এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সমযোজী যৌগের রাসায়নিক বিক্রিয়া ধীর গতিতে ঘটে কিন্তু আয়নীয় যৌগের বিক্রিয়ার হার দ্রুত কেন?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সমযোজী যৌগের রাসায়নিক বিক্রিয়া ধীর গতিতে ঘটে কিন্তু আয়নীয় যৌগের বিক্রিয়ার হার দ্রুত কেন?
সমযোজী বন্ধন খুবই দৃঢ় ও শক্তিশালী প্রকৃতির হয়। তাই সমযোজী যৌগে অণু মধ্যস্থিত সমযোজী বন্ধন ভাঙার জন্য প্রচুর শক্তি ও সময়ের প্রয়োজন। আবার এই বন্ধন গঠিত হতেও অনেক সময় লাগে। তাই সমযোজী যৌগের রাসায়নিক বিক্রিয়া ধীর গতিতে ঘটে। কিন্তু আয়নীয় যৌগগুলি দ্রাবকে দ্রবীভূত হয়ে আয়নে বিয়োজিত হয়ে দ্রুত রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। তাই আয়নীয় যৌগের বিক্রিয়ার হার দ্রুত।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
সমযোজী যৌগের বিক্রিয়া ধীর গতিতে হয় কেন?
সমযোজী যৌগের অণুগুলি শক্তিশালী সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে আবদ্ধ থাকে। কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটার জন্য এই বন্ধনগুলো ভাঙতে হয়, যার জন্য প্রচুর শক্তি (সক্রিয়করণ শক্তি) এবং সময়ের প্রয়োজন। বন্ধন ভাঙার এই ধাপটিই বিক্রিয়ার গতিকে ধীর করে দেয়।
আয়নীয় যৌগের বিক্রিয়া দ্রুত গতিতে হয় কীভাবে?
আয়নীয় যৌগ সাধারণত স্ফটিকাকার কঠিন অবস্থায় থাকে, যেখানে আয়নগুলি একটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থায় আবদ্ধ। কিন্তু যখন এগুলি জলের মতো উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত হয়, তখন ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়নগুলিতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই মুক্ত আয়নগুলি দ্রাবকে চলাচল করতে পারে এবং একে অপরের সাথে সরাসরি ও দ্রুত সংঘর্ষের মাধ্যমে বিক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে। তাই তাদের বন্ধন ভাঙার জন্য অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হয় না বলে বিক্রিয়া দ্রুত ঘটে।
যদি আয়নীয় যৌগ কঠিন অবস্থায় থাকে, তাহলে কি তার বিক্রিয়াও দ্রুত ঘটে?
না, সম্পূর্ণ কঠিন অবস্থায় আয়নীয় যৌগের বিক্রিয়ার গতি খুবই ধীর। কঠিন অবস্থায় আয়নগুলি স্থির হয়ে থাকে এবং শক্তিশালী স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণে আবদ্ধ থাকে, যা তাদের চলাচলে বাধা দেয়। বিক্রিয়া দ্রুত ঘটার জন্য আয়নগুলির মুক্তভাবে চলাচল করতে পারা অত্যাবশ্যক, যা কেবল গলিত অবস্থায় বা দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায়ই সম্ভব।
সমযোজী যৌগ কি কখনও দ্রুত বিক্রিয়া দেখাতে পারে?
হ্যাঁ, কিছু সমযোজী যৌগ দ্রুত বিক্রিয়া করতে পারে, বিশেষ করে যদি বিক্রিয়াটি বন্ধন ভাঙার পরিবর্তে অণুগুলির মধ্যে সরাসরি সংযোজন বা আদান-প্রদানের মাধ্যমে ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, দহন বিক্রিয়া (পোড়ানো) খুব দ্রুত ঘটে কারণ তাপ বন্ধন ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয় সক্রিয়করণ শক্তি অতি দ্রুত সরবরাহ করে। তবে সাধারণত, আয়নীয় বিক্রিয়ার তুলনায় সমযোজী বিক্রিয়ার গতি কমই হয়।
দ্রাবক কীভাবে আয়নীয় যৌগের বিক্রিয়ার গতি বাড়ায়?
দ্রাবক (যেমন – জল)-এর অণুগুলির উচ্চ ডাইইলেকট্রিক ধ্রুবক থাকে। এটি আয়নীয় যৌগের ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়নগুলির মধ্যে ক্রিয়াশীল শক্তিশালী স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণ বলকে দুর্বল করে দেয়। ফলে আয়নগুলি স্ফটিকজাল থেকে মুক্ত হয়ে দ্রাবকে ছড়িয়ে পড়ে এবং মুক্ত আয়ন হিসেবে বিক্রিয়ায় অংশ নেয়। এই প্রক্রিয়াটি খুব দ্রুত ঘটে বলে বিক্রিয়ার হার বেড়ে যায়।
“বন্ধনের শক্তি” এবং “বিক্রিয়ার হার”-এর মধ্যে সম্পর্ক কী?
বন্ধন যত শক্তিশালী হবে, তা ভাঙতে তত বেশি শক্তির প্রয়োজন হবে। যেহেতু সমযোজী বন্ধন সাধারণত আয়নীয় বন্ধনের চেয়ে শক্তিশালী, তাই সমযোজী যৌগের বিক্রিয়ায় বন্ধন ভাঙার ধাপটি ধীর হয়। অন্যদিকে, আয়নীয় যৌগের ক্ষেত্রে দ্রাবক ইতিমধ্যেই বন্ধন “ভেঙে” দেয় (আয়নগুলিকে বিচ্ছিন্ন করে), তাই বিক্রিয়ক আয়নগুলির মধ্যে সরাসরি বিক্রিয়া ঘটতে খুব কম সময় লাগে, ফলে হার দ্রুত হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সমযোজী যৌগের রাসায়নিক বিক্রিয়া ধীর গতিতে ঘটে কিন্তু আয়নীয় যৌগের বিক্রিয়ার হার দ্রুত কেন?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন