এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

উনিশ শতকের সমাজ সংস্কারের প্রেক্ষিতে সতীদাহ প্রথা-বিরোধী আন্দোলন ও বিধবাবিবাহ প্রচলনের আন্দোলন দুটির তাৎপর্য

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “উনিশ শতকের সমাজ সংস্কারের প্রেক্ষিতে সতীদাহ প্রথা-বিরোধী আন্দোলন ও বিধবাবিবাহ প্রচলনের আন্দোলন দুটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “উনিশ শতকের সমাজ সংস্কারের প্রেক্ষিতে সতীদাহ প্রথা-বিরোধী আন্দোলন ও বিধবাবিবাহ প্রচলনের আন্দোলন দুটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

উনিশ শতকের সমাজ সংস্কারের প্রেক্ষিতে সতীদাহ প্রথা-বিরোধী আন্দোলন ও বিধবাবিবাহ প্রচলনের আন্দোলন দুটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
Contents Show

উনিশ শতকের সমাজ সংস্কারের প্রেক্ষিতে সতীদাহ প্রথা-বিরোধী আন্দোলন ও বিধবাবিবাহ প্রচলনের আন্দোলন দুটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উনিশ শতকের সমাজ সংস্কারের প্রেক্ষিতে সতীদাহ প্রথা-বিরোধী আন্দোলন ও বিধবাবিবাহ প্রচলনের আন্দোলন দুটির তাৎপর্য –

1. রাজা রামমোহনের নেতৃত্বে সতীদাহপ্রথা-বিরোধী আন্দোলন ও বিধবাবিবাহ প্রচলনের আন্দোলন

উনিশ শতকের নবজাগরিত বাংলায় ধর্ম তথা সমাজ জীবনে যে সংস্কার-যজ্ঞের সূচনা হয়, সতীদাহ প্রথা নিবারণ তার মধ্যে অগ্রগণ্য।

সতীদাহ প্রথা –

মৃত স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় সদ্য বিধবাকে নববধূর সাজে বলপূর্বক পুড়িয়ে মারাই সতীদাহ বা সহমরণ নামে হিন্দু সমাজে প্রচলিত ছিল।

রামমোহনের উদ্যোগ –

রাজা রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথা বন্ধের জন্য প্রকৃত অর্থেই এক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।

ধর্মীয় প্রমাণ –

রক্ষণশীল হিন্দুরা সতীদাহ প্রথার সমর্থনে ‘সমাচার চন্দ্রিকা’য় নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে থাকলে রামমোহন ‘মনু সংহিতা’ -সহ বিভিন্ন হিন্দু শাস্ত্র ও ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, সতীদাহ প্রথা হিন্দু ধর্ম তথা শাস্ত্র বিরোধী। এক্ষেত্রে তাঁর ‘সংবাদ কৌমুদি’ পত্রিকা রক্ষণশীলদের বিরোধিতার প্রতীক হয়ে ওঠে।

প্রচার কার্য –

বিভিন্ন পুস্তিকা প্রকাশের মাধ্যমে সতীদাহের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে রামমোহন জনসচেতনতা গড়ে তোলেন। 1818 – 19 খ্রিস্টাব্দে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয় ‘সহমরণ বিষয়ক প্রবর্তক ও নিবর্তক সম্বাদ’।

আবেদনপত্র প্রেরণ –

সতীদাহ প্রথা নিবারণে রামমোহনের অপর উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল এই প্রথা বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে তৎকালীন বাংলার তিনশো জন বিশিষ্ট নাগরিকের স্বাক্ষর সংবলিত আবেদনপত্র বড়োলাট বেন্টিষ্কের কাছে প্রেরণ করা।

আইন পাস –

শেষপর্যন্ত রামমোহনের আবেদনে সাড়া দিয়ে বড়োলাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক 1829 খ্রিস্টাব্দে 17 নং রেগুলেশন জারির মাধ্যমে সতীদাহ প্রথাকে আইনত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

মন্তব্য –

সতীদাহ প্রথা নিবারণে রাজা রামমোহনের ঐতিহাসিক ভূমিকা শ্রদ্ধার সহিত স্মরণীয়। তিনি যথার্থই নবভারতের পথিকৃৎ।

2. বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে সতীদাহপ্রথা-বিরোধী আন্দোলন ও বিধবাবিবাহ প্রচলনের আন্দোলন

নারী মুক্তি আন্দোলনের কাজে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন রাজা রামমোহনের স্বার্থক উত্তরসূরী। 1829 খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহনের উদ্যোগ ও আন্দোলনের ফলে সতীদাহ প্রথা নিবারিত হলেও বিধবাদের ভবিষ্যতের বিষয়টি তখনও ছিল প্রশ্নের সম্মুখীন। এ ব্যাপারে সদর্থক ভূমিকা নেন করুণাসাগর বিদ্যাসাগর। তিনি পুনর্বিবাহের মাধ্যমে বিধবাদের অন্ধকারময় জীবনে আশাকিরণ সঞ্চারকে তাঁর জীবনের অন্যতম ব্রত রূপে গ্রহণ করেন।

বিধবা বিবাহ আন্দোলনে বিদ্যাসাগরের অবদান –

বিধবা বিবাহের সপক্ষে জনমত গড়ে তুলতে বিদ্যাসাগর ‘সর্বশুভকরী’, ‘সংবাদ প্রভাকর’, ‘তত্ত্ববোধিনী প্রভৃতি পত্রিকায় প্রথমে লেখনী ধারণ করেন। পরে 1855 খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে ‘বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। ‘পরাশর সংহিতা’ থেকে উদ্ধৃতি তুলে বিদ্যাসাগর প্রমাণ করেন – বিধবা বিবাহ সম্পূর্ণভাবে শাস্ত্রসম্মত।

বিদ্যাসাগর বিধবার পুনর্বিবাহ নিয়ে আন্দোলন শুরু করলে তাঁর বিরোধিতায় নেমে পড়েন শোভাবাজার রাজবাড়ির রাধাকান্ত দেব ও তাঁর ধর্মসভা। বিদ্যাসাগরের বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এসময় তারা কমপক্ষে 30টি পুস্তিকা প্রকাশ করেন।

বিরোধী শিবিরের রাজা রাধাকান্তও চুপচাপ বসে রইলেন না। তিনি বিদ্যাসাগরের বিরোধিতা করে বিধবা বিবাহের বিরুদ্ধে 36,763 জনের স্বাক্ষরিত এক দরখাস্ত সরকারের কাছে পাঠালেন।

শেষপর্যন্ত রাধাকান্ত দেব ও রক্ষণশীলদের বিরোধিতা সত্ত্বেও বড়োলাট ক্যানিং 1856 খ্রিস্টাব্দে 26 জুলাই 15 নং রেগুলেশন জারি করে বিধবা বিবাহকে আইনসিদ্ধ করেন।

বিদ্যাসাগরের সাফল্যের মূল্যায়ন –

রক্ষণশীল ভারতবর্ষে বিধবা বিবাহ সংক্রান্ত আন্দোলন সংগঠন এবং এ বিষয়ে সরকারের আইন পাস এমনিতেই বিদ্যাসাগরের এক বড়ো সাফল্য। তবে কেবল আইন পাস করিয়েই নয়, বিধবা বিবাহকে বাস্তবে কার্যকরী করতেও তিনি উদ্যোগী হন। রক্ষণশীলদের শতবিরোধিতা সত্ত্বেও বিদ্যাসাগরের অদম্য চেষ্টায় 1856 খ্রিস্টাব্দে 7 ডিসেম্বর কলকাতার রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে বিধবা বিবাহের প্রথম আসর বসে। পাত্র সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক তথা বিদ্যাসাগরের সহকর্মী শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন, পাত্রী বর্ধমানের কালীমতি দেবী। পরবর্তী দশ বছরের মধ্যে বিদ্যাসাগর নিজ ব্যয়ে মোট 60টি বিধবা বিবাহের আয়োজন করেন। এমনকি, নিজের পুত্র নারায়ণচন্দ্রের সঙ্গে ভবসুন্দরী নামক এক অষ্টাদশীর বিবাহ দেন। দরিদ্র বিধবাদের বিবাহের জন্য 1872 খ্রিস্টাব্দে তিনি গঠন করেন ‘হিন্দু ফ্যামিলি অ্যানুইটি ফান্ড’। স্বয়ং বিদ্যাসাগরের পরিভাষায় – ‘বিধবা বিবাহ প্রথা প্রবর্তন আমার জীবনের প্রধান সৎকর্ম।’

বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ আন্দোলনে প্রভাবিত হয়ে দক্ষিণ ভারতের সমাজ সংস্কারক বিরসালিঙ্গম পান্তুলু বিধবা বিবাহকে জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষ্যে ‘বিধবা বিবাহ সমিতি’ গড়ে তোলেন। এই কাজের জন্য তিনি ‘দক্ষিণ ভারতের বিদ্যাসাগর’ নামে অভিহিত করেন।

মূল্যায়ন –

পরিশেষে বলা যায়, বিধবা বিবাহের ব্যাপক সাফল্য আসত এর সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা ও প্রসারের মাধ্যমে, কিন্তু রক্ষণশীলদের বিরোধিতায় বিধবা বিবাহের তেমন কোন প্রসার ঘটেনি। এমনকি বর্তমানেও বিধবা বিবাহ সমাজের চোখে অনেকটাই ব্রাত্য।

উনিশ শতকের বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রভাবে যে সমাজ তথা ধর্মসংস্কার আন্দোলনের সূত্রপাত হয়, তারই এক উগ্র বহিঃপ্রকাশ ছিল নব্যবঙ্গ আন্দোলন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

সতীদাহপ্রথা-বিরোধী আন্দোলনের পটভূমি কী ছিল?

