এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “সতীদাহ প্রথা কী? সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “সতীদাহ প্রথা কী? সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে লেখো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

সতীদাহ প্রথা কী?
হিন্দুদের একটি প্রাচীন কুসংস্কার হল ‘সতীদাহ প্রথা’। এই প্রথা অনুসারে স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীকে স্বামীর সঙ্গে একই চিতায় সহমরণে যেতে হত। ঔপনিবেশিক শাসনের প্রথমদিকেও এই নিষ্ঠুর প্রথার প্রচলন ছিল।
সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে লেখো।
সতীদাহ প্রথা-বিরোধী আন্দোলন –
ঊনবিংশ শতকের সূচনালগ্নেও বাংলা তথা ভারতীয় হিন্দুসমাজে ‘সতীদাহপ্রথা’ বা ‘সহমরণ’ নামে একটি মধ্যযুগীয় নিষ্ঠুর বর্বরপ্রথা প্রচলিত ছিল। এই প্রথা অনুসারে স্বামীর মৃত্যুর পর জ্বলন্ত চিতায় তাঁর বিধবা স্ত্রীকে জীবন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে মারা হত। ব্রিটিশ সরকার এই কুপ্রথার বিরোধী হলেও তারা প্রথমদিকে এই প্রথা নিষিদ্ধ করে ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়কে ক্ষিপ্ত করতে চায়নি। তবে সরকার সতীদাহপ্রথা কিছুটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও হিন্দু রক্ষণশীল সম্প্রদায় এই নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহারের দাবি জানায়।
সমাজসংস্কারক রাজা রামমোহন রায় সতীদাহপ্রথার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম জোরালো প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি লোকশিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করে তুলে সতীদাহপ্রথার অবসান ঘটাতে চাইছিলেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি 1818 খ্রিস্টাব্দে সতীদাহপ্রথার বিরুদ্ধে একটি বাংলা পুস্তিকা প্রকাশ করেন। 1819 খ্রিস্টাব্দে রামমোহনের বিরোধী রক্ষণশীল হিন্দু নেতৃবৃন্দ ‘বিধায়ক’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে সতীদাহপ্রথা সম্পর্কে রামমোহনের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। এর জবাবে রামমোহন আরও একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। তিনি পরে আরও কয়েকটি বাংলা ও ইংরেজি পুস্তিকা প্রকাশ করে সতীদাহপ্রথার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। তিনি ‘মনুসংহিতা’-সহ বিভিন্ন হিন্দুশাস্ত্র ও ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, সতীদাহপ্রথা হিন্দুধর্ম ও শাস্ত্রবিরোধী। তিনি ‘সম্বাদ কৌমুদী’ পত্রিকায় নিয়মিত প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। অন্যান্য পত্রপত্রিকায়ও সতীদাহপ্রথা সম্পর্কে বিতর্কের আলোচনা নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। বাংলার রক্ষণশীল সমাজ রামমোহনের এই উদ্যোগে. বিরোধিতা করলেও রামমোহন ব্যাপক প্রচার চালিয়ে শিক্ষিত সমাজের একটি বড়ো অংশের সমর্থন লাভ করেন।
নতুন ইংরেজ গভর্নর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক (1828 – 1835 খ্রিস্টাব্দে) নৈতিকতা ও মানবিকতার কারণে সতীদাহপ্রথার বিরোধী ছিলেন। রামমোহন সতীদাহপ্রথা বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে বাংলার বিশিষ্ট নাগরিকদের স্বাক্ষর-সংবলিত একটি আবেদনপত্র বেন্টিঙ্কের কাছে জমা দেন। এই আবেদনে সাড়া দিয়ে উদারমনস্ক বেন্টিঙ্ক 1821 খ্রিস্টাব্দে (4 ডিসেম্বর) 17 নং রেগুলেশন আইন পাস করেন। এই আইনের দ্বারা সতীদাহপ্রথা নিষিদ্ধ হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
সতীদাহ প্রথা কেন প্রচলিত ছিল?
সতীদাহ প্রথা ধর্মীয় ও সামাজিক বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে প্রচলিত ছিল। কিছু লোকের ধারণা ছিল যে, এই প্রথা পালন করলে মৃত স্বামী ও স্ত্রী উভয়ই স্বর্গে যাবে। তবে এটি আসলে হিন্দু শাস্ত্রবিরোধী এবং একটি কুপ্রথা।
সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলন কে শুরু করেছিলেন?
সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে প্রথম জোরালো আন্দোলন শুরু করেন। তিনি এই প্রথার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন এবং ব্রিটিশ সরকারকে এই প্রথা নিষিদ্ধ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।
সতীদাহ প্রথা কখন নিষিদ্ধ হয়?
1829 সালের 4 ডিসেম্বর ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক 17 নং রেগুলেশন আইন পাস করেন। এই আইনের মাধ্যমে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ হয়।
রাজা রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনে কী ভূমিকা পালন করেছিলেন?
রাজা রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিলেন। তিনি বাংলা ও ইংরেজি পুস্তিকা প্রকাশ করে এই প্রথার নিষ্ঠুরতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেন। তিনি হিন্দু শাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করেন যে, এই প্রথা হিন্দুধর্মবিরোধী। এছাড়াও, তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে এই প্রথা নিষিদ্ধ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।
সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করার পিছনে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের ভূমিকা কী ছিল?
লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক একজন উদার ও মানবতাবাদী শাসক ছিলেন। তিনি সতীদাহ প্রথার নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতার বিরোধী ছিলেন। রাজা রামমোহন রায়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি 1829 সালে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন।
সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করার পর সমাজের প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করার পর রক্ষণশীল হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু অংশ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল। তবে শিক্ষিত ও প্রগতিশীল সমাজ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় এবং রাজা রামমোহন রায়ের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে।
সতীদাহ প্রথা কি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল?
হ্যাঁ, ব্রিটিশ সরকারের আইন পাসের পর সতীদাহ প্রথা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হয় এবং ধীরে ধীরে এই প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। তবে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা পরবর্তীকালেও ঘটেছে বলে জানা যায়।
সতীদাহ প্রথা কি হিন্দু শাস্ত্রে সমর্থিত?
না, রাজা রামমোহন রায় প্রমাণ করেছিলেন যে, সতীদাহ প্রথা হিন্দু শাস্ত্রবিরোধী। তিনি মনুসংহিতা ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে দেখিয়েছিলেন যে, এই প্রথার কোনো ধর্মীয় ভিত্তি নেই।
সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করার পিছনে রাজা রামমোহন রায়ের লেখনীর ভূমিকা কী ছিল?
রাজা রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি বাংলা ও ইংরেজি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। তিনি ‘সম্বাদ কৌমুদী’ পত্রিকায় নিয়মিত প্রবন্ধ লিখে এই প্রথার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন। তাঁর লেখনী ও প্রচেষ্টা এই প্রথা বন্ধ করার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “সতীদাহ প্রথা কী? সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “সতীদাহ প্রথা কী? সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।