, সমুদ্রের জলে ক্লোরাইড আয়ন (Cl⁻) ছাড়াও সালফেট আয়ন (SO₄²⁻) এবং দ্রবীভূত অক্সিজেন (O₂) বিদ্যমান থাকে। এই উপাদানগুলোও লোহার জারণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং মরচে সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জাহাজের শুধু জলে ডুবে থাকা অংশেই কি মরচে ধরে?
না, বরং জাহাজের জলরেখার আশেপাশের অংশে সবচেয়ে বেশি মরচে ধরে। এই অংশটি ক্রমাগত ভেজা ও শুকানোর চক্রের মধ্যে থাকে, যার ফলে লবণকণা জমে যায় এবং অক্সিজেনের প্রাপ্যতা বেশি থাকে। এই সম্মিলিত প্রভাব ক্লোরাইড আয়নের ক্ষতিকর প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে তোলে, ফলে এই অঞ্চলটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সমুদ্রের জলের বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা মরচে সৃষ্টিতে কীভাবে প্রভাব ফেলে?
লবণাক্ত জল একটি ভালো তড়িৎ পরিবাহী। যখন লোহা/ইস্পাত জাহাজের দেহবলয় সমুদ্রের জলের সংস্পর্শে আসে, তখন এটি একটি বৈদ্যুতিক রাসায়নিক কোষ (Galvanic Cell) তৈরি করে। এই কোষের মধ্যে তড়িৎ প্রবাহের মাধ্যমে জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া দ্রুততর হয়, যা মরচে ধরার গতি বাড়িয়ে দেয়।
জাহাজের নিমজ্জিত অংশে মরচে প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়?
প্রধানত দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় —
1. বিশেষ প্রলেপ (Coatings) – জাহাজের নিচের অংশ শক্তিশালী ইপক্সি বা জিঙ্ক-ভিত্তিক প্রাইমার ও অ্যান্টিফাউলিং পেইন্ট দিয়ে আচ্ছাদিত করা হয়, যা ধাতুকে জলের সরাসরি সংস্পর্শে আসতে বাধা দেয়।
2. ক্যাথোডিক প্রটেকশন (Cathodic Protection) – জাহাজের ধাতব কাঠামোর সাথে একটি “বলিদানের অ্যানোড” (Sacrificial Anode) — যেমন জিঙ্ক বা ম্যাগনেশিয়ামের ব্লক — সংযুক্ত করা হয়। এই অ্যানোডটি জাহাজের ইস্পাতের আগে নিজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, ফলে জাহাজের কাঠামো সুরক্ষিত থাকে।
মিষ্টি জলের (নদী বা হ্রদের) জাহাজের তুলনায় সমুদ্রের জাহাজে মরচে বেশি দ্রুত হয় কেন?
মিষ্টি জলের (নদী বা হ্রদের) জাহাজের তুলনায় সমুদ্রের জাহাজে মরচে বেশি দ্রুত হয় কারণ সমুদ্রের জলে লবণের (বিশেষ করে ক্লোরাইড আয়নের) পরিমাণ অনেক বেশি। মিষ্টি জলে লবণাক্ততা খুব কম, ফলে তড়িৎ পরিবাহিতা কম এবং ক্লোরাইড আয়নের ক্ষয়কারী প্রভাব প্রায় নেই। তাই সমুদ্রের জাহাজে মরচে অনেক দ্রুত গঠিত হয়।
ক্লোরাইড আয়ন (Cl⁻) ঠিক কীভাবে মরচে ধরার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে?
লোহার উপরিভাগে স্বাভাবিকভাবে একটি পাতলা প্রতিরক্ষামূলক আস্তরণ (Fe₂O₃/Fe₃O₄) তৈরি হয়। ক্লোরাইড আয়ন এই আস্তরণ ভেদ করে ভেতরের লোহার সংস্পর্শে আসে এবং লোহার সাথে বিক্রিয়া করে দ্রবণীয় আয়রন ক্লোরাইড (FeCl₂) তৈরি করে। এর ফলে আস্তরণ ভঙ্গুর ও অকার্যকর হয়ে যায়, এবং লোহা সহজেই অক্সিজেন ও জলের সংস্পর্শে এসে দ্রুত মরচে ধরে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সমুদ্রগামী জাহাজের জলে নিমজ্জিত অংশে দ্রুত মরচে ধরে কেন?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “ধাতুবিদ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন