এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম সংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম সংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা করো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম সংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা করো।
আধুনিক ভারতের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের প্রিয়তম শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ।
স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মা সংস্কার
নব্য বেদান্তের প্রচারক –
স্বামীজির ধর্মীয় চিন্তাধারার গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ‘নব্য বেদান্তবাদ’। বিবেকানন্দ প্রাচীন অদ্বৈত দর্শনের নিজস্ব ব্যাখ্যা দিয়ে এটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন। কুসংস্কার, অস্পৃশ্যতা, জাতিভেদ, ধনী-দরিদ্রের প্রভেদ দূর করে তিনি জাতিকে ঐক্য ও কর্মশক্তিতে উদ্দীপ্ত হওয়ার আহ্বান জানান। তাঁর নব্য বেদান্তের অভিমুখ ছিল-জগতের কল্যাণেই নিজের মোক্ষলাভ।

জীবসেবার আদর্শ –
তাঁর ধর্মদর্শনে ‘শিবজ্ঞানে জীবসেবা’র আদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে। বিশ্ববাসীর প্রতি তাঁর দীক্ষা – ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।’
বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের আদর্শ প্রচারক –
1893 খ্রিস্টাব্দের শিকাগো ধর্ম সম্মেলনে ভারতের আধ্যাত্মিকতার সনাতন স্বরূপ তিনি বিশ্ববাসীর সম্মুখে তুলে ধরেন। বেদান্তের নতুন ব্যাখ্যা এবং তার সহায়ক উপাদান-রূপে কর্মযোগের প্রচার করে বিশ্ববাসীকে অমৃতলোকের সন্ধান তিনি দিয়েছেন। যুদ্ধ ও ধ্বংসের পরিবর্তে শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বই সমৃদ্ধির একমাত্র পথ।
মানুষ গড়ার ধর্ম –
স্বামীজির কাছে ‘ধর্ম’ কেবলমাত্র আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানাদির সমষ্টিমাত্র নয়, ‘ধর্ম’ তাঁর কাছে মানুষ গড়ার হাতিয়ার। যে ধর্ম মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে, সেই ধর্মকে তিনি গ্রহণ করেননি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ ভেদহীন সনাতন মানবধর্মের জয়গান তিনি গেয়েছেন।
মন্তব্য –
বিবেকান্দের ‘Man Making Religion’ এবং ‘নব্য বেদান্তবাদ’ -এর আদর্শ মানুষের মনের জমিকে করেছে উর্বর। তাঁর ভাবাদর্শে বিশ্বাবাসী হয়েছে স্নাত। পরাধীন দেশবাসীকে তিনি দিয়েছেন নতুন করে বাঁচার প্রেরণা। ঋষি অরবিন্দের পরিভাষায় – ‘বিবেকানন্দই আমাদের জাতীয় জীবনের গঠনকর্তা।’
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?
স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজ থেকে কুসংস্কার, অস্পৃশ্যতা, জাতিভেদ এবং ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করা। তিনি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে কর্মশক্তিতে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন এবং বিশ্বের কল্যাণে নিজের মোক্ষলাভের আদর্শ প্রচার করেছিলেন।
নব্য বেদান্তবাদ কী?
নব্য বেদান্তবাদ হল স্বামী বিবেকানন্দের দ্বারা প্রচারিত একটি ধর্মীয় দর্শন, যা প্রাচীন অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। তিনি এই দর্শনকে সহজ ও জনপ্রিয় করে তোলেন এবং এর মাধ্যমে জগতের কল্যাণে নিজের মোক্ষলাভের আদর্শ প্রচার করেন।
শিবজ্ঞানে জীবসেবা বলতে কী বোঝায়?
শিবজ্ঞানে জীবসেবা হল স্বামী বিবেকানন্দের একটি গুরুত্বপূর্ণ আদর্শ, যার অর্থ হল ঈশ্বরের সেবা হিসেবে জীবের সেবা করা। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, প্রতিটি জীবই ঈশ্বরের অংশ এবং তাদের সেবা করাই ঈশ্বরের সেবা।
স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগো ধর্ম সম্মেলনে কী বার্তা দিয়েছিলেন?
1893 খ্রিস্টাব্দে শিকাগো ধর্ম সম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের আধ্যাত্মিকতার সনাতন স্বরূপ বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন। তিনি বেদান্তের নতুন ব্যাখ্যা এবং কর্মযোগের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বের পথ দেখান।
স্বামী বিবেকানন্দের মতে ধর্মের প্রকৃত অর্থ কী?
স্বামী বিবেকানন্দের মতে, ধর্ম কেবলমাত্র আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানাদির সমষ্টি নয়, বরং এটি মানুষ গড়ার হাতিয়ার। তিনি এমন ধর্মকে গ্রহণ করেননি যা মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে, বরং তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ ভেদহীন সনাতন মানবধর্মের জয়গান গেয়েছেন।
স্বামী বিবেকানন্দের ‘Man Making Religion’ বলতে কী বোঝায়?
Man Making Religion বলতে স্বামী বিবেকানন্দের সেই ধর্মীয় আদর্শকে বোঝায় যা মানুষের চরিত্র গঠন ও উন্নতিতে সাহায্য করে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ধর্মের মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের মনের জমিকে উর্বর করে তোলা এবং তাদেরকে উন্নত চরিত্রের অধিকারী করা।
স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম সংস্কারের প্রভাব কী ছিল?
স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম সংস্কারের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। তাঁর ভাবাদর্শে বিশ্ববাসী স্নাত হয়েছে এবং পরাধীন ভারতবাসীকে তিনি নতুন করে বাঁচার প্রেরণা দিয়েছেন। ঋষি অরবিন্দের মতে, বিবেকানন্দই আমাদের জাতীয় জীবনের গঠনকর্তা।
স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মীয় চিন্তাধারার মূল বিষয়গুলি কী কী?
স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মীয় চিন্তাধারার মূল বিষয়গুলি হল নব্য বেদান্তবাদ, জীবসেবার আদর্শ, বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের আদর্শ, এবং মানুষ গড়ার ধর্ম। তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ ভেদহীন সনাতন মানবধর্মের জয়গান গেয়েছেন।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম সংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম সংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।