উনিশ শতকের বাংলায় হিন্দু সমাজে সতীদাহ প্রথা ছিল এক নৃশংস প্রথা, যেখানে মৃত স্বামীর চিতায় বিধবাকে জোরপূর্বক পুড়িয়ে মারা হতো। ধর্মীয় কুসংস্কার ও রক্ষণশীলতার কারণে এই প্রথা প্রচলিত ছিল। রাজা রামমোহন রায় এই প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন।

রাজা রামমোহন রায় সতীদাহপ্রথা বন্ধে কীভাবে ভূমিকা রাখেন?

1. ধর্মীয় যুক্তি – তিনি হিন্দু শাস্ত্র (মনু সংহিতা, বেদ) থেকে প্রমাণ করেন যে সতীদাহ প্রথা শাস্ত্রসম্মত নয়।
2. প্রচার কার্য – ‘সংবাদ কৌমুদী’ পত্রিকা ও ‘সহমরণ বিষয়ক প্রবর্তক ও নিবর্তক সম্বাদ’ পুস্তিকার মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করেন।
3. আইনি উদ্যোগ – 1829 সালে লর্ড বেন্টিঙ্কের কাছে 300 বিশিষ্ট নাগরিকের স্বাক্ষরিত আবেদনপত্র পাঠান, যা শেষে 17 নং রেগুলেশনের মাধ্যমে সতীদাহ নিষিদ্ধ হয়।

সতীদাহ ও বিধবাবিবাহ আন্দোলনগুলোর সীমাবদ্ধতাগুলো কী ছিল?

সতীদাহ ও বিধবাবিবাহ আন্দোলনগুলোর সীমাবদ্ধতা –
1. সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার অভাব – বিধবাবিবাহ আইন পাস হলেও রক্ষণশীল সমাজে তা ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়নি।
2. শহরকেন্দ্রিক প্রভাব – গ্রামীণ সমাজে এই সংস্কার ধীরে ছড়ায়।
3. নারীদের স্বাধীনতা সীমিত – আন্দোলনগুলি নেতৃত্বে পুরুষদের প্রাধান্য ছিল, নারীদের সরাসরি অংশগ্রহণ কম ছিল।

রাজা রামমোহন রায় ও বিদ্যাসাগরের মধ্যে পার্থক্য কী?

রাজা রামমোহন রায় ও বিদ্যাসাগরের মধ্যে পার্থক্য –
1. পদ্ধতি – রামমোহন ধর্মীয় শাস্ত্রের ব্যাখ্যা দিয়ে সংস্কার করতেন, বিদ্যাসাগর শাস্ত্র ও যুক্তি উভয়ই ব্যবহার করতেন।
2. লক্ষ্য – রামমোহন সতীদাহ বন্ধে মনোনিবেশ করেন, বিদ্যাসাগর বিধবাবিবাহ ও নারীশিক্ষায় বেশি জোর দেন।
3. সামাজিক প্রতিক্রিয়া – বিদ্যাসাগরকে রক্ষণশীলদের বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল।

সতীদাহ ও বিধবাবিবাহ আন্দোলনগুলোর সামাজিক তাৎপর্য কী?

সতীদাহ ও বিধবাবিবাহ আন্দোলনগুলোর সামাজিক তাৎপর্য –
1. নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি – সতীদাহ বন্ধ ও বিধবাবিবাহ প্রচলনের মাধ্যমে নারীর জীবনমূল্য বৃদ্ধি পায়।
2. ধর্মীয় কুসংস্কার দূরীকরণ – শাস্ত্রের অপব্যাখ্যার বিরুদ্ধে যুক্তিনির্ভর সংস্কার আন্দোলন গড়ে ওঠে।
3. পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব – ইংরেজি শিক্ষা ও মানবতাবাদী চিন্তা সমাজ সংস্কারে ভূমিকা রাখে।
4. আধুনিক ভারতের ভিত্তি – এই আন্দোলনগুলি পরবর্তীতে ব্রাহ্মসমাজ, স্বামী বিবেকানন্দের চিন্তাধারা প্রভৃতিকে প্রভাবিত করে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “উনিশ শতকের সমাজ সংস্কারের প্রেক্ষিতে সতীদাহ প্রথা-বিরোধী আন্দোলন ও বিধবাবিবাহ প্রচলনের আন্দোলন দুটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “উনিশ শতকের সমাজ সংস্কারের প্রেক্ষিতে সতীদাহ প্রথা-বিরোধী আন্দোলন ও বিধবাবিবাহ প্রচলনের আন্দোলন দুটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Share via:

মন্তব্য করুন